মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

২. ইলম অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭
ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর প্রতি মিথ্যারোপের শাস্তি
৩৭। হযরত কাসিমের পিতামহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা এমন কথা যা আমি বলিনি তা আমার প্রতি আরোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে খোঁজ করে।
عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، أَوْ قَالَ مَا لَمْ أَقُلْ، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসটি হাদীসে মশহুরের অন্তর্ভুক্ত। ৬০ জনের বেশি সংখ্যক সাহাবায়ে কিরাম (রা) থেকে এই হাদীস বর্ণিত হওয়ায় অনেকে এই হাদীসকে হাদীসে মুতাওয়াতির হিসেবে গণ্য করে থাকেন। যেমন ঃ ইরশাদুস সারী বুখারী শরীফের হাশিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে : وهو حديث في غاية الصحة ونهاية القوة وقد أطلق القول بتواتره جماعة “এই হাদীস বিশুদ্ধতা ও শক্তির দিক দিয়ে খুবই উচ্চ মর্যাদা রাখে। তাই একদল মুহাদ্দিস এই হাদীসকে মুতাওয়াতির হিসেবে গণ্য করে থাকেন।"

আসহাবে সিহাহ, হাকিম, তিবরানী, দারে কুতনী, খতীব ও অন্যন্য বর্ণনাকারিগণ আশারায়ে মুবাশুশিয়াসহ অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম থেকে একই বাক্য দ্বারা বর্ণনা করেছেন। কোন বর্ণনায় রয়েছে : وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ আবার কোন বর্ণনায় রয়েছেঃ من قال مالم اقل এই হাদীস সনদের দিক দিয়ে হাদীসে মুনকাতি’-এর পর্যায়ভুক্ত। কেননা মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর তাঁর পিতার ইনতিকালের সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। তিনি পিতার নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেননি। কিন্তু বর্ণনাকারী যদি নির্ভরযোগ্য হন, তা হলে ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে মুনকাতি হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে সনদের যে ক্রমধারা রয়েছে, এরদ্বারা হাদীসে মুনকাতি'র অভিযোগ দূরীভূত হয়ে যায়। তা হলো এই যে, ইমাম সাহেব রিওয়ায়েত করেন কাসিম ইবনে আবদুর রহমান থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে আর তিনি তাঁর দাদা আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রা) থেকে। ইমাম আবূ দাউদ এভাবেই হাদীস বর্ণনা করেছেন।

নবী করীম (সা)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করার এই কঠোর শাস্তি ও হুঁশিয়ারীর কথা এজন্য বলা হয়েছে যে, হাদীসের মধ্যে কিছু মিথ্যা বলে দেওয়া বা মিথ্যা কিছু সংযুক্ত করে দেওয়া অগণিত মানুষকে গুমরাহ ও বিভ্রান্ত করা এবং দীনের মৌলিক বিষয় ও ঐক্যের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করার নামান্তর। এ গুনাহর পরিমাপ করা সম্ভব নয়। একদিকে হাদীস ও দ্বীন প্রচার এবং প্রসারের জন্য অত্যধিক নেকীর কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে দীনের মধ্যে ভ্রান্ত মতবাদ ও ভ্রান্ত পদ্ধতি চালু করাকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা পবিত্র কুরআনের পর একমাত্র হাদীসই দ্বীন ও শরীয়তের মূল ভিত্তি। যদি হাদীসের মধ্যে ভুল-ত্রুটি যুক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে দীনের মূল ভিত্তি চিরদিনের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

মুসলমানদের এমন একটি অন্ধকার যুগের আগমণ ঘটেছিল যে, অসংখ্য মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীর আবির্ভাব ঘটেছিল। তাই মোল্লা আলী ক্বারী (র) 'মাওজুয়াতুল কবীর' নামক গ্রন্থে এরূপ মিথ্যা হাদীসসমূহ একত্রিত করেছেন। এবং মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করে জনগণকে ধোঁকাদানকারী ঐ সমস্ত লোকের কথা উল্লেখ করেছেন, যারা মনগড়া হাদীস প্রচারের মাধ্যমে দীনের মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ঐ সমস্ত লোককে উত্তম পুরস্কার দান করুন যাঁরা হাদীসের বর্ণনাকারী ও আসমায়ে রিজাল সম্পর্কে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেছেন এবং মিথ্যা, মনগড়া ও মওযূ হাদীসকে পৃথক করে, সঠিক ও সহীহ হাদীসসমূহকে একত্রিত করেছেন এবং সমস্ত হাদীসকে বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত করে দিয়েছেন। ফলে এতে সন্দেহের কোন অবকাশ আর থাকেনি।