মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১. ঈমান-আকাঈদ অধ্যায়

হাদীস নং: ২৯
শাফাআতের বর্ণনা
২৯। হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! কিয়ামতের দিন আপনি কোন কোন লোকদের জন্য শাফা'আত করবেন? হযরত (ﷺ) বললেন আহলে কাবায়ের, আহলে আযায়েম এবং যারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটিয়েছে।
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ مَنْصُورِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ الْبَلْخِيِّ، وَمُحَمَّدِ بْنِ عِيسَى، وَيَزِيدَ الطُّوسِيِّ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ أُمَيَّةَ الْحَذَّاءِ الْعَدَوِيِّ، عَنْ نُوحِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ يَزِيدَ الرَّقَاشِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لِمَنْ تَشْفَعُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ، وَأَهْلِ الْعَظَائِمِ، وَأَهْلِ الدِّمَاءِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আহলে কাবায়ের দ্বারা ঐ সমস্ত লোককে বুঝান হয়েছে যারা গুনাহ কবীরা করেছে। জাহান্নামে প্রবেশের পূর্বে হোক, অথবা কিছু দিন শাস্তি ভোগ করার পর হোক তাদের জন্য শাফা'আত কবুল করা হবে।

আযায়েম (عَظَائِمِ) শব্দের কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে। হয়ত এটা কাবায়ের শব্দের ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা এর দ্বারা কোন অতিরিক্ত অথবা ভিন্ন প্রকার অর্থ বুঝান হয়নি। অথবা কাবায়েরের অর্থ হুকুকুল্লাহ বা আল্লাহর হক এবং আযায়েমের অর্থ হুকুকুল ইবাদ বা বান্দার হক। অথবা এখানে কোন একটি বিষয়কে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করার পর সাধারণভাবে বলার নিয়মে কারায়েরের অর্থ হলো সাধারণ শুনাহে কবীরা এবং আযায়েমের অর্থ হলো ঐ সমস্ত কবীরা শুনাহ যা নিজের মধ্যে অধিক পরিমাণে বিরাজমান। যেমনঃ নামায ত্যাগ করা, ব্যভিচার করা, লাওয়াতাত করা ইত্যাদি অথবা কোন একটি বিষয়কে সাধারণ হিসেবে বলার পর বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করা।

যেমন কাবায়েরের অর্থ হলো শুনাহে কবীরা এবং আযায়েমের অর্থ কোন গুনাহে সগীরা হোক বা কবীরা। কেননা সগীরা গুনাহও আল্লাহর পবিত্র এবং নেক বান্দাদের নিকট বিরাট গুনাহ বলে মূল্যায়ন হয়ে থাকে, যারা আল্লাহর নির্দেশ সামান্য পরিমাণে অমান্য করা মারাত্মক অন্যায় মনে করেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ অথবা আয়ায়েমের অর্থ যে কোন গুনাহ, তা ছোট হোক বা বড়।

উপরোক্ত হাদীসেও এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, গুনাহে কবীরাকারী মু'মিন ও শাফা'আতের যোগ্য। কেননা কাফিরদের শাফা'আত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের কোথাও উল্লেখ নেই। পবিত্র কুরআনের আয়াতঃ فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ -এর দ্বারা কাফিরদের জন্য শাফা'আতের দরজা চিরতরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিম্নলিখিত হাদীস এ বিষয়ে পেশ করা যায়। যেমন হাদীস (আমার উম্মতের মধ্যে আহলে কাবায়েরের জন্য আমার শাফা'আত প্রযোজ্য হবে) এ হাদীস আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান এবং হাকেম মুসতাদরাক নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান এবং হাকেম হযরত জাবির (রা) থেকে, তিবরানী হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে এবং খতীব (র) হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বস্তুত এ হাদীসও খারিজী, মু'তাযিলা এবং মুরজিয়াদের চিন্তাধারাকে বাতিল ও অমূলক বলে প্রমাণ করেছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান