মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১. ঈমান-আকাঈদ অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬
আমলের ব্যাপারে প্রেরণা ও উৎসাহ প্রদান
১৬। হযরত সা'দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, এমন কোন মানুষ নেই যার শুরু ও শেষ পরিণতি এবং ইহকাল ও পরকালে সে যা কিছুর সম্মুখীন হবে, তা আল্লাহ তা'আলা লিপিবদ্ধ করে দেননি। একজন আনসারী আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমল কিসের জন্য প্রয়োজন ? আঁ হযরত (ﷺ) বললেন, আমল কর। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে কাজ করা সহজ করে দেয়া হয়। সুতরাং যিনি জান্নাতবাসী হবেন, তার জন্য জান্নাতবাসীদের আমল সহজ হবে এবং যে জাহান্নামী হবে, তার জন্য জাহান্নামীদের আমল সহজ হবে। তখন আনসারী বললেন, হ্যাঁ, এখন আমল করার কারণ অবগত হলাম।
عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رَفِيعٍ، عَنْ مُصْعَبٍ، عَنْ سَعْدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " مَا مِنْ نَفْسٍ إِلَّا قَدْ كَتَبَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مَدْخَلَهَا وَمَخْرَجَهَا وَمَا هِيَ لَاقِيَةٌ، قِيلَ: فَفِيمَ الْعَمَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «اعْمَلُوا، فُكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خَلَقَ اللَّهُ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ يُيَسَّرُ لِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ يُيَسَّرُ لِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ» ، قَالَ الْأَنْصَارِيُّ: الْآنَ حَقَّ الْعَمَلُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তাকদীরের এ মাসয়ালার মাধ্যমে খুবই সূক্ষ্মভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে, মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি খুবই দুর্বল যা উক্ত হাদীসকে কেন্দ্র করে আমল পরিত্যাগ করার জন্য যুদ্ধ করে থাকে। আমল ত্যাগ করার মূল সূত্র হলো এই যে, সওয়াবের আশায় আমল করা হয়। য সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই পাওয়া যাবে। যদি না পাওয়া যায়, তাহলে তাকদীর যেহেতু ভুল হতে পারে না, তাই কোন শক্তিই সওয়াব হাসিলের কারণ হতে পারে না। এর ব্যাখ্যা হলো এই যে, বাহ্যত বিষয়টি এরূপই। কিন্তু আমল ত্যাগ করার কোন অর্থ নেই। তাই আমল অব্যাহত রাখার জন্যই আমল করার ক্ষমতাকে ইচ্ছাশক্তির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখন যা করা হবে, তা তাকদীর অনুযায়ী করা হবে। জান্নাতীদের নেককাজ করা সহজ হবে এবং স্বীয় নেক আমলের দ্বারা সহজেই জান্নাতের অধিকারী হতে পারবে। জাহান্নামীদের জন্য বদ ও খারাপ আমল করা সহজ হবে এবং স্বীয় আমলের কারণেই জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে।

তাকদীরের কারণে আমল কেন বন্ধ হবে এবং আমলের দ্বারা তাকদীর কেন অশুদ্ধ বা ত্রুটিপূর্ণ বা ভুল হবে? অন্যান্য আমলের ব্যাপারে তো এরূপ করা হয় না। এখানে একটু চিন্তার বিষয় রয়েছে। তা হলো এই যে, তাকদীরের লিখন অনুযায়ী যতটুকু রিযিক ভাগ্যে আছে, তা অবশ্যই পাওয়া যাবে। যদি তা না পাওয়া যায়, তাহলে শত চেষ্টা করলেও ফল হবে না। কিন্তু এরপরও আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রিযিকের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকি। চেষ্টা ও পরিশ্রম ত্যাগ করে বসে থাকি না। অথবা কোন প্রকার অসুস্থতা বা বিপদে পতিত হলে সবাই এ কথা অবগত আছে যে, মৃত্যুর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে সমস্ত চিকিৎসা ও চেষ্টা নিষ্ফল হবে। আর যদি আয়ু থাকে, তাহলে কোন শক্তিই তাকে মারতে পারবে না। কিন্তু এরপরও মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা ও চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। অথচ দ্বীনী আমলের ব্যাপারে স্বীয় মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাধারার সাহায্যে আমল থেকে বিরত ও বিমুখ হয়ে থাকে।