মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১. ঈমান-আকাঈদ অধ্যায়

হাদীস নং:
কবীরা গুনাহকারীকে কাফির বলা যাবে না
৯। হযরত তাউস (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবু আব্দুর রহমান। অনুগ্রহ করে বলুন, যারা আমাদের তালা ভাঙ্গে, আমাদের ঘরে সিঁদ কাটে এবং আমাদের মাল ও আসবাবপত্র লুণ্ঠন করে, তারা কি কাফির হয়ে গিয়েছে? তিনি বললেন, না। অতঃপর আমি পুনরায় বললাম, যারা বাহানা বা অপপ্রচার করে আমাদের রক্ত প্রবাহিত করে, তারা কি কাফির হবে? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাফির বলে গণ্য হবে না। হযরত তাউস (রাহঃ) বলেন, আমি হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ)-কে তাঁর অঙ্গুলী নাড়তে দেখলাম এবং তাঁকে বলতে শুনলাম, এটাই হুযূর (ﷺ)-এর সুন্নত। বর্ণনাকারীদের একটি দল হুযূর (ﷺ) থেকে এ হাদীসটি মারফূ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
عَنْ عَبْدِ الْكَرِيمِ بْنِ أَبِي الْمُخَارِقِ، عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عُمَرَ، فَسَأَلَهُ فَقَالَ: " يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَرَأَيْتَ الَّذِينَ يَكْسِرُونَ أَعْلَاقَنَا، وَيَنْقُبُونَ بُيُوتَنَا، وَيُغِيرُونَ عَلَى أَمْتِعَتِنَا، أَكَفَرُوا؟ قَالَ: لَا، قَالَ: أَرَأَيْتَ الَّذِينَ يَتَأَوَّلُونَ عَلَيْنَا وَيَسْفِكُونَ دِمَاءَنَا، أَكَفَرُوا؟ قَالَ: لَا، حَتَّى يَجْعَلُوا مَعَ اللَّهِ شَيْئًا "، وَأَنَا أَنْظُرُ إِلَى أُصْبُعِ ابْنِ عُمَرَ، وَهُوَ يُحَرِّكُهَا، وَهُوَ يَقُولُ: سُنَّةُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهَذَا الْحَدِيثُ رَوَاهُ جَمَاعَةٌ، فَرَفَعُوهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসকে পূর্ববর্তী হাদীসের ব্যাখ্যা হিসেবে ধরে নেয়া যায়। পূর্ববর্তী হাদীসে বলা হয়েছে, কবীরা গুনাহ্ দ্বারা একজন মুমিন কাফিরে পরিণত হয় না। এ হাদীসে কবীরা গুনাহর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন চুরি করা, সিঁদ কাটা, লুণ্ঠন করা এবং রক্তপাত ইত্যাদি গুনাহর কারণেও একজন মুমিন কাফিরে পরিণত হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে।

উপরোক্ত বিষয়ে সিহাহ সিত্তার অনেক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, গুনাহ কবীরার কারণে একজন মুমিন কাফিরে পরিণত হয়ে যায় না এবং সে চিরকালের জন্য দোযখেও থাকবে না। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত মু'আয (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত (সা) বলেছেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো এই যে, তিনি ঐ ব্যক্তিকে আযাব থেকে মুক্তি দিবেন যে তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার করেনি এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো এই যে, তিনি এমন ব্যক্তিকে আযাব থেকে মুক্তি দিবেন যে তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার না করে।

বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত মু'আয (রা) থেকে আরও একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হুযূর (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি এটা স্বীকার করে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা'বূদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল এবং অন্তরে এটা বিশ্বাস স্থাপন করে, তাহলে আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। মুসলিম শরীফে হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত (সা) বলেছেন, এ বিশ্বাসের উপর যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বূদ নেই, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এরূপ অনেক সহীহ্ হাদীস রয়েছে সেগুলোর মূল বক্তব্য হলো এই যে, শুধু তাওহীদ ও রিসালতের উপর বিশ্বাসে চিরস্থায়ী দোযখ থেকে মুক্তি এবং বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যায়। সুতরাং এ আলোচনার পর গুনাহ কবীরার কারণে একজন মুমিনকে কিভাবে কাফির বলে আখ্যায়িত করা যায়?

এবার ঐ সমস্ত হাদীস নিয়ে আলোচনা করা হবে যেগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, গুনাহে কবীরা দ্বারা মুমিনের ঈমান দূরীভূত হয়ে কাফিরে পরিণত হয়ে যায়। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে :

لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُو مُؤْمِنٌ ... الخ সুতরাং উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা হলো এই যে, এ হাদীসে বাহ্যিক অর্থ বুঝান উদ্দেশ্য নয়, বরং এগুলো কঠোর শাস্তি ও হুঁশিয়ারীর জন্য বলা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল এই যে, এ কঠিন শাস্তির কথা শুনে যাতে একজন মুমিনের অন্তর কেঁপে উঠে এবং কখনো এ গুনাহের দিকে অগ্রসর না হয়। কেননা মানুষ যতই অন্যায় আচরণ ও বদ আমল করুক না কেন, সে কখনো ধর্ম থেকে বিচ্যুত হওয়া বা ধর্ম ত্যাগ করা পছন্দ করে না। অবশ্য ধর্মের আড়ালে সে সবকিছুই করে থাকে। এ কারণেই একজন বদ আমলকারী মুসলমান স্বীয় ধর্মের হিফাযতের জন্য এরূপ আত্মত্যাগ করে থাকে যা প্রত্যক্ষ করে হতবাক

অথবা, হাদীসে এখানে ঈমানের দ্বারা মূল ঈমান বুঝান উদ্দেশ্য নয়; বরং কামিল ঈমান বা পূর্ণাঙ্গ ঈমান বুঝান হয়েছে। অর্থাৎ এ সমস্ত গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে কামিল মুমিন থাকে। কেননা এতে সে সাজা ও নিন্দার উপযুক্ত হয়ে যায়। মূলত ঈমান কামিল হলো এই যে, গুনাহ থেকে এমনি পবিত্র থাকবে যাতে সে নিন্দা বা শাস্তির উপযুক্ত না হয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৯ | মুসলিম বাংলা