মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১. ঈমান-আকাঈদ অধ্যায়
হাদীস নং: ৮
কবীরা গুনাহকারীকে কাফির বলা যাবে না
৮। হযরত আবু যুবায়ের (রাহঃ) বলেন, আমি হযরত জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কি গুনাহ্ কবীরাকে শিরক বলে গণ্য করেন না? তিনি বললেন, না। হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ) বলেন, আমি হযরত (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ উম্মতের মধ্যে এমন কোন গুনাহ্ আছে কি যা কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে থাকে? হুযূর (ﷺ) বললেনঃ একমাত্র আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক বা অংশীদার করা ব্যতীত অন্য কোন গুনাহ্ (এরূপ) নেই।
عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، قَالَ: قُلْتُ لِجَابِرٍ: مَا كُنْتُمْ تَعُدُّونَ الذُّنُوبَ شِرْكًا؟ قَالَ: قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ ذَنْبٌ يَبْلُغُ الْكُفْرَ، قَالَ: «لَا، إِلَّا الشِّرْكَ بالله تعالى »
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীস একটি বিষয়ের উপর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার জন্য আনয়ন করা হয়েছে। তা হলো এই যে, গুনাহ কবীরা, যেমন রক্তপাত করা, চুরি করা, মদ্যপান করা ইত্যাদি কুফরীর মধ্যে গণ্য হবে না। এর দ্বারা মূলতঃ খারিজীদের মতবাদকে খন্ডন করা হয়েছে। কেননা তাদের মতবাদ হলো এই যে, গুনাহ কবীরায় লিপ্ত হওয়ার কারণে মুমিন কাফিরে পরিণত হয়ে যায়।
এ মাসয়ালাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি দল বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেছে। খারিজীদের মতবাদ হলো এই যে, গুনাহে কবীরায় লিপ্ত ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হয়ে যায়। দলীল হিসেবে তারা এ হাদীস পেশ করে বলেন, হুযুর (সা) বলেছেনঃ
لايزني الزاني وهو مؤمن ولا يسرق السارق وهو مؤمن
“জিনাকারী জিনারত অবস্থায় এবং চোর চুরি করা অবস্থায় মুমিন থাকে না।" কিন্তু এ অবস্থায়ও তাদের ঈমান থাকার ব্যাপারে হাদীসে যে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, তা তারা গোপন রেখেছেন। যেমন অপর একটি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ঈমান গ্রহণের পর কোন গুনাহ মুমিনের ঈমানকে ক্ষতি করতে পারে না; বরং তারা বিনাবাধায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা দলীল হিসেবে এ হাদীস পেশ করে বলেন, হযরত (সা) বলেছেন: من قال لا إله الا الله فقد دخل الجنة “যে ব্যক্তি তাওহীদের এই কালিমা পাঠ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" এ দল নাফরমানদের আযাব ও শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে যে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, তা তারা গোপন রেখেছে। আর মু'তাযিলাগণ কুফর ও ঈমানের মধ্যে একটি স্তর মেনে থাকে। তাদের মত হল, কাফির কালিমা পাঠের দ্বারা কুফরী থেকে এবং মুমিন গুনাহ্ কবীরা দ্বারা ঈমান থেকে বিচ্যুত হতে পারে না; বরং গুনাহ কবীরার কারণে একজন মুমিনকে শুধু ফাসিক বলা যেতে পারে।*
উল্লেখিত হাদীস ঐ লোকদের ভুল ধারণাকে দূরীভূত করেছে যারা হুযূর (সা)-এর হাদীসঃ من ترك الصلاة متعمدا فقد كفر (যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায পরিত্যাগ করে সে কাফির হয়ে যায়)-এর প্রেক্ষিতে এরূপ প্রত্যেক ব্যক্তিকে কাফির মনে করে থাকে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামায পরিত্যাগ করে। যদিও হাদীসের বাহ্যিক অর্থ উপরোক্ত বিষয়কেই প্রকাশ করেছে কিন্তু এখানে হাদীসের মূল অর্থ এ নয় যে, নামায পরিত্যাগকারী ঈমানের গভীর সীমানা থেকে বহির্ভূত হয়ে প্রকৃত কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, বরং এখানে কুফরীর অর্থ হলো এই যে, ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করার ফলে ঐ ব্যক্তি কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। অধিকন্তু এখানে হাদীসের এ ব্যাখ্যাও করা যায় যে, মূল ঈমান কালিমায়ে শাহাদাতের উপর নির্ভরশীল এবং হযরত (সা)ও সাহাবায়ে কিরামের ঈমানের প্রতি দাওয়াত ও হিদায়াত এ কালিমার উপর নির্ভর করে থাকে। তাই হুযূর (সা) বলেছেনঃ
من قال لا إله الا الله فقد دخل الجنة * من شهد أن لا اله الا الله وأن محمدا رسول الله حرم الله عليه النار -
“যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" অথবা
“যে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করেছেন।"
এরূপ অন্যন্য সহীহ হাদীসের মধ্যে দোযখ হারাম হওয়া অথবা বেহেশতে প্রবেশ করা শুধু কালিমায়ে শাহাদাতের উপর নির্ভরশীল বলা হয়েছে।
সুনানে আবূ দাউদে হযরত আনাস (রা) থেকে একটি মরফূ' হাদীস উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ঈমানের ভিত্তি হলো তিনটি বস্তুর উপর।
* প্রকৃতপক্ষে এটি মুতাযিলাদের অভিমত নয়। বরং তাদের অভিমত হলো, মুমিন ব্যক্তি গুনাহে কবীরার কারণে ঈমানের সীমানা থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু কুফরীর সীমানায় দাখিল হয় না। মূলতঃ তারা منزلة بين المنزلتين - এর পক্ষে রায় দিয়ে থাকে। - শরহে আকাইদে নাসাফী
এ মাসয়ালাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি দল বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেছে। খারিজীদের মতবাদ হলো এই যে, গুনাহে কবীরায় লিপ্ত ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হয়ে যায়। দলীল হিসেবে তারা এ হাদীস পেশ করে বলেন, হুযুর (সা) বলেছেনঃ
لايزني الزاني وهو مؤمن ولا يسرق السارق وهو مؤمن
“জিনাকারী জিনারত অবস্থায় এবং চোর চুরি করা অবস্থায় মুমিন থাকে না।" কিন্তু এ অবস্থায়ও তাদের ঈমান থাকার ব্যাপারে হাদীসে যে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, তা তারা গোপন রেখেছেন। যেমন অপর একটি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ঈমান গ্রহণের পর কোন গুনাহ মুমিনের ঈমানকে ক্ষতি করতে পারে না; বরং তারা বিনাবাধায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা দলীল হিসেবে এ হাদীস পেশ করে বলেন, হযরত (সা) বলেছেন: من قال لا إله الا الله فقد دخل الجنة “যে ব্যক্তি তাওহীদের এই কালিমা পাঠ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" এ দল নাফরমানদের আযাব ও শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে যে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, তা তারা গোপন রেখেছে। আর মু'তাযিলাগণ কুফর ও ঈমানের মধ্যে একটি স্তর মেনে থাকে। তাদের মত হল, কাফির কালিমা পাঠের দ্বারা কুফরী থেকে এবং মুমিন গুনাহ্ কবীরা দ্বারা ঈমান থেকে বিচ্যুত হতে পারে না; বরং গুনাহ কবীরার কারণে একজন মুমিনকে শুধু ফাসিক বলা যেতে পারে।*
উল্লেখিত হাদীস ঐ লোকদের ভুল ধারণাকে দূরীভূত করেছে যারা হুযূর (সা)-এর হাদীসঃ من ترك الصلاة متعمدا فقد كفر (যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায পরিত্যাগ করে সে কাফির হয়ে যায়)-এর প্রেক্ষিতে এরূপ প্রত্যেক ব্যক্তিকে কাফির মনে করে থাকে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামায পরিত্যাগ করে। যদিও হাদীসের বাহ্যিক অর্থ উপরোক্ত বিষয়কেই প্রকাশ করেছে কিন্তু এখানে হাদীসের মূল অর্থ এ নয় যে, নামায পরিত্যাগকারী ঈমানের গভীর সীমানা থেকে বহির্ভূত হয়ে প্রকৃত কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, বরং এখানে কুফরীর অর্থ হলো এই যে, ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করার ফলে ঐ ব্যক্তি কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। অধিকন্তু এখানে হাদীসের এ ব্যাখ্যাও করা যায় যে, মূল ঈমান কালিমায়ে শাহাদাতের উপর নির্ভরশীল এবং হযরত (সা)ও সাহাবায়ে কিরামের ঈমানের প্রতি দাওয়াত ও হিদায়াত এ কালিমার উপর নির্ভর করে থাকে। তাই হুযূর (সা) বলেছেনঃ
من قال لا إله الا الله فقد دخل الجنة * من شهد أن لا اله الا الله وأن محمدا رسول الله حرم الله عليه النار -
“যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" অথবা
“যে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করেছেন।"
এরূপ অন্যন্য সহীহ হাদীসের মধ্যে দোযখ হারাম হওয়া অথবা বেহেশতে প্রবেশ করা শুধু কালিমায়ে শাহাদাতের উপর নির্ভরশীল বলা হয়েছে।
সুনানে আবূ দাউদে হযরত আনাস (রা) থেকে একটি মরফূ' হাদীস উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ঈমানের ভিত্তি হলো তিনটি বস্তুর উপর।
* প্রকৃতপক্ষে এটি মুতাযিলাদের অভিমত নয়। বরং তাদের অভিমত হলো, মুমিন ব্যক্তি গুনাহে কবীরার কারণে ঈমানের সীমানা থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু কুফরীর সীমানায় দাখিল হয় না। মূলতঃ তারা منزلة بين المنزلتين - এর পক্ষে রায় দিয়ে থাকে। - শরহে আকাইদে নাসাফী
