আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬১- রোগীদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫২৬১
আন্তর্জাতিক নং: ৫৬৬৩
২৯৯৪. রোগীর দেখাশুনা করা, অশ্বারোহী অবস্থায়, পায়ে চলা অবস্থায়, এবং গাধার পিঠে সাওয়ারী অবস্থায়
৫২৬১। ইয়াহয়া ইবনে বুকায়র (রাহঃ) ......... উসামা ইবনে যায়দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম (ﷺ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করলেন। গাধাটির পিঠে ছিল ‘ফাদক’ এলাকায় তৈরী চাদর মোড়ানো একটি গদি। তিনি নিজের পেছনে উসামা (রাযিঃ) -কে বসিয়ে অসুস্থ সা’দ ইবনে ‘উবাদা (রাযিঃ) কে দেখতে গিয়েছিলেন। এটা বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। নবী করীম (ﷺ) চলতে চলতে এক পর্যায়ে এক মজলিসের পাশ অতিক্রম করতে লাগলেন। সেখানে ছিল ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। এ ঘটনা ছিল ‘আব্দুল্লাহর ইসলাম গ্রহণের আগের। মজলিসটির মধ্যে মুসলিম, মুশরিক, মূর্তিপূজক ও ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের লোকও ছিল। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাযিঃ)-ও সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। সাওয়ারী জানোয়ারটির পায়ের ধূলা-বালি যখন মজলিসের লোকদের মাঝে উড়াতে লাগল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার চাঁদর দিয়ে নিজের নাক চেপে ধরল এবং বলল আমাদের উপর ধূলা-বালু উড়াবেন না।

নবী করীম (ﷺ) সালাম দিলেন এবং নীচে অবতরণ করে তাদের আল্লাহর প্রতি আহবান জানালেন। এরপর তিনি তাদের সামনে কুরআন পাঠ করলেন। তখন ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁকে বললঃ জনাব, আপনি যা বলেছেন আমার কাছে তা পছন্দনীয় নয়। যদি এ সব কথা সত্য হয়, তাহলে আপনি এ মজলিসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। বরং আপনি নিজ বাড়ীতে চলে যান এবং সেখানে যে আপনার কাছে যাবে, তার কাছে এসব বৃত্তান্ত প্রকাশ করবেন। ইবনে রাওয়াহা বলে উঠলেনঃ অবশ্যই, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এসব বক্তব্য নিয়ে আমাদের মজলিসে আসবেন। আমরা এগুলো পছন্দ করি। এরপর মুসলিম, মুশরিক, ও ইয়াহুদীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা আরম্ভ হয়ে গেল, এমন কি তারা পরস্পর মারামারি করতে উদ্যত হলো।

নবী করীম (ﷺ) তাদের শান্ত ও নীরব করতে চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে সবাই শান্ত হলে নবী করীম (ﷺ) সাওয়ারীর উপর আরোহন করেন এবং সা‘দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) এর বাড়ীতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি তাঁকে অর্থাৎ সা‘দ (রাযিঃ) -কে বললেন: তুমি কি শুনতে পাওনি ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কি উক্তি করেছে? সা‘দ (রাযিঃ) উত্তর দিলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। আল্লাহ আপনাকে যে মর্যাদা দান করার ইচ্ছা করেছেন তা দান করেছেন। আমাদের এ উপদ্বীপ এলাকার লোকজন একমত হয়েছিল তাকে রাজমুকট পরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তাকে নেতৃত্ব দান করার জন্য। এরপর যখন আপনাকে আল্লাহ যে হক ও সত্য দান করেছেন তখন এর দ্বারা তার ইচ্ছা পণ্ড হয়ে গেল। এতে সে গভীর মনোক্ষুণ্ণ হল। আর আপনি তার যে আচরণ দেখলেন, তার কারণ এটাই।
باب عِيَادَةِ الْمَرِيضِ رَاكِبًا وَمَاشِيًا وَرِدْفًا عَلَى الْحِمَارِ
5663 - حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ، أَنَّ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:119] رَكِبَ عَلَى حِمَارٍ، عَلَى إِكَافٍ عَلَى قَطِيفَةٍ فَدَكِيَّةٍ، وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ وَرَاءَهُ، يَعُودُ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ، فَسَارَ حَتَّى مَرَّ بِمَجْلِسٍ فِيهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ ابْنُ سَلُولَ، وَذَلِكَ قَبْلَ أَنْ يُسْلِمَ عَبْدُ اللَّهِ، وَفِي المَجْلِسِ أَخْلاَطٌ مِنَ المُسْلِمِينَ وَالمُشْرِكِينَ عَبَدَةِ الأَوْثَانِ وَاليَهُودِ، وَفِي المَجْلِسِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوَاحَةَ، فَلَمَّا غَشِيَتِ المَجْلِسَ عَجَاجَةُ الدَّابَّةِ، خَمَّرَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ أَنْفَهُ بِرِدَائِهِ، قَالَ: لاَ تُغَبِّرُوا عَلَيْنَا، فَسَلَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَوَقَفَ، وَنَزَلَ فَدَعَاهُمْ إِلَى اللَّهِ فَقَرَأَ عَلَيْهِمُ القُرْآنَ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ: يَا أَيُّهَا المَرْءُ، إِنَّهُ لاَ أَحْسَنَ مِمَّا تَقُولُ إِنْ كَانَ حَقًّا، فَلاَ تُؤْذِنَا بِهِ فِي مَجْلِسِنَا، وَارْجِعْ إِلَى رَحْلِكَ، فَمَنْ جَاءَكَ فَاقْصُصْ عَلَيْهِ، قَالَ ابْنُ رَوَاحَةَ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَاغْشَنَا بِهِ فِي مَجَالِسِنَا، فَإِنَّا نُحِبُّ ذَلِكَ، فَاسْتَبَّ المُسْلِمُونَ وَالمُشْرِكُونَ وَاليَهُودُ حَتَّى كَادُوا يَتَثَاوَرُونَ، فَلَمْ يَزَلِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى سَكَتُوا، فَرَكِبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَابَّتَهُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، فَقَالَ لَهُ: «أَيْ سَعْدُ، أَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالَ أَبُو حُبَابٍ؟» - يُرِيدُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَيٍّ - قَالَ سَعْدٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اعْفُ عَنْهُ وَاصْفَحْ، فَلَقَدْ أَعْطَاكَ اللَّهُ مَا أَعْطَاكَ، وَلَقَدِ اجْتَمَعَ أَهْلُ هَذِهِ البَحْرَةِ عَلَى أَنْ يُتَوِّجُوهُ فَيُعَصِّبُوهُ، فَلَمَّا رَدَّ ذَلِكَ بِالحَقِّ الَّذِي أَعْطَاكَ شَرِقَ بِذَلِكَ، فَذَلِكَ الَّذِي فَعَلَ بِهِ مَا رَأَيْتَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যদি এমন কোনও স্থানে যাওয়া হয়, যেখানে মুসলিম-অমুসলিম বিভিন্ন শ্রেণির লোক আছে, তবে সালাম দেওয়া হবে কি না? আলোচ্য হাদীছটিতে তার উত্তর পাওয়া যায়। একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরকম একটি মজলিসের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে মজলিসে মুসলিম, ইহুদি ও অগ্নিপূজারী তিনও শ্রেণির লোক ছিল।

কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তিনি যাচ্ছিলেন হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি.-কে দেখতে। তিনি অসুস্থ ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসটির নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত লোকদের সালাম দিলেন। বলাবাহুল্য তাঁর সে সালামের লক্ষ্যবস্তু ছিল মুসলিমগণ। কেননা অমুসলিমদের সালাম দেওয়া যায় না। হাদীসে আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা ইহুদি ও নাসারাকে আগে সালাম দিয়ো না। (সহীহ মুসলিম : : ২১৬৭; জামে তিরমিযী : ২৭০০; মুসনাদে আহমাদ: ৮৫৪০; মুসনাদুল ববযার: ৯০৫২; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ৭২৬০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৫১২)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যেখানে মুসলিম-অমুসলিম সবরকম লোক থাকে, সেরকম জায়গায় গেলে সালাম দেওয়া চাই। তাতে লক্ষ্যবস্তু থাকবে মুসলিমগণ।

খ. প্রয়োজনে অমুসলিমদের সঙ্গে এক মজলিসে উপস্থিত থাকা যেতে পারে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে নিজের উপর তাদের কোনও প্রভাব না পড়ে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৫২৬১ | মুসলিম বাংলা