আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬১- রোগীদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫২৬০
আন্তর্জাতিক নং: ৫৬৬২
২৯৯৩. রোগীর সামনে কী বলতে হবে এবং তাকে কী জবাব দিতে হবে
৫২৬০। ইসহাক (রাহঃ) ......... ইবনে ‘আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক রোগীকে দেখার জন্য তার কাছে প্রবেশ করলেন। তখন তিনি বলেনঃ কোন ক্ষতি নেই, ইনশাআল্লাহ গুনাহ থেকে তোমার পবিত্রতা লাভ হবে। রোগী বলে উঠলঃ কখনো না বরং এটি এমন জ্বর, যা এক অতি বৃদ্ধের গায়ে টগবগ করছে আশঙ্কা হয় যেন তাকে কবরে পৌঁছাবে। নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ, হবে তাই।
باب مَا يُقَالُ لِلْمَرِيضِ وَمَا يُجِيبُ
5662 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ خَالِدٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى رَجُلٍ يَعُودُهُ، فَقَالَ: «لاَ بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» فَقَالَ: كَلَّا، بَلْ حُمَّى تَفُورُ، عَلَى شَيْخٍ كَبِيرٍ، كَيْمَا تُزِيرَهُ القُبُورَ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَنَعَمْ إِذًا»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এক বেদুঈন সাহাবী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সংবাদ পেয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। তাঁর নাম ছিল কায়স ইবন আবূ হাযিম। বেদুঈন শব্দটি এসেছে 'বাদিয়া' থেকে। এর অর্থ মরুপল্লী। ওই সাহাবী মরুপল্লীতে বাস করতেন। তা সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা মুনাউওয়ারা থেকে তাঁকে দেখতে যান। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মহানুভব ও দয়ালু। কোনও সাহাবী অসুস্থ হলে তিনি তাকে দেখার জন্য চলে যেতেন। তা দূরে হলেও। এমনকি সাধারণ স্তরের লোক হলেও। সাহাবীদের মধ্যে এই বেদুঈন ব্যক্তি বিশিষ্টজন ছিলেন না। তা সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখার জন্য চলে গেছেন। তিনি তাঁর অভ্যাসমতো তাকে লক্ষ্য করেও বলেছেন- لا بأس؛ طهور إن شَاءَ الله (কোনও অসুবিধা নেই। ইনশাআল্লাহ এটা পবিত্রতা দানকারী)। এই বলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দান করেছেন। অর্থাৎ তুমি বিচলিত হয়ো না। সবর করো। আল্লাহ তা'আলা এ রোগের মাধ্যমে তোমাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন। এর মাধ্যমে তুমি আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করতে পারবে। সে পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি আখিরাতের জন্য তো বটেই, তোমার ইহজীবনের পক্ষেও কল্যাণকর হবে। মানুষ যদি গুনাহমুক্ত হতে পারে এবং তার আখলাক-চরিত্র উন্নত হয়ে যায়, তবে পার্থিব জীবনেও সে তার সুফল ভোগ করতে পারবে। কাজেই রোগ-ব্যাধিতে নগদ কিছু কষ্ট হলেও পরিণামের দিক থেকে তা কল্যাণকর। সে দৃষ্টিতে রোগ-ব্যাধি অসুবিধার কিছু নয়; বরং বড়ই সুবিধাবাহী ও উপকারী বিষয়। তাই অসুখ-বিসুখ দেখা দিলে সবর করা উচিত, ধৈর্য ধরা উচিত। তার মানে এ নয় যে, আরোগ্যের জন্য দু'আ করবে না। দু'আ অবশ্যই করবে। সবর করার অর্থ হল সে অস্থির হয়ে লোকজনকে পেরেশান করবে না। তাকদীরকে দোষারোপ করবে না। আল্লাহর ফয়সালাকেও আপত্তির দৃষ্টিতে দেখবে না। অহেতুক মানুষের কাছে বলে বেড়াবে না। দু'আ বা পরামর্শের জন্য বললে তা দোষের নয়। যাহোক এর দ্বারা জানা গেল যে, রোগী দেখতে গিয়ে যেসব দু'আ পড়তে হয়। তার মধ্যে একটি হল- لا بأس؛ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ الله (কোনও অসুবিধা নেই। ইনশাআল্লাহ এটা পবিত্রতা দানকারী)।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওই ব্যক্তিকে বললেন। 'কোনও অসুবিধা নেই। ইনশাআল্লাহ এটা পবিত্রতা দানকারী', তখন তিনি বলে উঠেছিলেন- طَهُورٌ بَلْ هِيَ حُمى تَفُورُ عَلَى شَيْخ كَبِيرٍ تُزِيْرُهُ الْقُبُورَ (পবিত্রতা দানকারী? বরং এ জ্বর এক অতিশয় বৃদ্ধের উপর টগবগ করে ফুটছে, যা তাকে কবরের সাক্ষাৎ করাবে)। বেদুঈন ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া সান্ত্বনাবাক্য ও সুসংবাদকে খুশির সঙ্গে গ্রহণ করেনি। বরং তা প্রত্যাখ্যান করে বর্তমান কষ্টকেই বড় করে দেখেছে এবং সে তার জ্বরকে অশুভ বলে গণ্য করেছে। সে ধরে নিয়েছে এতেই তার মৃত্যু ঘটবে। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
فنعم إذا (তাহলে তাই হবে)। তাবারানীর বর্ণনায় আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ উক্তির পর পূর্বোক্ত সান্ত্বনাবাক্যটির পুনরাবৃত্তি করেন। কিন্তু বেদুঈন ব্যক্তি একই কথা বলল। এভাবে তিনবার। শেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাছ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন কথাটা মানলে না, তখন তুমি যেমন বলছ তাই হবে। অর্থাৎ তুমি যখন বিষয়টিকে অশুভ গণ্য করলে, তখন বাস্তবে তাই হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ মন্তব্য সত্যে পরিণত হয়েছিল। পরের দিনই সে ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে যায়। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৭২১৩)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির উচিত সাধারণ স্তরের কোনও লোক অসুস্থ হলে তাকেও দেখতে যাওয়া।

খ. রোগী দেখতে গিয়ে তাকে সান্ত্বনাবাক্য শোনানো উচিত। তাতে রোগযন্ত্রণা লাঘব হয়। এর জন্য উত্তম হল হাদীছে বর্ণিত এ দু'আ পড়া- لا بأس؛ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ الله

গ. রোগীর উচিত তাকে শোনানো সান্ত্বনামূলক কথা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করা এবং কোনও সুসংবাদ দেওয়া হলে এ কথা মনে করা যে, আল্লাহ তা'আলাই বক্তাকে দিয়ে তা বলাচ্ছেন।

ঘ. রোগ-ব্যাধিকে কখনও অশুভ মনে করতে নেই। বরং তার বিনিময়ে যে ছাওয়াব ও প্রতিদানের ওয়াদা আছে তার প্রতি বিশ্বাস রেখে ধৈর্যধারণ করা চাই।

ঙ. রোগ-ব্যাধিতে সবর করলে গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন