আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ- ইমাম তিরমিযী রহঃ

শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হুলিয়া মুবারক (দৈহিক গঠন)
৮।সুফয়ান ইবন ওয়াকী (রাহঃ)..... হাসান ইবন আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার মামা হিন্দ ইবন আবু হালাহ্ (রাযিঃ)-এর কাছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হুলিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি তাঁর হুলিয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আমি চাইছিলাম যে, তিনি আমাকে সে সম্পর্কে বিবরণ দিলে আমি তা আমার জন্য দলীল হিসেবে স্মৃতিপটে গেঁথে রাখবো। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন সম্মান ও মর্যাদার আঁধার। পূর্ণিমা রাত্রির চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর ন্যায় তাঁর চেহারা ঝলমল করত। তিনি মধ্যম আকৃতির চেয়ে অধিকতর দীর্ঘদেহী এবং অতিশয় দীর্ঘকায় ব্যক্তির চেয়ে খানিকটা খর্বকায় ছিলেন। তাঁর মাথা (তুলনামূলক) বড় এবং কেশরাজি কিছুটা কোঁকড়ানো ছিল। সহসা সিঁথি করা গেলে সিঁথি করতেন নতুবা সিঁথি করতেন না। তিনি তাঁর কেশরাজিকে যখন ‘অফরা’ করে কাটতেন তখন তা তাঁর উভয় কানের লতি অতিক্রম করত। তাঁর বর্ণ অতি প্রাঞ্জল এবং ললাটের উভয় পার্শ্ব প্রশস্ততর। তাঁর ভূযুগল বিমুক্ত বৃত্তাংশের ন্যায় বাঁকা, খুব সূক্ষ্ম তবে ঘন চুল বিশিষ্ট। আর ঐ ভুযুগলের মাঝে এমন একটি শিরা রয়েছে যা রাগের সময় অধিক রক্ত সঞ্চারিত হওয়ার ফলে ভেসে উঠত (প্রকাশ পেত)। তাঁর নাসিকা সুদীর্ঘ, অগ্রভাগ সরু এবং মধ্যভাগ ন্যুজ। তাঁর নাসিকায় এমন নূর (জ্যোতি) ছিল যা নাকের উপর বিকীর্ণ হত। কেউ গভীর অভিনিবেশ সহকারে তাঁর নাকের প্রতি না তাকালে অত্যুন্নত নাসা মনে করত। তাঁর দাঁড়ি ছিল বিস্তীর্ণ খুব ঘন, গদ্বয় মসৃণ এবং মুখ-বিবর প্রশস্ত। সম্মুখের উপরের পাটির দু’টি দাঁত ও নিম্নের পাটির দু’টি দাঁত আলাদা ছিল— মিলিত ছিল না। বক্ষদেশ থেকে নাভি পর্যন্ত প্রলম্বিত চুলের রেখাটি ছিল সরু। তাঁর গ্রীবা যেন হাতির দাঁত দ্বারা নির্মিত মোতির গ্রীবা কিন্তু তার শুভ্রতা রৌপ্যের ন্যায়। তাঁর দেহের গঠন ছিল শোভনীয় (সুসমঞ্জস) এবং মাংসপেশী ছিল সুদৃঢ় মজবুত। তাঁর পেট ও বক্ষ (সমান) উচ্চ এবং বক্ষদেশ প্রশস্ত। তাঁর এক কাঁধ থেকে অন্য কাঁধ অপেক্ষাকৃত দূরত্বে ছিল। তাঁর অস্থি গ্রন্থিগুলো স্থুল ছিল। আর সচরাচর অনাবৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো দীপ্তিমান ছিল। তাঁর বক্ষ ও নাভির মধ্যভাগ এমন কেশরাজি দ্বারা সংযুক্ত ছিল যা দেখতে যেন একটি প্রলম্বিত (সরু) রেখা। এতদ্ব্যতীত তাঁর পেট ও স্তনদেশ লোমশূন্য ছিল। তাঁর উভয় বাহু কাঁধের সংযোগস্থল ও বক্ষের উপরিভাগ লোমশ ছিল। তাঁর উভয় কনুই হতে কজি পর্যন্ত বাহুর অগ্রভাগ দীর্ঘ, হাতের তালু অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এবং হাত-পায়ের অঙ্গুলিগুলো মাংসল ও লম্বা লম্বা ছিল। তিনি খড়ম পরিধান করতেন। পথ চলার সময় ঐ অংশ মাটি স্পর্শ করত না। তাঁর পায়ের নীচের অংশ ছিল মসৃণ, পানি ঢাললে তৎক্ষণাৎ তা গড়িয়ে যেত। হ্যাঁটার সময় তিনি দৃঢ়তার সাথে পা তুলে চলতেন, সামনের দিকে ন্যুজ্ব হয়ে পা ফেলতেন এবং স্বচ্ছন্দ গতিতে চলতেন। পথ চলার সময় তিনি দ্রুত চলতেন, মনে হতো যেন উপর থেকে নীচে অবতরণ করছেন। তিনি কোন দিকে তাকালে সম্পূর্ণভাবে চেহারা ফিরাতেন। তিনি ছিলেন আনত নয়ন, আসমানের দিকে দৃষ্টি করার তুলনায় বেশীরভাগ তাঁর দৃষ্টি যমীনের দিকেই নিবদ্ধ থাকত। তাঁর দৃষ্টির পুরোটাই ছিল হালকা দৃষ্টি। তিনি তাঁর সাহাবাদের পেছনে থাকতেন। পথিমধ্যে যার সাক্ষাত হত, তাঁকেই তিনি প্রথম সালাম দিতেন।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ قَالَ: حَدَّثَنَا جُمَيْعُ بْنُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْعِجْلِيُّ إِمْلَاءً عَلَيْنَا مِنْ كِتَابِهِ قَالَ : أَخْبَرَنِي رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ مِنْ وَلَدِ أَبِي هَالَةَ زَوْجِ خَدِيجَةَ، يُكَنَى أَبَا عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنٍ لِأَبِي هَالَةَ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ: سَأَلْتُ خَالِي هِنْدَ بْنَ أَبِي هَالَةَ، وَكَانَ وَصَّافًا، عَنْ حِلْيَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنَا أَشْتَهِي أَنْ يَصِفَ لِي مِنْهَا شَيْئًا أَتَعَلَّقُ بِهِ، فَقَالَ: " كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخْمًا مُفَخَّمًا، يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهُ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، أَطْوَلُ مِنَ الْمَرْبُوعِ، وَأَقْصَرُ مِنَ الْمُشَذَّبِ، عَظِيمُ الْهَامَةِ، رَجِلُ الشَّعْرِ، إِنِ انْفَرَقَتْ عَقِيقَتُهُ فَرَّقَهَا، وَإِلَّا فَلَا يُجَاوِزُ شَعْرُهُ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ إِذَا هُوَ وَفَّرَهُ، أَزْهَرُ اللَّوْنِ، وَاسِعُ الْجَبِينِ، أَزَجُّ الْحَوَاجِبِ سَوَابِغَ فِي غَيْرِ قَرَنٍ، بَيْنَهُمَا عِرْقٌ يُدِرُّهُ الْغَضَبُ، أَقْنَى الْعِرْنَيْنِ، لَهُ نُورٌ يَعْلُوهُ، يَحْسَبُهُ مَنْ لَمْ يَتَأَمَّلْهُ أَشَمَّ، كَثُّ اللِّحْيَةِ، سَهْلُ الْخدَّيْنِ، ضَلِيعُ الْفَمِ، مُفْلَجُ الْأَسْنَانِ، دَقِيقُ الْمَسْرُبَةِ، كَأَنَّ عُنُقَهُ جِيدُ دُمْيَةٍ فِي صَفَاءِ الْفِضَّةِ، مُعْتَدِلُ الْخَلْقِ، بَادِنٌ مُتَمَاسِكٌ، سَوَاءُ الْبَطْنِ وَالصَّدْرِ، عَرِيضُ الصَّدْرِ، بَعِيدُ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ، ضَخْمُ الْكَرَادِيسِ، أَنْوَرُ الْمُتَجَرَّدِ، مَوْصُولُ مَا بَيْنَ اللَّبَّةِ وَالسُّرَّةِ بِشَعْرٍ يَجْرِي كَالْخَطِّ، عَارِي الثَّدْيَيْنِ وَالْبَطْنِ مِمَّا سِوَى ذَلِكَ، أَشْعَرُ الذِّرَاعَيْنِ وَالْمَنْكِبَيْنِ وَأَعَالِي الصَّدْرِ، طَوِيلُ الزَّنْدَيْنِ، رَحْبُ الرَّاحَةِ، شَثْنُ الْكَفَّيْنِ وَالْقَدَمَيْنِ، سَائِلُ الْأَطْرَافِ - أَوْ قَالَ: شَائِلُ الْأَطْرَافِ - خَمْصَانُ الْأَخْمَصَيْنِ، مَسِيحُ الْقَدَمَيْنِ، يَنْبُو عَنْهُمَا الْمَاءُ، إِذَا زَالَ زَالَ قَلِعًا، يَخْطُو تَكَفِّيًا، وَيَمْشِي هَوْنًا، ذَرِيعُ الْمِشْيَةِ، إِذَا مَشَى كَأَنَّمَا يَنْحَطُّ مِنْ صَبَبٍ، وَإِذَا الْتَفَتَ الْتَفَتَ جَمِيعًا، خَافِضُ الطَّرْفِ، نَظَرُهُ إِلَى الْأَرْضِ أَطْوَلُ مِنْ نَظَرِهِ إِلَى السَّمَاءِ، جُلُّ نَظَرِهِ الْمُلَاحَظَةُ، يَسُوقُ أَصْحَابَهُ وَيَبْدَأُ مَنْ لَقِيَ بِالسَّلَامِ "
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
শামাঈলে তিরমিযী - হাদীস নং ৮ | মুসলিম বাংলা