শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২১. মাকরুহ বিষয়াদির বর্ণনা
হাদীস নং: ৭০৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ৭০৬০
রুগ্ন ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে কিনা
৭০৫৯-৬০। হুসায়ন ইবনুল হাকাম আল-হিবারী (রাহঃ) ও সুলায়মান ইবন শুআয়ব (রাহঃ) ...... তারিক ইবন শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ)-এর সঙ্গে আলোচনা করতাম। একদিন তিনি আমাদেরকে বললেন, যদি তোমরা আমার থেকে লুকাও তবে কোন অসুবিধা নেই। নিশ্চয়ই আমার গৃহ প্লেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমাদের থেকে যে ব্যক্তি এর থেকে বাঁচতে চায় সে যেন বাঁচে। দুটি বস্তু থেকে বিরত থাক যে, কোন মন্তব্যকারী মন্তব্য করে বলে যে, বহির্গমনকারী বেরিয়ে গেছে এবং নিরাপদ রয়েছে। অবস্থানকারী অবস্থান করছে এবং এই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। যদি আমিও বেরিয়ে পড়তাম তবে অমুকের ন্যায় নিরাপদ থাকতাম। অথবা কোন ব্যক্তি এরূপ বলা যে, আমি যদি সেখানে বসে থাকতাম বা অবস্থান করতাম তাহলে আমিও এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হতাম যেমন অমুক আক্রান্ত হয়েছে। আমি অতি সত্ত্বর সেই বিষয়টি বর্ণনা করব যা প্লেগাক্রান্ত অবস্থায় মানুষের জন্য সমীচীন। আমি আবু উবায়দা (রাযিঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় সিরিয়া (অঞ্চল) প্লেগাত্রান্ত হলাে। উমর (রাযিঃ) তাঁকে লিখলেন, যখনই আমার এই পত্র তোমার নিকট পৌছায় আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি যে, যদি এই পত্র তোমার নিকট ভোরবেলায় পৌঁছায়, তাহলে সন্ধ্যাবেলার পূর্বে সওয়ার হয়ে যাবে। যদি তা সন্ধ্যাবেলায় পৌঁছায়, তাহলে ভোরের পূর্বেই সওয়ার হয়ে আমার নিকট চলে এস। তোমার সঙ্গে আমার একটি কাজ রয়েছে যা থেকে আমি তোমার থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারি না । যখন আবু উবায়দা (রাযিঃ) পত্র পাঠ করলেন, বললেন, আমীরুল মু'মিনীন চাচ্ছেন, যে সমস্ত লোক বাকী বা অবশিষ্ট থাকার নয়, তাদেরকে অবশিষ্ট রাখা । অনন্তর আবু উবায়দা (রাযিঃ) তাঁকে লিখলেন যে, আমি মুসলিম সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে রয়েছি। আমি কি পরীক্ষা এবং গোপন বিষয় থেকে পলায়ন করব? আমি আমাকে তাদের থেকে কস্মিনকালেও দূর করব না। আমি আমীরুল মু'মিনীন (রাযিঃ)-এর প্রয়োজন বুঝতে পেরেছি। সুতরাং আপনার সংকল্পকে আমার উপর স্পষ্ট করে দিন। যখন উমর (রাযিঃ)-এর নিকট (জবাব) পত্র এল, তিনি কেঁদে ফেলেন । তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আবু উবায়দা (রাযিঃ) কি ইন্তেকাল করে গেছেন? বললেন, না। উমর (রাযিঃ) তাঁকে এটিও লিখেছিলেন যে, উর্দুন গভীর ভূমি এবং 'জাবিয়া' চমৎকার ভূমি। অতএব মুসলমানদেরকে জাবিয়ায় নিয়ে যাও। আবু উবায়দা (রাযিঃ) আমাকে বললেন, যাও, মুসলমানদেরকে তাদের ঠিকানায় আশ্রয় দাও। বলেন, আমি বললাম যে, আমি এর সামর্থ্য রাখি না। তিনি বলেন, এরপর তিনি সওয়ার হতে গেলেন তখন লোকদের থেকে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন যে, তাঁকে প্লেগ আক্রান্ত করে ফেলেছে এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন (শহীদ হন) । আর প্লেগ বিস্তৃত হয়ে পড়েছে।
এঁরা বলেন, ইনি হলেন উমর (রাযিঃ) যিনি লোকদেরকে প্লেগ (আক্রান্ত জায়গা) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সাহাবাগণ তাঁর সমর্থন করেছেন। অধিকন্তু আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে এর সমর্থনে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রাযিঃ) ব্যতীত অন্যদের দ্বারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে যা আব্দুর রহমান (রাযিঃ) রিওয়ায়াত করেছেন। যা নিম্নরূপ :
এঁরা বলেন, ইনি হলেন উমর (রাযিঃ) যিনি লোকদেরকে প্লেগ (আক্রান্ত জায়গা) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সাহাবাগণ তাঁর সমর্থন করেছেন। অধিকন্তু আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে এর সমর্থনে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রাযিঃ) ব্যতীত অন্যদের দ্বারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে যা আব্দুর রহমান (রাযিঃ) রিওয়ায়াত করেছেন। যা নিম্নরূপ :
7059 - حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ الْحَكَمِ الْجِيزِيُّ، قَالَ: ثنا عَاصِمُ بْنُ عَلِيٍّ ح
7060 - وَحَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ شُعَيْبٍ، قَالَ: ثنا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زِيَادٍ، قَالَا: ثنا شُعْبَةُ بْنُ الْحَجَّاجِ، عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ طَارِقَ بْنَ شِهَابٍ، قَالَ: كُنَّا نَتَحَدَّثُ إِلَى أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ. فَقَالَ لَنَا ذَاتَ يَوْمٍ لَا عَلَيْكُمْ أَنْ تَخْفُوا عَنِّي , فَإِنَّ هَذَا الطَّاعُونَ قَدْ وَقَعَ فِي أَهْلِي , فَمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَنَزَّهَ فَلْيَتَنَزَّهْ , وَاحْذَرُوا اثْنَتَيْنِ , أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ: خَرَجَ خَارِجٌ فَسَلِمَ , وَجَلَسَ جَالِسٌ فَأُصِيبَ , لَوْ كُنْتُ خَرَجْتُ لَسَلِمْتُ كَمَا سَلِمَ آلُ فُلَانٍ أَوْ يَقُولُ قَائِلٌ: لَوْ كُنْتُ جَلَسْتُ لَأُصِبْتُ كَمَا أُصِيبَ آلُ فُلَانٍ , وَإِنِّي سَأُحَدِّثُكُمْ مَا يَنْبَغِي لِلنَّاسِ فِي الطَّاعُونِ , إِنِّي كُنْتُ مَعَ أَبِي عُبَيْدَةَ , وَأَنَّ الطَّاعُونَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ , وَأَنَّ عُمَرَ كَتَبَ إِلَيْهِ إِذَا أَتَاكَ كِتَابِي هَذَا , فَإِنِّي أَعْزِمُ عَلَيْكَ , لِمَنْ أَتَاكَ مُصْبِحًا , لَا تُمْسِي حَتَّى تَرْكَبَ , وَإِنْ أَتَاكَ مُمْسِيًا , لَا تُصْبِحُ حَتَّى تَرْكَبَ إِلَيَّ فَقَدْ عَرَضَتْ لِي إِلَيْكَ حَاجَةٌ لَا غِنَى لِي عَنْكَ فِيهَا. فَلَمَّا قَرَأَ أَبُو عُبَيْدَةَ الْكِتَابَ قَالَ: إِنَّ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَرَادَ أَنْ يُسْتَبْقَى مَنْ لَيْسَ بِبَاقٍ. فَكَتَبَ إِلَيْهِ أَبُو عُبَيْدَةَ إِنِّي فِي جُنْدٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ , إِنِّي فَرَرْتُ مِنَ الْمَنَاةِ وَالسَّيْرِ لَنْ أَرْغَبَ بِنَفْسِي عَنْهُمْ , وَقَدْ عَرَفْنَا حَاجَةَ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ , فَحَلِّلْنِي مِنْ عَزْمَتِكَ. فَلَمَّا جَاءَ عُمَرَ , الْكِتَابُ بَكَى , فَقِيلَ لَهُ: تُوُفِّيَ أَبُو عُبَيْدَةَ؟ قَالَ: لَا , وَكَانَ قَدْ كَتَبَ إِلَيْهِ عُمَرُ: إِنَّ الْأُرْدُنَّ أَرْضٌ عَمِقَةٌ , وَإِنَّ الْجَابِيَةَ أَرْضُ نُزْهَةٍ، فَانْهَضْ بِالْمُسْلِمِينَ إِلَى الْجَابِيَةِ. فَقَالَ لِي أَبُو عُبَيْدَةَ: انْطَلِقْ فَبَوِّئِ الْمُسْلِمِينَ مَنْزِلَهُمْ , فَقُلْتُ: لَا أَسْتَطِيعُ. قَالَ: فَذَهَبَ لِيَرْكَبَ وَقَالَ لِي رَجُلٌ مِنَ النَّاسِ قَالَ: فَأَخَذَهُ أَخْذَةٌ , فَطُعِنَ فَمَاتَ , وَانْكَشَفَ الطَّاعُونُ " قَالُوا: فَهَذَا عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَدْ أَمَرَ النَّاسَ أَنْ يَخْرُجُوا مِنَ الطَّاعُونِ , وَوَافَقَهُ عَلَى ذَلِكَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَوَى عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُوَافِقُ مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ مِنْ ذَلِكَ. وَقَدْ رُوِيَ عَنْ غَيْرِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مِثْلِ هَذَا , مَا رَوَى عَبْدُ الرَّحْمَنِ
7060 - وَحَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ شُعَيْبٍ، قَالَ: ثنا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زِيَادٍ، قَالَا: ثنا شُعْبَةُ بْنُ الْحَجَّاجِ، عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ طَارِقَ بْنَ شِهَابٍ، قَالَ: كُنَّا نَتَحَدَّثُ إِلَى أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ. فَقَالَ لَنَا ذَاتَ يَوْمٍ لَا عَلَيْكُمْ أَنْ تَخْفُوا عَنِّي , فَإِنَّ هَذَا الطَّاعُونَ قَدْ وَقَعَ فِي أَهْلِي , فَمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَنَزَّهَ فَلْيَتَنَزَّهْ , وَاحْذَرُوا اثْنَتَيْنِ , أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ: خَرَجَ خَارِجٌ فَسَلِمَ , وَجَلَسَ جَالِسٌ فَأُصِيبَ , لَوْ كُنْتُ خَرَجْتُ لَسَلِمْتُ كَمَا سَلِمَ آلُ فُلَانٍ أَوْ يَقُولُ قَائِلٌ: لَوْ كُنْتُ جَلَسْتُ لَأُصِبْتُ كَمَا أُصِيبَ آلُ فُلَانٍ , وَإِنِّي سَأُحَدِّثُكُمْ مَا يَنْبَغِي لِلنَّاسِ فِي الطَّاعُونِ , إِنِّي كُنْتُ مَعَ أَبِي عُبَيْدَةَ , وَأَنَّ الطَّاعُونَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ , وَأَنَّ عُمَرَ كَتَبَ إِلَيْهِ إِذَا أَتَاكَ كِتَابِي هَذَا , فَإِنِّي أَعْزِمُ عَلَيْكَ , لِمَنْ أَتَاكَ مُصْبِحًا , لَا تُمْسِي حَتَّى تَرْكَبَ , وَإِنْ أَتَاكَ مُمْسِيًا , لَا تُصْبِحُ حَتَّى تَرْكَبَ إِلَيَّ فَقَدْ عَرَضَتْ لِي إِلَيْكَ حَاجَةٌ لَا غِنَى لِي عَنْكَ فِيهَا. فَلَمَّا قَرَأَ أَبُو عُبَيْدَةَ الْكِتَابَ قَالَ: إِنَّ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَرَادَ أَنْ يُسْتَبْقَى مَنْ لَيْسَ بِبَاقٍ. فَكَتَبَ إِلَيْهِ أَبُو عُبَيْدَةَ إِنِّي فِي جُنْدٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ , إِنِّي فَرَرْتُ مِنَ الْمَنَاةِ وَالسَّيْرِ لَنْ أَرْغَبَ بِنَفْسِي عَنْهُمْ , وَقَدْ عَرَفْنَا حَاجَةَ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ , فَحَلِّلْنِي مِنْ عَزْمَتِكَ. فَلَمَّا جَاءَ عُمَرَ , الْكِتَابُ بَكَى , فَقِيلَ لَهُ: تُوُفِّيَ أَبُو عُبَيْدَةَ؟ قَالَ: لَا , وَكَانَ قَدْ كَتَبَ إِلَيْهِ عُمَرُ: إِنَّ الْأُرْدُنَّ أَرْضٌ عَمِقَةٌ , وَإِنَّ الْجَابِيَةَ أَرْضُ نُزْهَةٍ، فَانْهَضْ بِالْمُسْلِمِينَ إِلَى الْجَابِيَةِ. فَقَالَ لِي أَبُو عُبَيْدَةَ: انْطَلِقْ فَبَوِّئِ الْمُسْلِمِينَ مَنْزِلَهُمْ , فَقُلْتُ: لَا أَسْتَطِيعُ. قَالَ: فَذَهَبَ لِيَرْكَبَ وَقَالَ لِي رَجُلٌ مِنَ النَّاسِ قَالَ: فَأَخَذَهُ أَخْذَةٌ , فَطُعِنَ فَمَاتَ , وَانْكَشَفَ الطَّاعُونُ " قَالُوا: فَهَذَا عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَدْ أَمَرَ النَّاسَ أَنْ يَخْرُجُوا مِنَ الطَّاعُونِ , وَوَافَقَهُ عَلَى ذَلِكَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَوَى عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُوَافِقُ مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ مِنْ ذَلِكَ. وَقَدْ رُوِيَ عَنْ غَيْرِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مِثْلِ هَذَا , مَا رَوَى عَبْدُ الرَّحْمَنِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
'তাউন' প্লেগরোগকেও বলে আবার অন্য যে-কোনও মহামারিকেও বলে, যেমন কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। এ হাদীছে তা'ঊন দ্বারা বিশেষভাবে প্লেগরোগও বোঝানো হতে পারে, আবার অন্যান্য যে-কোনও মহামারিও।
যে এলাকায় প্লেগের মতো কোন মহামারি দেখা দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামায়ে কিরামের মতে মৃত্যুভয়ে সে এলাকা থেকে পালানো জায়েয নয় কেননা ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। তাকদীরে যা আছে তা থেকে বাঁচার সাধ্য কারও নেই। পালাতে গেলে তাকদীর থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা হবে মাত্র। এরকম চেষ্টা তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। তাই এটা জায়েয নয়। এরূপ পলায়ন জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নতুল্য, যা নাজায়েয ও কঠিন গুনাহ। এক হাদীছে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا سمعتم بالطاعون في أرض فلا تَدْخُلُوهَا، وَإِذا وقع بأرض و أنتم بها فلا تخرُجُوا مِنْهَا.
'যখন কোনও এলাকায় তা'ঊন দেখা দিয়েছে বলে জানতে পার, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর তুমি যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে তা'উন দেখা দিলে সেখান থেকে পলায়ন করো না।
মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, এর ফলে তাকদীরে বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে। মূলত ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করার পর প্লেগে আক্রান্ত হলে তার মনে এই বিশ্বাস জন্মাতে পারে যে, এখানে প্রবেশ করার কারণেই সে প্লেগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রবেশ না করলে আক্রান্ত হত না। এটা তাকদীরে বিশ্বাসের পরিপন্থী। এ কারণেই সতর্কতাস্বরূপ মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তাকদীরে বিশ্বাসের সংগে সংগে বান্দাকে সতর্ক জীবনযাপনেরও হুকুম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা বিশ্বাস তো রাখবে এই যে, তাকদীরে যা আছে কেবল তাই হবে, তবে দুনিয়া যেহেতু আসবাব-উপকরণের স্থান, তাই যেসকল আসবাব-উপকরণের সংগে নিরাপত্তার সম্পর্ক, তা অবলম্বন করবে আর যা-কিছু দ্বারা শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা থাকে, তা থেকে দূরে থাকবে। এ প্রসঙ্গে হযরত ‘উমর ফারূক রাযি.- এর ফিলিস্তীন সফরের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
হিজরী ১৮ সালে হযরত উমর ফারূক রাযি. ফিলিস্তীন এলাকায় সফরের উদ্দেশ্যে বের হন। তিনি যখন 'সারগ' নামক স্থানে পৌঁছান, তখন ওই এলাকার মুসলিম সেনাপতিগণ তাঁর সংগে সাক্ষাত করেন এবং তাঁকে জানান যে, সমগ্র শাম এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন তিনি প্রথমদিকের মুহাজিরগণকে ডাকালেন এবং তাদের নিয়ে পরামর্শে বসলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমাদের করণীয় কী? আমরা কি সামনে অগ্রসর হব, না মদীনায় ফিরে যাব? কেউ কেউ বললেন, আমরা যেহেতু একটা উদ্দেশ্যে বের হয়েছি, তখন আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত হবে না। আবার অনেকে বললেন, ইতোমধ্যে কত সাহাবী মারা গেছেন, আপনার সংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবশিষ্ট সাহাবীগণ রয়েছেন। আমাদের মত, আপনি মদীনায় ফিরে যান। মহামারির ভেতর ঢুকবেন না। এভাবে মতভেদ দেখা দিলে তিনি আনসারগণকে ডাকালেন। তাদের মধ্যেও মুহাজিরদের মত মতভিন্নতা দেখা দিল। শেষে তিনি প্রবীণ কুরায়শ মুহাজিরগণকে ডাকলেন। তারা সবাই একমত হয়ে বললেন, আপনি মহামারি-কবলিত এলাকার দিকে অগ্রসর হবেন না। আপনি লোকজন নিয়ে মদীনায় ফিরে যান। তখন হযরত 'উমর ফারুক রাখি ঘোষণা দিলেন, ঠিক আছে আমি মদীনায় ফিরে যাচ্ছি। এ কথা শুনে ফিলিস্তীন এলাকার প্রধান সেনাপতি বিখ্যাত সাহাবী 'উবাইদা ইবনুল জাররাহ রাযি. বললেন, তাকদীর থেকে পলায়ন? হযরত ফারূক রাযি. বললেন, আহা আবূ উবাইদা, এ কথা যদি আপনি ছাড়া অন্য কেউ হযরত আবূ বলত! আমরা তাকদীর থেকে তাকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। আচ্ছা আপনি বলুন তো, একটি উপত্যকার দুই প্রান্ত আছে, যার একপ্রান্ত খরাকবলিত, অন্য প্রান্ত সবুজ- শ্যামল। আপনি আপনার উটগুলোকে কোন প্রান্তে চড়াবেন? যদি খরাকবলিত প্রান্তে চড়ান, তা যেমন তাকদীর অনুযায়ী হবে, তেমনি সবুজ-শ্যামল প্রান্তে চড়ালেও কি তা তাকদীর অনুযায়ী হবে না? ঠিক এ সময় সুবিখ্যাত ও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি. এসে উপস্থিত হলেন। সব শুনে তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা আছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা যখন কোনও এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাও, তখন সেই এলাকায় গমন করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে মহামারি দেখা দিলে পালানোর উদ্দেশ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যেও না। এ হাদীছ শুনে হযরত উমর ফারূক রাযি. আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করলেন, তারপর মদীনার উদ্দেশ্যে ফিরে চললেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা এ শিক্ষাও পাওয়া গেল যে, রোগ-ব্যাধি ও বালা-মসিবতকে অকল্যাণ মনে করা উচিত নয়। এর মধ্যেও বান্দার পক্ষে বিশেষ বিশেষ কল্যাণ নিহিত থাকে। সবর অবলম্বন করলে সে কল্যাণ লাভ করা যায়।
যে এলাকায় প্লেগের মতো কোন মহামারি দেখা দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামায়ে কিরামের মতে মৃত্যুভয়ে সে এলাকা থেকে পালানো জায়েয নয় কেননা ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। তাকদীরে যা আছে তা থেকে বাঁচার সাধ্য কারও নেই। পালাতে গেলে তাকদীর থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা হবে মাত্র। এরকম চেষ্টা তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। তাই এটা জায়েয নয়। এরূপ পলায়ন জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নতুল্য, যা নাজায়েয ও কঠিন গুনাহ। এক হাদীছে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا سمعتم بالطاعون في أرض فلا تَدْخُلُوهَا، وَإِذا وقع بأرض و أنتم بها فلا تخرُجُوا مِنْهَا.
'যখন কোনও এলাকায় তা'ঊন দেখা দিয়েছে বলে জানতে পার, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর তুমি যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে তা'উন দেখা দিলে সেখান থেকে পলায়ন করো না।
মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, এর ফলে তাকদীরে বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে। মূলত ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করার পর প্লেগে আক্রান্ত হলে তার মনে এই বিশ্বাস জন্মাতে পারে যে, এখানে প্রবেশ করার কারণেই সে প্লেগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রবেশ না করলে আক্রান্ত হত না। এটা তাকদীরে বিশ্বাসের পরিপন্থী। এ কারণেই সতর্কতাস্বরূপ মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তাকদীরে বিশ্বাসের সংগে সংগে বান্দাকে সতর্ক জীবনযাপনেরও হুকুম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা বিশ্বাস তো রাখবে এই যে, তাকদীরে যা আছে কেবল তাই হবে, তবে দুনিয়া যেহেতু আসবাব-উপকরণের স্থান, তাই যেসকল আসবাব-উপকরণের সংগে নিরাপত্তার সম্পর্ক, তা অবলম্বন করবে আর যা-কিছু দ্বারা শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা থাকে, তা থেকে দূরে থাকবে। এ প্রসঙ্গে হযরত ‘উমর ফারূক রাযি.- এর ফিলিস্তীন সফরের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
হিজরী ১৮ সালে হযরত উমর ফারূক রাযি. ফিলিস্তীন এলাকায় সফরের উদ্দেশ্যে বের হন। তিনি যখন 'সারগ' নামক স্থানে পৌঁছান, তখন ওই এলাকার মুসলিম সেনাপতিগণ তাঁর সংগে সাক্ষাত করেন এবং তাঁকে জানান যে, সমগ্র শাম এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন তিনি প্রথমদিকের মুহাজিরগণকে ডাকালেন এবং তাদের নিয়ে পরামর্শে বসলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমাদের করণীয় কী? আমরা কি সামনে অগ্রসর হব, না মদীনায় ফিরে যাব? কেউ কেউ বললেন, আমরা যেহেতু একটা উদ্দেশ্যে বের হয়েছি, তখন আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত হবে না। আবার অনেকে বললেন, ইতোমধ্যে কত সাহাবী মারা গেছেন, আপনার সংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবশিষ্ট সাহাবীগণ রয়েছেন। আমাদের মত, আপনি মদীনায় ফিরে যান। মহামারির ভেতর ঢুকবেন না। এভাবে মতভেদ দেখা দিলে তিনি আনসারগণকে ডাকালেন। তাদের মধ্যেও মুহাজিরদের মত মতভিন্নতা দেখা দিল। শেষে তিনি প্রবীণ কুরায়শ মুহাজিরগণকে ডাকলেন। তারা সবাই একমত হয়ে বললেন, আপনি মহামারি-কবলিত এলাকার দিকে অগ্রসর হবেন না। আপনি লোকজন নিয়ে মদীনায় ফিরে যান। তখন হযরত 'উমর ফারুক রাখি ঘোষণা দিলেন, ঠিক আছে আমি মদীনায় ফিরে যাচ্ছি। এ কথা শুনে ফিলিস্তীন এলাকার প্রধান সেনাপতি বিখ্যাত সাহাবী 'উবাইদা ইবনুল জাররাহ রাযি. বললেন, তাকদীর থেকে পলায়ন? হযরত ফারূক রাযি. বললেন, আহা আবূ উবাইদা, এ কথা যদি আপনি ছাড়া অন্য কেউ হযরত আবূ বলত! আমরা তাকদীর থেকে তাকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। আচ্ছা আপনি বলুন তো, একটি উপত্যকার দুই প্রান্ত আছে, যার একপ্রান্ত খরাকবলিত, অন্য প্রান্ত সবুজ- শ্যামল। আপনি আপনার উটগুলোকে কোন প্রান্তে চড়াবেন? যদি খরাকবলিত প্রান্তে চড়ান, তা যেমন তাকদীর অনুযায়ী হবে, তেমনি সবুজ-শ্যামল প্রান্তে চড়ালেও কি তা তাকদীর অনুযায়ী হবে না? ঠিক এ সময় সুবিখ্যাত ও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি. এসে উপস্থিত হলেন। সব শুনে তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা আছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা যখন কোনও এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাও, তখন সেই এলাকায় গমন করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে মহামারি দেখা দিলে পালানোর উদ্দেশ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যেও না। এ হাদীছ শুনে হযরত উমর ফারূক রাযি. আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করলেন, তারপর মদীনার উদ্দেশ্যে ফিরে চললেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা এ শিক্ষাও পাওয়া গেল যে, রোগ-ব্যাধি ও বালা-মসিবতকে অকল্যাণ মনে করা উচিত নয়। এর মধ্যেও বান্দার পক্ষে বিশেষ বিশেষ কল্যাণ নিহিত থাকে। সবর অবলম্বন করলে সে কল্যাণ লাভ করা যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
