শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২১. মাকরুহ বিষয়াদির বর্ণনা
হাদীস নং: ৭০৫৩
আন্তর্জাতিক নং: ৭০৫৪
রুগ্ন ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে কিনা
৭০৫৩-৫৪। ইবন আবী দাউদ (রাহঃ) …… যুহরী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু সালমা (রাহঃ) বলেছেন যে, আমি আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলতেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, রুগ্ন ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছে আনবে না। হারিস ইবন আবী যুবাব (রাহঃ) আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-কে বললেন, আপনি তো আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন : সংক্রামক বলতে কিছু নেই। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এটা অস্বীকার করলেন। হারিস (রাহঃ) বললেন, হ্যাঁ, (আপনি বর্ণনা করেছেন)। অনন্তর তিনি এবং আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বিবাদ করলেন এবং উভয়ের মাঝে বিষয়টি অত্যন্ত কঠোর হয়ে গেল। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) রাগান্বিত হয়ে পড়েন এবং হারিস (রাহঃ)-কে কিছু বললেন- ইমাম মুসলিম (রাহঃ) উল্লেখ করেছেন তিনি হাবশী ভাষায় কিছু বললেন। অতঃপর হারিস (রাহঃ)-কে বললেন, আমি যা বলেছি তা বুঝতে পেরেছ? হারিস বললেন, না। আমি বলছি, এতে তার উদ্দেশ্য ছিল এটা যে, যা তুমি বলছ তা আমি তোমাকে বর্ণনা করনি। আবু সালামা (রাহঃ) বলেন, আমার জানা নেই যে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) ভুলে গেছেন, না তাঁর সন্দেহ হয়েছে। তবে এটা জরুরী যে, আমি তাঁর উপর ভ্রান্তির শব্দটি ব্যবহার করা জায়েয মনে করি না। কেননা ইতিপূর্বে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে রিওয়ায়াত করে আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তাঁর বক্তব্য সংক্রামক বলতে কিছু নেই-এর অস্বীকার করেন না।
ইউনুস (রাহঃ) …… ইবন শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবু সালমা (রাহঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : সংক্রামক কিছু নেই এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন : রুগ্নকে সুস্থের নিকটে আনবে না । আবু সালামা (রাহঃ) বলেন, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এই দুটি বিষয় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করতেন। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাযিঃ) তাঁর ঐ উক্তি থেকে যে, “সংক্রামক কিছু নেই” চুপ হয়ে গেছেন। আর এ কথার উপর অটল রয়েছেন যে, “রুগ্নকে সুস্থের নিকটে আনবে না" । অতঃপর তিনি ইবন আবী দাউদ (রাহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
পর্যালোচনা : আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেন, একদল আলিম এই মত পোষণ করেন। তারা রুগ্নকে সুস্থের নিকটে নেয়াকে মাকরূহ মনে করেন। তারা বলেন, এটা সংক্রামক হওয়ার আশংকায় মাকরূহ এবং তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, রুগ্ন থেকে বিরত থাকা এবং পলায়ন করা বাঞ্ছনীয়। এ বিষয়ে তারা উমর (রাযিঃ)-এর থেকে বর্ণিত রিওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন যে, তিনি প্লেগ থেকে পলায়ন করে লোকদের নিয়ে ফিরে এসেছেন। তাঁরা নিম্নরূপ উল্লেখ করেছেন :
ইউনুস (রাহঃ) …… ইবন শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবু সালমা (রাহঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : সংক্রামক কিছু নেই এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন : রুগ্নকে সুস্থের নিকটে আনবে না । আবু সালামা (রাহঃ) বলেন, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এই দুটি বিষয় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করতেন। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাযিঃ) তাঁর ঐ উক্তি থেকে যে, “সংক্রামক কিছু নেই” চুপ হয়ে গেছেন। আর এ কথার উপর অটল রয়েছেন যে, “রুগ্নকে সুস্থের নিকটে আনবে না" । অতঃপর তিনি ইবন আবী দাউদ (রাহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
পর্যালোচনা : আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেন, একদল আলিম এই মত পোষণ করেন। তারা রুগ্নকে সুস্থের নিকটে নেয়াকে মাকরূহ মনে করেন। তারা বলেন, এটা সংক্রামক হওয়ার আশংকায় মাকরূহ এবং তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, রুগ্ন থেকে বিরত থাকা এবং পলায়ন করা বাঞ্ছনীয়। এ বিষয়ে তারা উমর (রাযিঃ)-এর থেকে বর্ণিত রিওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন যে, তিনি প্লেগ থেকে পলায়ন করে লোকদের নিয়ে ফিরে এসেছেন। তাঁরা নিম্নরূপ উল্লেখ করেছেন :
بَابُ الرَّجُلِ يَكُونُ بِهِ الدَّاءُ هَلْ يُجْتَنَبُ أَمْ لَا؟
7053 - حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ قَالَ: ثنا أَبُو الْيَمَانِ , قَالَ: ثنا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ , عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ: قَالَ أَبُو سَلَمَةَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تُورِدِ الْمُمْرِضَ عَلَى الْمُصِحِّ» . فَقَالَ لَهُ الْحَارِثُ بْنُ أَبِي ذُبَابٍ فَإِنَّكَ قَدْ كُنْتَ حَدَّثَتْنَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا عَدْوَى» ، فَأَنْكَرَ ذَلِكَ , أَبُو هُرَيْرَةَ , فَقَالَ الْحَارِثُ: بَلَى. فَتَمَارَى هُوَ وَأَبُو هُرَيْرَةَ , حَتَّى اشْتَدَّ أَمْرُهُمَا فَغَضِبَ أَبُو هُرَيْرَةَ وَقَالَ لِلْحَارِثِ , ذَكَرَهُ مُسْلِمٌ , فَرَطَنَ بِالْحَبَشِيَّةِ , ثُمَّ قَالَ لِلْحَارِثِ أَتَدْرِي مَا قُلْتُ؟ قَالَ الْحَارِثُ لَا قُلْتُ: تُرِيدُ مِنَّا بِذَلِكَ أَنِّي لَمْ أُحَدِّثْكَ مَا تَقُولُ. قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: لَا أَدْرِي , أَنَسِيَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَمْ شَابَهُ , غَيْرَ أَنِّي لَمْ أَرَ عَلَيْهِ كَلِمَةً نَسِيَهَا بَعْدَ إِنْ كَانَ يُحَدِّثُنَا بِهَا , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيْرَ إِنْكَارِهِ مَا كَانَ يُحَدِّثُنَا فِي قَوْلِهِ: لَا عَدْوَى
7054 - حَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ: ثنا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ أَبَا سَلَمَةَ، حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا عَدْوَى» وَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ» . قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُحَدِّثُ بِهِمَا كِلَيْهِمَا , عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. ثُمَّ. صَمَتَ أَبُو هُرَيْرَةَ بَعْدَ ذَلِكَ عَنْ قَوْلِهِ: لَا عَدْوَى وَأَقَامَ عَلَى أَنَّ لَا يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ ثُمَّ حَدَثَ مِثْلُ حَدِيثِ ابْنِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذَا , فَكَرِهُوا إِيرَادَ الْمُمْرِضُ عَلَى الْمُصِحِّ , وَقَالُوا: إِنَّمَا كُرِهَ ذَلِكَ , مَخَافَةَ الْإِعْدَاءِ , وَأُمِرُوا بِاجْتِنَابِ ذِي الدَّاءِ وَالْفِرَارِ مِنْهُ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ أَيْضًا بِمَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ فِي الطَّاعُونِ , فِي رُجُوعِهِ بِالنَّاسِ , فَارًّا مِنْهُ
7054 - حَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ: ثنا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ أَبَا سَلَمَةَ، حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا عَدْوَى» وَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ» . قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُحَدِّثُ بِهِمَا كِلَيْهِمَا , عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. ثُمَّ. صَمَتَ أَبُو هُرَيْرَةَ بَعْدَ ذَلِكَ عَنْ قَوْلِهِ: لَا عَدْوَى وَأَقَامَ عَلَى أَنَّ لَا يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ ثُمَّ حَدَثَ مِثْلُ حَدِيثِ ابْنِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذَا , فَكَرِهُوا إِيرَادَ الْمُمْرِضُ عَلَى الْمُصِحِّ , وَقَالُوا: إِنَّمَا كُرِهَ ذَلِكَ , مَخَافَةَ الْإِعْدَاءِ , وَأُمِرُوا بِاجْتِنَابِ ذِي الدَّاءِ وَالْفِرَارِ مِنْهُ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ أَيْضًا بِمَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ فِي الطَّاعُونِ , فِي رُجُوعِهِ بِالنَّاسِ , فَارًّا مِنْهُ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
'তাউন' প্লেগরোগকেও বলে আবার অন্য যে-কোনও মহামারিকেও বলে, যেমন কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। এ হাদীছে তা'ঊন দ্বারা বিশেষভাবে প্লেগরোগও বোঝানো হতে পারে, আবার অন্যান্য যে-কোনও মহামারিও।
যে এলাকায় প্লেগের মতো কোন মহামারি দেখা দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামায়ে কিরামের মতে মৃত্যুভয়ে সে এলাকা থেকে পালানো জায়েয নয় কেননা ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। তাকদীরে যা আছে তা থেকে বাঁচার সাধ্য কারও নেই। পালাতে গেলে তাকদীর থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা হবে মাত্র। এরকম চেষ্টা তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। তাই এটা জায়েয নয়। এরূপ পলায়ন জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নতুল্য, যা নাজায়েয ও কঠিন গুনাহ। এক হাদীছে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا سمعتم بالطاعون في أرض فلا تَدْخُلُوهَا، وَإِذا وقع بأرض و أنتم بها فلا تخرُجُوا مِنْهَا.
'যখন কোনও এলাকায় তা'ঊন দেখা দিয়েছে বলে জানতে পার, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর তুমি যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে তা'উন দেখা দিলে সেখান থেকে পলায়ন করো না।
মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, এর ফলে তাকদীরে বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে। মূলত ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করার পর প্লেগে আক্রান্ত হলে তার মনে এই বিশ্বাস জন্মাতে পারে যে, এখানে প্রবেশ করার কারণেই সে প্লেগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রবেশ না করলে আক্রান্ত হত না। এটা তাকদীরে বিশ্বাসের পরিপন্থী। এ কারণেই সতর্কতাস্বরূপ মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তাকদীরে বিশ্বাসের সংগে সংগে বান্দাকে সতর্ক জীবনযাপনেরও হুকুম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা বিশ্বাস তো রাখবে এই যে, তাকদীরে যা আছে কেবল তাই হবে, তবে দুনিয়া যেহেতু আসবাব-উপকরণের স্থান, তাই যেসকল আসবাব-উপকরণের সংগে নিরাপত্তার সম্পর্ক, তা অবলম্বন করবে আর যা-কিছু দ্বারা শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা থাকে, তা থেকে দূরে থাকবে। এ প্রসঙ্গে হযরত ‘উমর ফারূক রাযি.- এর ফিলিস্তীন সফরের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
হিজরী ১৮ সালে হযরত উমর ফারূক রাযি. ফিলিস্তীন এলাকায় সফরের উদ্দেশ্যে বের হন। তিনি যখন 'সারগ' নামক স্থানে পৌঁছান, তখন ওই এলাকার মুসলিম সেনাপতিগণ তাঁর সংগে সাক্ষাত করেন এবং তাঁকে জানান যে, সমগ্র শাম এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন তিনি প্রথমদিকের মুহাজিরগণকে ডাকালেন এবং তাদের নিয়ে পরামর্শে বসলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমাদের করণীয় কী? আমরা কি সামনে অগ্রসর হব, না মদীনায় ফিরে যাব? কেউ কেউ বললেন, আমরা যেহেতু একটা উদ্দেশ্যে বের হয়েছি, তখন আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত হবে না। আবার অনেকে বললেন, ইতোমধ্যে কত সাহাবী মারা গেছেন, আপনার সংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবশিষ্ট সাহাবীগণ রয়েছেন। আমাদের মত, আপনি মদীনায় ফিরে যান। মহামারির ভেতর ঢুকবেন না। এভাবে মতভেদ দেখা দিলে তিনি আনসারগণকে ডাকালেন। তাদের মধ্যেও মুহাজিরদের মত মতভিন্নতা দেখা দিল। শেষে তিনি প্রবীণ কুরায়শ মুহাজিরগণকে ডাকলেন। তারা সবাই একমত হয়ে বললেন, আপনি মহামারি-কবলিত এলাকার দিকে অগ্রসর হবেন না। আপনি লোকজন নিয়ে মদীনায় ফিরে যান। তখন হযরত 'উমর ফারুক রাখি ঘোষণা দিলেন, ঠিক আছে আমি মদীনায় ফিরে যাচ্ছি। এ কথা শুনে ফিলিস্তীন এলাকার প্রধান সেনাপতি বিখ্যাত সাহাবী 'উবাইদা ইবনুল জাররাহ রাযি. বললেন, তাকদীর থেকে পলায়ন? হযরত ফারূক রাযি. বললেন, আহা আবূ উবাইদা, এ কথা যদি আপনি ছাড়া অন্য কেউ হযরত আবূ বলত! আমরা তাকদীর থেকে তাকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। আচ্ছা আপনি বলুন তো, একটি উপত্যকার দুই প্রান্ত আছে, যার একপ্রান্ত খরাকবলিত, অন্য প্রান্ত সবুজ- শ্যামল। আপনি আপনার উটগুলোকে কোন প্রান্তে চড়াবেন? যদি খরাকবলিত প্রান্তে চড়ান, তা যেমন তাকদীর অনুযায়ী হবে, তেমনি সবুজ-শ্যামল প্রান্তে চড়ালেও কি তা তাকদীর অনুযায়ী হবে না? ঠিক এ সময় সুবিখ্যাত ও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি. এসে উপস্থিত হলেন। সব শুনে তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা আছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা যখন কোনও এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাও, তখন সেই এলাকায় গমন করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে মহামারি দেখা দিলে পালানোর উদ্দেশ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যেও না। এ হাদীছ শুনে হযরত উমর ফারূক রাযি. আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করলেন, তারপর মদীনার উদ্দেশ্যে ফিরে চললেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা এ শিক্ষাও পাওয়া গেল যে, রোগ-ব্যাধি ও বালা-মসিবতকে অকল্যাণ মনে করা উচিত নয়। এর মধ্যেও বান্দার পক্ষে বিশেষ বিশেষ কল্যাণ নিহিত থাকে। সবর অবলম্বন করলে সে কল্যাণ লাভ করা যায়।
যে এলাকায় প্লেগের মতো কোন মহামারি দেখা দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামায়ে কিরামের মতে মৃত্যুভয়ে সে এলাকা থেকে পালানো জায়েয নয় কেননা ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। তাকদীরে যা আছে তা থেকে বাঁচার সাধ্য কারও নেই। পালাতে গেলে তাকদীর থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা হবে মাত্র। এরকম চেষ্টা তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। তাই এটা জায়েয নয়। এরূপ পলায়ন জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নতুল্য, যা নাজায়েয ও কঠিন গুনাহ। এক হাদীছে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا سمعتم بالطاعون في أرض فلا تَدْخُلُوهَا، وَإِذا وقع بأرض و أنتم بها فلا تخرُجُوا مِنْهَا.
'যখন কোনও এলাকায় তা'ঊন দেখা দিয়েছে বলে জানতে পার, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর তুমি যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে তা'উন দেখা দিলে সেখান থেকে পলায়ন করো না।
মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, এর ফলে তাকদীরে বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে। মূলত ঘটবে তো তাই, যা তাকদীরে আছে। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করার পর প্লেগে আক্রান্ত হলে তার মনে এই বিশ্বাস জন্মাতে পারে যে, এখানে প্রবেশ করার কারণেই সে প্লেগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রবেশ না করলে আক্রান্ত হত না। এটা তাকদীরে বিশ্বাসের পরিপন্থী। এ কারণেই সতর্কতাস্বরূপ মহামারি-কবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তাকদীরে বিশ্বাসের সংগে সংগে বান্দাকে সতর্ক জীবনযাপনেরও হুকুম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা বিশ্বাস তো রাখবে এই যে, তাকদীরে যা আছে কেবল তাই হবে, তবে দুনিয়া যেহেতু আসবাব-উপকরণের স্থান, তাই যেসকল আসবাব-উপকরণের সংগে নিরাপত্তার সম্পর্ক, তা অবলম্বন করবে আর যা-কিছু দ্বারা শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা থাকে, তা থেকে দূরে থাকবে। এ প্রসঙ্গে হযরত ‘উমর ফারূক রাযি.- এর ফিলিস্তীন সফরের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
হিজরী ১৮ সালে হযরত উমর ফারূক রাযি. ফিলিস্তীন এলাকায় সফরের উদ্দেশ্যে বের হন। তিনি যখন 'সারগ' নামক স্থানে পৌঁছান, তখন ওই এলাকার মুসলিম সেনাপতিগণ তাঁর সংগে সাক্ষাত করেন এবং তাঁকে জানান যে, সমগ্র শাম এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন তিনি প্রথমদিকের মুহাজিরগণকে ডাকালেন এবং তাদের নিয়ে পরামর্শে বসলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমাদের করণীয় কী? আমরা কি সামনে অগ্রসর হব, না মদীনায় ফিরে যাব? কেউ কেউ বললেন, আমরা যেহেতু একটা উদ্দেশ্যে বের হয়েছি, তখন আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত হবে না। আবার অনেকে বললেন, ইতোমধ্যে কত সাহাবী মারা গেছেন, আপনার সংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবশিষ্ট সাহাবীগণ রয়েছেন। আমাদের মত, আপনি মদীনায় ফিরে যান। মহামারির ভেতর ঢুকবেন না। এভাবে মতভেদ দেখা দিলে তিনি আনসারগণকে ডাকালেন। তাদের মধ্যেও মুহাজিরদের মত মতভিন্নতা দেখা দিল। শেষে তিনি প্রবীণ কুরায়শ মুহাজিরগণকে ডাকলেন। তারা সবাই একমত হয়ে বললেন, আপনি মহামারি-কবলিত এলাকার দিকে অগ্রসর হবেন না। আপনি লোকজন নিয়ে মদীনায় ফিরে যান। তখন হযরত 'উমর ফারুক রাখি ঘোষণা দিলেন, ঠিক আছে আমি মদীনায় ফিরে যাচ্ছি। এ কথা শুনে ফিলিস্তীন এলাকার প্রধান সেনাপতি বিখ্যাত সাহাবী 'উবাইদা ইবনুল জাররাহ রাযি. বললেন, তাকদীর থেকে পলায়ন? হযরত ফারূক রাযি. বললেন, আহা আবূ উবাইদা, এ কথা যদি আপনি ছাড়া অন্য কেউ হযরত আবূ বলত! আমরা তাকদীর থেকে তাকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। আচ্ছা আপনি বলুন তো, একটি উপত্যকার দুই প্রান্ত আছে, যার একপ্রান্ত খরাকবলিত, অন্য প্রান্ত সবুজ- শ্যামল। আপনি আপনার উটগুলোকে কোন প্রান্তে চড়াবেন? যদি খরাকবলিত প্রান্তে চড়ান, তা যেমন তাকদীর অনুযায়ী হবে, তেমনি সবুজ-শ্যামল প্রান্তে চড়ালেও কি তা তাকদীর অনুযায়ী হবে না? ঠিক এ সময় সুবিখ্যাত ও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি. এসে উপস্থিত হলেন। সব শুনে তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা আছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা যখন কোনও এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাও, তখন সেই এলাকায় গমন করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে মহামারি দেখা দিলে পালানোর উদ্দেশ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যেও না। এ হাদীছ শুনে হযরত উমর ফারূক রাযি. আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করলেন, তারপর মদীনার উদ্দেশ্যে ফিরে চললেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা এ শিক্ষাও পাওয়া গেল যে, রোগ-ব্যাধি ও বালা-মসিবতকে অকল্যাণ মনে করা উচিত নয়। এর মধ্যেও বান্দার পক্ষে বিশেষ বিশেষ কল্যাণ নিহিত থাকে। সবর অবলম্বন করলে সে কল্যাণ লাভ করা যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
