শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২১. মাকরুহ বিষয়াদির বর্ণনা

হাদীস নং: ৬৬৭১
আন্তর্জাতিক নং: ৬৬৭৩
রেশমী পোশাক পরিধান প্রসঙ্গে
৬৬৭১-৭৩। ইবন মারযুক (রাহঃ) ..... ইবন উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উতারিদ কিংবা লাবীদ এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করেছি। তার কাছে রেশমী জোড়া পেশ করা হচ্ছিল। আপনি যদি জুমুআ এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তা খরিদ করতেন কতই না চমৎকার হতো। এতে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, দুনিয়াতে (পার্থিব জগতে) রেশমী কাপড় সেই ব্যক্তি পরিধান করে যার আখিরাতে কোন অংশ নেই।

ইউনুস (রাহঃ) …… ইবন উমর (রাযিঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি উতারিদ এবং লাবীদ-এর উল্লেখ করেন নাই ।

ইউনুস (রাহঃ) …… সালেম (রাহঃ) তার পিতার সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন এবং তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সেই ব্যক্তি উতারিদ কিংবা লাবীদ ছিল।
73 - 6671 - حَدَّثَنَا ابْنُ مَرْزُوقٍ، قَالَ: ثنا عَارِمٌ، قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ عُمَرَ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي مَرَرْتُ بِعُطَارِدٍ , أَوْ بِلَبِيدٍ , وَهُوَ يَعْرِضُ عَلَيْهِ حُلَّةَ حَرِيرٍ , فَلَوِ اشْتَرَيْتَهَا لِلْجُمُعَةِ وَلِلْوُفُودِ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا يَلْبَسُ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا , مَنْ لَا خَلَاقَ لَهُ فِي الْآخِرَةِ»

حَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ: ثنا ابْنُ وَهْبٍ، أَنَّ مَالِكًا، حَدَّثَهُ عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَهُ غَيْرَ أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ , عُطَارِدًا , وَلَا لَبِيدًا [ص:245]

حَدَّثَنَا يُونُسُ قَالَ: ثنا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي يُونُسُ , وَعَمْرٌو , عَنِ ابْنِ شِهَابٍ , عَنْ سَالِمٍ , عَنْ أَبِيهِ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ , وَذَكَرَ أَنَّ الرَّجُلَ عُطَارِدٌ , أَوْ لَبِيدٌ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৬৬৭১ | মুসলিম বাংলা