শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১৮. আদালত-বিচার-সাক্ষ্য-শুনানির বিধান

হাদীস নং: ৬১৪৩
কোন ব্যক্তির নিকট অন্য কোন ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য থাকলে তাকে জানানাে কি তার ওপর ওয়াজিব; এবং স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য প্রদান করলে হাকিম কি তা গ্রহণ করবেন ।
৬১৪৩। মুহাম্মাদ ইব্ন খুযায়মা ...... ইবরাহীম উবায়দা সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন মানুষ সর্বোত্তম? তিনি বললেন আমার ক্বারনের উম্মত, তারপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী, তারপর তারা যারা তাদের নিকটবর্তী, তারপর এমন লােকজনের আগমন ঘটবে যাদের شهادة তাদের يمين (হলফ)-এর উপর অগ্রগামী হবে এবং তাদের يمين তাদের شهادت (সাক্ষ্য)- এর ওপর অগ্রগামী হবে। ইবরাহীম (নাখঈ) বলেন, আমরা যখন ছােট ছিলাম, তখন আমাদের সাথীদেরকে شهادت ও عهد -এর হলফ করতে নিষেধ করা হতাে।
ইবরাহীম নাখঈ (রাহঃ)-এর এ বক্তব্য এ কথাই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে সাক্ষ্য প্রদানকারীর নিন্দা করেছেন, তা হলাে কোন ব্যক্তির হলফের উদ্দেশ্যে এরূপ বলা أَشْهَدُ بِاللهِ مَا كَانَ كَذَا এরূপ বলাকে তিনি ঠিক তদ্রুপ অপসন্দ করেছেন, যেমন তিনি হলফ করাই অপসন্দ করতেন। কারণ অতিরিক্ত হলফ করা তা সত্য হলেও মাকরূহ। অতএব যে شهادة (সাক্ষ্য) হলফের অর্থে ব্যবহৃত, তার থেকে ঠিক তদ্রুপ নিষেধ করা হয়েছে যেমন হলফ হতে নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য যদি কাউকে হলফ করার জন্য অনুরােধ করা বা নির্দেশ দেয়া হয়, তবে সে তখন মাযূর হবে। অথবা সম্ভবত এ شهادة (সাক্ষ্য) দ্বারা যার আমরা আলােচনা করেছি, | ‘অবাস্তব জিনিসের ওপর হলফ করা উদ্দেশ্য ثُمَّ يَفْشُو الْكَذِبُ এ বক্তব্য দ্বারাই তাই বুঝা যায় । অতএব তা شهادة كذب বা মিথ্যা সাক্ষ্য বলে বিবেচিত হবে।
সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আবেদন করা ছাড়াই যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য প্রদান করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে তার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন :
6143 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ رَجَاءٍ قَالَ: أنا شَيْبَانُ عَنْ مَنْصُورٍ عَنْ إِبْرَاهِيمَ عَنْ عُبَيْدَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَجِيءُ قَوْمٌ يَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ» قَالَ إِبْرَاهِيمُ: كَانَ أَصْحَابُنَا يَنْهَوْنَنَا وَنَحْنُ غِلْمَانٌ أَنْ نَحْلِفَ بِالشَّهَادَةِ وَالْعَهْدِ فَدَلَّ هَذَا مِنْ قَوْلِ إِبْرَاهِيمَ أَنَّ الشَّهَادَةَ الَّتِي ذَمَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاحِبَهَا هِيَ قَوْلُ الرَّجُلِ أَشْهَدُ بِاللهِ مَا كَانَ كَذَا عَلَى مَعْنَى الْحَلِفِ فَكَرِهَ ذَلِكَ كَمَا يُكْرَهُ الْحَلِفُ لِأَنَّهُ مَكْرُوهٌ لِلرَّجُلِ الْإِكْثَارُ مِنْهُ وَإِنْ كَانَ صَادِقًا. فَنَهَى عَنِ الشَّهَادَةِ الَّتِي هِيَ حَلِفٌ كَمَا نَهَى عَنِ الْيَمِينِ إِلَّا أَنْ يُسْتَحْلَفَ بِهَا فَيَكُونَ حِينَئِذٍ مَعْذُورًا. وَلَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ أَرَادَ بِالشَّهَادَةِ الَّتِي ذَكَرْنَا الْحَلِفَ عَلَى مَا لَمْ يَكُنْ لِقَوْلِهِ: ثُمَّ يَفْشُو الْكَذِبُ، فَتَكُونُ تِلْكَ الشَّهَادَةُ شَهَادَةَ كَذِبٍ. وَقَدْ رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي تَفْضِيلِ الشَّاهِدِ الْمُبْتَدِئِ بِالشَّهَادَةِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (সর্বোত্তম হল আমার যুগের মানুষ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ বলতে তাঁর নবুওয়াতপ্রাপ্তি থেকে যে তারিখে সর্বশেষ সাহাবী ইন্তিকাল করেছেন, সেই পর্যন্ত সময়কালকে বোঝায়। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সবশেষে ইন্তিকাল করেছেন হযরত আবুত তুফায়ল আমের ইবন ওয়াছিলা রাযি। তিনি ১১০ হিজরী সনে ইন্তিকাল করেন। তারপর ইরশাদ করেন-
ثم الذين يلونهم (তারপর যারা তাদের পরবর্তী যুগে আসবে)। অর্থাৎ তাবি'ঈদের যুগ। যারা ঈমানের সঙ্গে কোনও সাহাবীকে দেখেছেন। এই যুগ আনুমানিক হিজরী ১৫০ সন পর্যন্ত। ইমাম আবূ হানীফা রহ. হিজরী ১৫০ সনে ইন্তিকাল করেছেন। বিশুদ্ধমত অনুযায়ী তিনি একজন তাবিঈ ছিলেন।

ثم الذين يلونهم (তারপর যারা তাদের পরবর্তী যুগে আসবে)। এ যুগ ছিল আনুমানিক ২২০ সন পর্যন্ত। এটা তাবে-তাবি'ঈনের যুগ। যারা তাবি‘ঈদের দেখেছেন। এর পর থেকেই দীনের মধ্যে নানা ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনও একটি যুগের মানুষকে শ্রেষ্ঠ বলার অর্থ এ নয় যে, সে যুগের প্রত্যেকেই পরবর্তী যুগের সকলের চেয়ে উৎকৃষ্ট। এটা বলা হয়েছে সাধারণ অবস্থার বিচারে। সুতরাং এর মধ্যে ব্যতিক্রম পাওয়া যেতেই পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের যুগের মানুষকে শ্রেষ্ঠতম মানুষ বলা হয়েছে। তার মানে এ নয় যে, সাহাবীগণ আগের নবী-রাসূলগণের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ছিলেন। হাঁ, তাঁরা আগের যুগের সাধারণ মুমিনদের চেয়ে অবশ্যই উৎকৃষ্ট ছিলেন। এমনিভাবে তাবে-তাবি'ঈদের মধ্যে অনেকে এমন ছিলেন, যারা ঈমান, ইলম, আমল ও আখলাকের দিক থেকে তাবিঈদের যুগের অনেকের তুলনায় অগ্রগামী ছিলেন। তবে সামগ্রিক দৃষ্টিতে অবশ্যই তাবি'ঈগণ তাবে-তাবি'ঈদের তুলনায় উত্তম ছিলেন। এমনিভাবে আরও পরে জন্ম নেওয়া এমন অনেকেই আছেন, যারা ইবাদত-বন্দেগী, দীনের খেদমত, জিহাদ প্রভৃতি দিক থেকে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। বহু পরের হওয়া সত্ত্বেও তারা পূর্ববর্তী অনেককে টপকে গিয়েছেন। এটা এ যুগেও সম্ভব। তাই পরবর্তীকালীন হওয়ায় হতাশার কোনও কারণ নেই। নিজ ঈমান ও আমলে যত্নবান থাকলে পূর্ববর্তীকালীন আল্লাহওয়ালাদের কাতারে শামিল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকেও তাওফীক দান করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. প্রথম তিন কালের মুসলিমগণ শ্রেষ্ঠ। তাদের মর্যাদা স্বীকার করতে হবে। তাদের ভালো ভালো কাজকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে হবে। তাদের দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেলে তার সমালোচনা হতে বিরত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৬১৪৩ | মুসলিম বাংলা