আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৫- ভরণ পোষণ বাসস্থান অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৯৬৭
আন্তর্জাতিক নং: ৫৩৫৮
২৮২৩. পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা এবং তাদের জন্য খরচ করার পদ্ধতি
৪৯৬৭। সা‘ঈদ ইবনে ‘উফায়র (রাহঃ) ......... মালিক ইবনে আওস ইবনে হাদাসান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ‘উমর (রাযিঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলাম; এমন সময় তার দারোয়ান ইয়ারফা এসে বলল, ‘উসমান ‘আব্দুর রহমান, যুবাইর ও সা’দ ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইছেন। আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি তাদের অনুমতি দিলেন। মালিক (রাহঃ) বলেনঃ তারা প্রবেশ করলেন এবং সালাম করে বসলেন। এর কিছুক্ষণ পর ইয়ারফা এসে বললঃ ‘আলী ও ‘আব্বাস (রাযিঃ) অনুমতি চাইলেন। আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি হ্যাঁ বলে এদের উভয়কেও অনুমতি দিলেন। তারা প্রবেশ করে সালাম দিয়ে বসলেন। তারপর ‘আব্বাস বললেনঃ হে আমীরুল মু'মিনীন! আমার ও ‘আলীর মধ্যে ফয়সালা করে দিন। উপস্থিত উসমান ও তার সঙ্গীরাও বললেনঃ হে আমীরুল মু'মিনীন! এদের উভয়ের মধ্যে ফয়সালা করে দিন এবং একজন থেকে অপর জনকে শান্তি দিন।
উমর (রাযিঃ) বললেনঃ থাম! আমি তোমাদেরকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, যার আদেশে আসমান ও যমীন টিকে আছে। তোমরা কি জান যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমাদের কেউ ওয়ারিস হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সাদ্‌কা। এ কথা দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেকে (এবং অন্যান্য নবীগণকে) বুঝাতে চেয়েছেন। সে দলের লোকেরা বললেনঃ নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা বলেছেন। তারপর ‘উমর (রাযিঃ) ‘আলী ও আব্বাস (রাযিঃ) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা দু’জন কি জান যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ কথা বলেছেন। তারা বললেনঃ অবশ্যই তা বলেছেন।

উমর (রাযিঃ) বললেন, এ ব্যপারে আমার বক্তব্য হলোঃ এ মালে আল্লাহ তার রাসুলকে একটি বিশেষ অধিকার দিয়েছেন, যা তিনি ছাড়া আর কাউকে দেননি। আল্লাহ বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের নিকট থেকে তাঁর রাসুলকে যে ‘ফায়’ (বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ) দিয়েছেন ...... সর্বশক্তিমান পর্যন্ত। (হাশরঃ ৬) একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর জন্য নির্ধারিত ছিল। আল্লাহর কসম! তিনি তোমাদের বাদ দিয়ে একাকী ভোগ করেননি এবং কাউকে তোমাদের উপর প্রাধান্য দেননি। এ থেকে তিনি তোমাদের দিয়েছেন এবং কিছু তোমাদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। শেষ পর্যন্ত এ মালটুকু অবশিষ্ট থেকে যায়। এ মাল থেকেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর পরিবারের সারা বছরের খরচ দিতেন। আর যা উদ্ধৃত্ত থাকত তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহার্য মালের সাথে ব্যয় করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জীবনভর এরূপই করেছেন।

আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি তোমরা কি এ বিষয় জান? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। এরপর তিনি ‘আলী ও ‘আব্বাস (রাযিঃ) -কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আমি আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা কি এ বিষয় জান? তারা উভয়ে বললেনঃ হ্যাঁ। এরপর আল্লাহ তার নবী (ﷺ) কে ওফাত দিলেন। তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর স্থলাভিষিক্ত। আবু বকর এ মাল নিজ কবজায় রাখলেন এবং এ মাল খরচের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর অনুসৃত নীতিই অবলম্বন করলেন। ‘আলী ও ‘আব্বাসের দিকে ফিরে ‘উমর (রাযিঃ) বললেনঃ তোমরা তখন মনে করতে আবু বকর এমন, এমন। অথচ আল্লাহ জানেন এ ব্যাপারে তিনি সত্য কল্যাণকামী, সঠিক নীতির অনুসারী।

আল্লাহ আবু বকরকে ওফাত দিলেন। আমি বললামঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত এর পর আমি দু’বছর এ মাল নিজ কবজায় রাখি। আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকরের অনুসৃত নীতির-ই অনুসরণ করতে থাকি। তারপর তোমরা দু’জন আসলে; তখন তোমরা উভয়ে, ঐক্যমত ছিলে এবং তোমাদের বিষয়ে সমন্বয় ছিল। তুমি আসলে ভ্রাতুষ্পুত্রের সম্পত্তিতে তোমার অংশ চাইতে। আর এ আসলো শশুরের সম্পত্তিতে স্ত্রীর অংশ চাইতে। আমি বলেছিলামঃ তোমরা যদি চাও, তবে আমি এ শর্তে তোমাদেরকে তা দিয়ে দিতে পারি, তোমরা আল্লাহর সহিত ওয়াদা ও অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে যে, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বকর এবং এর কর্তৃত্ব হাতে পাওয়ার পর আমিও যে নীতির অনুসরণ করে এসেছি, সে নীতিরই তোমরা অনুসরণ করবে। অন্যথায় এ ব্যাপারে আমার সাথে কোন কথা বলবে না। তখন তোমরা বলেছিলে এ শর্ত সাপেক্ষেই আমাদের কাছে দিয়ে দিন। তাই আমি এ শর্তেই তোমাদের তা দিয়েছিলাম।
তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের সকলকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আমি কি এ শর্তে এটি তাদের কাছে দেইনি? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি ‘আলী ও ‘আব্বাস (রাযিঃ) -কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি, আমি কি এ শর্তেই এটি তোমাদের কাছে দেইনি? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তবে এখন কি তোমরা আমার কাছে এ ছাড়া অন্য কোন ফয়সালা চাইছ? সেই সত্তার কসম! যার আদেশে আসমান-যযীন টিকে আছে আমি কিয়ামত পর্যন্ত এ ছাড়া অন্য কোন ফয়সালা দিতে প্রস্তুত নই। তোমরা যদি উল্লেখিত শর্ত পালন করতে অক্ষম হও, তাহলে তা আমার জিম্মায় ফিরিয়ে দাও তোমাদের পক্ষ থেকে আমিই এর পরিচালনা করব।
باب حَبْسِ نَفَقَةِ الرَّجُلِ قُوتَ سَنَةٍ عَلَى أَهْلِهِ، وَكَيْفَ نَفَقَاتُ الْعِيَالِ
5358 - حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ: حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مَالِكُ بْنُ أَوْسِ بْنِ الحَدَثَانِ، وَكَانَ مُحَمَّدُ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، ذَكَرَ لِي ذِكْرًا مِنْ حَدِيثِهِ، فَانْطَلَقْتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَى مَالِكِ بْنِ أَوْسٍ فَسَأَلْتُهُ، فَقَالَ مَالِكٌ: انْطَلَقْتُ حَتَّى أَدْخُلَ عَلَى عُمَرَ، إِذْ أَتَاهُ حَاجِبُهُ يَرْفَا، فَقَالَ: هَلْ لَكَ فِي عُثْمَانَ، وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالزُّبَيْرِ، وَسَعْدٍ يَسْتَأْذِنُونَ، قَالَ: نَعَمْ، فَأَذِنَ لَهُمْ، قَالَ: فَدَخَلُوا وَسَلَّمُوا فَجَلَسُوا، ثُمَّ لَبِثَ يَرْفَا قَلِيلًا، فَقَالَ لِعُمَرَ: هَلْ لَكَ فِي عَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَأَذِنَ لَهُمَا، فَلَمَّا دَخَلاَ سَلَّمَا وَجَلَسَا، فَقَالَ عَبَّاسٌ: يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ اقْضِ بَيْنِي وَبَيْنَ هَذَا، فَقَالَ: الرَّهْطُ عُثْمَانُ وَأَصْحَابُهُ يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، اقْضِ بَيْنَهُمَا وَأَرِحْ أَحَدَهُمَا مِنَ الآخَرِ، فَقَالَ عُمَرُ: اتَّئِدُوا أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ الَّذِي بِهِ تَقُومُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ، هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لا نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ» يُرِيدُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَفْسَهُ، قَالَ الرَّهْطُ: قَدْ قَالَ ذَلِكَ، فَأَقْبَلَ عُمَرُ عَلَى عَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ، فَقَالَ: أَنْشُدُكُمَا بِاللَّهِ، هَلْ تَعْلَمَانِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ذَلِكَ؟ قَالا: قَدْ قَالَ ذَلِكَ. قَالَ عُمَرُ: فَإِنِّي أُحَدِّثُكُمْ عَنْ هَذَا الأَمْرِ، إِنَّ اللَّهَ كَانَ قَدْ خَصَّ رَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذَا المَالِ بِشَيْءٍ لَمْ يُعْطِهِ أَحَدًا غَيْرَهُ، قَالَ اللَّهُ: {مَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ} [الحشر: 6]
[ص:64]- إِلَى قَوْلِهِ - {قَدِيرٌ} [الحشر: 6] ، فَكَانَتْ هَذِهِ خَالِصَةً لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاللَّهِ مَا احْتَازَهَا دُونَكُمْ وَلا اسْتَأْثَرَ بِهَا عَلَيْكُمْ، لَقَدْ أَعْطَاكُمُوهَا وَبَثَّهَا فِيكُمْ حَتَّى بَقِيَ مِنْهَا هَذَا المَالُ، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُنْفِقُ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةَ سَنَتِهِمْ مِنْ هَذَا المَالِ، ثُمَّ يَأْخُذُ مَا بَقِيَ فَيَجْعَلُهُ مَجْعَلَ مَالِ اللَّهِ، فَعَمِلَ بِذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيَاتَهُ، أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُونَ ذَلِكَ؟ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ لِعَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ: أَنْشُدُكُمَا بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمَانِ ذَلِكَ؟ قَالاَ: نَعَمْ، ثُمَّ تَوَفَّى اللَّهُ نَبِيَّهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: أَنَا وَلِيُّ رَسُولِ اللَّهِ فَقَبَضَهَا أَبُو بَكْرٍ يَعْمَلُ فِيهَا بِمَا عَمِلَ بِهِ فِيهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنْتُمَا حِينَئِذٍ، وَأَقْبَلَ عَلَى عَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ تَزْعُمَانِ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ كَذَا وَكَذَا، وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَنَّهُ فِيهَا صَادِقٌ بَارٌّ رَاشِدٌ تَابِعٌ لِلْحَقِّ، ثُمَّ تَوَفَّى اللَّهُ أَبَا بَكْرٍ، فَقُلْتُ: أَنَا وَلِيُّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ فَقَبَضْتُهَا سَنَتَيْنِ أَعْمَلُ فِيهَا بِمَا عَمِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ، ثُمَّ جِئْتُمَانِي وَكَلِمَتُكُمَا وَاحِدَةٌ، وَأَمْرُكُمَا جَمِيعٌ جِئْتَنِي تَسْأَلُنِي نَصِيبَكَ مِنَ ابْنِ أَخِيكَ، وَأَتَى هَذَا يَسْأَلُنِي نَصِيبَ امْرَأَتِهِ مِنْ أَبِيهَا، فَقُلْتُ: إِنْ شِئْتُمَا دَفَعْتُهُ إِلَيْكُمَا عَلَى أَنَّ عَلَيْكُمَا عَهْدَ اللَّهِ وَمِيثَاقَهُ، لَتَعْمَلاَنِ فِيهَا بِمَا عَمِلَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَبِمَا عَمِلَ بِهِ فِيهَا أَبُو بَكْرٍ، وَبِمَا عَمِلْتُ بِهِ فِيهَا مُنْذُ وُلِّيتُهَا وَإِلَّا فَلاَ تُكَلِّمَانِي فِيهَا، فَقُلْتُمَا ادْفَعْهَا إِلَيْنَا بِذَلِكَ، فَدَفَعْتُهَا إِلَيْكُمَا بِذَلِكَ، أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ هَلْ دَفَعْتُهَا إِلَيْهِمَا بِذَلِكَ؟ فَقَالَ الرَّهْطُ: نَعَمْ، قَالَ: فَأَقْبَلَ عَلَى عَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ فَقَالَ: أَنْشُدُكُمَا بِاللَّهِ هَلْ دَفَعْتُهَا إِلَيْكُمَا بِذَلِكَ؟ قَالاَ: نَعَمْ، قَالَ: أَفَتَلْتَمِسَانِ مِنِّي قَضَاءً غَيْرَ ذَلِكَ، فَوَالَّذِي بِإِذْنِهِ تَقُومُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ، لاَ أَقْضِي فِيهَا قَضَاءً غَيْرَ ذَلِكَ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ، فَإِنْ عَجَزْتُمَا عَنْهَا فَادْفَعَاهَا فَأَنَا أَكْفِيَكُمَاهَا
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৪৯৬৭ | মুসলিম বাংলা