আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫৪- তালাক - ডিভোর্স অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫২৯৩
২৭৯১. যিহার
(আল্লাহ্ বলেছেনঃ) “আল্লাহ্ শুনতে পেয়েছেন সেই মহিলাটির কথা যে, তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করে থাকে আর যে ব্যক্তি এতে সক্ষম হবে না, সে যেন “ষাটজন মিসকীনকে খাবার দেয়া” পর্যন্ত। (বুখারী (রাহঃ) বলেনঃ) ইসমাঈল আমাকে বলেছেন, মালিক (রাহঃ) তাঁর কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ইবনে শিহাবকে গোলামের যিহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেনঃ আযাদ ব্যক্তির অনুরূপ।
মালিক (রাহঃ) বলেনঃ গোলাম ব্যক্তি দু’মাস রোযা রাখবে।
হাসান বলেনঃ আযাদ মহিলা বা বাঁদীর সাথে আযাদ পুরুষ বা গোলামের যিহার একই রকম।
ইকরিমা বলেনঃ বাঁদীর সাথে যিহার করলে কিছু হবে না। যিহার তো কেবল আযাদ রমণীর সাথেই হতে পারে।
আরবী ভাষায় لام শব্দটি কখনও فِي এর অর্থে ব্যবহার হয়। অর্থাৎ لِمَا قَالُوا শব্দটি فِيمَا قَالُوا এর অর্থ দেয়। এবং فِي بَعْضِ مَا قَالُوا এর অর্থ দেয়। আর ইহাই উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মুনকার ও মিথ্যা বিষয়ের আদেশ করেন না।
(আল্লাহ্ বলেছেনঃ) “আল্লাহ্ শুনতে পেয়েছেন সেই মহিলাটির কথা যে, তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করে থাকে আর যে ব্যক্তি এতে সক্ষম হবে না, সে যেন “ষাটজন মিসকীনকে খাবার দেয়া” পর্যন্ত। (বুখারী (রাহঃ) বলেনঃ) ইসমাঈল আমাকে বলেছেন, মালিক (রাহঃ) তাঁর কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ইবনে শিহাবকে গোলামের যিহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেনঃ আযাদ ব্যক্তির অনুরূপ।
মালিক (রাহঃ) বলেনঃ গোলাম ব্যক্তি দু’মাস রোযা রাখবে।
হাসান বলেনঃ আযাদ মহিলা বা বাঁদীর সাথে আযাদ পুরুষ বা গোলামের যিহার একই রকম।
ইকরিমা বলেনঃ বাঁদীর সাথে যিহার করলে কিছু হবে না। যিহার তো কেবল আযাদ রমণীর সাথেই হতে পারে।
আরবী ভাষায় لام শব্দটি কখনও فِي এর অর্থে ব্যবহার হয়। অর্থাৎ لِمَا قَالُوا শব্দটি فِيمَا قَالُوا এর অর্থ দেয়। এবং فِي بَعْضِ مَا قَالُوا এর অর্থ দেয়। আর ইহাই উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মুনকার ও মিথ্যা বিষয়ের আদেশ করেন না।
৪৯১২। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... ইবনে ‘আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার উটে চড়ে তাওয়াফ করলেন। তিনি যখনই ‘রুকনের’ কাছে আসতেন তখনই এর প্রতি ইশারা করতেন এবং “আল্লাহু আকরার” বলতেন। যায়নাব (রাযিঃ) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ “ইয়াজুজ ও মাজুজ” এদের দরজা এভাবে খুলে গেছে; এই বলে তিনি (তার আঙ্গুলকে) নব্বই এর মত করলেন। (অর্থাৎ শাহাদাত আঙ্গুলীর মাথা বৃদ্ধাঙ্গুলীর গোড়ায় লাগালেন।)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে ইয়াজূজ মাজূজের আবির্ভাব ও তাদের প্রাচীরের ক্রমক্ষয় জানানো হয়েছে যে, এক সময় তারা প্রাচীর ভেঙে বের হয়ে পড়বে এবং সভ্য এলাকাসমূহে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। এটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী । ইতোমধ্যে এটি ঘটে গেছে না ভবিষ্যতে ঘটবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
ইয়াজূজ-মাজূজ ও যুলকারনায়নের প্রাচীর
ইয়াজূজ ও মা'জূজ বলতে তাতার, মঙ্গল, হুন ও শেথীন নামে পরিচিত উপজাতিসমূহকে বোঝায়। তারা হযরত নূহ আলাইহিস সালামের পুত্র ইয়াফিসের বংশধর। তারা রাশিয়া, উত্তর চীন ও এর মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাসমূহে বাস করত। ইউরোপে তারা গগ ও মেগগ নামে পরিচিত। তারা একটি লড়াকু ও দুর্ধর্ষ জাতি ছিল। পার্বত্য অঞ্চল থেকে বের হয়ে তারা সভ্য দেশসমূহে দস্যুবৃত্তি ও লুটতরাজ করে বেড়াত। তাদের হামলা থেকে তিব্বত ও চীনের অধিবাসীরাও রেহাই পেত না। তাদের সে জুলুম-অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি প্রাচীর নির্মিত হয়। একটি প্রাচীর নির্মাণ করেন বাদশা যুলকারনায়ন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে যুলকারনায়ন হচ্ছেন পারস্য সম্রাট খুরস (সাইরাস), যিনি খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দির এক দিগ্বিজয়ী বীর।
কুরআন মাজীদে যুলকারনায়নের বিভিন্ন সফরের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সর্বশেষ সফর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছেঃ- حَتَّى إِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِنْ دُونِهِمَا قَوْمًا لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ قَوْلًا قَالُوا يَاذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَى أَنْ تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا “চলতে চলতে যখন দু'টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল, তখন সে পাহাড়ের কাছে এমন এক জাতির সাক্ষাৎ পেল, যারা তার কোনও কথা যেন বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মা'জূজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। আমরা কি আপনাকে কিছু কর দেব, যার বিনিময়ে আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন?
তিনি তাদের সে অনুরোধ রক্ষা করেন এবং লোহা ও গলিত তামা দ্বারা একটি মজবুত প্রাচীর তৈরি করে দেন। সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا 'যুলকারনাইন বলল, আল্লাহ আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন সেটাই (আমার জন্য) শ্রেয়। সুতরাং তোমরা (তোমাদের হাত-পায়ের) শক্তি দ্বারা আমাকে সহযোগিতা কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পিণ্ড এনে দাও। অবশেষে সে যখন (মাঝখানের ফাকা পূর্ণ করে) উভয় পাহাড়ের চূড়া পরস্পর বরাবর করে মিলিয়ে দিল তখন বলল, এবার আগুনে হাওয়া দাও। যখন সেটিকে (প্রাচীর) জ্বলন্ত কয়লায় পরিণত করল তখন বলল, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো। আমি তা এর ওপর ঢেলে দেব।
হযরত যুলকারনায়ন রহ. যে প্রাচীরটি নির্মাণ করেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন সেটি আসলে কোন্টি। মধ্য এশিয়ায় প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ গবেষণা করে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে প্রাচীর যেটিই হোক না কেন, তার নির্মিত প্রাচীর দ্বারা তখন সভ্য এলাকার মানুষ ইয়াজূজ-মাজূজের লুটতরাজ থেকে নিস্তার পেয়েছিল। পরবর্তীকালে সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে নাকি এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে কোথাও বিদ্যমান আছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আল্লাহ তা'আলার কুদরতের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।
যুলকারনায়নের প্রাচীর ছিদ্র হওয়ার অর্থ
আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইয়াজুজ মা'জুজের প্রাচীর ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তা আক্ষরিক অর্থেও হতে পারে এবং রূপকার্থেও হতে পারে। আক্ষরিক অর্থে হলে তা দ্বারা ইয়াজূজ-মাজূজের কিয়ামতপূর্ববর্তী আবির্ভাবের কথাও বোঝানো হতে পারে অথবা তার আরও আগের কোনও বিপর্যয়ের দিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে। চেঙ্গিসখান, হালাকুখান, তৈমুরলঙ্গ প্রভৃতি মোঙ্গল নরপতিগণ বিভিন্ন সময় মুসলিম এলাকায় দুর্ধর্ষ হামলা চালিয়েছে। এ হাদীছে তাদের সে হামলাগুলোর কথা বোঝানো অসম্ভব নয়। আবার এমনও হতে পারে, কিয়ামতের আগে তারা যে বিভীষিকা চালাবে এবং যা কিয়ামতপূর্ববর্তী একটি বড় আলামত, সেদিকে ইশারা হয়েছে । কুরআন মাজীদে সে সম্পর্কে ইরশাদঃ- حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ ‘পরিশেষে যখন ইয়াজুজ ও মা'জুজকে খুলে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে প্রতিটি উঁচু ভূমি থেকে পিছলে নামতে দেখা যাবে।
এ আয়াতে সরাসরি কোনও প্রাচীরের কথা উল্লেখ নেই। যদি তখন বাস্তবিক কোনও প্রাচীর থাকেও, তবে তা তাদের সে আবির্ভাব প্রতিহত করতে পারবে না। তাদের অসংখ্য লোক সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢলের বেগে নেমে আসতে থাকবে। সে হিসেবে প্রাচীর ছিদ্র হওয়া দ্বারা রূপক অর্থে তাদের সৃষ্ট ফিতনা বোঝানো হতে পারে। অর্থাৎ তারা একের পর এক ফিতনা বিস্তার করতে থাকবে, যার প্রথম শিকার হবে আরবগণ। তারপর তাদের সাথে অন্যান্য মুসলিম এলাকাও আক্রান্ত হবে। পরিশেষে কিয়ামতের আগে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আবির্ভাবের পর তা এমনই ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যে, কোনও শক্তি তা প্রতিহত করতে পারবে না। ফলে তাদের থেকে খাঁটি ঈমানদারদেরকে হেফাজত করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে তূর পাহাড়ে আশ্রয় নিতে হবে। যেমন এক হাদীছে আছেঃ-
“এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা ইব্ন মারয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দামেশকের পূর্বদিকের সাদা মিনারের নিকটে অবতরণ করবেন, জাফরানী রঙের দু'টি চাদর পরিহিত অবস্থায়, ফিরিশতাদের বাহুর ওপর দুই হাতে ভর করে। তিনি যখন মাথা নোয়াবেন, তখন পানি টপকাতে শুরু করবে। আবার যখন মাথা সোজা করবেন, তখন তা থেকে মুক্তার দানার মত পানি গড়িয়ে পড়বে। তার নিঃশ্বাস যে পর্যন্ত পৌছাবে সে পর্যন্ত সকল কাফের মারা যাবে। আর তার নিঃশ্বাস পৌছাবে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করবেন। তাকে পেয়ে যাবেন বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী 'লূদ্দ' নামক জনপদের দরজায়। তিনি সেখানেই তাকে হত্যা করে ফেলবেন। তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম ওই সকল লোকের কাছে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা দাজ্জাল থেকে রক্ষা করবেন। তিনি তাদের চেহারাসমূহ মুছে দেবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য যে মর্যাদা স্থির করা আছে সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। ঠিক এ সময়ই আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর ওহী নাযিল করবেন যে, এখন আমি আমার এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটাচ্ছি, যাদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই। সুতরাং তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে তূর পাহাড়ের দিকে যাও। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ইয়াজুজ ও মা'জূজের আবির্ভাব ঘটাবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসবে -মুসলিম। "
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও এক কালে ইয়াজূজ-মাজূজ জাতিকে ঠেকানোর জন্য যে প্রাচীর নির্মিত হয়েছিল তা সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
খ. কিয়ামতের আগে ইয়াজূজ-মাজূজের পক্ষ থেকে এ জাতির ওপর এক মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। এটা কিয়ামতের বড় আলামতসমূহের একটি।
ইয়াজূজ-মাজূজ ও যুলকারনায়নের প্রাচীর
ইয়াজূজ ও মা'জূজ বলতে তাতার, মঙ্গল, হুন ও শেথীন নামে পরিচিত উপজাতিসমূহকে বোঝায়। তারা হযরত নূহ আলাইহিস সালামের পুত্র ইয়াফিসের বংশধর। তারা রাশিয়া, উত্তর চীন ও এর মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাসমূহে বাস করত। ইউরোপে তারা গগ ও মেগগ নামে পরিচিত। তারা একটি লড়াকু ও দুর্ধর্ষ জাতি ছিল। পার্বত্য অঞ্চল থেকে বের হয়ে তারা সভ্য দেশসমূহে দস্যুবৃত্তি ও লুটতরাজ করে বেড়াত। তাদের হামলা থেকে তিব্বত ও চীনের অধিবাসীরাও রেহাই পেত না। তাদের সে জুলুম-অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি প্রাচীর নির্মিত হয়। একটি প্রাচীর নির্মাণ করেন বাদশা যুলকারনায়ন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে যুলকারনায়ন হচ্ছেন পারস্য সম্রাট খুরস (সাইরাস), যিনি খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দির এক দিগ্বিজয়ী বীর।
কুরআন মাজীদে যুলকারনায়নের বিভিন্ন সফরের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সর্বশেষ সফর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছেঃ- حَتَّى إِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِنْ دُونِهِمَا قَوْمًا لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ قَوْلًا قَالُوا يَاذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَى أَنْ تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا “চলতে চলতে যখন দু'টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল, তখন সে পাহাড়ের কাছে এমন এক জাতির সাক্ষাৎ পেল, যারা তার কোনও কথা যেন বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মা'জূজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। আমরা কি আপনাকে কিছু কর দেব, যার বিনিময়ে আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন?
তিনি তাদের সে অনুরোধ রক্ষা করেন এবং লোহা ও গলিত তামা দ্বারা একটি মজবুত প্রাচীর তৈরি করে দেন। সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا 'যুলকারনাইন বলল, আল্লাহ আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন সেটাই (আমার জন্য) শ্রেয়। সুতরাং তোমরা (তোমাদের হাত-পায়ের) শক্তি দ্বারা আমাকে সহযোগিতা কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পিণ্ড এনে দাও। অবশেষে সে যখন (মাঝখানের ফাকা পূর্ণ করে) উভয় পাহাড়ের চূড়া পরস্পর বরাবর করে মিলিয়ে দিল তখন বলল, এবার আগুনে হাওয়া দাও। যখন সেটিকে (প্রাচীর) জ্বলন্ত কয়লায় পরিণত করল তখন বলল, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো। আমি তা এর ওপর ঢেলে দেব।
হযরত যুলকারনায়ন রহ. যে প্রাচীরটি নির্মাণ করেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন সেটি আসলে কোন্টি। মধ্য এশিয়ায় প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ গবেষণা করে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে প্রাচীর যেটিই হোক না কেন, তার নির্মিত প্রাচীর দ্বারা তখন সভ্য এলাকার মানুষ ইয়াজূজ-মাজূজের লুটতরাজ থেকে নিস্তার পেয়েছিল। পরবর্তীকালে সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে নাকি এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে কোথাও বিদ্যমান আছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আল্লাহ তা'আলার কুদরতের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।
যুলকারনায়নের প্রাচীর ছিদ্র হওয়ার অর্থ
আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইয়াজুজ মা'জুজের প্রাচীর ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তা আক্ষরিক অর্থেও হতে পারে এবং রূপকার্থেও হতে পারে। আক্ষরিক অর্থে হলে তা দ্বারা ইয়াজূজ-মাজূজের কিয়ামতপূর্ববর্তী আবির্ভাবের কথাও বোঝানো হতে পারে অথবা তার আরও আগের কোনও বিপর্যয়ের দিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে। চেঙ্গিসখান, হালাকুখান, তৈমুরলঙ্গ প্রভৃতি মোঙ্গল নরপতিগণ বিভিন্ন সময় মুসলিম এলাকায় দুর্ধর্ষ হামলা চালিয়েছে। এ হাদীছে তাদের সে হামলাগুলোর কথা বোঝানো অসম্ভব নয়। আবার এমনও হতে পারে, কিয়ামতের আগে তারা যে বিভীষিকা চালাবে এবং যা কিয়ামতপূর্ববর্তী একটি বড় আলামত, সেদিকে ইশারা হয়েছে । কুরআন মাজীদে সে সম্পর্কে ইরশাদঃ- حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ ‘পরিশেষে যখন ইয়াজুজ ও মা'জুজকে খুলে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে প্রতিটি উঁচু ভূমি থেকে পিছলে নামতে দেখা যাবে।
এ আয়াতে সরাসরি কোনও প্রাচীরের কথা উল্লেখ নেই। যদি তখন বাস্তবিক কোনও প্রাচীর থাকেও, তবে তা তাদের সে আবির্ভাব প্রতিহত করতে পারবে না। তাদের অসংখ্য লোক সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢলের বেগে নেমে আসতে থাকবে। সে হিসেবে প্রাচীর ছিদ্র হওয়া দ্বারা রূপক অর্থে তাদের সৃষ্ট ফিতনা বোঝানো হতে পারে। অর্থাৎ তারা একের পর এক ফিতনা বিস্তার করতে থাকবে, যার প্রথম শিকার হবে আরবগণ। তারপর তাদের সাথে অন্যান্য মুসলিম এলাকাও আক্রান্ত হবে। পরিশেষে কিয়ামতের আগে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আবির্ভাবের পর তা এমনই ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যে, কোনও শক্তি তা প্রতিহত করতে পারবে না। ফলে তাদের থেকে খাঁটি ঈমানদারদেরকে হেফাজত করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে তূর পাহাড়ে আশ্রয় নিতে হবে। যেমন এক হাদীছে আছেঃ-
“এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা ইব্ন মারয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দামেশকের পূর্বদিকের সাদা মিনারের নিকটে অবতরণ করবেন, জাফরানী রঙের দু'টি চাদর পরিহিত অবস্থায়, ফিরিশতাদের বাহুর ওপর দুই হাতে ভর করে। তিনি যখন মাথা নোয়াবেন, তখন পানি টপকাতে শুরু করবে। আবার যখন মাথা সোজা করবেন, তখন তা থেকে মুক্তার দানার মত পানি গড়িয়ে পড়বে। তার নিঃশ্বাস যে পর্যন্ত পৌছাবে সে পর্যন্ত সকল কাফের মারা যাবে। আর তার নিঃশ্বাস পৌছাবে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করবেন। তাকে পেয়ে যাবেন বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী 'লূদ্দ' নামক জনপদের দরজায়। তিনি সেখানেই তাকে হত্যা করে ফেলবেন। তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম ওই সকল লোকের কাছে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা দাজ্জাল থেকে রক্ষা করবেন। তিনি তাদের চেহারাসমূহ মুছে দেবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য যে মর্যাদা স্থির করা আছে সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। ঠিক এ সময়ই আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর ওহী নাযিল করবেন যে, এখন আমি আমার এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটাচ্ছি, যাদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই। সুতরাং তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে তূর পাহাড়ের দিকে যাও। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ইয়াজুজ ও মা'জূজের আবির্ভাব ঘটাবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসবে -মুসলিম। "
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও এক কালে ইয়াজূজ-মাজূজ জাতিকে ঠেকানোর জন্য যে প্রাচীর নির্মিত হয়েছিল তা সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
খ. কিয়ামতের আগে ইয়াজূজ-মাজূজের পক্ষ থেকে এ জাতির ওপর এক মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। এটা কিয়ামতের বড় আলামতসমূহের একটি।
