শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১১. শরীআত বিধিত দন্ডের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০৪৯
৬. কোন মু'মিন কাফিরকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করা প্রসঙ্গ
৫০৪৯। ইবরাহীম ইব্‌ন আবী দাউদ (রাহঃ) ….. ইব্‌ন শিহাব (যুহরী র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে সাঈদ ইব্‌ন মুসাইয়্যাব (রাহঃ) খবর দিয়েছেন যে, আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবু বাকার (রাযিঃ) বলেন, যখন উমার (রাযিঃ) শাহাদাত বরণ করেন তখন আমি আবু লু'লুর কাছ দিয়ে অতিক্রম করেছি এবং তার সঙ্গে হুরমাযান ছিল। আমি যখন তাদের উপর অকস্মাৎ আক্রমণ করলাম তখন তারা পালিয়ে গেল এবং তাদের খঞ্জরটি পড়ে গেল যার দুটি মাথা ছিল আর হাতল ছিল এর মাঝে। বলেন, আমি বললাম, লক্ষ্য কর, সম্ভবত এটা সেই খঞ্জর, যা দ্বারা উমার (রাযিঃ)-কে শহীদ করা হয়েছে। তারা লক্ষ্য করলেন, দেখা গেল এটা সেই খঞ্জর ছিল, যে সম্পর্কে আব্দুর রহমান (রাযিঃ) বর্ণনা দিয়েছেন। উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন উমার (রাযিঃ) যখন আব্দুর রহমান (রাযিঃ) থেকে এ কথা শুনলেন তখন তরবারি নিয়ে রওয়ানা হলেন। অবশেষে তিনি হুরমুযানকে আহবান করলেন। যখন সে তাঁর দিকে বের হলাে তখন বললেন, চল! গিয়ে আমার অশ্ব দেখ। যখন সে সম্মুখে চলতে লাগল তখন তিনি পিছনে সরে পড়লেন এবং তার উপর তরবারি উত্তোলন করলেন। সে যখন তরবারির স্পর্শ অনুভব করল তখন বললঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” তথা পবিত্র কালিমা পড়ল। উবায়দুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, আমি হুফায়নাকে আহবান করলাম এবং সে হীরা নগরীর খ্রিস্টান ছিল। সে যখন আমার দিকে বেরিয়ে আসল আমি তার উপর তরবারি উত্তোলন করলাম, যা তার দু’চক্ষের মাঝে আঘাত হানে। অতঃপর উবায়দুল্লাহ্ (রাযিঃ) চলে গেলেন এবং তিনি আবু লু'লুর ছােট কন্যাকে, যে ইসলামের দাবি করত, হত্যা করে ফেলেন। যখন উসমান (রাযিঃ) খলীফা নিযুক্ত হলেন তখন তিনি মুহাজির ও আনসার সাহাবীদেরকে ডেকে বললেন, আমাকে এই ব্যক্তির হত্যা সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান কর, যে কি না দ্বীনের মধ্যে বিশৃংখলা (ফাসাদ) সৃষ্টি করেছে। মুহাজির সাহাবীগণ সর্বসম্মতভাবে তাকে কঠোরতা অবলম্বনের এবং হত্যা করার পরামর্শ দিলেন। উবায়দুল্লাহর সঙ্গে লােকদের বিশাল এক বাহিনী ছিল। তারা বলতেন, হুফায়না ও হুরমুযানকে আল্লাহ্ দূর করে দিয়েছেন। এখন এ বিষয়ে বিরােধ হয়েছে। অতঃপর আমর ইবন 'আস (রাযিঃ) বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! এই ঘটনাটি
আপনার বায়'আত হওয়ার পর সংঘটিত হওয়ায় আপনাকে আল্লাহ্ রক্ষা করেছেন। ওটা তাে লােকদের উপর আপনার রাজত্ব তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার পূর্বেকার (ঘটনা)। অনন্তর তিনি উবায়দুল্লাহ্ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আর সাহাবাগণ আমর ইব্‌ন আস (রাযিঃ)-এর ভাষণের কারণে (বৈঠক থেকে) চলে গেলেন। অবশেষে উসমান (রাযিঃ) ওই দুই ব্যক্তি এবং বালিকার দিয়াত আদায় করে দিলেন।

বস্তুত এই হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, উবায়দুল্লাহ (রাহঃ) হুফায়নাকে হত্যা করেছেন এবং সে মুশরিক ছিল। হুরমুযানকে আঘাত করেছেন এবং সে কাফির ছিল, অতঃপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে মুহাজিরগণ উসমান (রাযিঃ)-কে উবায়দুল্লাহ (রাহঃ)-এর হত্যার পরামর্শ দিয়েছেন। আলী (রাযিঃ) ও তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলেন। সুতরাং (ﷺ)-এর বক্তব্যঃ “কোন মু'মিনকে কোন কাফিরের বদলায় হত্যা করা হবে না” দ্বারা হারবী কাফির ব্যতীত অন্য কাফির উদ্দেশ্য নেয়াটা অসম্ভব। অতঃপর মুহাজিরগণ যাদের মাঝে আলী (রাযিঃ) ও ছিলেন, উসমান (রাযিঃ)-কে একজন যিম্মী কাফিরের বদলায় উবায়দুল্লাহ (রাযিঃ)-কে হত্যার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই এর মর্ম সেটাই, যা আমরা উল্লেখ করেছি, অর্থাৎ তার উদ্দেশ্য হলাে হারবী কাফির।

যদি কোন ব্যক্তি বলে যে, এই হাদীসে এটাও ব্যক্ত হয়েছে যে, উবায়দুল্লাহ (রাযিঃ) আবু লু'লুর ছােট কন্যাকে হত্যা করেছেন এবং সে ইসলামের দাবি করত। হতে পারে তাঁরা এ কারণে (বালিকা হত্যা) উবায়দুল্লাহর রক্ত প্রবাহিত করাকে জায়িয সাব্যস্ত করেছেন, হুফায়না ও হুরমুযান এই দুই ব্যক্তির কারণে নয়।

তাকে উত্তরে বলা হবে যে, এই হাদীসে একথার সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে যে, তিনি (রাযিঃ) হুফায়না ও হুরমুযান এর হত্যার কারণে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। আর এটা তাদের উক্তি যে, আল্লাহ্ তা'আলা ওই দু’জনকে (রহমত থেকে) দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং এটা অসম্ভব যে, উসমান (রাযিঃ) ওই দুই জন ব্যতীত অন্যের কারণে তাকে হত্যা করার সংকল্প করেছিলেন, যখন কিনা লোকেরা তাঁকে এটা বলছিল যে, আল্লাহ্ তা'আলা সেই দু’জনকে দূর করে দিয়েছেন। এরপর তিনি বলবেন যে, আমি ওই দুজনের কারণে তাকে হত্যা করার সংকল্প করি নাই; বরং আমি ঐ বালিকার হত্যার কারণে এই ইচ্ছা করেছি, তাই তিনি ওই দুজন এবং এ বালিকার হত্যার কারণে তাকে হত্যা করার সংকল্প করেছেন।

তােমরা কি তাকে লক্ষ্য করছ না যে, সে বলছে, এতে মতবিরােধ অধিক হয়ে গিয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়। যে, উসমান (রাযিঃ) তাকে সেই সমস্ত লােকদের বদলায় হত্যা করার সংকল্প করেছেন, যাদের তিনি হত্যা করেছেন। আর তাদের (নিহতদের) মধ্যে হুরমুযান এবং খুফায়নাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং আমাদের বক্তব্য দ্বারা সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, হাদীসের বিশুদ্ধ মর্ম ও বিষয়বস্তু সেটাই, যা আমরা বর্ণনা করেছি এবং একথার খণ্ডন হয়ে গিয়েছে যে, এই হাদীস যিম্মীর বদলায় মুসলিমকে হত্যা করার পরিপন্থী দলীল হতে পারে ।

রাসূল(ﷺ) থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদীসও এর অনুকূলে অত্যন্ত মজবুতভাবে সমর্থন ব্যক্ত করে ,যদিও তা মুনকাতি‘:
5049 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ أَبِي دَاوُدَ , قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ صَالِحٍ , قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ , قَالَ: حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ , عَنِ [ص:194] ابْنِ شِهَابٍ , أَنَّهُ قَالَ: أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ , أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ , قَالَ - حِينَ قُتِلَ عُمَرُ - مَرَرْتُ عَلَى أَبِي لُؤْلُؤَةَ وَمَعَهُ هُرْمُزَانُ. فَلَمَّا بَغَتَهُمْ ثَارُوا فَسَقَطَ مِنْ بَيْنِهِمْ خَنْجَرٌ لَهُ رَأْسَانِ مُمْسَكُهُ فِي وَسَطِهِ. قَالَ: قُلْتُ فَانْظُرُوا لَعَلَّهُ الْخَنْجَرُ الَّذِي قَتَلَ بِهِ عُمَرَ فَنَظَرُوا فَإِذَا هُوَ الْخَنْجَرُ الَّذِي وَصَفَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ. فَانْطَلَقَ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ حِينَ سَمِعَ ذَلِكَ مِنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَمَعَهُ السَّيْفُ حَتَّى دَعَا الْهُرْمُزَانَ فَلَمَّا خَرَجَ إِلَيْهِ قَالَ: انْطَلِقْ حَتَّى تَنْظُرَ إِلَى فَرَسٍ لِي ثُمَّ تَأَخَّرَ عَنْهُ , إِذَا مَضَى بَيْنَ يَدَيْهِ عَلَاهُ بِالسَّيْفِ , فَلَمَّا وَجَدَ مَسَّ السَّيْفِ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ قَالَ عُبَيْدُ اللهِ وَدَعَوْتُ حُفَيْنَةَ وَكَانَ نَصْرَانِيًّا مِنْ نَصَارَى الْحِيرَةِ فَلَمَّا خَرَجَ إِلَيَّ عَلَوْتُهُ بِالسَّيْفِ فَصَلْتُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ , ثُمَّ انْطَلَقَ عُبَيْدُ اللهِ فَقَتَلَ ابْنَةَ أَبِي لُؤْلُؤَةَ صَغِيرَةً تَدَّعِي الْإِسْلَامَ. فَلَمَّا اسْتُخْلِفَ عُثْمَانُ دَعَا الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارَ فَقَالَ: أَشِيرُوا عَلَيَّ فِي قَتْلِ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي فَتَقَ فِي الدِّينِ مَا فَتَقَ. فَاجْتَمَعَ الْمُهَاجِرُونَ فِيهِ عَلَى كَلِمَةٍ وَاحِدَةٍ يَأْمُرُونَهُ بِالشِّدَّةِ عَلَيْهِ وَيَحُثُّونَ عُثْمَانَ عَلَى قَتْلِهِ وَكَانَ فَوْجُ النَّاسِ الْأَعْظَمِ مَعَ عُبَيْدِ اللهِ يَقُولُونَ لِحُفَيْنَةَ وَالْهُرْمُزَانِ أَبْعَدُهُمَا اللهُ فَكَانَ فِي ذَلِكَ الِاخْتِلَافُ. ثُمَّ قَالَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ إِنَّ هَذَا الْأَمْرَ قَدْ أَعْفَاكَ اللهُ مِنْ أَنْ تَكُونَ بَعْدَمَا قَدْ بُويِعْتَ وَإِنَّمَا كَانَ ذَلِكَ قَبْلَ أَنْ يَكُونَ لَكَ عَلَى النَّاسِ سُلْطَانٌ فَأَعْرَضَ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ. وَتَفَرَّقَ النَّاسُ عَنْ خُطْبَةِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ وَوَدَى الرَّجُلَيْنِ وَالْجَارِيَةَ فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ عُبَيْدَ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَتَلَ حُفَيْنَةَ وَهُوَ مُشْرِكٌ وَضَرَبَ الْهُرْمُزَانَ وَهُوَ كَافِرٌ ثُمَّ كَانَ إِسْلَامُهُ بَعْدَ ذَلِكَ. فَأَشَارَ الْمُهَاجِرُونَ رِضْوَانُ اللهِ عَلَيْهِمْ عَلَى عُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بِقَتْلِ عُبَيْدِ اللهِ , وَعَلِيٌّ فِيهِمْ. فَمُحَالٌ أَنْ يَكُونَ قَوْلُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «لَا يُقْتَلُ مُؤْمِنٌ بِكَافِرٍ» يُرَادُ بِهِ غَيْرُ الْحَرْبِيِّ ثُمَّ يُشِيرُ الْمُهَاجِرُونَ وَفِيهِمْ عَلِيٌّ عَلَى عُثْمَانَ بِقَتْلِ عُبَيْدِ اللهِ بِكَافِرٍ ذِي عَهْدٍ وَلَكِنْ مَعْنَاهُ هُوَ عَلَى مَا ذَكَرْنَا مِنْ إِرَادَتِهِ الْكَافِرَ الَّذِي لَا ذِمَّةَ لَهُ. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ عُبَيْدَ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَتَلَ بِنْتًا لِأَبِي لُؤْلُؤَةَ صَغِيرَةً تَدَّعِي الْإِسْلَامَ فَيَجُوزُ أَنْ يَكُونَ إِنَّمَا اسْتَحَلُّوا سَفْكَ دَمِ عُبَيْدِ اللهِ بِهَا لَا بِحُفَيْنَةَ وَالْهُرْمُزَانِ. [ص:195] قِيلَ لَهُ: فِي هَذَا الْحَدِيثِ مَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ أَرَادَ قَتَلَهُ بِحُفَيْنَةَ وَالْهُرْمُزَانِ وَهُوَ قَوْلُهُمْ «أَبْعَدَهُمَا اللهُ» . فَمُحَالٌ أَنْ يَكُونَ عُثْمَانُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَرَادَ أَنْ يَقْتُلَهُ بِغَيْرِهِمَا وَيَقُولُ النَّاسُ لَهُ أَبْعَدَهُمَا اللهُ ثُمَّ لَا يَقُولُ لَهُمْ إِنِّي لَمْ أُرِدْ قَتْلَهُ بِهَذَيْنِ إِنَّمَا أَرَدْتُ قَتْلَهُ بِالْجَارِيَةِ وَلَكِنَّهُ أَرَادَ قَتْلَهُ بِهِمَا وَبِالْجَارِيَةِ. أَلَا تَرَاهُ يَقُولُ فَكَثُرَ فِي ذَلِكَ الِاخْتِلَافُ. فَدَلَّ ذَلِكَ أَنَّ عُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ إِنَّمَا أَرَادَ قَتْلَهُ بِمَنْ قَتَلَ وَفِيهِمُ الْهُرْمُزَانُ وَحُفَيْنَةُ. فَقَدْ ثَبَتَ بِمَا ذَكَرْنَا مَا صَحَّ عَلَيْهِ مَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ مَعْنَى حَدِيثِهِ عَلَى الْأَوَّلِ عَلَى مَا وَصَفْنَا فَانْتَفَى أَنْ يَكُونَ فِيهِ حُجَّةٌ تَدْفَعُ أَنْ يُقْتَلَ الْمُسْلِمُ بِالذِّمِّيِّ. وَقَدْ وَافَقَ ذَلِكَ أَيْضًا رُشْدَهُ مَا قَدْ رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنْ كَانَ مُنْقَطِعًا
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৫০৪৯ | মুসলিম বাংলা