শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

৬. হজ্বের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭৮৬
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৯০
হারামের বাইরে হালাল ব্যক্তির জবাই করা শিকার মুহরিমের পক্ষে আহার করা যাবে কি-না?
৩৭৮৬-৯০। ইউনুস (রাহঃ) ..... ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, সা'ব ইব্‌ন জাছছামা (রাযিঃ) বলেন, আমি একবার আবওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে ছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ্ ﷺ আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমি তাঁকে বন্য গাধার গোশ্ত হাদিয়া স্বরূপ পেশ করলাম। তিনি তা আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর যখন তিনি আমার চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করলেন তখন বললেন, তোমার এই হাদিয়া আমি প্রত্যাখ্যান করতাম না। কিন্তু বর্তমানে আমি যে, ইহরামরত রয়েছি।


সুলায়মান ইব্‌ন শু'আইব (রাহঃ) ..... যুহরী (রাহঃ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।

তাঁদেরকে বলা হবে : এই হাদীসটি মুযতারাব (মতনগত গোলমাল সম্বলিত)। একদল আলিম তো তা এরূপই রিওয়ায়াত করেছেন, যা আমরা উল্লেখ করেছি। অন্যরা আবার তা রিওয়ায়াত করতে গিয়ে বলেছেন যে, তাঁর দরবারে বন্য গাধা হাদিয়া রূপে পেশ করা হয়েছিল :


ইউনুস (রাহঃ) ..... ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, সা'ব ইব্‌ন জাছছামা (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর দরবারে বন্য গাধা হাদিয়ারূপে পেশ করেছিলেন। তারপর তিনি (ইউনুস র) সুফইয়ান (রাহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।


ইউনুস (রাহঃ) ..... ইব্‌ন শিহাব (রাহঃ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।


ইউনুস (রাহঃ) ….. যুহরী (রাহঃ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন ।

বস্তুত এই সমস্ত হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্ ﷺ যে হাদিয়া হারাম হওয়ার কারণে সা'ব (রাযিঃ) কে ফিরিয়ে দিয়েছেন, তা ছিলো বন্য গাধা। যদি বিষয়টি অনুরূপ হয় তাহলে এটা মুহরিমের উপর হারাম হওয়ার ব্যাপারে কারো বিরোধ নেই। তবে সাঈদ ইব্‌ন জুবাইর (রাযিঃ) এই হাদীসটিকে ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে রিওয়ায়াত করতে গিয়ে উবায়দুল্লাহ্ (রাহঃ)-এর রিওয়ায়াতের উপর একটি শব্দ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। তাতে সেই শব্দটি তিনি এভাবে বর্ণনা রেছেন যে, গাধাটি জবাইকৃত ছিলো।
90- 3786 - بِمَا حَدَّثَنَا يُونُسُ , قَالَ: ثنا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنِ الزُّهْرِيِّ , عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ , عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ , عَنِ الصَّعْبِ بْنِ جَثَّامَةَ قَالَ: مَرَّ بِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا بِالْأَبْوَاءِ وَبِوَدَّانَ , فَأَهْدَيْتُ لَهُ لَحْمَ حِمَارِ وَحْشٍ , فَرَدَّهُ عَلَيَّ , فَلَمَّا رَأَى الْكَرَاهَةَ فِي وَجْهِي قَالَ: «لَيْسَ بِنَا رَدٌّ عَلَيْكَ , وَلَكِنَّا حُرُمٌ»

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ شُعَيْبٍ , قَالَ: ثنا أَسَدٌ , قَالَ: ثنا الْمَسْعُودِيُّ , عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ رَاشِدٍ , عَنِ الزُّهْرِيِّ , فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ. فَقِيلَ لَهُمْ: هَذَا حَدِيثٌ مُضْطَرِبٌ , قَدْ رَوَاهُ قَوْمٌ عَلَى مَا ذَكَرْنَا , وَرَوَاهُ آخَرُونَ , فَقَالُوا: إِنَّمَا أُهْدِي إِلَيْهِ حِمَارًا وَحْشِيًّا

حَدَّثَنَا يُونُسُ , قَالَ: أنا ابْنُ وَهْبٍ أَنَّ مَالِكًا حَدَّثَهُ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ , عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ , عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ الصَّعْبَ بْنَ جَثَّامَةَ أَهْدَى لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِمَارًا وَحْشِيًّا , ثُمَّ ذَكَرَ مِثْلَ حَدِيثِهِ عَنْ سُفْيَانَ

حَدَّثَنَا يُونُسُ , قَالَ: أنا ابْنُ وَهْبٍ , قَالَ: أَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ , عَنِ ابْنِ شِهَابٍ , فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ

حَدَّثَنَا يُونُسُ , قَالَ: ثنا شُعَيْبُ بْنُ اللَّيْثِ , عَنْ أَبِيهِ , عَنِ الزُّهْرِيِّ , فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ فَفِي هَذِهِ الْأَحَادِيثِ , أَنَّ الْهَدِيَّةَ الَّتِي رَدَّهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الصَّعْبِ مِنْ أَجْلِ أَنَّهُ حَرَامٌ , كَانَتْ حِمَارًا وَحْشِيًّا فَإِنْ كَانَ ذَلِكَ كَذَلِكَ , فَإِنَّ هَذَا لَا يَخْتَلِفُ أَحَدٌ فِي حُرْمَتِهِ عَلَى الْمُحْرِمِ , غَيْرَ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَدْ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ , عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَزَادَ فِيهِ حَرْفًا , عَلَى مَا رَوَاهُ عُبَيْدُ اللهِ , بَيَّنَ بِذَلِكَ الْحَرْفِ أَنَّ الْحِمَارَ كَانَ مَذْبُوحًا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফরে ছিলেন। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হযরত সা'ব ইবন জাছ্ছামা রাযি. একটি বন্য গাধা, সম্ভবত জেব্রা, তাঁকে হাদিয়া দিলেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় সেটি জবাই করা ছিল এবং তিনি তার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে তা গ্রহণ করলেন না। এতে হযরত সা'ব রাযি. দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তবে কি কোনও কারণে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি নারাজ? না হয় তার হাদিয়া ফেরত দিলেন কেন? খুবসম্ভব তখনও পর্যন্ত তার এ মাসআলা জানা ছিল না যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা কিংবা শিকারের কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নয়। এমনিভাবে এভাবে পশু শিকার করে তার গোশত খাওয়াও তার জন্য হালাল নয়।

যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন হাদিয়া ফেরত দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তার চেহারা মলিন হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য সাহাবায়ে কেরাম যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন, তেমনি তিনিও তাদেরকে গভীরভাবে স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। প্রিয় সাহাবীর মনোবেদনা দীর্ঘ হতে দিলেন না। তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, দেখো, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। কেবল এ কারণেই তোমার এ হাদিয়া ফেরত দিয়েছি, অন্য কোনও কারণে নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মুহরিম ব্যক্তির জন্য পশু শিকার করা ও শিকারকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়।

খ. বুনো গাধা খাওয়া জায়েয।

গ. হাদিয়া দেওয়া ও গ্রহণ করা সুন্নত, যদি না তাতে নিষিদ্ধতার কোনও কারণ থাকে।

ঘ. অকারণে হাদিয়া ফেরত দেওয়া উচিত নয়। তাতে হাদিয়াদাতা মনে কষ্ট পায়।

ঙ. কারও দিক থেকে কেউ মনে কষ্ট পেলে যত দ্রুত সম্ভব তার সে কষ্ট দূর করে দেওয়া উচিত।

চ. কারও আচরণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তার উচিত সে ভুল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৩৭৮৬ | মুসলিম বাংলা