শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

৫. রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১৯১
রামাযান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করার বিধান
৩১৯১। আবু বাকরা (রাহঃ) ..... আবু হুরায়য়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক বার নবী করীম (ﷺ) জনৈক ব্যক্তিকে, যে কিনা রামাযান মাসে সিয়াম ভেঙ্গে ফেলেছিল নির্দেশ দিলেন, যেন সে একটি গােলাম আযাদ করে বা এক নাগাড়ে দুই মাস সিয়াম পালন করে বা ষাট মিসকীনকে আহার করায়। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে যা দান করার তা দান করেছেন, সেই বস্তু থেকে যা তাকে সাদাকা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এই বিষয়ে তার উপর কি জরুরী তা, তাকে অবহিত করার পর, যা আবু হুরায়রা (রাযিঃ) তাঁর এই হাদীসে বর্ণনা করেছেন।
এ বিষয়ে আরেক দল আলিমগণও তাঁদের বিরােধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেনঃ বরং একটি গােলাম আযাদ করবে যদি এর সামর্থ্য থাকে বা লাগাতার দুই মাস সিয়াম পালন করবে, যদি গোলাম আযাদে সমর্থ না হয়; আর যদি তাতে (লাগাতার দুই মাস সিয়াম পালনে) সক্ষম না হয় তাহলে ষাট মিসকীনকে আহার করাবে। (অর্থাৎ ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও জরুরী) এ বিষয়ে তাঁদের প্রমাণ হলাে যে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর হাদীস যা আমরা এই অংশের পূর্বের অংশে উল্লেখ করেছি, যাতে আয়েশা (রাযিঃ)-এর হাদীসের মর্ম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমনি ভাবে তাঁরা উল্লেখ করেছেন।
বস্তুত আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর হাদীসের মূল হলাে : তাতে একটি গােলাম আযাদ করার দ্বারা সূচনা করা হয়েছে, যদি স্ত্রী সঙ্গমকারী তার সামর্থ্য রাখে। তার পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে আনা হয়েছে সিয়াম পালন, যদি সঙ্গমকারী গােলাম আযাদের সামর্থ্য না রাখে। এ দুটির পরে তৃতীয় পর্যায়ে আনা হয়েছে আহার করাননাকে, যদি সঙ্গমকারী ঐ দু'টির সামর্থ্য না রাখে। এরূপ হচ্ছে মূল হাদীস যা এ বিষয়ে যুহরী (রাহঃ) রিওয়ায়াত করেছেন। অনুরূপভাবে মালিক (রাহঃ) ও ইব্‌ন জুরায়জ (রাহঃ) ব্যতীত তা তার থেকে অপরাপর রাবীগণ রিওয়ায়াত করেছেন এবং তাঁরা তাতে দীর্ঘ কাহিনী বর্ণনা করেছেন যে, তা কিরূপ ছিলাে এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার প্রতি এই বিষয়ে কিভাবে কাফফারার নির্দেশ দিয়েছেন।
3191 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ , قَالَ: ثنا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ , قَالَ: ثنا ابْنُ جُرَيْجٍ , قَالَ: حَدَّثَنِي ابْنُ شِهَابٍ , عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ حَدَّثَهُ «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ رَجُلًا , أَفْطَرَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ , أَنْ يُعْتِقَ رَقَبَةً أَوْ صِيَامَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ , أَوْ إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا» قَالُوا: فَإِنَّمَا أَعْطَاهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَعْطَاهُ مِمَّا أَمَرَهُ أَنْ يَتَصَدَّقَ بِهِ , بَعْدَ أَنْ أَخْبَرَهُ بِمَا عَلَيْهِ فِي ذَلِكَ , مِمَّا بَيَّنَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي حَدِيثِهِ هَذَا. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ أَيْضًا , فَقَالُوا: بَلْ بِعِتْقِ رَقَبَةٍ إِنْ كَانَ لَهَا وَاجِدًا , أَوْ يَصُومُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ , إِنْ كَانَ لِلرَّقَبَةِ غَيْرَ وَاجِدٍ , فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ ذَلِكَ , أَطْعَمَ سِتِّينَ مِسْكِينًا. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لَهُمْ فِي ذَلِكَ أَنَّ حَدِيثَ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ الَّذِي ذَكَرْنَاهُ فِي الْفَصْلِ الَّذِي قَبْلَ هَذَا الْفَصْلِ قَدْ دَخَلَ فِيهِ حَدِيثُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كَمَا ذَكَرُوا. وَأَصْلُ حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ ذَلِكَ فِيهِ مِنَ التَّبْدِئَةِ بِالرَّقَبَةِ إِنْ كَانَ الْمُجَامِعُ , لَهَا وَاجِدًا , وَالتَّثْنِيَةِ بِالصِّيَامِ بَعْدَهَا , إِنْ كَانَ الْمُجَامِعُ , لِلرَّقَبَةِ غَيْرَ وَاجِدٍ , وَالتَّثْلِيثِ بِالْإِطْعَامِ بَعْدَهُمَا إِنْ كَانَ الْمُجَامِعُ ; لَهُمَا غَيْرَ وَاجِدٍ , هَكَذَا أَصْلُ الْحَدِيثِ الَّذِي رَوَاهُ الزُّهْرِيُّ فِي ذَلِكَ. وَكَذَلِكَ رَوَاهُ عَنْهُ سَائِرُ النَّاسِ غَيْرَ مَالِكٍ وَابْنِ جُرَيْجٍ , وَبَيَّنُوا فِيهِ الْقِصَّةَ بِطُولِهَا كَيْفَ كَانَتْ , وَكَيْفَ أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْكَفَّارَةِ فِي ذَلِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রমযানে রোযা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।

কাফফারা আদায়ের নিয়ম
একটি রোযার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতে হবে। রোযা রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন ফকির-মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এর মূল্য দিয়ে দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, রোযা রাখতে সক্ষম হলে ফিদিয়া আদায় করলে তা আদায় হবে না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৪

কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোযা রাখতে হবে। পেছনের রোযাগুলো কাফফারার রোযা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘যার উপর কাফফারা হিসাবে দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখা জরুরি সে যদি মাঝে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে, তাহলে আবার নতুন করে রোযা রাখা শুরু করবে।’-আলমুহাল্লা ৪/৩৩১; মাবসূত, সারাখসী ৭/১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৬

#সংগৃহীত
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৩১৯১ | মুসলিম বাংলা