আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৭- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৮৪
৩৩০। মদীনার রাস্তার মসজিদসমূহ এবং যে সকল স্থানে নবী (ﷺ) নামায আদায় করেছিলেন
৪৬৮। ইবরাহীম ইবনে মুনযির হিযামী (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উমরা ও হজ্জের জন্য রওয়ানা হলে ‘যুল হুলাইফায়’ অবতরণ করতেন, বাবলা গাছের নীচে যুল হুলাইফার মসজিদের স্থানে। আর যখন কোন যুদ্ধ থেকে অথবা হজ্জ বা উমরা করে সেই পথে ফিরতেন, তখন উপত্যকার মাঝখানে অবতরণ করতেন। যখন উপত্যকার মাঝখান থেকে উপরের দিকে আসতেন, তখন উপত্যকার তীরে অবস্থিত পূর্ব নিম্নভূমিতে উট বসাতেন। সেখানে তিনি শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করতেন। এ স্থানটি পাথরের উপর নির্মিত মসজিদের কাছে নয় এবং যে মসজিদ টিলার উপর, তার নিকটেও নয়। এখানে ছিল একটি ঝিল, যার পাশে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) নামায আদায় করতেন। এর ভিতরে কতগুলো বালির স্তূপ ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এখানেই নামায আদায় করতেন। তারপর নিম্নভূমিতে পানির প্রবাহ হয়ে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) যে স্থানে নামায আদায় করতেন তা সমান করে দিয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) [নাফি (রাহঃ) কে] বলেছেনঃ নবী (ﷺ) শারাফুর-রাওহার মসজিদের কাছে ছোট মসজিদের স্থানে নামায আদায় করেছিলেন। নবী (ﷺ) যেখানে নামায আদায় করেছিলেন, আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) সে স্থানের পরিচয় দিতেন এই বলে যে, যখন তুমি মসজিদে নামাযে দাঁড়াবে তখন তা তোমার ডানদিকে। আর সেই মসজিদটি হল যখন তুমি (মদীনা থেকে) মক্কা যাবে তখন তা ডানদিকের রাস্তার এক পাশে থাকবে। সে স্থান ও বড় মসজিদের মাঝখানে ব্যবধান হল একটি ঢিল নিক্ষেপ পরিমাণ অথবা তার কাছাকাছি। আর ইবনে উমর (রাযিঃ) রাওহার শেষ মাথায় ‘ইরক’ (ছোট পাহাড়) এর কাছে নামায আদায় করতেন। সেই ‘ইরক’ এর শেষ প্রান্ত হল রাস্তার পাশে মসজিদের কাছাকাছি মক্কা যাওয়ার পথে রাওহা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) এই মসজিদে নামায আদায় করতেন না, বরং সেটাকে তিনি বামদিকে ও পেছনে ফেলে অগ্রসর হয়ে ‘ইরক’ এর নিকটে নামায আদায় করতেন। আর আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) রাওহা থেকে বেরিয়ে ঐ স্থানে পৌছার আগে যোহরের নামায আদায় করতেন না। সেখানে পৌঁছে যোহর আদায় করতেন। মক্কা থেকে আসার সময় এ পথে ভোরের এক ঘণ্টা আগে বা শেষ রাতে আসলে তথায় অবস্থান করে ফজরের নামায আদায় করতেন।
আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) আরো বর্ণনা করেনঃ নবী (ﷺ) রুওয়ায়ছার নিকটে রাস্তার ডানদিকে রাস্তা সংলগ্ন প্রশস্ত সমতল ভূমিতে একটা বিরাট গাছের নীচে অবস্থান করতেন। তারপর তিনি রুওয়ায়ছার ডাকঘরের দু’মাইল দূরে টিলার পাশ দিয়ে রওয়ানা হতেন। বর্তমানে গাছটির উপরের অংশ ভেঙ্গে গিয়ে মাঝখানে ঝুঁকে গেছে। গাছের কাণ্ড এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আর তার আশেপাশে অনেকগুলো বালির স্তূপ বিস্তৃত রয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) আরো বর্ণনা করেছেনঃ 'আরজ' গ্রামের পরে পাহাড়ের দিকে যেতে যে উচ্চভূমি রয়েছে, তার পাশে নবী (ﷺ) নামায আদায় করেছেন। এই মসজিদের পাশে দু’তিনটি কবর আছে। এসব কবরে পাথরের বড় বড় খণ্ড পড়ে আছে। রাস্তার ডান পাশে গাছের নিকটেই তা অবস্থিত। দুপুরের পর সূর্য ঢলে পড়লে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) আরজ এর দিক থেকে এসে গাছের মধ্য দিয়ে যেতেন এবং ঐ মসজিদে যোহরের নামায আদায় করতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সে রাস্তার বাঁ দিকে বিরাট গাছগুলির কাছে অবতরণ করেন যা ‘হারশা’ পাহাড়ের নিকটবর্তী নিম্নভূমির দিকে চলে গেছে। সেই নিম্নভূমিটি ‘হারশা’-এর এক প্রান্তের সাথে মিলিত। এখান থেকে সাধারণ সড়কের দূরত্ব প্রায় এক তীর নিক্ষেপের পরিমাণ। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) সেই গাছগুলির মধ্যে একটির কাছে নামায আদায় করতেন, যা ছিল রাস্তার নিকটবর্তী এবং সবচাইতে উঁচু।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ﷺ) অবতরণ করতেন ‘মাররুয যাহরান’ উপত্যকার শেষ প্রান্তে নিম্নভূমিতে, যা মদীনার দিকে যেতে ছোট পাহাড়গুলোর নীচে অবস্থিত। তিনি সে নিম্নভূমির মাঝখানে অবতরণ করতেন। এটা মক্কা যাওয়ার পথে বাম পাশে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মনযিল ও রাস্তার মাঝে দূরত্ব এক পাথর নিক্ষেপ পরিমাণ।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) আরো বলেছেন যে, নবী (ﷺ) ‘যূ-তুওয়া’য় অবতরণ করতেন এবং এখানেই রাত যাপন করতেন আর মক্কায় আসার পথে এখানেই ফজরের নামায আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামায আদায়ের সেই স্থানটা ছিল একটা বড় টিলার উপরে। যেখানে মসজিদ নির্মিত হয়েছে, সেখানে নয় বরং তার নীচে একটা বড় টিলার উপর।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) তাদের কাছে আরও বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ﷺ) পাহাড়ের দু’টো প্রবেশপথ সামনে রাখতেন যা তার ও দীর্ঘ পাহাড়ের মাঝখানে কাবার দিকে রয়েছে। বর্তমানে সেখানে যে মসজিদ নির্মিত হয়েছে, সেটিকে তিনি [ইবনে উমর (রাযিঃ)] টিলার প্রান্তের মসজিদের বাম পাশে রাখতেন। আর নবী (ﷺ) এর নামাযের স্থান ছিল এর নীচে কাল টিলার উপরে। টিলা থেকে প্রায় দশ হাত দূরে দু’টো পাহাড়ের প্রবেশপথ যা তোমার ও কাবার মাঝখানে রয়েছে—সামনে রেখে তুমি নামায আদায় করবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন