শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

৪. যাকাতের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৯৬০
বনু হাশিমকে যাকাত প্রদান প্রসঙ্গে।
২৯৬০। ইবন আবী দাউদ (রাহঃ) ….. আব্দুল মুত্তালিব ইবন রবী'আ ইবনুল হারিস (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রবী'আ ইবনুল হারিস (রাযিঃ) ও আব্বাস ইবনুল মুত্তালিব (রাযিঃ) একত্রিত হয়ে বললেন, আমরা যদি আমাদের এই দুই ছেলে আব্দুল মুত্তালিব এবং ফযল ইবন আব্বাসকে যাকাত আদায় করার জন্য প্রেরণ করতাম, অপর লোকেরা যা আদায় করে তারাও তা আদায় করত এবং লোকেরা যা বিনিময় হিসাবে পায় তারাও তা পেত। রাবী বলেন, তাঁরা উক্ত আলোচনায়রত আছেন, এমন সময় আলী ইবন আবী তালিব (রাযিঃ) এসে তাঁদের নিকট থামলেন। তাঁরা এ বিষয় তাঁকে জানালেন, এতে আলী (রাযিঃ) বললেন, আপনারা এমনটি করবেন না, আল্লাহর কসম, তিনি (ﷺ) তা করতেন না। রবী'আ ইবনুল হারিস (রাযিঃ) বললেন, আপনি আমাদের উপর বিদ্বেষভাব পোষণ করেই এতে বাধা প্রদান করছেন, আল্লাহর কসম, আপনি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জামাতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন, এতে তো আমরা আপনার প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন হইনি। আলী (রাযিঃ) বললেন, আমি আবুল হাসান, (আবুল হাসান কারো প্রতি বিদ্বেষী হয় না) তোমরা তাদেরকে (ইচ্ছা করলে) পাঠাতে পার। তারপর তাঁরা উভয়ে প্রস্থান করলেন এবং তিনি শুয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যুহরের সালাত আদায় করলে আমরা তাঁর পূর্বেই হুজরার কাছে চলে গিয়ে এর দরজার নিকট দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর তিনি আসলেন এবং আমাদের কান ধরে বললেন, যা তোমরা নিজেদের অন্তরে পোষণ করছ, প্রকাশ করে দাও। তারপর তিনি গৃহে প্রবেশ করলেন এবং আমরাও তাঁর কাছে গেলাম। তিনি তখন যায়নাব বিনত জাহাশ (রাযিঃ)-এর গৃহে অবস্থান করছিলেন। তারপর আমরা একে অপরকে কথা বলার স্বাধীনতা দিলাম। তারপর আমাদের মধ্যেকার একজন কথা বলল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সদাচারী ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী, আমরা তো অবশ্যই বিবাহের উপযোগী (বয়ঃপ্রাপ্ত) হয়ে গিয়েছি। আমরা আপনার নিকট এসেছি যেন আপনি আমাদেরকে যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োগ করেন, লোকেরা যেভাবে আদায় করে আমরা অনুরূপ আপনার নিকট আদায় করে দিব এবং লোকেরা যেভাবে বিনিময় পায় আমরাও পাব। তিনি দীর্ঘক্ষণ চুপ করে রইলেন, এমনকি আমরা তাঁর সাথে কথা বলতে উদ্যত হলাম। আর যায়নাব (রাযিঃ) পর্দার আড়াল থেকে কাপড় বা হাত দিয়ে আমাদের দিকে ইশারা করছিলেন যে, তোমরা তাঁর সাথে কথা বলবে না। তিনি (ﷺ) বললেন, মুহাম্মাদ-এর পরিবারের জন্য সাদাকা (যাকাত) শোভনীয় (জায়িয) নয়, এটি হচ্ছে লোকদের ময়লা। তোমরা আমার নিকট মাহমিয়া (রাযিঃ) (যিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে খুমুস অর্থাৎ একপঞ্চমাংশ সম্পদের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন) ও নওফল ইবনুল হারিস ইব্‌দুল মুত্তালিব (রাযিঃ)-কে ডেকে আন। তাঁরা উভয়ে তাঁর নিকট এলেন। তিনি মাহমিয়া (রাযিঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, এই যুবকের নিকট তোমার কন্যাকে বিবাহ দিয়ে দাও অর্থাৎ ফযল ইবন আব্বাস (রাযিঃ)-এর নিকট। তিনি (নির্দেশ মুতাবিক) বিবাহ দিয়ে দিলেন এবং নওফল ইবনুল হারিস (রাযিঃ)-কে বললেন, এই যুবকের নিকট তোমার কন্যাকে বিবাহ দিয়ে দাও। তারপর তিনি আমার নিকট (তাঁর কন্যাকে) বিবাহ দিয়ে দিলেন। আর তিনি মাহমিয়া (রাযিঃ)-কে বললেন, তুমি এই উভয় যুবকের (স্ত্রীদের) মাহর খুমুসের মাল থেকে এত এত পরিমাণ আদায় করে দাও।
কোন প্রশ্নকারী যদি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন যে, তিনি তো 'খুমুস' থেকে তাঁদের মাহর আদায় করেছেন আর এর বিধান তো সাদাকার (যাকাত) বিধানের অনুরূপ ?
তাঁকে বলা হবে যে, সম্ভবত তা ছিল বায়তুল মালের খুমুসে (এক-পঞ্চমাংশে) (তাঁর) স্বজনদের জন্য নির্দিষ্ট হিস্যা। আর তা তাঁদের উপর সাদাকা হারামের আওতা বহির্ভূত। যেহেতু তাঁদের উপর মানুষের ময়না হারাম করা হয়েছে, ‘খুমুস' (এক পঞ্চমাংশ) অনুরূপ নয়, (বরং এটি হিবা ও হাদিয়ার ন্যায়)।
2960 - حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ , قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْمَاءَ , قَالَ: ثنا جُوَيْرِيَةُ بْنُ أَسْمَاءَ , عَنْ مَالِكٍ , عَنِ الزُّهْرِيِّ , أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبْدِ اللهِ بْنِ نَوْفَلِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ حَدَّثَهُ أَنَّ عَبْدَ الْمُطَّلِبِ بْنَ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ حَدَّثَهُ قَالَ: " اجْتَمَعَ رَبِيعَةُ بْنُ الْحَارِثِ وَالْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، فَقَالَا: لَوْ بَعَثْنَا هَذَيْنِ الْغُلَامَيْنِ لِي وَلِلْفَضْلِ بْنِ الْعَبَّاسِ عَلَى الصَّدَقَةِ فَأَدَّيَا مَا يُؤَدِّي النَّاسُ , وَأَصَابَا مَا يُصِيبُ النَّاسُ. قَالَ: فَبَيْنَمَا هُمَا فِي ذَلِكَ , جَاءَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , فَوَقَفَ عَلَيْهِمَا , فَذَكَرَا لَهُ ذَلِكَ، فَقَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: لَا تَفْعَلَا , فَوَاللهِ مَا هُوَ بِفَاعِلٍ. فَقَالَ رَبِيعَةُ بْنُ الْحَارِثِ: مَا يَمْنَعُكَ مِنْ هَذَا إِلَّا نَفَاسَةٌ عَلَيْنَا , فَوَاللهِ لَقَدْ نِلْتَ صِهْرَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا نَفِسْنَاهُ عَلَيْكَ. فَقَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا أَبُو حَسَنٍ أَرْسِلَاهُمَا , فَانْطَلَقَا , فَاضْطَجَعَ. فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظُّهْرَ , سَبَقْنَاهُ إِلَى الْحُجْرَةِ , فَقُمْنَا عِنْدَ بَابِهَا حَتَّى جَاءَ , فَأَخَذَ بِآذَانِنَا وَقَالَ: اخْرُجَا مَا تُصَرِّرَانِ. ثُمَّ دَخَلَ وَدَخَلْنَا عَلَيْهِ , وَهُوَ يَوْمَئِذٍ عِنْدَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ , فَتَوَاكَلْنَا الْكَلَامَ , ثُمَّ تَكَلَّمَ أَحَدُنَا قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ , أَنْتَ أَبَرُّ النَّاسِ وَأَوْصَلُ النَّاسِ , وَقَدْ بَلَغْنَا النِّكَاحَ , وَقَدْ جِئْنَاكَ لِتُؤَمِّرَنَا عَلَى بَعْضِ الصَّدَقَاتِ , فَنُؤَدِّيَ إِلَيْكَ كَمَا يُؤَدُّونَ , وَنُصِيبُ كَمَا يُصِيبُونَ. فَسَكَتَ حَتَّى أَرَدْنَا أَنْ نُكَلِّمَهُ , وَجَعَلَتْ زَيْنَبُ تُلْمِعُ إِلَيْنَا مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ أَنْ لَا تُكَلِّمَاهُ. فَقَالَ: إِنَّ الصَّدَقَةَ لَا تَنْبَغِي لِآلِ مُحَمَّدٍ , إِنَّمَا هِيَ أَوْسَاخُ النَّاسِ , ادْعُوَا لِي مَحْمِيَّةَ - وَكَانَ عَلَى الْخُمُسِ - وَنَوْفَلَ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ. فَجَاءَاهُ فَقَالَ لِمَحْمِيَّةَ: أَنْكِحْ هَذَا الْغُلَامَ ابْنَتَكَ لِلْفَضْلِ بْنِ الْعَبَّاسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَأَنْكَحَهُ. وَقَالَ لِنَوْفَلِ بْنِ الْحَارِثِ: أَنْكِحْ هَذَا الْغُلَامَ ابْنَتَكَ فَأَنْكَحَنِي. وَقَالَ لِمَحْمِيَّةَ أَصْدِقْ عَنْهُمَا مِنَ الْخُمُسِ كَذَا وَكَذَا ". فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَقَدْ أَصْدَقَ عَنْهُمَا مِنَ الْخُمُسِ , وَحُكْمُهُ حُكْمُ الصَّدَقَاتِ. قِيلَ لَهُ: قَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ مِنْ سَهْمِ ذَوِي الْقُرْبَى الَّذِي فِي الْخُمُسِ , وَذَلِكَ خَارِجٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ الْمُحَرَّمَةِ عَلَيْهِمْ , لِأَنَّهُ إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْهِمْ أَوْسَاخَ النَّاسِ , وَالْخُمُسُ لَيْسَ كَذَلِكَ "
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ২৯৬০ | মুসলিম বাংলা