শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

৩. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৭৪৭
জানাযার সাথে কোন দিক হয়ে চলা
২৭৪৭। ইব্‌ন মারযূক (রাহঃ) ও ইউনুস (রাহঃ).... ইব্‌ন শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানাযার আগে আগে চলতেন এবং ইব্‌ন উমার (রাযিঃ) ও খলীফাগণ থেকে আজ পর্যন্ত সকলেই (জানাযার আগে আগে চলা অব্যাহত রেখেছেন)।

আবু জা’ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ একদল আলিম এই মত গ্রহন করেছেন যে, জানাযার পিছনে চলা অপেক্ষা আগে আগে চলা উত্তম। তাঁরা এই বিষয়ে এই সমস্ত হাদীসসমূহ দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন।

পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাঁদের বিরোধিতা করে বলেছেনঃ জানাযার আগে চলা অপেক্ষা পিছনে চলা উত্তম।

প্রথমোক্ত মত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে তাঁদের দলীল হল যে, ইব্‌ন উয়ায়না (রাহঃ)-এর হাদীস যা আমরা এই অনুচ্ছেদের শুরুতে উল্লেখ করেছি, যা তিনি যুহরী (রাহঃ) থেকে, তিনি সালিম (রাহঃ) থেকে, তিনি তাঁর পিতা ইব্‌ন উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ), আবু বকর (রাযিঃ) ও উমর (রাযিঃ) কে জানাযার আগে আগে চলতে দেখেছি। বস্তুত এ বিষয়ে এটি ইব্‌ন উমর (রাযিঃ)-এর পক্ষ থেকে খবর (বর্ণনা) যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ), আবু বকর (রাযিঃ) ও উমর (রাযিঃ) অ উসমান (রাযিঃ) কে এই বিষয়ে তা করতে দেখেছেন। হতে পারে তাঁরা এরূপ কাজটি করেছেন অথচ অন্যটি তাঁদের নিকট উত্তম রূপে বিবেচিত ছিলো। শুধু বৈধতারও অবকাশ সৃষ্টির লক্ষ্যে (এরূপ করেছেন)। যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রতিটি অঙ্গ একবার একবার করে ধুয়ে উযু করেছেন, অথচ দুইবার দুইবার করে ধুয়ে উযু করা তার থেকে উত্তম এবং তিনবার করে ধুয়ে উযু করা সর্বাপেক্ষা উত্তম। কিন্তু তিনি যা করেছেন তা ছিলো বৈধতার অবকাশ সৃষ্টির লক্ষ্যে। তারপর এই হাদীসের ইসনাদে ইব্‌ন উয়ায়না (রাহঃ) যুহরী (রাহঃ)-এর অপরাপর সমস্ত শিষ্যগনের বিরোধিতা করেছেন। বস্তুত এই হাদীসটিকে মালিক (রাহঃ) যুহরী (রাহঃ) থেকে এভাবে রেওয়াত করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানাযার আগে আগে চলতেন, আআর তিনি এখানেই এই হাদীসটিকে ছিন্ন করে দিয়েছেন (যুহরী র-এর ওপরে মাউকুফ হিসাবে বর্ণনা করেন)। তারপর এ হাদীসটিকে উকায়ল (রাহঃ) ও ইউনুস (রাহঃ) ইব্‌ন শিহাব (রাহঃ)-এর ওপরে সূত্রে সালিম (রাহঃ) থেকে (এভাবে) বর্ননা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ), আবু বকর (রাযিঃ), উমর (রাযিঃ) ও উসমান (রাযিঃ) জানাযার আগে আগে চলতেন। বস্তুত এটির বিষয়বস্তুও ওই হাদীসের ন্যায়, যদিও এর শব্দ অনুরূপ নয়। যেহেতু তাঁর হাদীসের প্রকৃত সূত্র হল, তা সালিম (রাহঃ) থেকেঃ তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমার (রাযিঃ) জানাযার আগে আগে চলতেন এবং অনুরূপভাবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ), আবু বকর (রাযিঃ), উমর (রাযিঃ) ও উসমান (রাযিঃ) (অগ্রভাগে চলতেন)। অতএব প্রমাণিত হল যে, এই হাদীসের সমস্ত বাক্য সালিম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ইব্‌ন উমার (রাযিঃ) থেকে নয়। তাই হাদীসটি “মুনকাতি” (বিচ্ছিন্ন সনদ) রূপে সাব্যস্ত উকায়ল (রাহঃ) সূত্রে ইয়াহয়া ইব্‌ন আয়্যুব (রাহঃ)-এর হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, “জানাযা অনুসরণে সুন্নত এরুপই” এটি লায়স (রাহঃ) ও সালামা (রাহঃ) কর্তিক উকায়ল (রাহঃ) বর্ণিত হাদীসের (বিষয়বস্তুর) উপরে অতিরিক্ত। অনুরূপভাবে এতেও দলীল বিদ্যমান নেই। যেহেতু ওটি সালিম (রাহঃ) অথবা যুহরী (রাহঃ)-এর বাক্য থেকে (বর্ণিত)।

পক্ষান্তরে ইব্‌ন উমর (রাযিঃ) থেকে উপরোক্ত রিওয়াতে বিপরীত বর্ণিত আছে, যা আমরা এই অনুচ্ছেদের যথাস্থানে বর্ণনা করবো ইনশাআল্লাহ্‌।

প্রথমোক্ত মন পোষণকারী আলিমগন বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবীগণের অনেকের থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা জানাযার আগে আগে চলতেন।
2747 - حَدَّثَنَا ابْنُ مَرْزُوقٍ، قَالَ: ثنا الْقَعْنَبِيُّ، قَالَ: ثنا مَالِكٌ. ح وَحَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ: أنا ابْنُ وَهْبٍ، أَنَّ مَالِكًا، أَخْبَرَهُ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي أَمَامَ الْجِنَازَةِ , وَابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا وَالْخُلَفَاءُ هَلُمَّ جَرَّا إِلَى يَوْمِنَا هَذَا» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ الْمَشْيَ أَمَامَ الْجِنَازَةِ أَفْضَلُ مِنَ الْمَشْيِ خَلْفَهَا , وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ بِهَذِهِ الْآثَارِ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: الْمَشْيُ خَلْفَهَا أَفْضَلُ مِنَ الْمَشْيِ أَمَامَهَا. وَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لَهُمْ عَلَى أَهْلِ الْمَقَالَةِ الْأُولَى , أَنَّ حَدِيثَ ابْنِ عُيَيْنَةَ الَّذِي ذَكَرْنَاهُ فِي أَوَّلِ هَذَا الْبَابِ , قَدْ رَوَاهُ عَنِ الزُّهْرِيِّ , عَنْ سَالِمٍ , عَنْ أَبِيهِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَمْشُونَ أَمَامَ الْجِنَازَةِ فَصَارَ فِي ذَلِكَ خَبَرًا مِنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَمَّا رَأَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ يَفْعَلُونَهُ فِي ذَلِكَ. وَقَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونُوا كَانُوا يَفْعَلُونَ شَيْئًا , وَغَيْرُهُ عِنْدَهُمْ أَفْضَلُ مِنْهُ لِلتَّوْسِعَةِ. كَمَا قَدْ تَوَضَّأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّةً مَرَّةً , وَالْوُضُوءُ اثْنَتَيْنِ اثْنَتَيْنِ أَفْضَلُ مِنْهُ , وَالْوُضُوءُ ثَلَاثًا ثَلَاثًا أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ كُلِّهِ , وَلَكِنَّهُ فَعَلَ مَا فَعَلَ مِنْ ذَلِكَ لِلتَّوْسِعَةِ. ثُمَّ قَدْ خَالَفَ ابْنُ عُيَيْنَةَ فِي إِسْنَادِ هَذَا الْحَدِيثِ كُلَّ أَصْحَابِ الزُّهْرِيِّ غَيْرَهُ. فَرَوَاهُ مَالِكٌ عَنِ الزُّهْرِيِّ , قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي أَمَامَ الْجِنَازَةِ» , فَقَطَعَهُ. ثُمَّ رَوَاهُ عُقَيْلٌ وَيُونُسُ , عَنِ ابْنِ شِهَابٍ , عَنْ سَالِمٍ , قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ يَمْشُونَ أَمَامَ الْجِنَازَةِ» هَذَا مَعْنَاهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَفْظُهُ كَذَلِكَ , لِأَنَّ أَصْلَ حَدِيثِهِ , إِنَّمَا هُوَ عَنْ سَالِمٍ قَالَ: «كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَمْشِي أَمَامَ الْجِنَازَةِ , وَكَذَلِكَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ» . فَصَارَ هَذَا الْكَلَامُ كُلُّهُ فِي هَذَا الْحَدِيثِ، إِنَّمَا هُوَ مِنْ سَالِمٍ , لَا مِنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , فَصَارَ حَدِيثًا مُنْقَطِعًا , وَفِي حَدِيثِ يَحْيَى بْنِ أَيُّوبَ , عَنْ عُقَيْلٍ: وَكَذَلِكَ السُّنَّةُ فِي اتِّبَاعِ الْجِنَازَةِ , زِيَادَةٌ عَلَى مَا فِي حَدِيثِ اللَّيْثِ وَسَلَامَةَ , عَنْ عُقَيْلٍ: فَكَذَلِكَ أَيْضًا لَا حُجَّةَ فِيهِ لِأَنَّهُ إِنَّمَا هُوَ مِنْ كَلَامِ سَالِمٍ , أَوْ مِنْ كَلَامِ الزُّهْرِيِّ. وَقَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , مِمَّا سَنَرْوِيهِ فِي مَوْضِعِهِ مِنْ هَذَا الْبَابِ إِنْ شَاءَ اللهُ. وَقَالَ أَصْحَابُ الْمَقَالَةِ الْأُولَى: وَقَدْ رُوِيَ عَنْ جَمَاعَةٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُمْ كَانُوا يَمْشُونَ أَمَامَ الْجِنَازَةِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ২৭৪৭ | মুসলিম বাংলা