শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ২৪৯৯
নামাযের অধ্যায়
সফরে যানবাহনের উপর বিতর পড়া যাবে কি-না ?
২৪৯৯। আলী ইব্ন শায়বা (রাহঃ) ..... রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এমন একটি সালাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তোমরা তা ইশার সালাত ও ফজরের সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় কর। আর সে সালাতটি হল বিত্র, আর সে সালাতটি হল বিত্র। আর সেই সাহাবী হলেন আবু বাস্রা আল-গিফারী (রাযিঃ) । রাবী আবু তামীম (রাহঃ) বলেন, আমি এবং আবু যর (রাযিঃ) বসা ছিলাম। আবু যর (রাযিঃ) আমার হাত ধরলেন । তারপর আমরা আবু বাস্রা (রাযিঃ)-এর সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে চললাম। আমরা তাঁকে সে দরজার কাছে পেলাম যা আমর ইব্নুল আস (রাযিঃ)-এর বাড়ীর নিকটবর্তী । আবু যর (রাযিঃ) বললেন, হে আবু বাস্রা! তুমি কি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কে বলতে শুনেছ যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এমন একটি সালাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তা তোমরা ইশার সালাত ও সুবহি সাদিকের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় কর ? আর সে সালাতটি হল বিত্র, বিত্র। আবু বাস্রা (রাযিঃ) বললেন, হ্যাঁ, (আমি শুনেছি), তিনি বললেন, তুমি তা শুনেছ ? তিনি বললেন, হ্যাঁ (শুনেছি)। তিনি (আবু যর) বললেন, তুমি কি বলছ যে, আমি তাঁকে (ﷺ) তা বলতে শুনেছি ? তিনি (আবু বাস্রা) বললেন, হ্যাঁ শুনেছি।
বস্তুত এ হাদীসসমূহে বিত্রের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং কারো জন্য তা বর্জনের অনুমতি দেয়া হয় নি। অথচ ইতিপূর্বে তা এরূপ গুরুত্ববহ ও তাগিদযুক্ত ছিল না। সম্ভবত ইব্ন উমর (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার কর্তৃক বাহনের উপরে বিত্র আদায় করা তা গুরুত্ববহ ও তাগিদযুক্ত হওয়ার পূর্বের ঘটনা ছিল । তারপর তা গুরুত্ববহ (ওয়াজিব) হয়ে রুখসত তথা (বাহনের উপর আদায়ের) অনুমতি রহিত হয়ে গিয়েছে । (সুতরাং বিত্র ওয়াজিবরূপে সাব্যস্ত হবে)।
ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
বস্তুত আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সর্ববাদিসম্মত নীতি হচ্ছে, দাঁড়ানোর শক্তি থাকা সত্ত্বেও কারো জন্য ফরয সালাত বসে আদায় করা জায়িয নয় এবং দাঁড়ানো ও অবতরণের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সফরে নিজ বাহনের উপরে ফরয সালাত আদায় করা তার জন্য জায়িয হবে না। আমরা আরো লক্ষ্য করেছি যে, কোন ব্যক্তি (দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও) নফল সালাত ভূমিতে বসে আদায় করে এবং সফরে নিজ বাহনের উপরে তা আদায় করে, আর এটি জায়িয। অতএব দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে সালাত বসে আদায় করা হয়, সেটি সফরেও নিজ বাহনের উপরে আদায় করা যাবে। পক্ষান্তরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে সালাত বসে আদায় করা যায় না, সেটি সফরে নিজ বাহনের উপরে আদায় করা যাবে না। আর এটিই হচ্ছে সর্ববাদিসম্মত নীতি ।
তারপর আমরা বিত্রের বিষয়টি লক্ষ্য করেছি যে, বিত্রের ব্যাপারে তাঁদের (আলিমদের) ঐকমত্য হচ্ছে যে, দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কারো জন্য তা ভূমিতে বসে আদায় করা জায়িয হবে না। অতএব যুক্তির দাবি হচ্ছে, সে সফরের বাহনের উপরে বিত্র আদায় করতে পারবে না, যদি সে অবতরণের সামর্থ্য রাখে।
এরই প্রেক্ষিতে আমার নিকট প্রমাণিত হয়ে গেল যে, বাহনের উপরে বিত্র আদায় করা রহিত হয়ে গিয়েছে। আর এতে বিত্র ফরয কিংবা নফল হওয়ার কোন দলীল নেই। এটিই হচ্ছে ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর উক্তি ও অভিমত।
বস্তুত এ হাদীসসমূহে বিত্রের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং কারো জন্য তা বর্জনের অনুমতি দেয়া হয় নি। অথচ ইতিপূর্বে তা এরূপ গুরুত্ববহ ও তাগিদযুক্ত ছিল না। সম্ভবত ইব্ন উমর (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার কর্তৃক বাহনের উপরে বিত্র আদায় করা তা গুরুত্ববহ ও তাগিদযুক্ত হওয়ার পূর্বের ঘটনা ছিল । তারপর তা গুরুত্ববহ (ওয়াজিব) হয়ে রুখসত তথা (বাহনের উপর আদায়ের) অনুমতি রহিত হয়ে গিয়েছে । (সুতরাং বিত্র ওয়াজিবরূপে সাব্যস্ত হবে)।
ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
বস্তুত আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সর্ববাদিসম্মত নীতি হচ্ছে, দাঁড়ানোর শক্তি থাকা সত্ত্বেও কারো জন্য ফরয সালাত বসে আদায় করা জায়িয নয় এবং দাঁড়ানো ও অবতরণের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সফরে নিজ বাহনের উপরে ফরয সালাত আদায় করা তার জন্য জায়িয হবে না। আমরা আরো লক্ষ্য করেছি যে, কোন ব্যক্তি (দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও) নফল সালাত ভূমিতে বসে আদায় করে এবং সফরে নিজ বাহনের উপরে তা আদায় করে, আর এটি জায়িয। অতএব দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে সালাত বসে আদায় করা হয়, সেটি সফরেও নিজ বাহনের উপরে আদায় করা যাবে। পক্ষান্তরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে সালাত বসে আদায় করা যায় না, সেটি সফরে নিজ বাহনের উপরে আদায় করা যাবে না। আর এটিই হচ্ছে সর্ববাদিসম্মত নীতি ।
তারপর আমরা বিত্রের বিষয়টি লক্ষ্য করেছি যে, বিত্রের ব্যাপারে তাঁদের (আলিমদের) ঐকমত্য হচ্ছে যে, দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কারো জন্য তা ভূমিতে বসে আদায় করা জায়িয হবে না। অতএব যুক্তির দাবি হচ্ছে, সে সফরের বাহনের উপরে বিত্র আদায় করতে পারবে না, যদি সে অবতরণের সামর্থ্য রাখে।
এরই প্রেক্ষিতে আমার নিকট প্রমাণিত হয়ে গেল যে, বাহনের উপরে বিত্র আদায় করা রহিত হয়ে গিয়েছে। আর এতে বিত্র ফরয কিংবা নফল হওয়ার কোন দলীল নেই। এটিই হচ্ছে ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর উক্তি ও অভিমত।
كتاب الصلاة
2499 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ شَيْبَةَ، قَالَ: ثنا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئُ، قَالَ: ثنا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنِ ابْنِ هُبَيْرَةَ أَنَّ أَبَا تَمِيمٍ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَالِكٍ الْجَيَشَانِيَّ , أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُولُ: أَخْبَرَنِي رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللهَ قَدْ زَادَكُمْ صَلَاةً فَصَلُّوهَا , مَا بَيْنَ الْعِشَاءِ إِلَى صَلَاةِ الصُّبْحِ , الْوِتْرَ الْوِتْرَ» أَلَا وَأَنَّهُ أَبُو بَصْرَةَ الْغِفَارِيُّ. قَالَ أَبُو تَمِيمٍ , فَكُنْتُ أَنَا وَأَبُو ذَرٍّ قَاعِدَيْنِ فَأَخَذَ أَبُو ذَرٍّ بِيَدِي , فَانْطَلَقْنَا إِلَى أَبِي بَصْرَةَ , فَوَجَدْنَاهُ عِنْدَ الْبَابِ الَّذِي عَلَى دَارِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ. فَقَالَ أَبُو ذَرٍّ: يَا أَبَا بَصْرَةَ أَنْتَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللهَ زَادَكُمْ صَلَاةً فَصَلُّوهَا , فِيمَا بَيْنَ الْعِشَاءِ إِلَى طُلُوعِ الْفَجْرِ , الْوِتْرَ الْوِتْرَ» ؟ فَقَالَ أَبُو بَصْرَةَ: نَعَمْ , قَالَ: أَنْتَ سَمِعْتَهُ. قَالَ: نَعَمْ , قَالَ: أَنْتَ تَقُولُ سَمِعْتَهُ يَقُولُ؟ قَالَ: نَعَمْ فَأَكَّدَ فِي هَذِهِ الْآثَارِ أَمْرَ الْوِتْرِ , وَلَمْ يُرَخِّصْ لِأَحَدٍ فِي تَرْكِهِ , وَقَدْ كَانَ قَبْلَ ذَلِكَ , لَيْسَ فِي التَّأْكِيدِ كَذَلِكَ. فَيَجُوزُ أَنْ يَكُونَ مَا رَوَى ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ وِتْرِهِ , عَلَى الرَّاحِلَةِ , كَانَ ذَلِكَ مِنْهُ قِبَلِ تَأْكِيدِهِ إِيَّاهُ , ثُمَّ أَكَّدَهُ مِنْ بَعْدِ نَسْخِ ذَلِكَ. وَقَدْ رَأَيْنَا الْأَصْلَ الْمُجْتَمَعَ عَلَيْهِ أَنَّ الصَّلَاةَ الْمَفْرُوضَةَ , لَيْسَ لِلرَّجُلِ أَنْ يُصَلِّيَهَا قَاعِدًا , وَهُوَ يُطِيقُ الْقِيَامَ , وَلَيْسَ لَهُ أَنْ يُصَلِّيَهَا فِي سَفَرِهِ عَلَى رَاحِلَتِهِ , وَهُوَ يُطِيقُ الْقِيَامَ وَالنُّزُولَ. وَرَأَيْنَاهُ يُصَلِّي التَّطَوُّعَ عَلَى الْأَرْضِ قَاعِدًا , وَيُصَلِّيهِ فِي سَفَرِهِ عَلَى رَاحِلَتِهِ. فَكَانَ الَّذِي يُصَلِّيهِ قَاعِدًا وَهُوَ يُطِيقُ الْقِيَامَ , هُوَ الَّذِي يُصَلِّيهِ فِي السَّفَرِ عَلَى رَاحِلَتِهِ , وَالَّذِي لَا يُصَلِّيهِ قَاعِدًا وَهُوَ يُطِيقُ الْقِيَامَ , هُوَ الَّذِي لَا يُصَلِّيهِ فِي السَّفَرِ عَلَى رَاحِلَتِهِ , هَكَذَا الْأُصُولُ الْمُتَّفَقُ عَلَيْهَا. ثُمَّ كَانَ الْوِتْرُ بِاتِّفَاقِهِمْ , لَا يُصَلِّيهِ الرَّجُلُ عَلَى الْأَرْضِ قَاعِدًا وَهُوَ يُطِيقُ الْقِيَامَ. فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ لَا يُصَلِّيَهُ فِي سَفَرِهِ عَلَى الرَّاحِلَةِ وَهُوَ يُطِيقُ النُّزُولَ. فَمِنْ هَذِهِ الْجِهَةِ عِنْدِي ثَبَتَ نَسْخُ الْوِتْرِ عَلَى الرَّاحِلَةِ , وَلَيْسَ فِي هَذَا دَلِيلٌ , عَلَى أَنَّهُ فَرِيضَةٌ وَلَا تَطَوُّعٌ. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى