শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ২৩৬০
৬০. নফল আদায়কারীর পিছনে ফরজ আদায় করা
আবু জাফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, মু'আয ইব্ন জাবাল (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে ইশার সালাত পড়তেন তারপর তিনি নিজ গােত্র বনু সালিমায় গিয়ে নিজ গােত্রের লােকদেরকে নিয়ে উক্ত সালাত পড়াতেন। এটি আমরা ‘মাগরিবের সালাতের কিরাআত ‘অনুচ্ছেদে' উল্লেখ করেছি।
একদল আলিম এ মত পােষণ করেছেন যে, কেউ নফল সালাত পড়লে তার পিছনে ফরয আদায়কারী
ইকতিদা করতে পারবে এবং তারা এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন। পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর
আলিমগণ তাঁদের বিরােধিতা করে বলেছেনঃ নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায় কারীর জন্য ইতিদা করা জায়িয নেই এবং তারা বলেছেনঃ মু'আয (রাযিঃ)-এর এ-হাদীসে এ বিষয়ের উল্লেখ নেই যে, তিনি নিজ গােত্রের লােকদের নিয়ে যে সালাত পড়েছেন এটি তার জন্য নফল কিংবা ফরয ছিলাে। হতে পারে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে নফল পড়েছেন তারপর নিজ গােত্রে এসে তাদের নিয়ে ফরয পড়েছেন। যদি ব্যাপার এরূপ হয়ে থাকে তাহলে এ হাদীস তােমাদের স্বপক্ষে দলীল হবে না। অথবা সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে ফরয আদায় করেছেন তারপর নিজ গােত্রের লােকদের নিয়ে নফল আদায় করেছেন, যেমন তােমরা উল্লেখ করেছ। যখন এ হাদীসে উভয় অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে তাই একটি অপরটির উপর প্রাধান্য পেতে পারে না এবং কোন রূপ প্রমাণ ব্যতীত হাদীসের এক অর্থ পরিত্যাগ করে অন্য অর্থ গ্রহণ করা কারো জান্য সংগত হবে না।
প্রথম দল আলেমগণ বলেছেনঃ আমরা অবশ্যই কোন কোন হাদীসে পেয়েছি যে তিনি নিজ গোত্রের লোকদের নিয়ে যে সালাত পড়েছেন তা নফল ছিল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে যে সালাত পড়েছেন তা ফরজ ছিল। আর তারা এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করেছেনঃ
আবু জাফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, মু'আয ইব্ন জাবাল (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে ইশার সালাত পড়তেন তারপর তিনি নিজ গােত্র বনু সালিমায় গিয়ে নিজ গােত্রের লােকদেরকে নিয়ে উক্ত সালাত পড়াতেন। এটি আমরা ‘মাগরিবের সালাতের কিরাআত ‘অনুচ্ছেদে' উল্লেখ করেছি।
একদল আলিম এ মত পােষণ করেছেন যে, কেউ নফল সালাত পড়লে তার পিছনে ফরয আদায়কারী
ইকতিদা করতে পারবে এবং তারা এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন। পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর
আলিমগণ তাঁদের বিরােধিতা করে বলেছেনঃ নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায় কারীর জন্য ইতিদা করা জায়িয নেই এবং তারা বলেছেনঃ মু'আয (রাযিঃ)-এর এ-হাদীসে এ বিষয়ের উল্লেখ নেই যে, তিনি নিজ গােত্রের লােকদের নিয়ে যে সালাত পড়েছেন এটি তার জন্য নফল কিংবা ফরয ছিলাে। হতে পারে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে নফল পড়েছেন তারপর নিজ গােত্রে এসে তাদের নিয়ে ফরয পড়েছেন। যদি ব্যাপার এরূপ হয়ে থাকে তাহলে এ হাদীস তােমাদের স্বপক্ষে দলীল হবে না। অথবা সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে ফরয আদায় করেছেন তারপর নিজ গােত্রের লােকদের নিয়ে নফল আদায় করেছেন, যেমন তােমরা উল্লেখ করেছ। যখন এ হাদীসে উভয় অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে তাই একটি অপরটির উপর প্রাধান্য পেতে পারে না এবং কোন রূপ প্রমাণ ব্যতীত হাদীসের এক অর্থ পরিত্যাগ করে অন্য অর্থ গ্রহণ করা কারো জান্য সংগত হবে না।
প্রথম দল আলেমগণ বলেছেনঃ আমরা অবশ্যই কোন কোন হাদীসে পেয়েছি যে তিনি নিজ গোত্রের লোকদের নিয়ে যে সালাত পড়েছেন তা নফল ছিল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে যে সালাত পড়েছেন তা ফরজ ছিল। আর তারা এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করেছেনঃ
২৩৬০। ইবরাহীম ইব্ন মারযূক (রাহঃ) ..... আমর (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমাকে জাবির (রাযিঃ) খবর দিয়েছেন যে, “মুআ'য (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে ইশা'র সালাত আদায় করতেন। তারপর নিজ গোত্রের নিকট গিয়ে তাদেরকে নিয়ে উক্ত সালাত পড়তেন। তা হতাে তার জন্য নফল এবং তাদের জন্য ফরয।
(ক) তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দল আলিমদের দলীল হচ্ছে এই যে, আমর ইবন দীনার (রাহঃ) থেকে এ হাদীসটি যেমনিভাবে ইবুন জুরায়জ (রাহঃ) রিওয়ায়াত করেছেন অনুরূপভাবে ইবুন উয়ায়না (রাহঃ) রিওয়ায়াত করেছেন। এবং তিনি এটিকে ইব্ন জুরায়জ (রাহঃ) অপেক্ষা পরিপূর্ণ ও উত্তম রূপে রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু এতে তিনি সেই বাক্যটি বলেননি যা ইবন জুরায়জ (রাহঃ) বলেছেন অর্থাৎ “তা হতাে তার জন্য নফল এবং তাদের জন্য ফরয”। অতএব সম্ভাবনা রয়েছে যে, এটি হয়তাে ইবন জুরায়জ (রাহঃ) অথবা আমর ইবন দীনার (রাহঃ) অথবা জাবির (রাযিঃ)-এর উক্তি । তিনজনের যার উক্তি-ই হউক না কেন এতে কিন্তু মু'আয (রাযিঃ)-এর কর্মের স্বরূপ উৎঘাটনের কোন দলীল বিদ্যমান নেই যে, এটি এরূপ ছিলাে বা ছিল না (অর্থাৎ তার সালাত নফল ছিলাে অথবা ফরয) যেহেতু তারা কেউ মু'আয (রাযিঃ)-এর উক্তি উদ্ধৃত করেননি বরং তারা নিজ নিজ উক্তি ব্যক্ত করেছেন যে তা অনুরূপ ছিলো। বাস্তব ঘটনা এর পরিপন্থী হতে পারে। আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, এটি
মু'আয (রাযিঃ) থেকে প্রমাণিত, তাহলেও এতে কোন রূপ দলীল-বিদ্যামান নেই যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নির্দেশে ঘটেছিলাে এবং এটিও প্রমাণিত নয় যে, যদি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে এ সম্পর্কে বলা হতো তাহলে তিনি তাঁকে এর উপর বহাল রাখতেন অথবা তাকে অন্য কোন হুকুম করতেন।
ইবনে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ)-কে যখন রিফাআ ইবন রাফি' (রাযিঃ) সংবাদ দিলেন যে, তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে স্ত্রী সহবাস করতেন এবং তাঁরা বীর্য স্খলন না হওয়া পর্যন্ত গোসল করতেন না। তাদের কে উমর (রাযিঃ) বললেন, এ বিষয়ে তােমরা কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে অবহিত করেছিলে এবং এ বিষয়ে তিনি তোমাদের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন? তিনি বললেন, না। এটিকে উমর (রাযিঃ) দলীল হিসাবে গ্রহণ করেননি। অনুরূপভাবে এ কর্মটিও। যদি প্রমাণিত হয় যে, মুআয (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর যুগে এটি করেছেন, এতে কিন্তু কোনরূপ দলীল নেই যে, এটি তিনি রাসূলুল্লাহ্-এর নির্দেশে করেছেন।
(খ) বরং অবশ্যই আমরা রাসূলুল্লাহ থেকে এর পরিপন্থী রিওয়ায়াত করেছি ।
(ক) তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দল আলিমদের দলীল হচ্ছে এই যে, আমর ইবন দীনার (রাহঃ) থেকে এ হাদীসটি যেমনিভাবে ইবুন জুরায়জ (রাহঃ) রিওয়ায়াত করেছেন অনুরূপভাবে ইবুন উয়ায়না (রাহঃ) রিওয়ায়াত করেছেন। এবং তিনি এটিকে ইব্ন জুরায়জ (রাহঃ) অপেক্ষা পরিপূর্ণ ও উত্তম রূপে রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু এতে তিনি সেই বাক্যটি বলেননি যা ইবন জুরায়জ (রাহঃ) বলেছেন অর্থাৎ “তা হতাে তার জন্য নফল এবং তাদের জন্য ফরয”। অতএব সম্ভাবনা রয়েছে যে, এটি হয়তাে ইবন জুরায়জ (রাহঃ) অথবা আমর ইবন দীনার (রাহঃ) অথবা জাবির (রাযিঃ)-এর উক্তি । তিনজনের যার উক্তি-ই হউক না কেন এতে কিন্তু মু'আয (রাযিঃ)-এর কর্মের স্বরূপ উৎঘাটনের কোন দলীল বিদ্যমান নেই যে, এটি এরূপ ছিলাে বা ছিল না (অর্থাৎ তার সালাত নফল ছিলাে অথবা ফরয) যেহেতু তারা কেউ মু'আয (রাযিঃ)-এর উক্তি উদ্ধৃত করেননি বরং তারা নিজ নিজ উক্তি ব্যক্ত করেছেন যে তা অনুরূপ ছিলো। বাস্তব ঘটনা এর পরিপন্থী হতে পারে। আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, এটি
মু'আয (রাযিঃ) থেকে প্রমাণিত, তাহলেও এতে কোন রূপ দলীল-বিদ্যামান নেই যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নির্দেশে ঘটেছিলাে এবং এটিও প্রমাণিত নয় যে, যদি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে এ সম্পর্কে বলা হতো তাহলে তিনি তাঁকে এর উপর বহাল রাখতেন অথবা তাকে অন্য কোন হুকুম করতেন।
ইবনে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ)-কে যখন রিফাআ ইবন রাফি' (রাযিঃ) সংবাদ দিলেন যে, তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে স্ত্রী সহবাস করতেন এবং তাঁরা বীর্য স্খলন না হওয়া পর্যন্ত গোসল করতেন না। তাদের কে উমর (রাযিঃ) বললেন, এ বিষয়ে তােমরা কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে অবহিত করেছিলে এবং এ বিষয়ে তিনি তোমাদের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন? তিনি বললেন, না। এটিকে উমর (রাযিঃ) দলীল হিসাবে গ্রহণ করেননি। অনুরূপভাবে এ কর্মটিও। যদি প্রমাণিত হয় যে, মুআয (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর যুগে এটি করেছেন, এতে কিন্তু কোনরূপ দলীল নেই যে, এটি তিনি রাসূলুল্লাহ্-এর নির্দেশে করেছেন।
(খ) বরং অবশ্যই আমরা রাসূলুল্লাহ থেকে এর পরিপন্থী রিওয়ায়াত করেছি ।
بَابُ الرَّجُلِ يُصَلِّي الْفَرِيضَةَ خَلْفَ مَنْ يُصَلِّي تَطَوُّعًا قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: رُوِيَ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ , «أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ» , ثُمَّ يَرْجِعُ فَيُصَلِّيَهَا بِقَوْمِهِ فِي بَنِي أَسْلَمَةَ. وَقَدْ ذَكَرْنَا ذَلِكَ بِإِسْنَادِهِ فِي بَابِ الْقِرَاءَةِ فِي صَلَاةِ الْمَغْرِبِ. فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ الرَّجُلَ يُصَلِّي النَّافِلَةَ , وَيَأْتَمَّ بِهِ مَنْ يُصَلِّي الْفَرِيضَةَ , وَاحْتَجُّوا بِهَذَا الْأَثَرِ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: لَا يَجُوزُ لِرَجُلٍ أَنْ يُصَلِّيَ فَرِيضَةً خَلْفَ مَنْ يُصَلِّي نَافِلَةً. وَقَالُوا: لَيْسَ فِي حَدِيثِ مُعَاذٍ هَذَا أَنَّ مَا كَانَ يُصَلِّيهِ بِقَوْمِهِ , كَانَ نَافِلَةً لَهُ أَوْ فَرِيضَةً. فَقَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ , كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَافِلَةً , ثُمَّ يَأْتِي قَوْمَهُ فَيُصَلِّي بِهِمْ فَرِيضَةً , فَإِنْ كَانَ ذَلِكَ كَذَلِكَ , فَلَا حُجَّةَ لَكُمْ فِي هَذَا الْحَدِيثِ. وَيَحْتَمِلُ أَنْ يَكُونَ كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرِيضَةً , ثُمَّ يُصَلِّي بِقَوْمِهِ تَطَوُّعًا كَمَا ذَكَرْتُمْ. فَلَمَّا كَانَ هَذَا الْحَدِيثُ يَحْتَمِلُ الْمَعْنَيَيْنِ , لَمْ يَكُنْ أَحَدُهُمَا أَوْلَى مِنَ الْآخَرِ , وَلَمْ يَكُنْ لِأَحَدٍ أَنْ يَصْرِفَهُ إِلَى أَحَدِ الْمَعْنَيَيْنِ دُونَ الْمَعْنَى الْآخَرِ إِلَّا بِدَلَالَةٍ تَدُلُّهُ عَلَى ذَلِكَ.
فَقَالَ أَهْلُ الْمَقَالَةِ الْأُولَى: فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا فِي بَعْضِ الْآثَارِ أَنَّ مَا كَانَ يُصَلِّيهِ بِقَوْمِهِ هُوَ تَطَوُّعٌ , وَأَنَّ مَا كَانَ يُصَلِّيهِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرِيضَةٌ
وَذَكَرُوا فِي ذَلِكَ ,
فَقَالَ أَهْلُ الْمَقَالَةِ الْأُولَى: فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا فِي بَعْضِ الْآثَارِ أَنَّ مَا كَانَ يُصَلِّيهِ بِقَوْمِهِ هُوَ تَطَوُّعٌ , وَأَنَّ مَا كَانَ يُصَلِّيهِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرِيضَةٌ
وَذَكَرُوا فِي ذَلِكَ ,
2360 - مَا حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَرْزُوقٍ , قَالَ: ثنا أَبُو عَاصِمٍ , عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ , عَنْ عَمْرٍو , قَالَ: أَخْبَرَنِي جَابِرٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: «أَنَّ مُعَاذًا كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ , ثُمَّ يَنْصَرِفُ إِلَى قَوْمِهِ فَيُصَلِّيَهَا بِهِمْ , هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ , وَلَهُمْ فَرِيضَةٌ» فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لِلْآخَرِينَ عَلَيْهِمْ , أَنَّ ابْنَ عُيَيْنَةَ قَدْ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ , عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ , كَمَا رَوَاهُ ابْنُ جُرَيْجٍ , وَجَاءَ بِهِ تَامًّا , وَسَاقَهُ أَحْسَنَ مِنْ سِيَاقِ ابْنِ جُرَيْجٍ , غَيْرَ أَنَّهُ لَمْ يَقُلْ فِيهِ , هَذَا الَّذِي قَالَهُ ابْنُ جُرَيْجٍ «هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ , وَلَهُمْ فَرِيضَةٌ» . فَيَجُوزُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ مِنْ قَوْلِ ابْنِ جُرَيْجٍ , وَيَجُوزُ أَنْ يَكُونَ مِنْ قَوْلِ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ , وَيَجُوزُ أَنْ يَكُونَ مِنْ قَوْلِ جَابِرٍ. فَمِنْ أَيِّ هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَةِ كَانَ الْقَوْلُ , فَلَيْسَ فِيهِ دَلِيلٌ عَلَى حَقِيقَةِ فِعْلِ مُعَاذٍ أَنَّهُ كَذَلِكَ , أَمْ لَا , لِأَنَّهُمْ لَمْ يَحْكُوا ذَلِكَ عَنْ مُعَاذٍ , إِنَّمَا قَالُوا قَوْلًا , عَلَى أَنَّهُ عِنْدَهُمْ كَذَلِكَ , وَقَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ فِي الْحَقِيقَةِ بِخِلَافِ ذَلِكَ. وَلَوْ ثَبَتَ ذَلِكَ أَيْضًا عَنْ مُعَاذٍ , لَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّهُ كَانَ بِأَمْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَلَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ أَخْبَرَهُ بِهِ لَأَقَرَّهُ عَلَيْهِ أَوْ غَيْرُهُ. وَهَذَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا لَمَّا أَخْبَرَهُ رِفَاعَةُ بْنُ رَافِعٍ أَنَّهُمْ كَانُوا يُجَامِعُونَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا يَغْتَسِلُونَ , حَتَّى يُنْزِلُوا. فَقَالَ لَهُمْ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: فَأَخْبَرْتُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِذَلِكَ , فَرَضِيَهُ لَكُمْ؟ , قَالَ: لَا , فَلَمْ يَجْعَلْ ذَلِكَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ حُجَّةً. فَكَذَلِكَ هَذَا الْفِعْلُ , لَوْ ثَبَتَ أَنَّ مُعَاذًا فَعَلَهُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّهُ بِأَمْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَقَدْ رَوَيْنَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يَدُلُّ عَلَى خِلَافِ ذَلِكَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসে এটা পরিস্কার যে, হযরত মুআয রা. রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে নামায পড়ে কওমে এসে আবার ঐ নামায পড়াতেন। তবে এটা পরিস্কার নয় যে, হযরত মুআয রা. রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে ফরয পড়তেন আর কওমে এসে নফল পড়তেন। বরং পূর্ববর্ণিত সহীহ হাদীসে একই নামায এক দিনে দু’বার পড়ার নিষেধাজ্ঞা দ্বারা এটা পরিস্কার হয় যে, হযরত মুআয রা. ইশার নামায একবারই পড়েছেন; যে নামাযে তিনি তাঁর কওমের ইমামতি করেছেন। আর রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়া নামায তাঁর নফল ছিলো। এ ব্যাখ্যা মেনে নেয়া হলে মারফু’ হাদীস এবং সাহাবার আমলের মধ্যে কোন বিরোধ থাকে না। আর সঙ্গত কারণে নফল নামায আদায়কারীর পেছনে ফরয আদায়কারীর ইক্তিদা বৈধ হওয়ার দলীলও এ হাদীস দ্বারা চলে না। এ ব্যাখ্যার বিপরীতে যে সব হাদীসে বর্ণিত রয়েছে: هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ , وَلَهُمْ فَرِيضَةٌ “হযরত মুআয রা. যে নামায তাঁর কওমে গিয়ে পড়াতেন তা তাঁর জন্য ছিলো নফল, আর কওমের জন্য ছিলো ফরয”। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৭৩, হাদীস নং-২৩৬০) এটা মূলত হযরত মুআয রা.-এর নিজের মন্তব্য নয়; বরং এটা অন্যদের ধারণা প্রসূত মন্তব্য যা অপরের অনত্মরের নিয়তের ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু, আমর বিন দীনার সূত্রে আইয়ূব সিখতিয়ানী, (বুখারী: ৬৭৬) মানসুর বিন মু’তামির (মুসলিম: ৯২৬) এবং সুফিয়ান বিন উইয়াইনাও উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম: ৯২৪) কিন্তু তাঁদের কারো বর্ণনায় ঐ শব্দটি (هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ..) নেই। আবার যদি মেনেও নেয়া হয় যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে নিতেন, আর দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযের ইমামতি করতেন তাহলে প্রশ্ন উঠবে যে, এটা রসূলুল্লাহ স. থেকে অনুমোদিত কি না? অনুমোদিত হওয়ার কোন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় বেশ পরিস্কারভাবে উলেস্নখ আছে যে, রসূলুল্লাহ স. হযরত মুআয রা.কে বলেছেন, إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي، وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَلَى قَوْمِكَ “হয়তো আমার সাথে নামায পড়ো অথবা কওমের জন্য সহজ করো”। (মুসনাদে আহমাদ: ২০৬৯৯, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪, হাদীস নং-২৩৬২) মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ লিগাইরিহী বলেছেন। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন:فَقَوْلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذَا لِمُعَاذٍ , يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ أَحَدَ الْأَمْرَيْنِ , إِمَّا الصَّلَاةَ مَعَهُ , أَوْ بِقَوْمِهِ , وَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يَجْمَعُهَا “রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক মুআয রা.কে এ কথা বলায় এটাই বুঝায় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর নিকট তাঁর দুটি বিষয়ের যে কোন একটির অনুমতি রয়েছে। হয়তো রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কওমের নামায পড়ানো। এ দু’টিকে একত্রিত করতে পারবে না। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪)
এ হাদীস দ্বারা এটাই পরিস্কার বুঝে আসে যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযে ইমামতি করার অনুমতি রসূলুল্লাহ স. দেননি। তাহলে এটা কীভাবে ফরয নামাযের মতো গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ের দলীল হতে পারে? সর্বোপরি কথা হলো উপরিউক্ত দলীলের ভিত্তিতে যদি কারো নিকট এটা বৈধ মনে হয়, তাহলেও সতর্কতার চাহিদা হবে এ জাতীয় বিতর্কিত বিষয় থেকে ফরয নামাযকে বাঁচিয়ে রাখা।
এ হাদীস দ্বারা এটাই পরিস্কার বুঝে আসে যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযে ইমামতি করার অনুমতি রসূলুল্লাহ স. দেননি। তাহলে এটা কীভাবে ফরয নামাযের মতো গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ের দলীল হতে পারে? সর্বোপরি কথা হলো উপরিউক্ত দলীলের ভিত্তিতে যদি কারো নিকট এটা বৈধ মনে হয়, তাহলেও সতর্কতার চাহিদা হবে এ জাতীয় বিতর্কিত বিষয় থেকে ফরয নামাযকে বাঁচিয়ে রাখা।
