শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৫৯
রুগ্ন ব্যক্তির পিছনে সুস্থ ব্যক্তির সালাত।
২৩৫৯। আলী ইব্‌ন শায়বা (রাহঃ). আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ
রােগাক্রান্ত অবস্থায় বললেন, তােমরা আবু বকর (রাযিঃ) কে বল, যেন লােকদেরকে সালাত পড়িয়ে দেয়।
আয়েশা (রাযিঃ) বললেন, আবু বকর (রাযিঃ) কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি বললেন, তােমরা আবু বকর (রাযিঃ)-কে বল, যেন লােকদেরকে সালাত পড়িয়ে দেয়। তােমরা (দেখছি) ইউসুফ (আঃ) এর (যুগের ছলনাময়ী) নারীদের ন্যায়। রাবী বলেন, আবু বকর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবদ্দশায়ই ইমাম হিসাবে দাঁড়িয়ে গেলেন।
উত্তরঃ (ক) এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে দলীল হচ্ছে যে, তারা যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, তা অবশ্যই। বর্ণিত আছে, কিন্তু উক্ত সালাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কার্যক্রম দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি ইমাম ছিলেন। আর তা এভাবে যে, আয়েশা (রাযিঃ) থেকে আসওয়াদ (রাহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ
আবু বকর (রাযিঃ)-এর বাম পার্শ্বে (ইমাম হয়ে) বসে গেলেন। আর এটি হচ্ছে, ইমামের বৈঠক। যেহেতু
যদি আবু বকর (রাযিঃ) তাঁর ইমাম হতেন তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃ অবশ্যই তার ডান দিকে (মুকতাদী হয়ে) বসতেন। যখন তিনি তাঁর বামদিকে বসেছেন আর আবু বকর (রাযিঃ) তার ডানদিকে। এতে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-ই ইমাম ছিলেন এবং আবু বকর (রাযিঃ)-ই মুকতাদী ছিলেন।
(খ) দ্বিতীয় দলীলঃ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) তার বর্ণিত হাদীসে বলেছেনঃ “আবু বকর (রাযিঃ) যেখানে কিরা'আত শেষ করেছেন রাসূলুল্লাহ সেখান থেকে শুরু করেছেন। বস্তুত এতে বুঝা যাচ্ছে যে, আবু বকর (রাযিঃ) কিরাআত বন্ধ করে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিরাআত করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি ইমাম ছিলেন। যদি ইমাম না হতেন তাহলে কিরা'আত করতেন না। যেহেতু উক্ত সালাতটি ছিল এরূপ যাতে কিরা'আত সশব্দে পড়া হয়। আর যদি এরূপ সালাত না হতাে, তাহলে রাসূলুল্লাহু (ﷺ) সম্পর্কে জানতেন না, যেখানে আবু বকর (রাযিঃ) কিরা'অতি বন্ধ করেছেন এবং আবু বকর (রাযিঃ)-এর পিছনের ব্যক্তিরাও তা জানতেন না। অতএব আমাদের উল্লিখিত বর্ণনার দ্বারা যখন প্রমাণিত হলাে যে, উক্ত সালাত বর্ণনার দ্বারা যখন প্রমাণিত হলাে যে, উক্ত সালাত এরূপ ছিলাে যাতে কিরাআত সশব্দে পড়া হয় এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এতে কিরাআত করেছেন। আর সমস্ত লােকদের (ইমামদের) ঐকমত্য রয়েছে যে মুকতাদী
ইমামের পিছনে (সূরা মিলানাের) কিরাআত পড়ে না যা ইমাম পড়েন। এতে সাব্যস্ত হলোঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
উক্ত সালাতে-ইমাম ছিলেন। এটিই হচ্ছে হাদীসের আলােকে এ অনুচ্ছেদের যুক্তিভত্তিক বিশ্লেষণ ।
এ বিষয়ে তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
সর্বজন স্বীকৃত এক সাধারণ নিয়মের প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি যে, মুকতাদী ইমামের সালাতে শরীক হলে কখনাে মুকতাদীর উপর এরূপ ফরজ অপরিহার্য হয়ে যায় যা শরীক হওয়ার পূর্বে অপরিহার্য ছিলাে না এবং তার থেকে ফরয রহিত হতেও দেখি না যা তার উপর তাতে শরীক হওয়ার পূর্বে ছিলাে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আমরা মুসাফিরের সালাত দেখেছিঃ ও মুসাফির যখন মুকীমের সালাতে শরীক হয় তখন তার উপর মুকীমের সালাতের অনুরূপ চার রাকআত আদায় করা ফরয। অথচ এটি তার উপর মুকীম ইমামের সাথে শরীক হওয়ার পূর্বে ফরয ছিলাে না। তার উপর এটি ফরয হয়েছে ইমামের সাথে শরীক হওয়ার কারণে। আর আমরা মুকীমের সালাতে শরীক হই তাহলে তাকে নিজের সালাত পূর্ণ আদায় করতে হয়। ইমাম সালাত শেষ করার পর তার জন্য মুকীমের পূর্ণ সালাত আদায় করা অপরিহার্য । মুকীম (মুকতাদী) মুসাফির (ইমামের) সাথে শরীক হওয়ার কারণে তার থেকে কোন ফরয রহিত হবে না। তার ফরয় তার উপর বহাল থাকবে।
অতএব এই যুক্তির ভিত্তিতে বলা যায় সুস্থ ব্যক্তির সালাতও অনুরূপ হবে, যার উপর দাঁড়ানাের ফরয বহাল রয়েছে। যদি সে অসুস্থ ব্যক্তির সাথে সালাতে শরীক হয় যার উপর থেকে দাঁড়ানাের ফরয রহিত হয়ে গিয়েছে। তার এ শরীক হওয়া তার উপর থেকে (দাঁড়ানাের) ফরযকে রহিত করবে না যা সালাতে শরীক হওয়ার পূর্বে ফরয ছিলাে।
কোন প্রশ্নকারী যদি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলে যে, আমরা গােলামকে লক্ষ্য করেছি, যার উপর জুমু'আ ফরয নয়, যদি সে ইমামের সাথে জুমু'আতে শরীক হয় তাহলে যুহরের পরিবর্তে জুমু'আ তার জন্য ফরয হয়ে যায় এবং তার থেকে (যুহরের) ফরয রহিত হয়ে যায়, যা জুমু'আতে ইমামের সাথে শরীক হওয়ার পূর্বে তার উপর ফরয ছিলো।
উত্তরে তাকে বলা হবে যে, আমাদের বক্তব্যকেই আগে শক্তিশালী করে। আর তা এভাবেঃ গোলাম
জুমু'আতে শরীক হওয়ার পূর্বে জুমু'আর সালাত তার উপর ফরয ছিলাে না। যখন সে এরূপ ব্যক্তির সাথে
তাতে শরীক হয়েছে যা তার উপর ফরয তাহলে তাতে তার শরীক হওয়াটা তার উপর ফরয করবে যা তার ইমামের উপর ফরয। অতএব যখন তার উপর সেই বস্তু ফরয রূপে বিবেচিত হয়, যা তার ইমামের উপর ফরয হিসাবে বিবেচিত। এটি মুসাফিরের বিধানের ন্যায় হয়ে গেল যার উপর জুমু'আ ফরয নয়। যদি সে জুমু'আতে শরীক হয় তাহলে তা তার উপর ফরয হয়ে যায়, তা তার ইমামের উপর ফরয হওয়ার কারণে এবং তা যুহরে পরিবর্তে তার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। যেহেতু জুমু'আর সালাত যুহূরের সালাতের বিকল্প হিসাবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে গোলাম, যখন জুমু'আতে শরীক হওয়ার কারণে তার উপর জুমু'আ 'ফরয হয়ে গেল তাহলে তা যুহরের পরিবর্তে তারপক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। যেহেতু জুমুআ যুহরের
বিকল্প হিসাবে গণ্য হয়।
বস্তুত আমাদের উল্লিখিত বর্ণনার দ্বারা অবশ্যই প্রমাণিত হলাে যে, কারাে অন্যের সালাতে শরীক হওয়াটা কখনাে এরূপ বস্তুকে ফরয করে দেয় যা তাতে শরীক হওয়ার পূর্বে তার উপর ফরয ছিলাে না এবং শরীক হওয়ার পূর্বে তার উপর যা ফরয ছিলাে তা বিলুপ্ত হবে না। এতে প্রমাণিত হলাে ও সুস্থ ব্যক্তি যার উপরে সালাতের মধ্যে দাঁড়ানাে ফরয, যখন সে এরূপ ব্যক্তির সাথে সালাতে শরীক হয়, যার উপর থেকে সালাতে দাঁড়ানাের ফরয রহিত হয়ে গিয়েছে, তাহলে শরীক হওয়ার দ্বারা তার থেকে কিয়াম (দাড়ানাে) বিলুপ্ত হবে না যা এর পূর্বে তার উপর ফরয ছিলাে। আর এটি আবু হানীফা (রাহঃ) এবং আবু ইউসুফ (রাহঃ)-এর উক্তি ও মাযহাব।
মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান (রাহঃ) বলতেনঃ সুস্থ ব্যক্তির জন্য এমন অসুস্থ ব্যক্তির ইকতিদা করা জায়িয নেই যে, বসে বসে সালাত আদায় করে যদিও সে রুকু ও সিজদা করে। আর রাসূলুল্লাহ এলাকায় যে রোগাক্রান্ত অবস্থায় দাড়ানাে লােকদেরকে নিয়ে বসে বসে সালাত পড়েছেন, এটি তার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য। যেহেতু তিনি এতে এরূপ কাজ করেছেন যা তাঁর পরবর্তী কারাে জন্য করা জয়িয নেই যেমন আবু বকর (রাযিঃ) কিরাআত যেখানে রেছেন, তিনি সেখান থেকে শুরু করেছেন। (এটি অন্য কারাে জন্য জায়িয নেই)। (অনুরূপভাবে) আবু বকর (রাযিঃ) যে একই সালাতে ইমামতি থেকে বের হয়ে গিয়ে মুকতাদী হয়ে গিয়েছেন। এটিও সমস্ত মুসলমানদের ঐকমত্য অনুযায়ী তার পরবর্তী কারাে জন্য জায়িয নেই। এতে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উক্ত সালাতে এরূপ বৈশিষ্ট্য (নিজের জন্য) নির্দিষ্ট করেছেন যা অন্যের জন্য তিনি নিষেধ করেছেন।
2359 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ شَيْبَةَ، قَالَ: ثنا مُعَاوِيَةُ بْنُ عَمْرٍو الْأَزْدِيُّ، قَالَ: ثنا زَائِدَةُ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ بْنِ أَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: " مَرِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ , فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ» . فَقَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيقٌ , فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ , فَإِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ» قَالَ: قَامَ أَبُو بَكْرٍ فِي حَيَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ فِي ذَلِكَ أَنَّهُ قَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ الَّذِي قَدْ ذَكَرُوهُ. وَلَكِنَّ أَفْعَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَلَاتِهِ تِلْكَ تَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ كَانَ إِمَامًا , وَذَلِكَ أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ فِي حَدِيثِ الْأَسْوَدِ عَنْهَا «فَقَعَدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ يَسَارِ أَبِي بَكْرٍ» وَذَلِكَ قُعُودُ الْإِمَامِ لِأَنَّهُ لَوْ كَانَ أَبُو بَكْرٍ إِمَامًا لَهُ , لَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْعُدُ عَنْ يَمِينِهِ. فَلَمَّا قَعَدَ عَنْ يَسَارِهِ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ عَنْ يَمِينِهِ , دَلَّ ذَلِكَ عَلَى أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ هُوَ الْإِمَامُ , وَأَنَّ أَبَا بَكْرٍ هُوَ الْمَأْمُومُ. وَحُجَّةٌ أُخْرَى , أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ فِي حَدِيثِهِ: «فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقِرَاءَةِ مِنْ حَيْثُ انْتَهَى أَبُو بَكْرٍ» ، فَفِي ذَلِكَ مَا يَدُلُّ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ قَطَعَ الْقِرَاءَةَ , وَقَرَأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّهُ كَانَ الْإِمَامَ , وَلَوْلَا ذَلِكَ , لَمْ يَقْرَأْ , لِأَنَّ تِلْكَ الصَّلَاةَ كَانَتْ صَلَاةً يُجْهَرُ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ , وَلَوْلَا ذَلِكَ لَمَا عَلِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَوْضِعَ الَّذِي انْتَهَى إِلَيْهِ أَبُو بَكْرٍ مِنَ الْقِرَاءَةِ , وَلَا عَلِمَهُ مَنْ خَلْفَ أَبِي بَكْرٍ. فَلَمَّا ثَبَتَ بِمَا وَصَفْنَا أَنَّ تِلْكَ الصَّلَاةَ , كَانَتْ مِمَّا يُجْهَرُ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ , وَقَرَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهَا , وَكَانَ النَّاسُ جَمِيعًا لَا يَخْتَلِفُونَ أَنَّ الْمَأْمُومَ لَا يَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ , كَمَا يَقْرَأُ الْإِمَامُ. ثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي تِلْكَ الصَّلَاةِ إِمَامًا. فَهَذَا وَجْهُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ الْآثَارِ. وَأَمَّا وَجْهُهُ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا رَأَيْنَا الْأَصْلَ الْمُجْتَمَعَ عَلَيْهِ أَنَّ دُخُولَ الْمَأْمُومِ فِي صَلَاةِ الْإِمَامِ , قَدْ يُوجِبُ فَرْضًا عَلَى الْمَأْمُومِ , وَلَمْ يَكُنْ عَلَيْهِ قَبْلَ دُخُولِهِ , وَلَمْ نَرَهُ يُسْقِطُ عَنْهُ فَرْضًا قَدْ كَانَ عَلَيْهِ قَبْلَ دُخُولِهِ. فَمِنْ ذَلِكَ أَنَّا رَأَيْنَا الْمُسَافِرَ يَدْخُلُ فِي صَلَاةِ الْمُقِيمِ، فَيَجِبُ عَلَيْهِ أَنْ يُصَلِّيَ صَلَاةَ الْمُقِيمِ أَرْبَعًا , وَلَمْ يَكُنْ ذَلِكَ وَاجِبًا عَلَيْهِ قَبْلَ دُخُولِهِ مَعَهُ , وَإِنَّمَا أَوْجَبَهُ عَلَيْهِ , دُخُولُهُ مَعَهُ. وَرَأَيْنَا مُقِيمًا لَوْ دَخَلَ فِي صَلَاةِ مُسَافِرٍ , صَلَّى بِصَلَاتِهِ , حَتَّى إِذَا فَرَغَ أَتَى بِتَمَامِ صَلَاةِ الْمُقِيمِ , فَلَمْ يَسْقُطْ عَنِ الْمُقِيمِ فَرْضٌ بِدُخُولِهِ مَعَ الْمُسَافِرِ , وَكَانَ فَرْضُهُ عَلَى حَالِهِ غَيْرَ سَاقِطٍ مِنْهُ شَيْءٌ. فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ كَذَلِكَ الصَّحِيحُ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ فَرْضُ الْقِيَامِ إِذَا دَخَلَ مَعَ الْمَرِيضِ , الَّذِي قَدْ سَقَطَ عَنْهُ فَرْضُ الْقِيَامِ فِي صَلَاتِهِ , أَنْ لَا يَكُونَ ذَلِكَ الدُّخُولُ مُسْقِطًا عَنْهُ فَرْضًا كَانَ عَلَيْهِ قَبْلَ دُخُولِهِ فِي الصَّلَاةِ. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا الْعَبْدَ الَّذِي لَا جُمُعَةَ عَلَيْهِ , يَدْخُلُ فِي الْجُمُعَةِ , فَيُجْزِيهِ مِنَ الظُّهْرِ , وَيَسْقُطُ عَنْهُ فَرْضٌ قَدْ كَانَ عَلَيْهِ قَبْلَ دُخُولِهِ مَعَ الْإِمَامِ فِيهَا. قِيلَ لَهُ: هَذَا يُؤَكِّدُ مَا قُلْنَا , وَذَلِكَ أَنَّ الْعَبْدَ لَمْ يَجِبْ عَلَيْهِ جُمُعَةٌ قَبْلَ دُخُولِهِ فِيهَا , فَلَمَّا دَخَلَ فِيهَا مَعَ مَنْ هِيَ عَلَيْهِ , كَانَ دُخُولُهُ إِيَّاهَا يُوجِبُ عَلَيْهِ مَا هُوَ وَاجِبٌ عَلَى إِمَامِهِ , فَصَارَ بِذَلِكَ إِذَا وَجَبَ عَلَيْهِ مَا هُوَ وَاجِبٌ عَلَى إِمَامِهِ , فِي حُكْمِ مُسَافِرٍ لَا جُمُعَةَ عَلَيْهِ دَخَلَ فِي الْجُمُعَةِ , فَقَدْ صَارَتْ وَاجِبَةً عَلَيْهِ لِوُجُوبِهَا عَلَى إِمَامِهِ , وَصَارَتْ مُجْزِئَةً عَنْهُ مِنَ الظُّهْرِ , لِأَنَّهَا صَارَتْ بَدَلًا مِنْهَا. فَكَذَلِكَ الْعَبْدُ , لَمَّا وَجَبَتْ عَلَيْهِ الْجُمُعَةُ بِدُخُولِهِ فِيهَا أَجْزَأَتْهُ مِنَ الظُّهْرِ , لِأَنَّهَا صَارَتْ بَدَلًا مِنْهَا. فَقَدْ ثَبَتَ بِمَا ذَكَرْنَا أَنَّ دُخُولَ الرَّجُلِ فِي صَلَاةٍ غَيْرُهُ , قَدْ يُوجِبُ عَلَيْهِ مَا لَمْ يَكُنْ وَاجِبًا عَلَيْهِ , قَبْلَ دُخُولِهِ فِيهَا , وَلَا يَسْقُطُ عَنْهُ , مَا كَانَ وَاجِبًا عَلَيْهِ قَبْلَ دُخُولِهِ. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ الصَّحِيحَ الَّذِي , الْقِيَامُ فِي الصَّلَاةِ وَاجِبٌ عَلَيْهِ , إِذَا دَخَلَ مَعَ مَنْ قَدْ سَقَطَ عَنْهُ فَرْضُ الْقِيَامِ فِي صَلَاتِهِ , لَمْ يَكُنْ يَسْقُطُ عَنْهُ بِدُخُولِهِ مِنَ الْقِيَامِ , مَا كَانَ وَاجِبًا عَلَيْهِ قَبْلَ ذَلِكَ. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ، وَأَبِي يُوسُفَ رَحِمَهُمُ اللهُ. وَكَانَ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ رَحِمَهُ اللهُ يَقُولُ: لَا يَجُوزُ لِصَحِيحٍ أَنْ يَأْتَمَّ بِمَرِيضٍ يُصَلِّي قَاعِدًا , وَإِنْ كَانَ يَرْكَعُ وَيَسْجُدُ. وَيَذْهَبُ إِلَى أَنَّ مَا كَانَ مِنْ صَلَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدًا فِي مَرَضِهِ بِالنَّاسِ وَهُمْ قِيَامٌ مَخْصُوصٌ , لِأَنَّهُ قَدْ فَعَلَ فِيهَا مَا لَا يَجُوزُ لِأَحَدٍ بَعْدَهُ أَنْ يَفْعَلَهُ , مِنْ أَخْذِهِ فِي الْقِرَاءَةِ , مِنْ حَيْثُ انْتَهَى أَبُو بَكْرٍ , وَخُرُوجِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مِنَ الْإِمَامَةِ إِلَى أَنْ صَارَ مَأْمُومًا فِي صَلَاةٍ وَاحِدَةٍ , وَهَذَا لَا يَجُوزُ لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِهِ , بِاتِّفَاقِ الْمُسْلِمِينَ جَمِيعًا فَدَلَّ ذَلِكَ , عَلَى أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَدْ كَانَ خُصَّ فِي صَلَاتِهِ تِلْكَ , بِمَا مُنِعَ مِنْهُ غَيْرُهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের আগের বৃহস্পতিবার ইশার সময় খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তাঁর পক্ষে মসজিদে গিয়ে ইমামত করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিনি ঘরের লোকদের হুকুম দিলেন, যেন তারা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কে ইমামত করতে বলেন। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর মন ছিল অত্যন্ত নরম। কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতকালে তাঁর কান্না চলে আসত। কান্নার বেগ বেশি হলে স্বাভাবিক গতিতে তিলাওয়াত করা সম্ভব হয় না। ইমামত করার সময় এরূপ অবস্থা হলে সাবলীলভাবে কুরআন পাঠ করা কঠিন হয়ে যায়। আবার সময়টা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসুস্থতাকালীন। এ কারণে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, এমনিতেও উদ্বিগ্ন ছিলেন। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামত করতে তাঁর অনেক বেশি চাপবোধ হওয়ার কথা। সেদিকে ইঙ্গিত করে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন যে, আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে তিনি নামায পড়লে কান্নার কারণে মানুষকে কিরাআত, তাকবীর ইত্যাদি শোনাতে পারবেন না। অর্থাৎ কান্না অবস্থায় তাঁর উচ্চারণ জড়িয়ে যাবে। আওয়াজও উঁচু হবে না। ফলে মুক্তাদীগণ তা শুনতে পাবে না।

কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব ওজর গ্রাহ্য করলেন না। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. তাঁর সবচে' বেশি প্রিয় মানুষ। বিভিন্ন আলামত-ইঙ্গিত দ্বারা বোঝা যায়, তাঁর একান্ত কামনা ছিল তাঁর ওফাতের পর হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-ই যেন প্রথম খলীফা হিসেবে মনোনীত হন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে নামাযের ইমামরূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করাটা এ কামনা পূরণে সহায়ক ছিল। অন্য কেউ এ দায়িত্ব পালন করলে তার দিকে কিছু লোকের ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা ছিল। হয়তো এটাকে তারা তার খলীফারূপে মনোনয়নের প্রতি ইঙ্গিত মনে করত। সে আশঙ্কার পথ বন্ধ করার জন্য হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কে দিয়েই ইমামত করানোর প্রয়োজন ছিল। তাই সব ওজর প্রত্যাখ্যান করে তিনি বারবার হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কেই ইমামত করার হুকুম দিতে বললেন।

সেমতে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্থলাভিষিক্তরূপে নামাযের ইমামত করলেন। এটা ছিল বৃহস্পতিবার ইশার নামায। এরপর থেকে সোমবার ফজর পর্যন্ত টানা ১৭ ওয়াক্ত নামাযে তিনি ইমামত করেন। ওফাতের পর যখন খলীফা নিয়োগের পালা আসে, তখন হযরত উমর ফারূক রাযি, হযরত আলী রাযি. প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় সাহাবীগণ নামাযের এই ইমামতকে তাঁর বৃহত্তর ইমামত অর্থাৎ খেলাফতের পদমর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার পক্ষে একটি বড় শক্তিরূপে অবলম্বন করে নিয়েছিলেন।

যাহোক, এস্থলে এ হাদীছের মূল বিষয় হল কুরআন তিলাওয়াতকালে ক্রন্দন করা। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. তিলাওয়াতকালে খুব কাঁদতেন। এটা প্রকৃত মুমিনদের শান। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
মুমিন তো তারাই, (যাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পড়া হয়, তখন তা তাদের ঈমানের উন্নতি সাধন করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ
"আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী- এমন এক কিতাব যার বিষয়বস্তুসমূহ পরস্পর সুসামঞ্জস্য, (যার বক্তব্যসমূহ) পুনরাবৃত্তিকৃত, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এর দ্বারা তাদের শরীর রোমাঞ্চিত হয়। তারপর তাদের দেহমন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটা আল্লাহর হিদায়াত, যার মাধ্যমে তিনি যাকে চান সঠিক পথে নিয়ে আসেন আর আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন, তাকে সঠিক পথে আনার কেউ নেই।

কুরআন পড়ে দেহমন বিগলিত হওয়া মহান লোকদের মধ্যে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ছিলেন শ্রেষ্ঠতম। মদীনা মুনাউওয়ারায় হিজরতের আগে তিনি মক্কা ছেড়ে পরিব্রাজকরূপে ভূপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ানো ও আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লে ইবনুদ্দাগিনাহ নামক মক্কার এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি তাঁকে নিরাপত্তা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। এ সময় তিনি বাড়ির আঙিনায় একটি ইবাদতখানা বানিয়ে সেখানে ইবাদত-বন্দেগী ও যিকর-তিলাওয়াতে মশগুল থাকেন। তিনি যখন বিগলিত মনে কুরআন তিলাওয়াত করতেন আর অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকতেন, তখন আশপাশের নারী-পুরুষ সকলে ঘর থেকে বের হয়ে আসত এবং তাঁর নিকট জড়ো হয়ে কুরআন শ্রবণে মগ্ন হয়ে পড়ত। কুরায়শ নেতৃবর্গ এটাকে অনেক বড় ঝুঁকিরূপে দেখছিল। তারা ভাবছিল, এভাবে চলতে থাকলে মক্কার সকল নারী-পুরুষ নিজ ধর্ম ছেড়ে ইসলাম কবুল করে নেবে। সুতরাং তাদের চাপে পড়ে ইবনুদ্দাগিনাহ তার দেওয়া নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। পরিশেষে হিজরতের পালা আসে। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় চলে আসেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ প্রমাণ করে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-ই ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় সাহাবী।

খ. প্রথম খলীফা হিসেবে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-ই ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা পসন্দের ব্যক্তি।

গ. ‘ইলম ও আমলে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকেই ইমামরূপে মনোনীত করা উচিত।

ঘ. কুরআন পাঠকালে সম্ভব হলে ক্রন্দন করা উচিত। অন্ততপক্ষে ক্রন্দনের ভাব তো অবলম্বন করা চাই-ই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ২৩৫৯ | মুসলিম বাংলা