শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২২৭১
আন্তর্জাতিক নং: ২২৭২
উট রাখার স্থানে সালাত আদায় করা।
২২৭১-২২৭২। ফাহাদ (রাহঃ)... মিকদাম রাহাবী (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন উবাইদা ইবনে সামিত (রাযিঃ) আবুদ্দারদা (রাযিঃ) ও হারিশ ইবনে মু'আবিয়া (রাযিঃ) ( একত্রে) বসেছিলেন। আবুদ্দারদা (রাযিঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসকে সংগ্রহ করেছ, যখন তিনি আমাদেরকে নিয়ে গনিমতের উটের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছেন। উবাদা (রাযিঃ) বলেন, আমি। তিনি বর্ণনা করে বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে নিয়ে গনিমতের উটের দিকে মুখ করে সালাত পড়েছিলেন। তারপর তিনি হাত প্রসারিত করে উটের একটি ছোট টুকরো কে বললেন খুমুস (পঞ্চমাংশ) ব্যতীত তোমাদের গনিমতের সম্পদ থেকে এ পরিমাণ আমার জন্যে হালাল নয়। আবার তাও তোমাদের মধ্যে ফিরে যাবে।
বিশ্লেষণ
বস্তুত এ দুটি হাদীসে উটের দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের বৈধতা ব্যক্ত করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে উটের অভিমুখে সালাত পড়া জায়েজ আছে। উট রাখার স্থান এ সালাত আদায় থেকে নিষেধ করা হয়নি, অন্যথায় এর দিকে হয়ে সালাত আদায় করা জায়েজ না হওয়ার কথা ছিল।
কেউ কেউ এ সম্ভাবনা উল্লেখ করেছেন যে, উট রাখার স্থানে এর মলমূত্রের কারণে এতে সালাত আদায় করা মাকরুহ। অতএব আমরা ছাগল রাখার স্থানের প্রতি লক্ষ্য করলাম যে, এতে সালাত জায়েয হওয়ার ব্যাপারে সকলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আর এই বিষয়ে সেই সমস্ত রিয়ায়াত এসেছে যা আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছি।
বস্তুত মলমূত্র ইত্যাদির কারণে উট রাখার স্থানের ব্যাপারে সে-ই হুকুমে প্রযোজ্য হবে যা মলমূত্র ইত্যাদির কারণে ছাগল রাখার স্থানের হবে। এতে পবিত্রতা ও অপবিত্রতার ব্যাপারে কোনরূপ পার্থক্য হবে না। যেহেতু যারা ছাগলের পেশাবকে পবিত্র সাব্যস্ত করেন তারা উটের পেশাব কেউ অনুরূপ সাব্যস্ত করেন। আর যারা উটের পেশাব কে অপবিত্র আখ্যায়িত করেন তারা ছাগলের পেশাব কেউ অনুরূপ আখ্যায়িত করেন। সেই হাদীসে উট রাখার স্থানে সালাত আদায় কে নিষেধ করা হয়েছে সেই হাদীসেই ছাগল রাখার স্থান এর সালাত আদায় বৈধ করা হয়েছে। এতে সাব্যস্ত হল যে, নিষেধাজ্ঞা অপবিত্রতার কারণে নয় কেননা ছাগলের হুকুম মতো অনুরূপ। বরং নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে তা-যা (পূর্বে) শুরাইক (রাহঃ) অথবা ইয়াহইয়া ইবনে আদম (রাহঃ) বলেছেন, যখন প্রাণের উপর আশঙ্কা করা হয় চাই সেটা উট রাখার স্থান বা অন্য কিছু হোক সালাত মাকরুহ হবে। এটি-ই হচ্ছে এই অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসের মর্ম।
তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলিল
বস্তুত যুক্তির আলোকে এ বিষয়টির বিধান হচ্ছেঃ আমরা অবশ্যই লক্ষ্য করেছি যে আলেমগণ ছাগল রাখার স্থান সম্পর্কে মত বিরোধ করেননি, যে সালাত আদায় করা জায়েজ। তবে তারা উট রাখার স্থান নিয়ে মতবিরোধ করেছেন। আমরা অবশ্যই লক্ষ্য করে দেখেছি যে, (পবিত্রতা কিংবা অপবিত্রতা) (তাহারাত কিংবা নাজাসাত) এর ব্যাপারে উটের পেশাবের বিধান ছাগলের পেশাবে বিধানের অনুরূপ। অতএব যুক্তির আলোকে উট রাখার স্থানে সালাত আদায়ের বিধান ছাগল রাখার স্থান এর বিধান এর অনুরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়। যা আমরা উল্লেখ করেছি এটিই হচ্ছে আবু হানিফা (রাহঃ),আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর উক্তি ও অভিমত।

ইয়াজিদ ইবনে সিনান (রাহঃ)... লায়স ইবনে সা'দ (রাহঃ), থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ এটি হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনে নাফি (রাহঃ), এর পুস্তিকার অনুলিপি যা লায়ক ইবনে সা'দ (রাহঃ), এর নিকটে পৌঁছেছে যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উঠ রাখার স্থান সম্পর্কে তুমি যা উল্লেখ করেছ, আমাদের নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, এটি অর্থাৎ উট রাখার স্থানে সালাত আদায় করা মাকরুহ। (এটি সাধারণভাবে বলা ঠিক নয়) অথচ রাসূলুল্লা (ﷺ) নিজ সওয়ারির উপর সালাত আদায় করতেন। অনুরূপভাবে ইবনে ওমর (রাযিঃ),এবং আমাদের পৃথিবীর সর্বপ্রথম লোকদের থেকে যাদের আমরা পেয়েছি (সাহাবীগণ) তারা নিজ নিজ উটকে নিজেদের এবং কিবলার মধ্যবর্তী স্থানে রেখে উটের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন অথচ তখন মলমূত্র ত্যাগ করতো।
2271 - حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: أنا يَحْيَى بْنُ أَبِي بُكَيْرٍ الْعَبْدِيُّ، قَالَ: أنا إِسْرَائِيلُ، عَنْ زِيَادٍ الْمُصْفَرِّ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنِ الْمِقْدَامِ الرَّهَاوِيِّ، قَالَ: جَلَسَ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ , وَأَبُو الدَّرْدَاءِ , وَالْحَارِثُ بْنُ مُعَاوِيَةَ. فَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ: أَيُّكُمْ يَحْفَظُ حَدِيثَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ صَلَّى بِنَا إِلَى بَعِيرٍ مِنَ الْمَغْنَمِ؟ فَقَالَ عُبَادَةُ: أَنَا قَالَ: فَحَدِّثْ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى بَعِيرٍ مِنَ الْمَغْنَمِ , ثُمَّ مَدَّ يَدَهُ فَأَخَذَ قُرَادَةً مِنَ الْبَعِيرِ فَقَالَ: «مَا يَحِلُّ لِي مِنْ غَنَائِمِكُمْ مِثْلُ هَذِهِ , إِلَّا الْخُمُسُ , وَهُوَ مَرْدُودٌ فِيكُمْ» فَفِي هَذَيْنِ الْحَدِيثَيْنِ إِبَاحَةُ الصَّلَاةِ إِلَى الْبَعِيرِ , فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ الصَّلَاةَ إِلَى الْبَعِيرِ جَائِزَةٌ , وَأَنَّهُ لَمْ يَنْهَ عَنِ الصَّلَاةِ فِي أَعْطَانِ الْإِبِلِ , لِأَنَّهُ لَا يَجُوزُ الصَّلَاةُ بِحِذَائِهَا. وَاحْتَمَلَ أَنْ تَكُونَ الْكَرَاهَةُ لِعِلَّةِ مَا يَكُونُ مِنَ الْإِبِلِ فِي مَعَاطِنِهَا , مِنْ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا. فَنَظَرْنَا فِي ذَلِكَ فَرَأَيْنَا مَرَابِضَ الْغَنَمِ , كُلٌّ قَدْ أَجْمَعَ عَلَى جَوَازِ الصَّلَاةِ فِيهَا , وَبِذَلِكَ جَاءَتِ الرِّوَايَاتُ الَّتِي رَوَيْنَاهَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَكَانَ حُكْمُ مَا يَكُونُ مِنَ الْإِبِلِ فِي أَعْطَانِهَا مِنْ أَبْوَالِهَا وَغَيْرِ ذَلِكَ , حُكْمَ مَا يَكُونُ مِنَ الْغَنَمِ فِي مَرَابِضِهَا مِنْ أَبْوَالِهَا وَغَيْرِ ذَلِكَ , لَا فَرْقَ بَيْنَ شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ فِي نَجَاسَةٍ وَلَا طَهَارَةٍ , لِأَنَّ مَنْ جَعَلَ أَبْوَالَ الْغَنَمِ طَاهِرَةً , جَعَلَ أَبْوَالَ الْإِبِلِ كَذَلِكَ , وَمَنْ جَعَلَ أَبْوَالَ الْإِبِلِ نَجِسَةً , جَعَلَ أَبْوَالَ الْغَنَمِ كَذَلِكَ. فَلَمَّا كَانَتِ الصَّلَاةُ قَدْ أُبِيحَتْ فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ فِي الْحَدِيثِ الَّذِي نُهِيَ فِيهِ عَنِ الصَّلَاةِ فِي أَعْطَانِ الْإِبِلِ , ثَبَتَ أَنَّ النَّهْيَ عَنْ ذَلِكَ , لَيْسَ لِعِلَّةِ النَّجَاسَةِ مَا يَكُونُ مِنْهَا , إِذْ كَانَ مَا يَكُونُ مِنَ الْغَنَمِ , حُكْمُهُ مِثْلَ ذَلِكَ. وَلَكِنَّ الْعِلَّةَ الَّتِي لَهَا كَانَ النَّهْيُ , هُوَ مَا قَالَ شَرِيكٌ , أَوْ مَا قَالَ يَحْيَى بْنُ آدَمَ. فَإِنْ كَانَ لِمَا قَالَ شَرِيكٌ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَكْرُوهَةٌ حَيْثُ يَكُونُ الْغَائِطُ وَالْبَوْلُ , كَانَ عَطْنًا أَوْ غَيْرَهُ. وَإِنْ كَانَ لِمَا قَالَ يَحْيَى بْنُ آدَمَ , فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَكْرُوهَةٌ حَيْثُ يُخَافُ عَلَى النُّفُوسِ , كَانَ. عَطْنًا أَوْ غَيْرَهُ. فَهَذَا وَجْهُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ. وَأَمَّا حُكْمُ ذَلِكَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا رَأَيْنَاهُمْ لَا يَخْتَلِفُونَ فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ , وَأَنَّ الصَّلَاةَ فِيهَا جَائِزَةٌ , وَإِنَّمَا اخْتَلَفُوا فِي أَعْطَانِ الْإِبِلِ , فَقَدْ رَأَيْنَا حُكْمَ لُحْمَانِ الْإِبِلِ , كَحُكْمِ لُحْمَانِ الْغَنَمِ فِي طَهَارَتِهَا , وَرَأَيْنَا حُكْمَ أَبْوَالِهَا كَحُكْمِ أَبْوَالِهَا فِي طَهَارَتِهَا أَوْ نَجَاسَتِهَا فَكَانَ يَجِيءُ فِي النَّظَرِ أَيْضًا أَنْ يَكُونَ حُكْمُ الصَّلَاةِ فِي مَوْضِعِ الْإِبِلِ كَهُوَ فِي مَوْضِعِ الْغَنَمِ قِيَاسًا وَنَظَرًا عَلَى مَا ذَكَرْنَا. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى

2272 - وَقَدْ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ سِنَانٍ , قَالَ: ثنا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ , قَالَ: ثنا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ , قَالَ: هَذِهِ نُسْخَةُ رِسَالَةِ عَبْدِ اللهِ بْنِ نَافِعٍ إِلَى اللَّيْثِ بْنِ سَعْدٍ يَذْكُرُ فِيهَا: أَمَّا مَا ذَكَرْتَ مِنْ مَعَاطِنِ الْإِبِلِ , فَقَدْ بَلَغَنَا أَنَّ ذَلِكَ يُكْرَهُ , «وَقَدْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَى رَاحِلَتِهِ» , وَقَدْ كَانَ ابْنُ عُمَرَ , وَمَنْ أَدْرَكْنَا مِنْ خِيَارِ أَهْلِ أَرْضِنَا يَعْرِضُ أَحَدُهُمْ نَاقَتَهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ , فَيُصَلِّي إِلَيْهَا وَهِيَ تَبْعَرُ وَتَبُولُ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান