শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২১৬৯
জুমু'আর দিন ইমামের খুতবা দানকালে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে সালাত পড়বে কিনা?
২১৬৯। সুলায়মান ইবন শুআইব (রাহঃ) ….. সালমান আল-খায়র (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ কেউ যদি জুমু'আর দিন গোসল করে, সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর তেল ব্যবহার করে অথবা নিজ গৃহের সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর সকাল সকাল রওয়ানা করে, দুজনের মাঝে ফাঁক না করে (গর্দান টপকে সামনে না যায়), আল্লাহ যা তাওফিক দেন সে পরিমাণ সালাত আদায় করে, তারপর ইমাম যখন আলোচনা আরম্ভ করেন তখন নীরবতা অবলম্বন করে তার আগামী এক সপ্তাহের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
পর্যালোচনা
বস্তুত এ সব হাদীসেও ইমামের আলোচনার সময় নীরবতা অবলম্বনের নির্দেশ রয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে, ইমামের আলোচনার সময়টি সালাত আদায়ের সময় নয়। হাদীস সমূহের সঠিক মর্ম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটাই হলো এ অনুচ্ছেদের বিধান।
পক্ষান্তরে যৌক্তিক কারণ হলোঃ আমরা লক্ষ্য করি, এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, কেউ যদি ইমামের খুতবার পূর্বে মসজিদে থাকে তার জন্য ইমামের খুতবা তার সালাত আদায়ের প্রতিবন্ধক। এরূপ ক্ষেত্রে ওই মুসল্লীর জন্য খুতবার সময়টি সালাতের উপযুক্ত সময় নয়। অতএব যে ব্যক্তি ইমামের খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ করে তার জন্যও সে সময়টি সালাতের সময় নয় এবং তার জন্য সালাত আদায় উচিত হবে না।
আমরা সর্বসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি মূলনীতি লক্ষ্য করেছি যে, সালাতের নিষিদ্ধ ওয়াক্তগুলো সবই সমান। কেউ মসজিদে উক্ত সময়ের পূর্ব থেকেই অবস্থান করুক কিংবা সে সময় মসজিদে প্রবেশ করুন সর্বাবস্থাতেই সালাত আদায় উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে পূর্ব থেকে যে মসজিদে আছে, তার জন্য যেমন ইমামের খুতবা দানকালে সালাত আদায় নিষিদ্ধ, তেমনি যে ইমামের খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ করবে তার জন্যও সে সময়ে সালাত আদায় নিষিদ্ধ হবে! এটাই হলো উপরোক্ত বিষয়ে যুক্তির কথা।
এটি-ই (ইমাম) আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর মত।
বস্তুত এর (স্বপক্ষে) পূর্ববর্তী আলিমগণ থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছেঃ
2169 - حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ شُعَيْبٍ، قَالَ: ثنا أَسَدٌ، قَالَ: ثنا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أُبَيٌّ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ وَدِيعَةَ، عَنْ سَلْمَانَ الْخَيْرِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَأَنْ يَغْتَسِلَ الرَّجُلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَتَطَهَّرَ بِمَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ , ثُمَّ ادَّهَنَ مِنْ دُهْنٍ أَوْ مَسَّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ , ثُمَّ رَاحَ , فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ , وَصَلَّى مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ , ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الْإِمَامُ , غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى» فَفِي هَذِهِ الْآثَارِ أَيْضًا , الْأَمْرُ بِالْإِنْصَاتِ , إِذَا تَكَلَّمَ الْإِمَامُ , فَذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّ مَوْضِعَ كَلَامِ الْإِمَامِ , لَيْسَ بِمَوْضِعِ صَلَاةٍ. فَهَذَا حُكْمُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ. وَأَمَّا وَجْهُ النَّظَرِ , فَإِنَّا رَأَيْنَاهُمْ لَا يَخْتَلِفُونَ أَنَّ مَنْ كَانَ فِي الْمَسْجِدِ قَبْلَ أَنْ يَخْطُبَ الْإِمَامُ , فَإِنَّ خُطْبَةَ الْإِمَامِ تَمْنَعُهُ مِنَ الصَّلَاةِ , فَيَصِيرُ بِهَا فِي غَيْرِ مَوْضِعِ صَلَاةٍ. فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ كَذَلِكَ دَاخِلَ الْمَسْجِدِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ دَاخِلًا لَهُ فِي غَيْرِ مَوْضِعِ صَلَاةٍ , فَلَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلِّيَ. وَقَدْ رَأَيْنَا الْأَصْلَ الْمُتَّفَقَ عَلَيْهِ أَنَّ الْأَوْقَاتَ الَّتِي تَمْنَعُ مِنَ الصَّلَاةِ , يَسْتَوِي فِيهَا مَنْ كَانَ قَبْلَهَا فِي الْمَسْجِدِ , وَمَنْ دَخَلَ فِيهَا الْمَسْجِدَ فِي مَنْعِهَا إِيَّاهُمَا مِنَ الصَّلَاةِ. فَلَمَّا كَانَتِ الْخُطْبَةُ تَمْنَعُ مَنْ كَانَ قَبْلَهَا فِي الْمَسْجِدِ عَنِ الصَّلَاةِ , كَانَتْ كَذَلِكَ أَيْضًا , تَمْنَعُ مَنْ دَخَلَ الْمَسْجِدَ بَعْدَ دُخُولِ الْإِمَامِ فِيهَا مِنَ الصَّلَاةِ. فَهَذَا هُوَ وَجْهُ النَّظَرِ فِي ذَلِكَ , وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ وَمُحَمَّدٍ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. وَقَدْ رُوِيَتْ فِي ذَلِكَ آثَارٌ عَنْ جَمَاعَةٍ مِنَ الْمُتَقَدِّمِينَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে জুমআর দিনে গোসল করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা ছুন্নাত ও ফযীলতপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (বাদায়েউস সানায়ে’: ১/২৬৯) জুমআর দিন গোসল করা জরুরী বলে যদিও কোন কোন ইমাম মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইসলামের শুরু যুগে সাহাবায়ে কিরামের আর্থিক দৈন্যতা ছিল চরমে। নিজেরা ক্ষেতে খামারে কাজ করতেন, মোটা কাপড় পরিধান করতেন এবং ঘর্মাক্ত শরীরে জুমার নামাযে আসতেন। ঘামের দুর্গন্ধে মানুষের কষ্ট হতো। কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা তাঁদের অনটন দূর করে আর্থিক স্বচ্ছলতা দান করেছেন। তাঁরা উন্নতমানের পাতলা কাপড় পরিধান করেন। কাজের মানুষে তাঁদের কাজ করে। তখন গোসল করার ঐ প্রয়োজনীয়তা থাকেনি যা শুরু যুগে ছিলো। (তহাবী শরীফ-৭০৭) এ হাদীসের আলোকে বলা যেতে পারে যে, রসূল স.-এর বাণী الغُسْلُ يَوْمَ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ জুমআর দিনের গোসল করা সকল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ওয়াজিব’ (বুখারী-৮১৬) এটা ইসলামের শুরু দিকের কথা। এর আরো একটি প্রমাণ মেলে مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَة ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، যে ব্যক্তি সুন্দর রূপে অযু করে জুমআর নামাযে যায় এবং চুপ করে মনোযোগ সহকারে (ইমামের খুৎবা) শোনে তার এই জুমআ থেকে পরের জুমআ এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম-১৮৬১) এ হাদীসে জুমআর ফযীলত পাওয়ার জন্য তিনটি আমলের কথা বলা হয়েছে যার মধ্যে গোসলের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এ থেকেও বুঝা যায় যে, জুমআর জন্য গোসল করা জরুরী নয়। তবে বুখারী: ৮৬৪ নং হাদীস থেকে গোসলের ফযীলত প্রমাণিত হয়েছে। অতএব এটা ছুন্নাত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ২১৬৯ | মুসলিম বাংলা