শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ২১৪৬
কেউ ঘরে সালাত আদায় করে মসজিদে এসে লোকদের (জামাআতে) সালাতরত দেখলে
২১৪৬। আবু বাকরা (রাহঃ) ….. ইয়াযিদ ইবন আসওয়াদ আল-আসওয়াঈ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মসজিদে খায়ফে ফজরের সালাতে আমাদের ইমামতি করলেন। সালাত শেষ করে তিনি দেখলেন, মসজিদের শেষ প্রান্তে দুই ব্যক্তি বসে আছে। তারপর তাদেরকে তাঁর দরবারে হাজির করা হলো। তখন তাদের কাঁধের গোশত কাঁপছিলো। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের সাথে জামাআতে সালাত আদায়ে তোমাদের কিসে বাধা দিল ? তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা বাড়িতে সালাত আদায় করে এসেছি। তারপর তিনি বললেন, আর এরূপ করবে না। যখন বাড়িতে সালাত আদায় করে এসে দেখবে জামাআতে সালাত আদায় করা হচ্ছে তখন তাদের সাথে তোমরা সালাত আদায় করবে। কারণ, এটি তোমাদের নফল সালাত অথবা বলেছেন, ঐচ্ছিক (সালাত)।
আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ উপরোক্ত হাদীসসমূহের বিষয়বস্তু একদল আলিম গ্রহণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, কেউ যদি ঘরে যে কোন ফরয সালাত আদায় করে, তারপর মসজিদে এসে লোকজনকে জামাআতে সালাত আদায় করতে দেখে তাহলে তাতে শরীক হবে।
পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাদের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেন, যেসব সালাতের পর নফল আছে, সেসব সালাতে একবার সালাত আদায়ের পর পুনঃ জামাআতে শরীক হওয়াতে কোন দোষ নেই এবং দ্বিতীয় সালাতটি হবে নফল। আর মাগরিবের সালাতে পুনরায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। এটাকে আলিমগণ মাকরূহ মনে করেন। কারণ, মাগরিবের সালাত পুনঃ আদায় করলে তা হবে নফল। অথচ বেজোড় নফল হয় না। নফল হয় জোড়। আর যেসব সালাতের পর নফল পড়া জায়িয নেই, সেসব সালাতে পুনরায় ইমামের সাথে অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়, কারণ, এটি এমন সময়ের নফল, যে সময় এরূপ নফল আদায় করা বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আসরের সালাতের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এসব রিওয়ায়াত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে মুতাওয়াতির রূপে বর্ণিত হয়েছে। এ গ্রন্থের অন্যত্র সেসব হাদীস আমি উল্লেখ করেছি। এরূপ মুতাওয়াতির রিওয়ায়াতগুলো দ্বারা তাঁরা প্রমাণ পেশ করেছেন। এসব মুতাওয়াতির রিওয়ায়াত এ পরিচ্ছদের শুরুতে যেসব হাদীস বর্ণনা করেছি, সেগুলো রহিত করে দিয়েছে। তাঁরা বলেন, প্রথম দিকে কোন কোন হাদীসে যখন বলা হয়েছে, “তোমরা সে সালাত (ইমামের সাথে) আদায় কর। কারণ এটা তোমাদের জন্য নফল।" আর এসব পরবর্তী হাদীসে (আসর ও ফজরের পর) নফল পড়তে নিষেধ করা হয়েছে এবং এসব হাদীস সর্বসম্মতভাবে রহিত নয়। কাজেই এসব হাদীসের বিষয় জামাআতে শরীক হওয়ার হাদীসে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং পূর্বোক্ত সেই বিরোধী হাদীসগুলোকে রহিত করে দিবে, যেগুলোতে শুধু (ইমামের সাথে পুনঃ) সালাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু আমাদের জন্য এটি নফল কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। কাজেই সেসব হাদীসে “কারণ সেটি তোমাদের জন্য নফল” বাক্য উল্লেখ করা হয়েছে। আর যেগুলোতে এ বাক্যটি উল্লেখ করা হয়নি, উভয়টির একই অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিংবা এও হতে পারে একবার সালাত আদায় করে দ্বিতীয় বার ইমামের সাথে সালাত আদায়ের নির্দেশ ব্যাপক আকারে (সব সালাতে) তখন করা হয়েছিলো, যখন ফরয দু'বার আদায় করা যেত এবং দুটি-ই হতো ফরয সালাত। পরবর্তীতে এই হুকুম রহিত করা হয়েছে। বস্তুত উপরোক্ত দুটি বিষয়ের যেকোন একটি-ই ধরা হোক না কেন, পূর্বেও হাদীসের হুকুম পরবর্তীতে উল্লিখিত হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। যুহর এবং ইশা ছাড়া অন্য কোন সালাত পুনঃ আদায় করা যাবে না বলে যারা মত পোষণ করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসূফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)। বস্তুত পূর্ববর্তী একদল আলিম থেকে এর স্বপক্ষে হাদীস বর্ণিত আছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোঃ
আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ উপরোক্ত হাদীসসমূহের বিষয়বস্তু একদল আলিম গ্রহণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, কেউ যদি ঘরে যে কোন ফরয সালাত আদায় করে, তারপর মসজিদে এসে লোকজনকে জামাআতে সালাত আদায় করতে দেখে তাহলে তাতে শরীক হবে।
পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাদের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেন, যেসব সালাতের পর নফল আছে, সেসব সালাতে একবার সালাত আদায়ের পর পুনঃ জামাআতে শরীক হওয়াতে কোন দোষ নেই এবং দ্বিতীয় সালাতটি হবে নফল। আর মাগরিবের সালাতে পুনরায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। এটাকে আলিমগণ মাকরূহ মনে করেন। কারণ, মাগরিবের সালাত পুনঃ আদায় করলে তা হবে নফল। অথচ বেজোড় নফল হয় না। নফল হয় জোড়। আর যেসব সালাতের পর নফল পড়া জায়িয নেই, সেসব সালাতে পুনরায় ইমামের সাথে অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়, কারণ, এটি এমন সময়ের নফল, যে সময় এরূপ নফল আদায় করা বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আসরের সালাতের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এসব রিওয়ায়াত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে মুতাওয়াতির রূপে বর্ণিত হয়েছে। এ গ্রন্থের অন্যত্র সেসব হাদীস আমি উল্লেখ করেছি। এরূপ মুতাওয়াতির রিওয়ায়াতগুলো দ্বারা তাঁরা প্রমাণ পেশ করেছেন। এসব মুতাওয়াতির রিওয়ায়াত এ পরিচ্ছদের শুরুতে যেসব হাদীস বর্ণনা করেছি, সেগুলো রহিত করে দিয়েছে। তাঁরা বলেন, প্রথম দিকে কোন কোন হাদীসে যখন বলা হয়েছে, “তোমরা সে সালাত (ইমামের সাথে) আদায় কর। কারণ এটা তোমাদের জন্য নফল।" আর এসব পরবর্তী হাদীসে (আসর ও ফজরের পর) নফল পড়তে নিষেধ করা হয়েছে এবং এসব হাদীস সর্বসম্মতভাবে রহিত নয়। কাজেই এসব হাদীসের বিষয় জামাআতে শরীক হওয়ার হাদীসে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং পূর্বোক্ত সেই বিরোধী হাদীসগুলোকে রহিত করে দিবে, যেগুলোতে শুধু (ইমামের সাথে পুনঃ) সালাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু আমাদের জন্য এটি নফল কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। কাজেই সেসব হাদীসে “কারণ সেটি তোমাদের জন্য নফল” বাক্য উল্লেখ করা হয়েছে। আর যেগুলোতে এ বাক্যটি উল্লেখ করা হয়নি, উভয়টির একই অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিংবা এও হতে পারে একবার সালাত আদায় করে দ্বিতীয় বার ইমামের সাথে সালাত আদায়ের নির্দেশ ব্যাপক আকারে (সব সালাতে) তখন করা হয়েছিলো, যখন ফরয দু'বার আদায় করা যেত এবং দুটি-ই হতো ফরয সালাত। পরবর্তীতে এই হুকুম রহিত করা হয়েছে। বস্তুত উপরোক্ত দুটি বিষয়ের যেকোন একটি-ই ধরা হোক না কেন, পূর্বেও হাদীসের হুকুম পরবর্তীতে উল্লিখিত হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। যুহর এবং ইশা ছাড়া অন্য কোন সালাত পুনঃ আদায় করা যাবে না বলে যারা মত পোষণ করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসূফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)। বস্তুত পূর্ববর্তী একদল আলিম থেকে এর স্বপক্ষে হাদীস বর্ণিত আছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোঃ
2146 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ، قَالَ: ثنا أَبُو دَاوُدَ، قَالَ: ثنا شُعْبَةُ، قَالَ: أَخْبَرَنِي يَعْلَى بْنُ عَطَاءٍ، قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ يَزِيدَ بْنِ الْأَسْوَدِ السُّوَائِيَّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: " صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَسْجِدِ الْخَيْفِ صَلَاةَ الصُّبْحِ , فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ إِذَا رَجُلَانِ جَالِسَانِ فِي مُؤَخَّرِ الْمَسْجِدِ فَأُتِيَ بِهِمَا تُرْعَدُ فَرَائِصُهُمَا , فَقَالَ: «مَا مَنَعَكُمَا أَنْ تُصَلِّيَا مَعَنَا؟» فَقَالَا: يَا رَسُولَ اللهِ , صَلَّيْنَا فِي رِحَالِنَا , قَالَ: " فَلَا تَفْعَلَا , إِذَا صَلَّيْتُمَا فِي رِحَالِكُمَا , ثُمَّ أَتَيْتُمَا النَّاسَ وَهُمْ يُصَلُّونَ , فَصَلِّيَا مَعَهُمْ , فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ أَوْ قَالَ: تَطَوُّعٌ " قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: ذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذِهِ الْآثَارِ , فَقَالُوا: إِذَا صَلَّى الرَّجُلُ فِي بَيْتِهِ صَلَاةً مَكْتُوبَةً , أَيَّ صَلَاةٍ كَانَتْ , ثُمَّ جَاءَ الْمَسْجِدَ فَوَجَدَ النَّاسَ وَهُمْ يُصَلُّونَ , صَلَّاهَا مَعَهُمْ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: كُلُّ صَلَاةٍ يَجُوزُ التَّطَوُّعُ بَعْدَهَا , فَلَا بَأْسَ أَنْ يُفْعَلَ فِيهَا مَا ذَكَرْتُمْ مِنْ صَلَاتِهِ إِيَّاهَا مَعَ الْإِمَامِ , عَلَى أَنَّهَا نَافِلَةٌ لَهُ , غَيْرَ الْمَغْرِبِ , فَإِنَّهُمْ كَرِهُوا أَنْ تُعَادَ ; لِأَنَّهَا إِنْ أُعِيدَتْ , كَانَتْ تَطَوُّعًا , وَالتَّطَوُّعُ لَا يَكُونُ وِتْرًا , إِنَّمَا يَكُونُ شَفْعًا. وَكُلُّ صَلَاةٍ لَا يَجُوزُ التَّطَوُّعُ بَعْدَهَا , فَلَا يَنْبَغِي أَنْ يُعِيدَهَا مَعَ الْإِمَامِ , لِأَنَّهَا تَكُونُ تَطَوُّعًا فِي وَقْتٍ لَا يَجُوزُ فِيهِ التَّطَوُّعُ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ بِمَا قَدْ تَوَاتَرَتْ بِهِ الرِّوَايَاتُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فِي نَهْيِهِ عَنِ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ , وَبَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ. وَقَدْ ذَكَرْنَا ذَلِكَ بِأَسَانِيدِهِ فِي غَيْرِ هَذَا الْمَوْضِعِ مِنْ كِتَابِنَا هَذَا , فَذَلِكَ عِنْدَهُمْ نَاسِخٌ لِمَا رَوَيْنَاهُ فِي أَوَّلِ هَذَا الْبَابِ. وَقَالُوا: إِنَّهُ لَمَّا بَيَّنَ فِي بَعْضِ الْأَحَادِيثِ الْأُوَلِ , فَقَالَ: " فَصَلُّوهَا فَإِنَّهَا لَكُمْ نَافِلَةٌ أَوْ قَالَ: تَطَوُّعٌ «وَنَهَى عَنِ التَّطَوُّعِ فِي هَذِهِ الْآثَارِ الْأُخَرِ , وَأُجْمِعَ عَلَى اسْتِعْمَالِهَا كَانَ ذَلِكَ دَاخِلًا فِيهَا , نَاسِخًا لِمَا قَدْ تَقَدَّمَهُ مِمَّا قَدْ خَالَفَهُ. وَمِنْ تِلْكَ الْآثَارِ مَا لَمْ يَقُلْ فِيهِ» فَإِنَّهَا لَكُمْ تَطَوُّعٌ " فَذَلِكَ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ مَعْنَاهُ مَعْنَى هَذَا الَّذِي بَيَّنَ فِيهِ فَقَالَ: «فَإِنَّهَا لَكُمْ تَطَوُّعٌ» وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ , كَانَ فِي وَقْتٍ كَانُوا يُصَلُّونَ فِيهِ الْفَرِيضَةَ مَرَّتَيْنِ فَيَكُونَانِ جَمِيعًا فَرِيضَتَيْنِ , ثُمَّ نُهُوا عَنْ ذَلِكَ. فَعَلَى أَيِّ الْأَمْرَيْنِ كَانَ , فَإِنَّهُ قَدْ نَسَخَهُ مَا قَدْ ذَكَرْنَا. وَمِمَّنْ قَالَ: بِأَنَّهُ لَا يُعَادُ مِنَ الصَّلَوَاتِ إِلَّا الظُّهْرُ , وَالْعِشَاءُ الْآخِرَةُ , أَبُو حَنِيفَةَ , وَأَبُو يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٌ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. وَقَدْ رُوِيَ فِي ذَلِكَ , عَنْ جَمَاعَةٍ مِنَ الْمُتَقَدِّمِينَ
