শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২০৫৬
৪৮. তারাবীহ (কিয়ামে রামাযান) ঘরে পড়া উত্তম না ইমামের সাথে ?
২০৫৬। ইবরাহীম ইবন মারযূক (রাহঃ) ..... আবু যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে আমি রামাযানের সিয়াম পালন করেছি। তিনি রামাযান মাসের সাত দিন বাকি থাকা পর্যন্ত আমাদের নিয়ে কিয়াম করেননি। অবশেষে শেষের দিক থেকে সপ্তম রাতে তিনি বেরিয়ে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এমন কি রাতের এক তৃতীয়াংশ এতে অতিবাহিত হয়ে গেল। এরপর আর ষষ্ঠ রাতে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন না। পঞ্চম রাতে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অর্ধেক রাত অতিবাহিত হয়ে গেল। আমরা তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের রাতের অবশিষ্ট অংশও যদি নফল আদায় করে অতিবাহিত করে দিতেন। তিনি বললেনঃ কোন সম্প্রদায় যখন ইমামের সালাত শেষ করা পর্যন্ত তাঁর সাথে সালাত আদায় করে তাদের জন্য সারারাত কিয়াম এর সালাত আদায়ের সাওয়াব লেখা হয়। তারপর তিনি (শেষের দিক থেকে) চতুর্থ রাতে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন না। তৃতীয় রাতে তিনি তাঁর পরিবার পরিজন নিয়ে বেরিয়ে এসে আমাদের নিয়ে এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন যে, আমরা 'ফালাহ' ছুটে যাওয়ার আশংকা বোধ করলাম। রাবী বলেন, আমি আবু যার (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, 'ফালাহ' কি? উত্তরে তিনি বললেন, সাহরী। আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ একদল আলিম এ মত গ্রহণ করেছেন যে, রামাযান মাসে গৃহ অপেক্ষা ইমামের সাথে কিয়াম (তারাবীহ) করা উত্তম। এ প্রসঙ্গে তাঁর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর এ উক্তি দ্বারা প্রমাণ পেশ করেন, যে ব্যক্তি ইমামের (সালাম) শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সাথে কিয়াম করবে তার জন্য তা অবশিষ্ট রাতের ইবাদত হিসাবে লেখা হবে।
পক্ষান্তরে অপরাপর আলিমগণ এ বিষয়ে তাঁদের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেনঃ বরং ইমামের সাথে সালাত আদায় করা অপেক্ষা ঘরে পড়াই শ্রেয়। তাঁদের স্বপক্ষে প্রমাণ হলো, যেমনিভাবে পূর্বোক্ত মতের অনুসারীগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এ উক্তি দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন, “ইমামের সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে তাঁর সাথে কিয়াম করবে (সালাত পড়বে) তার জন্য তা অবশিষ্ট রাতের ইবাদত হিসাবে লেখা হবে"। এমনিভাবে যায়দ ইবন সাবিত (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ হাদীসও বর্ণিত হয়েছে, ফরয ব্যতীত ব্যক্তির অন্য সালাত (নফল) মসজিদ অপেক্ষা ঘরে আদায় করা উত্তম। এটা তখনকার কথা, যখন সাহাবীণণকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রামাযানের এক রাতে কিয়াম করলেন। তারপর সাহাবীগণ ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁদেরকে নিয়ে কিয়াম করেন (সালাত পড়েন)।
এই পরিস্থিতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁদের লক্ষ্য করে উপরোক্ত কথা বললেন। এতে তিনি তাঁদের একথা জানিয়ে দিলেন যে, ঘরের মধ্যে তাঁদের একাকী সালাত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে তাঁর মসজিদে পড়া অপেক্ষা শ্রেয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া অন্য কারো সাথে তাঁর মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে পড়ার চাইতে ঘরে তাদের সেই পালাত শ্রেষ্ঠত্বের অধিক হকদার। সুতরাং উপরোক্ত দুটি হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা এ বিষয়টিকে অবশ্যই প্রমাণ করবে যে, আবু যার (রাযিঃ)-এর হাদীসের সঠিক অর্থ হলো ইমামের সাথে কিয়াম করা তার জন্য অবশিষ্ট রাতের ইবাদত বলে লিখা হবে। আর যায়দ ইবন সাবিত (রাযিঃ) এর হাদীসের মর্ম হলো যে, পরে আদায়কৃত সালাত মসজিদের সালাত অপেক্ষা উত্তম। এভাবে দুটি হাদীসের মধ্যে কোন প্রকার বিরোধ থাকে না।
بَابُ الْقِيَامِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ هَلْ هُوَ فِي الْمَنَازِلِ أَفْضَلُ أَمْ مَعَ الْإِمَامِ؟
2056 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَرْزُوقٍ , قَالَ: ثنا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ , قَالَ: ثنا وَهْبٌ , قَالَ: ثنا دَاوُدُ وَهُوَ ابْنُ أَبِي هِنْدٍ , عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ الْحَضْرَمِيِّ عَنْ أَبِي ذَرٍّ , قَالَ: صُمْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَمَضَانَ , وَلَمْ يَقُمْ بِنَا , حَتَّى بَقِيَ سَبْعٌ مِنَ الشَّهْرِ. فَلَمَّا كَانَتِ اللَّيْلَةُ السَّابِعَةُ خَرَجَ فَصَلَّى بِنَا , حَتَّى مَضَى ثُلُثُ اللَّيْلِ , ثُمَّ لَمْ يُصَلِّ بِنَا السَّادِسَةَ , حَتَّى خَرَجَ لَيْلَةَ الْخَامِسَةِ , فَصَلَّى بِنَا حَتَّى مَضَى شَطْرُ اللَّيْلِ. فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ , لَوْ نَفَّلْتنَا؟ فَقَالَ: «إِنَّ الْقَوْمَ إِذَا صَلَّوْا مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ , كُتِبَ لَهُمْ قِيَامُ تِلْكَ اللَّيْلَةِ» ثُمَّ لَمْ يُصَلِّ بِنَا الرَّابِعَةَ حَتَّى إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ الثَّالِثَةِ , خَرَجَ وَخَرَجَ بِأَهْلِهِ , فَصَلَّى بِنَا حَتَّى خَشِينَا أَنْ يَفُوتَنَا الْفَلَاحُ , قُلْتُ: وَمَا الْفَلَاحُ. قَالَ: «السُّحُورُ» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ الْقِيَامَ مَعَ الْإِمَامِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ , أَفْضَلُ مِنْهُ فِي الْمَنَازِلِ , وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ بِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ , كُتِبَ لَهُ قُنُوتُ بَقِيَّةِ لَيْلَتِهِ» وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: بَلْ صَلَاتُهُ فِي بَيْتِهِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الْإِمَامِ. وَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لَهُمْ فِي ذَلِكَ , أَنَّ مَا احْتَجُّوا بِهِ مِنْ قَوْلِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قُنُوتُ بَقِيَّةِ لَيْلَتِهِ» كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَلَكِنَّهُ قَدْ رُوِيَ عَنْهُ أَيْضًا أَنَّهُ قَالَ: «خَيْرُ صَلَاةِ الْمَرْءِ فِي بَيْتِهِ , إِلَّا الْمَكْتُوبَةَ» , فِي حَدِيثِ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ. وَذَلِكَ لَمَّا كَانَ قَامَ بِهِمْ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ فَأَرَادُوا أَنْ يَقُومَ بِهِمْ بَعْدَ ذَلِكَ , فَقَالَ لَهُمْ هَذَا الْقَوْلَ. فَأَعْلَمَهُمْ بِهِ أَنَّ صَلَاتَهُمْ فِي مَنَازِلِهِمْ وُحْدَانًا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهِمْ مَعَهُ فِي مَسْجِدِهِ , فَصَلَاتُهُمْ تِلْكَ فِي مَنَازِلِهِمْ أَحْرَى أَنْ يَكُونَ أَفْضَلَ مِنَ الصَّلَاةِ مَعَ غَيْرِهِ فِي غَيْرِ مَسْجِدِهِ. فَتَصْحِيحُ هَذَيْنِ الْأَثَرَيْنِ , يُوجِبُ أَنَّ حَدِيثَ أَبِي ذَرٍّ هُوَ عَلَى أَنْ يُكْتَبَ لَهُ بِالْقِيَامِ مَعَ الْإِمَامِ , قُنُوتُ بَقِيَّةِ لَيْلَتِهِ. وَحَدِيثُ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ , يُوجِبُ أَنَّ مَا فَعَلَ فِي بَيْتِهِ هُوَ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ , حَتَّى لَا يَتَضَادَّ هَذَانِ الْأَثَرَانِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ২০৫৬ | মুসলিম বাংলা