শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৪৮
সূর্যগ্রহণের সালাত কিরূপ
১৯৪৮। ইব্‌ন আবু দাউদ (রাহঃ) ও ফাহাদ (রাহঃ) ….. কাবীসা হিলালী (রাযিঃ) কিংবা অন্য কারো বরাতে বণর্না করেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (স) –এর যামানায় সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, তখন তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ঘর থেকে কাপড় টেনে-হেঁচড়ে বের হলেন। আমি সেদিন তাঁর সাথে মদিনায় ছিলাম। তিনি দু’রাক’আত দীর্ঘ সালাত পড়লেন। সালাত শেষ করলেন তখন সূর্য পুরোপুরি আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেছে। তারপর তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা এসব নিদর্শনাবলী দ্বারা (মানুষকে) ভয় দেখান, সাবধান করে দেন। অতএব তোমরা যখন তা দেখবে তখন তোমরা এভাবে সালাত পড়বে, যেভাবে তোমরা সর্বশেষ ফরয সালাত আদায় করেছ।

অতএব দেখা গেল এই অনুচ্ছেদের অধিকাংশ হাদীস এ শেষোক্ত মতের অনুকূল । তাই আমরা মনস্থ করেছি প্রথমোক্ত রিওয়ায়াত সমূহের মর্ম পর্যালোচনা করব ।
বস্তুত নুমান ইব্‌ন বাশীর (রাযিঃ) তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (স) দু’রাক’আত আদায় করতেন, সালাম ফিরাতেন এবং দুআ করতেন । এতে সম্ভাবনা রয়েছে যে, নুমান ইব্‌ন বাশীর (রাযিঃ) প্রতিটি রুকূর পর সিজ্‌দার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্‌ (স) থেকে জেনেছেন। অন্য যাঁরা তাঁর সমর্থক যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (স) দু’রুকূ বা ততোধিক করেছেন তাঁরাও তাই জেনেছেন । যারা বলেছেন রাসূলুল্লাহ্‌ (স) সিজদার পুর্বে দুটি অথবা ততোধিক রুকূ করেছেন তাঁরাও সরাসরি রাসূলুল্লাহ্‌ (স) থেকে বিষয়টি অবহিত হননি, কারণ সালাতটি ছিল দীর্ঘ।
অতএব এসব হাদীসের মুকাবিলায় নুমান ইব্‌ন বাশীর (রাযিঃ) –এর হাদীসকে বিশুদ্ধ সাব্যস্ত করত হলে বলতে হবে রাসূলুল্লাহ্‌ (স) সেরূপ সালাতই আদায় করেছেন যেরূপ বলেছেন নুমান ইব্‌ন বাশীর (রাযিঃ) । কারণ আলী (রাযিঃ) ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) ও আয়িশা (রাযিঃ) –এর রিওয়ায়াত-নূমান (রাযিঃ) –এর হাদীসের মর্মের অন্তর্ভুক্ত । আর নূমান (রাযিঃ) –এর হাদীসে অতিরিক্ত কিছু বিষয় আছে । অতএব বিরোধী হাদীসগুলো অপেক্ষা এটি-ই উত্তম ও প্রাধান্য পাওয়ার অধিক যোগ্য । তাছাড়া কাবীসা (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (স) –এর যে উক্তি উদ্দৃত করেছেন সেটিও এর সহায়ক। রাসূলুল্লাহ্‌ (স) বলেছেনঃ যখন এরূপ (গ্রহণ) হবে তখন তোমরা এমনিভাবে সালাত পড় যেমনিভাবে সর্বশেষ ফরয সালাত পড়ে থাক । বস্তুত এতে বলা হয়েছেঃ ফরয সালাত যেভাবে আদায় করা হয় সূর্যগ্রহণের সালাতও সেভাবে আদায় করতে হবে।
এবার আমরা দৃষ্টি ফিরাই সেসব লোকের উক্তির দিকে যারা সূর্যগ্রহণের সালাতের কোন সময় বা স্বরূপ নির্ধারণ করেননি ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ)-এর হাদীসের কারণে। পক্ষান্তরে কাবীসা (রাযিঃ) –এর হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ (স) বলেছেনঃ তোমরা এমনিভাবে সালাত পড় যেমনিভাবে তোমরা সর্বশেষ ফরয সালাত পড়ে থাক । এ হাদীসটি এর প্রমাণ যে, সূর্যগ্রহণের সালাতের সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে । এ সালাতের ওয়াক্তও নির্ধারিত (রাক’আত ) সংখ্যা ও সুনির্দিষ্ট । অতএব যারা এ হাদীসের বিরোধিতা করেছেন তাদের মাযহাব বাতিল বলে প্রমাণিত হল।
অবশিষ্ট রইল রাসূলুল্লাহ্‌ (স) –এর সেই হাদীস যাতে তিনি বলেছেনঃ যখন তোমরা এরূপ (সূর্যগ্রহণ) দেখবে তখন সূর্যপূর্ণ পরিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সালাত পড়বে। এতে তো প্রমাণিত হয় সূর্যপূর্ণ আলোকোজ্জ্বল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সালাত ছেড়ে আসা উচিত হবে না ।
যাঁরা এরূপ উক্তি করেন তাঁদেরকে প্রতি উত্তরে বলা হবে যে, কোন কোন হাদীসে বলা হয়েছে, “ তোমরা সালাত পড় এবং দুআ কর যতক্ষণ না সূর্য পূর্ণ পরিষ্কার হয়ে যায়”।
1948 - حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ، وَفَهْدٌ، قَالَا: ثنا ابْنُ مَعْبَدٍ، قَالَ: ثنا عُبَيْدِ اللهِ بْنُ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلَابَةَ، عَنْ قَبِيصَةَ الْهِلَالِيِّ، أَوْ غَيْرِهِ: أَنَّ الشَّمْسَ، كَسَفَتْ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَزِعًا يَجُرُّ ثَوْبَهُ وَأَنَا مَعَهُ يَوْمَئِذٍ بِالْمَدِينَةِ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ أَطَالَهُمَا ثُمَّ انْصَرَفَ وَتَجَلَّتِ الشَّمْسُ فَقَالَ: «إِنَّمَا هَذِهِ الْآيَاتُ يُخَوِّفُ اللهُ بِهَا فَإِذَا رَأَيْتُمُوهَا فَصَلُّوا كَأَحْدَثِ صَلَاةٍ صَلَّيْتُمُوهَا مِنَ الْمَكْتُوبَةِ» فَكَانَ أَكْثَرُ الْآثَارِ فِي هَذَا الْبَابِ هِيَ الْمُوَافَقَةَ لِهَذَا الْمَذْهَبِ الْأَخِيرِ فَأَرَدْنَا أَنْ نَنْظُرَ فِي مَعَانِي الْأَقْوَالِ الْأُوَلِ فَكَانَ النُّعْمَانُ بْنُ بَشِيرٍ قَدْ أَخْبَرَ فِي حَدِيثِهِ «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ وَيُسَلِّمُ وَيَسْأَلُ» فَاحْتَمَلَ أَنْ يَكُونَ النُّعْمَانُ عَلِمَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السُّجُودَ بَعْدَ كُلِّ رَكْعَةٍ وَعَلِمَهُ مَنْ وَافَقَهُ عَلَى أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ وَلَمْ يُعْلِمُ الَّذِينَ قَالُوا: رَكَعَ رَكْعَتَيْنِ أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ قَبْلَ أَنْ يَسْجُدَ لَمَّا كَانَ مِنْ طُولِ صَلَاتِهِ فَتَصْحِيحُ حَدِيثِ النُّعْمَانِ هَذَا مَعَ هَذِهِ الْآثَارِ هُوَ أَنْ يَجْعَلَ صَلَاتَهُ كَمَا قَالَ النُّعْمَانُ لِأَنَّ مَا رَوَى عَلِيٌّ وَابْنُ عَبَّاسٍ وَعَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ يَدْخُلُ فِي ذَلِكَ وَيَزِيدُ عَلَيْهِ حَدِيثُ النُّعْمَانِ , فَهُوَ أَوْلَى , مِنْ كُلِّ مَا خَالَفَهُمْ. ثُمَّ قَدْ شَدَّ ذَلِكَ مَا حَكَاهُ قَبِيصَةُ مِنْ قَوْلِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَصَلُّوا كَأَحْدَثِ صَلَاةٍ صَلَّيْتُمُوهَا مِنَ الْمَكْتُوبَةِ فَأَخْبَرَنَا إِنَّمَا يُصَلِّي فِي الْكُسُوفِ كَمَا يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ , ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى قَوْلِ الَّذِينَ لَمْ يُوَقِّتُوا فِي ذَلِكَ شَيْئًا لِمَا رَوَوْهُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , فَكَانَ قَوْلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَدِيثِ قَبِيصَةَ «فَصَلُّوا كَأَحْدَثِ صَلَاةٍ صَلَّيْتُمُوهَا مِنَ الْمَكْتُوبَةِ» دَلِيلًا عَلَى أَنَّ الصَّلَاةَ فِي ذَلِكَ مُؤَقَّتَةٌ مَعْلُومَةٌ لَهَا وَقْتٌ مَعْلُومٌ , وَعَدَدٌ مَعْلُومٌ , فَبَطَلَ بِذَلِكَ مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ الْمُخَالِفُونَ لِهَذَا الْحَدِيثِ. فَأَمَّا قَوْلُهُمْ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَصَلُّوا حَتَّى تَنْجَلِيَ» فَقَالُوا فَفِي هَذَا دَلِيلٌ عَلَى أَنَّهُ لَا يَنْبَغِي أَنْ يَقْطَعَ الصَّلَاةَ إِذَا كَانَ ذَلِكَ حَتَّى تَنْجَلِيَ. فَيُقَالُ لَهُمْ: فَقَدْ قَالَ فِي بَعْضِ هَذِهِ الْأَحَادِيثِ «فَصَلُّوا وَادْعُوا حَتَّى تَنْكَشِفَ»
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান