আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৫৮২
আন্তর্জাতিক নং: ৪৯৪২
সূরা গাশিয়া
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ (ক্লিষ্ট-ক্লান্ত) বলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে।
মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, عَيْنٍ اٰنِيَةٍ অর্থ টগবগে গরম পানিতে কানায় কানায় ভর্তি ঝর্ণাধারা। حَمِيْمٍ اٰنٍ চরম ফুটন্ত পানি। لَا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً অর্থ সেথায় তারা গালি-গালাজ শুনবে না। الضَّرِيْعَ এক প্রকার কন্টকময় গুল্ম। (তা যখন সবুজ থাকে তখন) তাকে الشبرق বলা হয়, আর যখন শুকিয়ে যায়, তখন হিজাযবাসীরা একেই الضَّرِيْعُ বলে। এ এক প্রকার বিষাক্ত আগাছা। بِمُسَيْطِرٍ কর্মবিধায়ক। শব্দটি ص ও س উভয় বর্ণ দিয়েই পড়া হয়।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, إِيَابَهُمْ অর্থ তাদের প্রত্যাবর্তনের স্থান।
সূরা ফাজর
মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, الْوَتْرُ মানে বেজোড়। এর দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে বোঝানো হয়েছে। إِرَمَذَاتِ الْعِمَادِ বলে প্রাচীন এক কওমকে বোঝানো হয়েছে। وَالْعِمَادُ অর্থ খুঁটি ও স্তম্ভের মালিক, যারা স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে না। سَوْطَ عَذَابٍ যাদেরকে তা দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। أَكْلًا لَّمًّا সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করা। جَمًّا অর্থ অতিশয়।
মুহাজিদ (রাহঃ) বলেন, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই হল জোড়ায় জোড়ায়। সুতরাং আসমানও জোড়া বাঁধা; তবে একমাত্র আল্লাহ্ তাআলাই হলেন বেজোড়।
মুজাহিদ (রাহঃ) ব্যতীত অন্য সকলেই বলেছেন, আরবরা সর্বপ্রকার শাস্তির ক্ষেত্রে سَوْطَ عَذَابٍ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। যে কোন শাস্তি سَوْطَ عَذَابٍ এর অন্তর্ভুক্ত। لَبِالْمِرْصَادِ অর্থ তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। تَحَاضُّوْنَ তোমরা হেফাজত করে থাক। تحضون অর্থ তোমরা খাদ্য দান করতে আদেশ করে থাক। الْمُطْمَئِنَّةُ অর্থ সাওয়াবকে সত্য বলে বিশ্বাসকারী।
হাসান (রাযিঃ) বলেন, يٓٓأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ দ্বারা এমন আত্মাকে বোঝানো হয়েছে, যে আত্মাকে আল্লাহ্ মৃত্যুদানের ইচ্ছে করলে সে আল্লাহর প্রতি এবং আল্লাহ্ও তার প্রতি সম্পূর্ণভাবে প্রশান্ত থাকেন এবং সেও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে আর আল্লাহও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। এরপর আল্লাহ্ তার রূহ কবয করার আদেশ দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে তাকে তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।
হাসান (রাহঃ) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন جَابُوْا অর্থ তারা ছিদ্র করেছে। جيب القميص থেকে এ শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ হচ্ছে, জামার পকেট কাটা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়ে থাকে يَجُوْبُ الْفَلَاةَ সে মাঠ অতিক্রম করছে। لَمَّا لَمَمْتُهُ أَجْمَعَ বলা হলে এর অর্থ হবে- আমি এর শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি।
সূরা বালাদ
মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, بِهٰذَا الْبَلَدِ বলে মক্কা্কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ একানে যুদ্ধ কররে অন্য মানুষের উপর যে গুনাহ হবে, তোমার তা হবে না। وَوَالِدٍ আদম (আলাইহিস সালাম)। وَمَا وَلَدَ যা দসে জন্ম দেয়। لِبَدًا অর্থ প্রচুর। وَ النَّجْدَيْنِ ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ। مَسْغَبَةٍ অর্থ ক্ষুধা। مَتْرَبَةٍ ধূলায় লুন্ঠিত। বলা হয় فَلَااقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ সে দুনিয়ার বন্ধুর গিরিপথ অবলম্বন করেনি। এরপর আল্লাহর তা‘আলা এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন, তুমি কি জান বন্ধুর গিরিপথ কী? তা হচ্ছে দাস মুক্তি, অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার্য দান।
সূরা শামস
মুহাজিদ (রাহঃ) বলেন, بِطَغْوَاهَا অবাধ্যতাবশত বা নাফরমানীর কারণে। وَلَايَخَافُ عُقْبَاهَا কারো পরিণামের জন্য আল্লাহর আশঙ্কা করবার কিছু নেই।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ (ক্লিষ্ট-ক্লান্ত) বলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে।
মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, عَيْنٍ اٰنِيَةٍ অর্থ টগবগে গরম পানিতে কানায় কানায় ভর্তি ঝর্ণাধারা। حَمِيْمٍ اٰنٍ চরম ফুটন্ত পানি। لَا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً অর্থ সেথায় তারা গালি-গালাজ শুনবে না। الضَّرِيْعَ এক প্রকার কন্টকময় গুল্ম। (তা যখন সবুজ থাকে তখন) তাকে الشبرق বলা হয়, আর যখন শুকিয়ে যায়, তখন হিজাযবাসীরা একেই الضَّرِيْعُ বলে। এ এক প্রকার বিষাক্ত আগাছা। بِمُسَيْطِرٍ কর্মবিধায়ক। শব্দটি ص ও س উভয় বর্ণ দিয়েই পড়া হয়।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, إِيَابَهُمْ অর্থ তাদের প্রত্যাবর্তনের স্থান।
সূরা ফাজর
মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, الْوَتْرُ মানে বেজোড়। এর দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে বোঝানো হয়েছে। إِرَمَذَاتِ الْعِمَادِ বলে প্রাচীন এক কওমকে বোঝানো হয়েছে। وَالْعِمَادُ অর্থ খুঁটি ও স্তম্ভের মালিক, যারা স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে না। سَوْطَ عَذَابٍ যাদেরকে তা দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। أَكْلًا لَّمًّا সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করা। جَمًّا অর্থ অতিশয়।
মুহাজিদ (রাহঃ) বলেন, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই হল জোড়ায় জোড়ায়। সুতরাং আসমানও জোড়া বাঁধা; তবে একমাত্র আল্লাহ্ তাআলাই হলেন বেজোড়।
মুজাহিদ (রাহঃ) ব্যতীত অন্য সকলেই বলেছেন, আরবরা সর্বপ্রকার শাস্তির ক্ষেত্রে سَوْطَ عَذَابٍ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। যে কোন শাস্তি سَوْطَ عَذَابٍ এর অন্তর্ভুক্ত। لَبِالْمِرْصَادِ অর্থ তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। تَحَاضُّوْنَ তোমরা হেফাজত করে থাক। تحضون অর্থ তোমরা খাদ্য দান করতে আদেশ করে থাক। الْمُطْمَئِنَّةُ অর্থ সাওয়াবকে সত্য বলে বিশ্বাসকারী।
হাসান (রাযিঃ) বলেন, يٓٓأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ দ্বারা এমন আত্মাকে বোঝানো হয়েছে, যে আত্মাকে আল্লাহ্ মৃত্যুদানের ইচ্ছে করলে সে আল্লাহর প্রতি এবং আল্লাহ্ও তার প্রতি সম্পূর্ণভাবে প্রশান্ত থাকেন এবং সেও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে আর আল্লাহও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। এরপর আল্লাহ্ তার রূহ কবয করার আদেশ দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে তাকে তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।
হাসান (রাহঃ) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন جَابُوْا অর্থ তারা ছিদ্র করেছে। جيب القميص থেকে এ শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ হচ্ছে, জামার পকেট কাটা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়ে থাকে يَجُوْبُ الْفَلَاةَ সে মাঠ অতিক্রম করছে। لَمَّا لَمَمْتُهُ أَجْمَعَ বলা হলে এর অর্থ হবে- আমি এর শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি।
সূরা বালাদ
মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, بِهٰذَا الْبَلَدِ বলে মক্কা্কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ একানে যুদ্ধ কররে অন্য মানুষের উপর যে গুনাহ হবে, তোমার তা হবে না। وَوَالِدٍ আদম (আলাইহিস সালাম)। وَمَا وَلَدَ যা দসে জন্ম দেয়। لِبَدًا অর্থ প্রচুর। وَ النَّجْدَيْنِ ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ। مَسْغَبَةٍ অর্থ ক্ষুধা। مَتْرَبَةٍ ধূলায় লুন্ঠিত। বলা হয় فَلَااقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ সে দুনিয়ার বন্ধুর গিরিপথ অবলম্বন করেনি। এরপর আল্লাহর তা‘আলা এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন, তুমি কি জান বন্ধুর গিরিপথ কী? তা হচ্ছে দাস মুক্তি, অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার্য দান।
সূরা শামস
মুহাজিদ (রাহঃ) বলেন, بِطَغْوَاهَا অবাধ্যতাবশত বা নাফরমানীর কারণে। وَلَايَخَافُ عُقْبَاهَا কারো পরিণামের জন্য আল্লাহর আশঙ্কা করবার কিছু নেই।
৪৫৮২। মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে যাম‘আ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (ﷺ) কে খুতবা দিতে শুনেছেন, খুতবায় তিনি কাওমে সামূদের প্রতি প্রেরিত উষ্ট্রী ও তার পা কাটার কথা উল্লেখ করলেন। তারপর রাসূল (ﷺ) إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا এর ব্যাখ্যায় বললেন, ঐ উষ্ট্রীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগা শক্তিশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠলো যে, সে সমাজের মধ্যে আবু যাম’আর মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এই খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারপিট করে, কিন্তু ঐ দিদের শেষেই সে আবার তার সাথে এক বিছানায় গিয়ে মিলিত হয়। এরপর তিনি বায়ু নিঃসরণের কারণে হাসি-ঠাট্রা সম্পর্কে বললেন, তোমাদের কেউ নিজেও সে কাজটির উপর হাসে যে কাজটি সে করে।
(অন্য সনদে) আবু মুআবিয়া (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে আবু যাম’আ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যুবাইর ইবনে আওয়ামের চাচা আবু যাম’আর মত।
(অন্য সনদে) আবু মুআবিয়া (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে আবু যাম’আ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যুবাইর ইবনে আওয়ামের চাচা আবু যাম’আর মত।
سورة هل أتاك حديث الغاشية وقال ابن عباس: {عاملة ناصبة} [الغاشية: 3]: «النصارى» وقال مجاهد: {عين آنية} [الغاشية: 5]: «بلغ إناها، وحان شربها»، {حميم آن} [الرحمن: 44]: «بلغ إناه»، {لا تسمع فيها لاغية} [الغاشية: 11]: " شتما، ويقال: الضريع: نبت يقال له الشبرق، يسميه أهل الحجاز: الضريع إذا يبس، وهو سم، {بمسيطر}: بمسلط، ويقرأ بالصاد والسين " وقال ابن عباس: {إيابهم} [الغاشية: 25]: «مرجعهم»
سورة والفجر وقال مجاهد: {الوتر} [الفجر: 3]: «الله»، {إرم ذات العماد} [الفجر: 7]: " يعني القديمة، والعماد: أهل عمود لا يقيمون "، {سوط عذاب} [الفجر: 13]: «الذي عذبوا به»، {أكلا لما} [الفجر: 19]: «السف»، و {جما} [الفجر: 20]: «الكثير» وقال مجاهد: " كل شيء خلقه فهو شفع، السماء شفع، والوتر: الله تبارك وتعالى " وقال غيره: {سوط عذاب} [الفجر: 13]: «كلمة تقولها العرب لكل نوع من العذاب يدخل فيه السوط»، {لبالمرصاد} [الفجر: 14]: «إليه المصير»، {تحاضون} [الفجر: 18]: «تحافظون»، و (تحضون): «تأمرون بإطعامه»، {المطمئنة} [الفجر: 27]: «المصدقة بالثواب» وقال الحسن: {يا أيتها النفس المطمئنة} [الفجر: 27]: «إذا أراد الله عز وجل قبضها اطمأنت إلى الله واطمأن الله إليها، ورضيت عن الله ورضي الله عنها، فأمر بقبض روحها، وأدخلها الله الجنة، وجعله من عباده الصالحين» وقال غيره: {جابوا} [الفجر: 9]: " نقبوا، من جيب القميص: قطع له جيب، يجوب الفلاة يقطعها، {لما} [البقرة: 41]: لممته أجمع أتيت على آخره "
سورة لا أقسم وقال مجاهد: {وأنت حل بهذا البلد} [البلد: 2]: «بمكة ليس عليك ما على الناس فيه من الإثم»، {ووالد} [البلد: 3]: «آدم»، {وما ولد} [البلد: 3]: «لبدا كثيرا»، و {النجدين} [البلد: 10]: «الخير والشر»، {مسغبة} [البلد: 14]: «مجاعة متربة الساقط في التراب»، يقال: {فلا اقتحم العقبة} [البلد: 11]: «فلم يقتحم العقبة في الدنيا، ثم فسر العقبة»، فقال: {وما أدراك ما العقبة، فك رقبة، أو إطعام في يوم ذي مسغبة} [البلد: 13]
سورة والشمس وضحاها وقال مجاهد: {بطغواها} [الشمس: 11]: «بمعاصيها»، {ولا يخاف عقباها} [الشمس: 15]: «عقبى أحد»
سورة والفجر وقال مجاهد: {الوتر} [الفجر: 3]: «الله»، {إرم ذات العماد} [الفجر: 7]: " يعني القديمة، والعماد: أهل عمود لا يقيمون "، {سوط عذاب} [الفجر: 13]: «الذي عذبوا به»، {أكلا لما} [الفجر: 19]: «السف»، و {جما} [الفجر: 20]: «الكثير» وقال مجاهد: " كل شيء خلقه فهو شفع، السماء شفع، والوتر: الله تبارك وتعالى " وقال غيره: {سوط عذاب} [الفجر: 13]: «كلمة تقولها العرب لكل نوع من العذاب يدخل فيه السوط»، {لبالمرصاد} [الفجر: 14]: «إليه المصير»، {تحاضون} [الفجر: 18]: «تحافظون»، و (تحضون): «تأمرون بإطعامه»، {المطمئنة} [الفجر: 27]: «المصدقة بالثواب» وقال الحسن: {يا أيتها النفس المطمئنة} [الفجر: 27]: «إذا أراد الله عز وجل قبضها اطمأنت إلى الله واطمأن الله إليها، ورضيت عن الله ورضي الله عنها، فأمر بقبض روحها، وأدخلها الله الجنة، وجعله من عباده الصالحين» وقال غيره: {جابوا} [الفجر: 9]: " نقبوا، من جيب القميص: قطع له جيب، يجوب الفلاة يقطعها، {لما} [البقرة: 41]: لممته أجمع أتيت على آخره "
سورة لا أقسم وقال مجاهد: {وأنت حل بهذا البلد} [البلد: 2]: «بمكة ليس عليك ما على الناس فيه من الإثم»، {ووالد} [البلد: 3]: «آدم»، {وما ولد} [البلد: 3]: «لبدا كثيرا»، و {النجدين} [البلد: 10]: «الخير والشر»، {مسغبة} [البلد: 14]: «مجاعة متربة الساقط في التراب»، يقال: {فلا اقتحم العقبة} [البلد: 11]: «فلم يقتحم العقبة في الدنيا، ثم فسر العقبة»، فقال: {وما أدراك ما العقبة، فك رقبة، أو إطعام في يوم ذي مسغبة} [البلد: 13]
سورة والشمس وضحاها وقال مجاهد: {بطغواها} [الشمس: 11]: «بمعاصيها»، {ولا يخاف عقباها} [الشمس: 15]: «عقبى أحد»
4942 - حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَمْعَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، وَذَكَرَ النَّاقَةَ وَالَّذِي عَقَرَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " {إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا} [الشمس: 12] انْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزِيزٌ عَارِمٌ، مَنِيعٌ فِي رَهْطِهِ، مِثْلُ أَبِي زَمْعَةَ "
وَذَكَرَ النِّسَاءَ، فَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ، فَيَجْلِدُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ العَبْدِ، فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ [ص:170] يَوْمِهِ»
ثُمَّ وَعَظَهُمْ فِي ضَحِكِهِمْ مِنَ الضَّرْطَةِ، وَقَالَ: «لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ» وَقَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ: حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ، قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلُ أَبِي زَمْعَةَ عَمِّ الزُّبَيْرِ بْنِ العَوَّامِ
وَذَكَرَ النِّسَاءَ، فَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ، فَيَجْلِدُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ العَبْدِ، فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ [ص:170] يَوْمِهِ»
ثُمَّ وَعَظَهُمْ فِي ضَحِكِهِمْ مِنَ الضَّرْطَةِ، وَقَالَ: «لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ» وَقَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ: حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ، قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلُ أَبِي زَمْعَةَ عَمِّ الزُّبَيْرِ بْنِ العَوَّامِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন যাম'আহ রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনও এক ভাষণের অংশবিশেষ এ বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। এতে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ আছে। তার মধ্যে প্রথমটি হযরত সালিহ আলাইহিস সালামের উটনী সম্পর্কিত।
হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম ও তাঁর উটনী
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে অতীতের যে সমস্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির ঘটনা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে ছামূদ জাতি। এ সম্প্রদায় মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এছাড়াও তাদের সমাজে নানা রকম অন্যায়-অপরাধ বিস্তার লাভ করেছিল। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম ছিলেন এ জাতিরই একজন লোক। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর লক্ষ্যে তাঁকে নবী করে পাঠান। কিন্তু কওমের অধিকাংশ লোকই তাঁর কথা প্রত্যাখ্যান করল।
হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম যৌবন থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত ক্রমাগত তাদের মধ্যে তাবলীগের কাজ করে যেতে থাকেন। শেষপর্যন্ত তারা দাবি করল, আপনি যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকেন, তবে আপনি এই পাহাড় থেকে কোনও উটনী বের করে আমাদের সামনে উপস্থিত করুন। এটা করতে পারলে আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম দুআ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআয় পাহাড় থেকে একটি উটনী বের করে দেখালেন। তা দেখে কিছু লোক তো ঈমান আনল, কিন্তু তাদের বড় বড় সর্দার কথা রাখল না। তারা যে তাদের জেদ বজায় রাখল তাই নয়; বরং অন্য যেসব লোক ঈমান আনতে ইচ্ছুক ছিল তাদেরকেও নিবৃত্ত করল।
হযরত সালিহ আলাইহিস সালামের আশঙ্কা হল, ওয়াদা ভঙ্গের কারণে তাদের উপর আল্লাহ তাআলার কোনও আযাব এসে যেতে পারে। তাই তাদেরকে বললেন, তোমরা অন্ততপক্ষে এ উটনীটির কোনও ক্ষতি করো না। তাকে স্বাধীনভাবে চলে ফিরে খেতে দাও।
উটনীটির পূর্ণ এক কুয়া পানি দরকার হত। তাই তিনি পালা বণ্টন করে দিলেন যে, একদিন উটনীটি পানি পান করবে এবং একদিন এলাকার লোকে। কিন্তু কওমের লোক গোপনে চক্রান্ত করল। তারা ঠিক করল উটনীটিকে হত্যা করবে। পরিশেষে ‘কুদার' নামক এক ব্যক্তি সেটিকে হত্যা করল। এ অবস্থায় হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন যে, এখন শাস্তি আসতে মাত্র তিন দিন বাকি আছে। অতঃপর তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
কোনও কোনও রেওয়ায়েতে আরও আছে, তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এই তিন দিনের প্রতিদিন তাদের চেহারার রং পরিবর্তন হতে থাকবে। প্রথম দিন চেহারার রং হবে হলুদ, দ্বিতীয় দিন লাল এবং তৃতীয় দিন সম্পূর্ণ কালো হয়ে যাবে। এতদসত্ত্বেও জেদি সম্প্রদায়টি তাওবা ও ইস্তিগফারে রত হল না; বরং তারা হযরত সালিহ আলাইহিস সালামকেই হত্যা করার ষড়যন্ত্র আঁটল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পথেই ধ্বংস করে দেন। ফলে তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। অন্যদিকে হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম যেমন বলেছিলেন, সেভাবেই তাদের তিন দিন কাটে। এ অবস্থায়ই প্রচণ্ড ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। সেইসাথে আসমান থেকে এক ভয়াল শব্দ আসতে থাকে এবং তাতে গোটা সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যায়।
যে ব্যক্তি উটিনীটিকে হত্যা করেছিল, কুরআন মাজীদে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا (যখন তাদের দূর্ভাগা লোকটি উদ্যত হল)। এরই ব্যাখ্যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- انبعث لها رجل عزيز عارم منيع في رهطه (সেটিকে হত্যা করতে উদ্যত হল এক প্রভাবশালী দুরাচার ব্যক্তি, যে নিজ ছিল অত্যন্ত শক্তিমান)। সে ছিল عزيز অর্থাৎ ছামূদ জাতির একজন প্রতাপশালী লোক। ছিল عارم অর্থাৎ অত্যন্ত দুষ্কৃতিপরায়ণ, নানারকম অশান্তি ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে বেড়াত এবং ছিল منبع অর্থাৎ শক্তিশালী ও সুরক্ষিত। যে-কোনও প্রতিকূলতায় তার লোকজন তাকে সুরক্ষা দিত।
কিন্তু এসব শক্তি-ক্ষমতা আল্লাহর আযাব থেকে তাকে রক্ষা করতে পারল না। উটনী হত্যার পরিণামে তাকে তো বটেই, তার কাজে সমর্থন যোগানোর অপরাধে গোত্রের সকলকেও চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا পরিণামে তাদের প্রতিপালক তাদের গুনাহের কারণে তাদেরকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে সব একাকার করে ফেললেন।৩২৬
স্ত্রীকে মারধর করা কেন
ভাষণের একপর্যায়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন يعمد احدكم فيجلد امراته جلد العبد "তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে পেটাতে উদ্যত হয়। তাকে পেটায় দাস (দাসী)-এর মত। এ বর্ণনায় কেবল দাসের কথা আছে এবং মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় কেবল দাসীর কথা আছে। অনুরূপ সুনানে আবূ দাউদের বর্ণনায়ও দাসীর কথাই উল্লেখ করা হয়েছে, তবে নাসাঈর বর্ণনায় আছে “দাসের বা দাসীর মত পেটায়।
যাহোক দাস-দাসীর সঙ্গে তুলনা করার উদ্দেশ্য সাধারণভাবে দাস-দাসীকে মারার বৈধতাদানের জন্য নয়। বিভিন্ন হাদীছে দাস-দাসীকেও মারধর করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাঁ, কারও সংশোধনের জন্য হালকা মারধরের প্রয়োজন বোধ হলে সেটা ভিন্ন কথা। না হয় কেবল নিজের মনের ঝাল মেটানোর জন্য দাস-দাসীকে পেটানো বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত শাস্তিদান করা কোনওক্রমেই বৈধ নয়। তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে মূলত সেকালের মানুষের সাধারণ রেওয়াজ হিসেবে।
জাহিলী যুগে দাস-দাসীকে মানুষই মনে করা হত না। তাই তাদের সঙ্গে আচার আচরণও মানবিক ছিল না। কথায় কথায় মারধর করা হত। মারতে মারতে অনেক সময় মেরেই ফেলা হত। এ অন্যায় প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করেই বলা হয়েছে যে, দাস দাসীকে যেমন অন্যায়ভাবে মারধর করতে দ্বিধাবোধ করা হয় না, তেমনি তোমাদের অনেকেও স্ত্রীকেও অন্যায়ভাবে মারধর করে থাকে। এটা কিছুতেই সমীচীন নয়। দাস দাসীকেই যখন অন্যায়ভাবে মারা যায় না, তখন স্ত্রীকে কিভাবে অন্যায় মারধর করা যায়? তোমরা যেমন আদমসন্তান, তারাও তেমনি একই আদমসন্তান। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে তাদের অভিভাবক বানিয়েছেন, সেটা মারধর করার জন্য নয়; বরং দাম্পত্যজীবন যাতে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য। তোমাদের কর্তব্য তাদের যথাযথ হক আদায় করা ও তাদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলা।
তাদেরকে মারধর করা যে কত ঘৃণ্য কাজ, তা স্পষ্ট করার জন্য এর পরই তিনি ইরশাদ করেন- فلعله يضاجعها من آخر يومه (আবার দিন শেষে তার সঙ্গে উপগত হয়)। অর্থাৎ এটা কোনও বুদ্ধিমান ও রুচিশীল লোকের কাজ হতে পারে না যে, দিনের বেলা স্ত্রীকে মারবে এবং দিনশেষে তার সঙ্গে মেলামেশা করবে। মানবিক মেলামেশা করাটা পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং আগ্রহ-উৎসাহের উপর নির্ভরশীল। সবকিছু গায়ের জোরে সারাটা একরকম পশুত্ব, তা মানুষের কাজ হতে পারে না। মেলামেশা করাটা যখন দাম্পত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তখন তা যাতে সম্পূর্ণ মানবিক হয় সেজন্য মন-মানসিকতা সম্পূর্ণ অমলিন ও স্ফুর্তিপূর্ণ থাকা জরুরি। অন্যায় মারধর করাটা এর সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান।
হাস্যকর অহেতুক হাসি
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক ভাষণের অংশবিশেষ হিসেবে যে তিনটি কথা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তার সর্বশেষ হল- لم يضحك أحدكم مما يفعل (তোমাদের প্রত্যেকে এমন কাজে কেন হাসে, যা নিজে করে?!)। অর্থাৎ বায়ুত্যাগের বিষয়টি মানুষের স্বভাবগত, যা সকলেই করে। যে কাজ স্বাভাবিকভাবেই সকলেই করে তা কোনও হাসির বিষয় হতে পারে না। হাসির কারণ হল এমন বিষয়, যে বিষয়টি হয় আশ্চর্যজনক ও বিরল। এরূপ ক্ষেত্রে মানুষ মুচকি হাসবে। আশ্চর্য ও বিরলতার মাত্রা একটু বেশি হলে সে হাসি হবে শব্দ করে। যদি অধিকতর আশ্চর্যজনক হয়, তখন আসে অট্টহাসির পালা। কিন্তু যে বিষয়টি স্বভাবগত এবং যা সচরাচরই ঘটে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তাই হাসিরও ব্যাপার নেই, বিশেষত যখন সকলের দ্বারাই তা হয়ে যায়। বরং এরূপ ক্ষেত্রে হাসাহাসি করাই হবে হাস্যকর। এটা ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী কাজ ও লঘু চরিত্রের পরিচায়ক। আবার এরকম হাসি যার প্রতি হয়, তাকে একরকম হেয় করা হয় ও লজ্জা দেওয়া হয়। সেদিক থেকে এটি অনুচিত কাজও বটে।
অবশ্য অধিকাংশ লোকেরই চরিত্রে ব্যক্তিত্বের বড় অভাব। একরকম লঘুত্ব দ্বারাই যেন সকলে চালিত। তাই এ জাতীয় কাজে অধিকাংশের আপনা-আপনিই হাসি এসে যায়। অতএব যাদের বায়ুচাপ দেখা দেয়, তাদের নিজেদেরই সতর্ক হওয়া ভালো। তাদের উচিত লোকসম্মুখ থেকে উঠে গিয়ে নিরালা কোথাও সেরে আসা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীর শিক্ষা অমান্য করা দুর্ভাগার কাজ। তাই মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
খ. কোনও ব্যক্তি বা জাতি যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আল্লাহর আযাব ও গবর থেকে বাঁচতে পারে না। আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় তাঁরই আশ্রয় গ্রহণ করা।
গ. স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারা জায়েয নয়। এমনকি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তিরও কাজ নয়।
ঘ. স্ত্রীর সঙ্গে দাসীসুলভ আচরণ করতে নেই।
ঙ. স্বভাব-প্রকৃতিগত কাজ হাসির কারণ হতে পারে না। কাজেই এরূপ কাজে হাসতে নেই।
চ. যে দোষ নিজের মধ্যেও আছে, সে দোষের কারণে অন্যকে নিন্দা-তিরস্কার করা একটি নিন্দনীয় কাজ।
৩২৫. সূরা হিজর (১৫), আয়াত ৯৫
৩২৬. সূরা শামস (৯১), আয়াত ১৪
হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম ও তাঁর উটনী
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে অতীতের যে সমস্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির ঘটনা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে ছামূদ জাতি। এ সম্প্রদায় মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এছাড়াও তাদের সমাজে নানা রকম অন্যায়-অপরাধ বিস্তার লাভ করেছিল। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম ছিলেন এ জাতিরই একজন লোক। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর লক্ষ্যে তাঁকে নবী করে পাঠান। কিন্তু কওমের অধিকাংশ লোকই তাঁর কথা প্রত্যাখ্যান করল।
হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম যৌবন থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত ক্রমাগত তাদের মধ্যে তাবলীগের কাজ করে যেতে থাকেন। শেষপর্যন্ত তারা দাবি করল, আপনি যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকেন, তবে আপনি এই পাহাড় থেকে কোনও উটনী বের করে আমাদের সামনে উপস্থিত করুন। এটা করতে পারলে আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম দুআ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআয় পাহাড় থেকে একটি উটনী বের করে দেখালেন। তা দেখে কিছু লোক তো ঈমান আনল, কিন্তু তাদের বড় বড় সর্দার কথা রাখল না। তারা যে তাদের জেদ বজায় রাখল তাই নয়; বরং অন্য যেসব লোক ঈমান আনতে ইচ্ছুক ছিল তাদেরকেও নিবৃত্ত করল।
হযরত সালিহ আলাইহিস সালামের আশঙ্কা হল, ওয়াদা ভঙ্গের কারণে তাদের উপর আল্লাহ তাআলার কোনও আযাব এসে যেতে পারে। তাই তাদেরকে বললেন, তোমরা অন্ততপক্ষে এ উটনীটির কোনও ক্ষতি করো না। তাকে স্বাধীনভাবে চলে ফিরে খেতে দাও।
উটনীটির পূর্ণ এক কুয়া পানি দরকার হত। তাই তিনি পালা বণ্টন করে দিলেন যে, একদিন উটনীটি পানি পান করবে এবং একদিন এলাকার লোকে। কিন্তু কওমের লোক গোপনে চক্রান্ত করল। তারা ঠিক করল উটনীটিকে হত্যা করবে। পরিশেষে ‘কুদার' নামক এক ব্যক্তি সেটিকে হত্যা করল। এ অবস্থায় হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন যে, এখন শাস্তি আসতে মাত্র তিন দিন বাকি আছে। অতঃপর তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
কোনও কোনও রেওয়ায়েতে আরও আছে, তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এই তিন দিনের প্রতিদিন তাদের চেহারার রং পরিবর্তন হতে থাকবে। প্রথম দিন চেহারার রং হবে হলুদ, দ্বিতীয় দিন লাল এবং তৃতীয় দিন সম্পূর্ণ কালো হয়ে যাবে। এতদসত্ত্বেও জেদি সম্প্রদায়টি তাওবা ও ইস্তিগফারে রত হল না; বরং তারা হযরত সালিহ আলাইহিস সালামকেই হত্যা করার ষড়যন্ত্র আঁটল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পথেই ধ্বংস করে দেন। ফলে তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। অন্যদিকে হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম যেমন বলেছিলেন, সেভাবেই তাদের তিন দিন কাটে। এ অবস্থায়ই প্রচণ্ড ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। সেইসাথে আসমান থেকে এক ভয়াল শব্দ আসতে থাকে এবং তাতে গোটা সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যায়।
যে ব্যক্তি উটিনীটিকে হত্যা করেছিল, কুরআন মাজীদে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا (যখন তাদের দূর্ভাগা লোকটি উদ্যত হল)। এরই ব্যাখ্যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- انبعث لها رجل عزيز عارم منيع في رهطه (সেটিকে হত্যা করতে উদ্যত হল এক প্রভাবশালী দুরাচার ব্যক্তি, যে নিজ ছিল অত্যন্ত শক্তিমান)। সে ছিল عزيز অর্থাৎ ছামূদ জাতির একজন প্রতাপশালী লোক। ছিল عارم অর্থাৎ অত্যন্ত দুষ্কৃতিপরায়ণ, নানারকম অশান্তি ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে বেড়াত এবং ছিল منبع অর্থাৎ শক্তিশালী ও সুরক্ষিত। যে-কোনও প্রতিকূলতায় তার লোকজন তাকে সুরক্ষা দিত।
কিন্তু এসব শক্তি-ক্ষমতা আল্লাহর আযাব থেকে তাকে রক্ষা করতে পারল না। উটনী হত্যার পরিণামে তাকে তো বটেই, তার কাজে সমর্থন যোগানোর অপরাধে গোত্রের সকলকেও চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا পরিণামে তাদের প্রতিপালক তাদের গুনাহের কারণে তাদেরকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে সব একাকার করে ফেললেন।৩২৬
স্ত্রীকে মারধর করা কেন
ভাষণের একপর্যায়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন يعمد احدكم فيجلد امراته جلد العبد "তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে পেটাতে উদ্যত হয়। তাকে পেটায় দাস (দাসী)-এর মত। এ বর্ণনায় কেবল দাসের কথা আছে এবং মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় কেবল দাসীর কথা আছে। অনুরূপ সুনানে আবূ দাউদের বর্ণনায়ও দাসীর কথাই উল্লেখ করা হয়েছে, তবে নাসাঈর বর্ণনায় আছে “দাসের বা দাসীর মত পেটায়।
যাহোক দাস-দাসীর সঙ্গে তুলনা করার উদ্দেশ্য সাধারণভাবে দাস-দাসীকে মারার বৈধতাদানের জন্য নয়। বিভিন্ন হাদীছে দাস-দাসীকেও মারধর করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাঁ, কারও সংশোধনের জন্য হালকা মারধরের প্রয়োজন বোধ হলে সেটা ভিন্ন কথা। না হয় কেবল নিজের মনের ঝাল মেটানোর জন্য দাস-দাসীকে পেটানো বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত শাস্তিদান করা কোনওক্রমেই বৈধ নয়। তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে মূলত সেকালের মানুষের সাধারণ রেওয়াজ হিসেবে।
জাহিলী যুগে দাস-দাসীকে মানুষই মনে করা হত না। তাই তাদের সঙ্গে আচার আচরণও মানবিক ছিল না। কথায় কথায় মারধর করা হত। মারতে মারতে অনেক সময় মেরেই ফেলা হত। এ অন্যায় প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করেই বলা হয়েছে যে, দাস দাসীকে যেমন অন্যায়ভাবে মারধর করতে দ্বিধাবোধ করা হয় না, তেমনি তোমাদের অনেকেও স্ত্রীকেও অন্যায়ভাবে মারধর করে থাকে। এটা কিছুতেই সমীচীন নয়। দাস দাসীকেই যখন অন্যায়ভাবে মারা যায় না, তখন স্ত্রীকে কিভাবে অন্যায় মারধর করা যায়? তোমরা যেমন আদমসন্তান, তারাও তেমনি একই আদমসন্তান। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে তাদের অভিভাবক বানিয়েছেন, সেটা মারধর করার জন্য নয়; বরং দাম্পত্যজীবন যাতে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য। তোমাদের কর্তব্য তাদের যথাযথ হক আদায় করা ও তাদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলা।
তাদেরকে মারধর করা যে কত ঘৃণ্য কাজ, তা স্পষ্ট করার জন্য এর পরই তিনি ইরশাদ করেন- فلعله يضاجعها من آخر يومه (আবার দিন শেষে তার সঙ্গে উপগত হয়)। অর্থাৎ এটা কোনও বুদ্ধিমান ও রুচিশীল লোকের কাজ হতে পারে না যে, দিনের বেলা স্ত্রীকে মারবে এবং দিনশেষে তার সঙ্গে মেলামেশা করবে। মানবিক মেলামেশা করাটা পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং আগ্রহ-উৎসাহের উপর নির্ভরশীল। সবকিছু গায়ের জোরে সারাটা একরকম পশুত্ব, তা মানুষের কাজ হতে পারে না। মেলামেশা করাটা যখন দাম্পত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তখন তা যাতে সম্পূর্ণ মানবিক হয় সেজন্য মন-মানসিকতা সম্পূর্ণ অমলিন ও স্ফুর্তিপূর্ণ থাকা জরুরি। অন্যায় মারধর করাটা এর সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান।
হাস্যকর অহেতুক হাসি
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক ভাষণের অংশবিশেষ হিসেবে যে তিনটি কথা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তার সর্বশেষ হল- لم يضحك أحدكم مما يفعل (তোমাদের প্রত্যেকে এমন কাজে কেন হাসে, যা নিজে করে?!)। অর্থাৎ বায়ুত্যাগের বিষয়টি মানুষের স্বভাবগত, যা সকলেই করে। যে কাজ স্বাভাবিকভাবেই সকলেই করে তা কোনও হাসির বিষয় হতে পারে না। হাসির কারণ হল এমন বিষয়, যে বিষয়টি হয় আশ্চর্যজনক ও বিরল। এরূপ ক্ষেত্রে মানুষ মুচকি হাসবে। আশ্চর্য ও বিরলতার মাত্রা একটু বেশি হলে সে হাসি হবে শব্দ করে। যদি অধিকতর আশ্চর্যজনক হয়, তখন আসে অট্টহাসির পালা। কিন্তু যে বিষয়টি স্বভাবগত এবং যা সচরাচরই ঘটে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তাই হাসিরও ব্যাপার নেই, বিশেষত যখন সকলের দ্বারাই তা হয়ে যায়। বরং এরূপ ক্ষেত্রে হাসাহাসি করাই হবে হাস্যকর। এটা ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী কাজ ও লঘু চরিত্রের পরিচায়ক। আবার এরকম হাসি যার প্রতি হয়, তাকে একরকম হেয় করা হয় ও লজ্জা দেওয়া হয়। সেদিক থেকে এটি অনুচিত কাজও বটে।
অবশ্য অধিকাংশ লোকেরই চরিত্রে ব্যক্তিত্বের বড় অভাব। একরকম লঘুত্ব দ্বারাই যেন সকলে চালিত। তাই এ জাতীয় কাজে অধিকাংশের আপনা-আপনিই হাসি এসে যায়। অতএব যাদের বায়ুচাপ দেখা দেয়, তাদের নিজেদেরই সতর্ক হওয়া ভালো। তাদের উচিত লোকসম্মুখ থেকে উঠে গিয়ে নিরালা কোথাও সেরে আসা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীর শিক্ষা অমান্য করা দুর্ভাগার কাজ। তাই মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
খ. কোনও ব্যক্তি বা জাতি যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আল্লাহর আযাব ও গবর থেকে বাঁচতে পারে না। আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় তাঁরই আশ্রয় গ্রহণ করা।
গ. স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারা জায়েয নয়। এমনকি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তিরও কাজ নয়।
ঘ. স্ত্রীর সঙ্গে দাসীসুলভ আচরণ করতে নেই।
ঙ. স্বভাব-প্রকৃতিগত কাজ হাসির কারণ হতে পারে না। কাজেই এরূপ কাজে হাসতে নেই।
চ. যে দোষ নিজের মধ্যেও আছে, সে দোষের কারণে অন্যকে নিন্দা-তিরস্কার করা একটি নিন্দনীয় কাজ।
৩২৫. সূরা হিজর (১৫), আয়াত ৯৫
৩২৬. সূরা শামস (৯১), আয়াত ১৪
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
