শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫১৮
আন্তর্জাতিক নং: ১৫২০
সিজদায় যেতে প্রথমে উভয় হাত না উভয় হাঁটু রাখবে
১৫১৮-১৫২০। আহমদ ইবন আবু ইমরান (রাহঃ) ওয়াইল ইবনে হুজর (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন সিজদা করতেন তখন নিজের উভয় হাত রাখার পূর্বে উভয় হাঁটু রাখতেন।

ইবনে আবু দাউদ (রাহঃ)....... কুলাইব (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ওয়ায়িল-এর উল্লেখ করেন নাই। অনুরূপভারে ইবনে আবু দাউদ (রাহঃ) স্বীয় স্মৃতি থেকে
'সুফয়ান সাওরী' (রাহঃ) বলেছেন, এতে তিনি ভুল করেছেন, সঠিক হচ্ছে, শাকীক আর তিনি-ই হচ্ছেন
আবু লায়স।

ইয়াযিদ ইবনে সিনান (রাহঃ) নিজ গ্রন্থ থেকে..... কুলাইব (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এই শাকীক আবু লায়স একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি।
বস্তুত সিজ্দায় যেতে সর্বপ্রথম কোন অঙ্গ স্থাপন করবে, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে আপাত দৃষ্টিতে পরস্পর বিরােধী রিওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে। তাই আমরা এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণমূলক দৃষ্টি দেই।
আর হাদীসগুলাের সঠিক মর্ম নির্ধারণের পন্থা হলাে এই যে, ওয়াইল (রাযিঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস পরস্পর বিরােধী নয়। বরং আবু হুরায়রা (রাযিঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হচ্ছে পরস্পর বিরােধী।
অতএব আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস যা অপরাপর রিওয়ায়াতগুলাের সাথে সাংঘর্ষিক হবে
সেটি দলীলরূপে গৃহীত না হওয়াই স্বাভাবিক। আর ওয়াইল (রাযিঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি দলীল হিসাবে
প্রমাণিত। এটিই হচ্ছে হাদীসের সঠিক মর্ম-নির্ধারণের পন্থা।
ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলীল ঃ
বস্তুত অনুসন্ধানী দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্বোক্ত ব্যাখ্যার কারণ হচ্ছে এই যে, আমাদেরকে যে সমস্ত অঙ্গ
দ্বারা সিজদা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেগুলাে হচ্ছে সাতটি। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে একটি হাদীস নিম্নরূপ :
1518 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: ثنا إِسْحَاقُ بْنُ أَبِي إِسْرَائِيلَ، قَالَ: أنا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، قَالَ: أنا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ الْجَرْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَجَدَ بَدَأَ بِوَضْعِ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ»

1519 - وَحَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ , قَالَ: ثنا أَبُو عُمَرَ الْحَوْضِيُّ قَالَ: ثنا هَمَّامٌ , قَالَ: ثنا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ وَلَمْ يَذْكُرْ وَائِلًا كَذَا قَالَ ابْنُ أَبِي دَاوُدَ مِنْ حِفْظِهِ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَقَدْ غَلِطَ وَالصَّوَابُ شَقِيقٌ وَهُوَ أَبُو لَيْثٍ

1520 - كَذَلِكَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ سِنَانٍ مِنْ كِتَابِهِ قَالَ: ثنا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ قَالَ: ثنا هَمَّامٌ عَنْ شَقِيقٍ أَبِي لَيْثٍ عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ وَشَقِيقٌ أَبُو لَيْثٍ هَذَا فَلَا يُعْرَفُ. فَلَمَّا اخْتُلِفَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَبْدَأُ بِوَضْعِهِ فِي ذَلِكَ نَظَرْنَا فِي ذَلِكَ فَكَانَ سَبِيلُ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ: أَنَّ وَائِلًا لَمْ يُخْتَلَفْ عَنْهُ وَإِنَّمَا الِاخْتِلَافُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَكَانَ يَنْبَغِي أَنْ يَكُونَ مَا رُوِيَ عَنْهُ لَمَّا تَكَافَأَتِ الرِّوَايَاتُ فِيهِ ارْتَفَعَ وَثَبَتَ مَا رَوَى وَائِلٌ فَهَذَا حُكْمُ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ فِي ذَلِكَ. وَأَمَّا وَجْهُ ذَلِكَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا الْأَعْضَاءَ الَّتِي أُمِرَ بِالسُّجُودِ عَلَيْهَا هِيَ سَبْعَةُ أَعْضَاءٍ بِذَلِكَ جَاءَتِ الْآثَارُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَمِمَّا رُوِيَ عَنْهُ فِي ذَلِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর আমল ছিলো সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাঁটু এবং পরে হাত রাখা। আর সিজদা থেকে উঠার সময় এর বিপরীত করা। ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীসের আলোচনায় আরো মনত্মব্য করেছেন যে, অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের আমলও এ হাদীস অনুযায়ী।
حَدَّثَنَا يَعْلَى عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ إبْرَاهِيمَ عَنِ الأَسْوَدِ أَنَّ عُمَرَ كَانَ يَقَعُ عَلَى رُكْبَتَيْهِ
হযরত উমার রা. হাঁটুর উপর ভর করে (সিজদার জন্য) নীচু হতেন (ইবনে আবী শাইবা: ২৭১৯)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত উমার রা.-এর আমল ছিলো সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাঁটু রাখা।
حَدَّثَنَا ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ مُغِيرَةَ، عَنْ إبْرَاهِيمَ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الرَّجُلِ يَضَعُ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ؟ فَكَرِهَ ذَلِكَ، وَقَالَ: هَلْ يَفْعَلُهُ إِلاَّ مَجْنُونٌ ؟!.
হযরত ইবরাহীম নাখাঈ রহ.কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সিজদার সময় হাঁটুর আগে হাত রাখে। তিনি এটাকে অপছন্দ করলেন এবং বললেন: পাগল ছাড়া কেউ এমন করে? (ইবনে আবী শাইবা: ২৭২২)
উপরিউক্ত সকল হাদীস এবং সাহাবা ও তাবিঈগণের আমল থেকে প্রমাণিত হলো যে, সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাঁটু এবং পরে হাত রাখতে হয়। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯৭)
উল্লিখিত পদ্ধতির বিপরীতে সিজদা করার সময় আগে হাত এবং পরে হাঁটু রাখা, আর উঠার সময় আগে হাঁটু এবং পরে হাত উঠানোর আমলও হাদীসে বর্ণিত আছে। তবে আমরা এ হাদীসকে আমলের জন্য বেশী উপযোগী মনে করি। কারণ ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীসটিকে হাসান বলার সাথে সাথে এ হাদীসের উপর অধিকাংশ আহলে ইলম-এর আমল রয়েছে বলেও উলেস্নখ করেছেন। আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা.-এর আমলও এটাই। ইবনে খুযাইমা রহ. হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে এ বিষয়ক একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন: كنا نضع اليدين قبل الركبتين فأمرنا بالركبتين قبل اليدين “আমরা হাঁটুর পূর্বে হাত রাখতাম। অতঃপর আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো হাতের পূর্বে হাঁটু রাখতে”। (সহীহ ইবনে খুযাইমা: ৬২৮) এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত রাখার হাদীসটি রহিত। অবশ্য সহীহ ইবনে খুযাইমার এ হাদীসটি সহীহ নয়। সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত রাখার ব্যাপারে হযরত ওয়ায়েল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত তিরমিযী-২৬৮ নং হাদীসটি মিশকাত শরীফের ৮৯৮ নাম্বারেও বর্ণিত হয়েছে। এরপর হযরত আবু হুরায়রা রা. অপর একটি হাদীসে এর বিপরীতে সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত ও পরে হাটু রাখার আমল বর্ণনা করার পর মাসাবীহুছ্ছুন্নাহর লেখক ইমাম ইমাম খত্তাবী রহ.-এর বরাত দিয়ে বলেন যে, তিনি হাদীসটিকে রহিত বলেছেন। অর্থাৎ সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত ও পরে হাটু রাখার আমল বহাল নয়; বরং রহিত।
.
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ১৫১৮ | মুসলিম বাংলা