শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৫১২
ফজরের সালাত ও অন্যান্য সালাতে দু'আ কুনূত পাঠ করা ।
১৫১২। ইবনে আবু দাউদ (রাহঃ) ...... আমর্ ইবনে দীনার (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রাঃ) আমাদেরকে নিয়ে মক্কাতে ফজরের সালাত আদায় করতেন, তিনি কুনূত পাঠ করতেন না।
আবু জা'ফর (তাহাবী) বলেনঃ এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আজীবন কুনূত পাঠ করতেন না। অথচ তাঁর যুগে সমস্ত মুসলমান এরূপ ছিলেন যে, উমর (রাঃ)-এর খিলাফতের পূর্ণ সময়কালে অথবা অধিকাংশ সময়কালে শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। ( তিনি তাদেরই একজন ছিলেন) এতদসত্ত্বেও তিনি কুনূত পাঠ করতেন না। এবং এই আবুদ্দারদা (রাঃ) কুনূতকে অস্বীকার করতেন। আর ইবনে যুবায়র (রাঃ) কুনূত পড়তেন না। অথচ তিনি তখন রণ-অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। যেহেতু শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকাল ব্যতীত তিনি লোকদের ইমামতি করেছন কিনা তা আমাদের জানা নেই।
বস্তুত উল্লিখিত সকলেই উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বিরোধিতা করেছেন।
তাঁরা যু্দ্ধাভিযান অবস্থায় কুনূত আছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধ বিগ্রহ না থাকাকালীন পরিস্থিতিতে কুনূত পাঠ না করা তাদেরও অভিমত।
তাহাবী (রাহঃ)--এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
যখন আলিমগণ কুনূত সম্পর্কে মতবিরোধ করেছেন, অতএব অনুসন্ধানী দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিশ্লেষণ অপরিহার্য। যাতে আমরা সঠিক মর্ম উদ্ধার করতে সক্ষম হই।
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত ব্যতীত অপরাপর সাহাবী থেকে আমরা বর্ণনা করেছি যে, তাঁরা যুদ্ধাভিযান অবস্থায় সালাতগুলো থেকে ফজর ও মাগরিবের সালাতে কুনূত পাঠ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইশা'র সালতে কুনূত পাঠ করতেন। বস্তুত মাগরিব অথবা ইশা'র সালাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাঁদের কারো থেকে এই ব্যপারে আমাদের জানা নেই যে,তিনি যুদ্ধরত অথবা যুদ্ধবিহীন কোন অবস্থায় যুহর ও আসর- এর সালাতে কুনূত পাঠ করেছেন।
অতএব যখন এই দুই সালাতে যুদ্ধ বিহীন কোন অবস্থায় কুনূত পাঠ নেই এবং ফরজ, মাগরিব ও ইশা'র সালাতে ও যুদ্ধাভিযান বিহীন অবস্থায় কুনূত পাঠ নেই। তাই প্রমাণিত হলো,এই সমস্ত সালাতে যুদ্ধাভিযান অবস্থায়ও কুনূত পাঠ নেই। আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি পূর্ণ বছর বিতর সালাতে দু'আ কুনূত পাঠ করা অধিকাংশ ফকীহের মাযহাব। পক্ষান্তরে তাদের একদলের মাযহাব হচ্ছে, রামাদানের পনের তারিখ রাত্রে বিশেষ করে দু'আ কুনূত পাঠ করা। অতএব সমস্ত ফকীহগণ যুদ্ধাভিযান অথবা অন্য কোন বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতীত শুধুমাত্র সালাত হিসেবে বিতর- এর সালাতে কুনূত পাঠ করেন।
যখন বিতর ব্যতীত অপরাপর সালাতে একমাত্র 'সালাত হওয়ার' কারণে অন্য কোন কারণ ব্যতীত কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া খণ্ডন হয়ে গেলো, তাহলে বিতর সালাত ব্যতীত অন্য কোন কারণে কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া খণ্ডন হয়ে গেলো। (অর্থাৎ বিতর সালাতে সালাত হওয়ার কারণে কুনূত পড়া হয়, যুদ্ধাভিযানের কারণে নয়)।
আমাদের উল্লিখিত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো ; যুদ্ধ অবস্থায় এবং যুদ্ধ বিহীন অবস্থায় ফজরের সালাতে কুনূত পাঠ করা যুক্তি ও অনুসন্ধানের নিরিখে সমান নয়। যা আমরা উল্লেখ করে এসেছি।
আর এটাই আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)- এর উক্তি ও মাযহাব।
আবু জা'ফর (তাহাবী) বলেনঃ এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আজীবন কুনূত পাঠ করতেন না। অথচ তাঁর যুগে সমস্ত মুসলমান এরূপ ছিলেন যে, উমর (রাঃ)-এর খিলাফতের পূর্ণ সময়কালে অথবা অধিকাংশ সময়কালে শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। ( তিনি তাদেরই একজন ছিলেন) এতদসত্ত্বেও তিনি কুনূত পাঠ করতেন না। এবং এই আবুদ্দারদা (রাঃ) কুনূতকে অস্বীকার করতেন। আর ইবনে যুবায়র (রাঃ) কুনূত পড়তেন না। অথচ তিনি তখন রণ-অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। যেহেতু শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকাল ব্যতীত তিনি লোকদের ইমামতি করেছন কিনা তা আমাদের জানা নেই।
বস্তুত উল্লিখিত সকলেই উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বিরোধিতা করেছেন।
তাঁরা যু্দ্ধাভিযান অবস্থায় কুনূত আছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধ বিগ্রহ না থাকাকালীন পরিস্থিতিতে কুনূত পাঠ না করা তাদেরও অভিমত।
তাহাবী (রাহঃ)--এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
যখন আলিমগণ কুনূত সম্পর্কে মতবিরোধ করেছেন, অতএব অনুসন্ধানী দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিশ্লেষণ অপরিহার্য। যাতে আমরা সঠিক মর্ম উদ্ধার করতে সক্ষম হই।
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত ব্যতীত অপরাপর সাহাবী থেকে আমরা বর্ণনা করেছি যে, তাঁরা যুদ্ধাভিযান অবস্থায় সালাতগুলো থেকে ফজর ও মাগরিবের সালাতে কুনূত পাঠ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইশা'র সালতে কুনূত পাঠ করতেন। বস্তুত মাগরিব অথবা ইশা'র সালাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাঁদের কারো থেকে এই ব্যপারে আমাদের জানা নেই যে,তিনি যুদ্ধরত অথবা যুদ্ধবিহীন কোন অবস্থায় যুহর ও আসর- এর সালাতে কুনূত পাঠ করেছেন।
অতএব যখন এই দুই সালাতে যুদ্ধ বিহীন কোন অবস্থায় কুনূত পাঠ নেই এবং ফরজ, মাগরিব ও ইশা'র সালাতে ও যুদ্ধাভিযান বিহীন অবস্থায় কুনূত পাঠ নেই। তাই প্রমাণিত হলো,এই সমস্ত সালাতে যুদ্ধাভিযান অবস্থায়ও কুনূত পাঠ নেই। আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি পূর্ণ বছর বিতর সালাতে দু'আ কুনূত পাঠ করা অধিকাংশ ফকীহের মাযহাব। পক্ষান্তরে তাদের একদলের মাযহাব হচ্ছে, রামাদানের পনের তারিখ রাত্রে বিশেষ করে দু'আ কুনূত পাঠ করা। অতএব সমস্ত ফকীহগণ যুদ্ধাভিযান অথবা অন্য কোন বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতীত শুধুমাত্র সালাত হিসেবে বিতর- এর সালাতে কুনূত পাঠ করেন।
যখন বিতর ব্যতীত অপরাপর সালাতে একমাত্র 'সালাত হওয়ার' কারণে অন্য কোন কারণ ব্যতীত কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া খণ্ডন হয়ে গেলো, তাহলে বিতর সালাত ব্যতীত অন্য কোন কারণে কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া খণ্ডন হয়ে গেলো। (অর্থাৎ বিতর সালাতে সালাত হওয়ার কারণে কুনূত পড়া হয়, যুদ্ধাভিযানের কারণে নয়)।
আমাদের উল্লিখিত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো ; যুদ্ধ অবস্থায় এবং যুদ্ধ বিহীন অবস্থায় ফজরের সালাতে কুনূত পাঠ করা যুক্তি ও অনুসন্ধানের নিরিখে সমান নয়। যা আমরা উল্লেখ করে এসেছি।
আর এটাই আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)- এর উক্তি ও মাযহাব।
1512 - حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ، قَالَ: ثنا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ: أنا مُحَمَّدُ بْنُ مُسْلِمٍ الطَّائِفِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ، قَالَ: «كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ يُصَلِّي بِنَا الصُّبْحَ بِمَكَّةَ فَلَا يَقْنُتُ» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَهَذَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَمْ يَكُنْ يَقْنُتْ فِي دَهْرِهِ كُلِّهِ وَقَدْ كَانَ الْمُسْلِمُونَ فِي قِتَالِ عَدُوِّهِمْ فِي كُلِّ وِلَايَةِ عُمَرَ , أَوْ فِي أَكْثَرِهَا , فَلَمْ يَكُنْ يَقْنُتُ لِذَلِكَ , وَهَذَا أَبُو الدَّرْدَاءِ يُنْكِرُ الْقُنُوتَ , وَابْنُ الزُّبَيْرِ لَا يَفْعَلُهُ , وَقَدْ كَانَ مُحَارِبًا حِينَئِذٍ ; لِأَنَّهُ لَمْ نَعْلَمْهُ أَمَّ النَّاسَ إِلَّا فِي وَقْتِ مَا كَانَ الْأَمْرُ صَارَ إِلَيْهِ. فَقَدْ خَالَفَ هَؤُلَاءِ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ وَعَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ، فِيمَا ذَهَبُوا إِلَيْهِ مِنَ الْقُنُوتِ فِي حَالِ الْمُحَارَبَةِ بَعْدَ ثُبُوتِ زَوَالِ الْقُنُوتِ فِي حَالِ عَدَمِ الْمُحَارَبَةِ. فَلَمَّا اخْتَلَفُوا فِي ذَلِكَ وَجَبَ كَشْفُ ذَلِكَ عَنْ طَرِيقِ النَّظَرِ لِنَسْتَخْرِجَ مِنَ الْمَعْنَيَيْنِ مَعْنًى صَحِيحًا , فَكَانَ مَا رَوَيْنَا عَنْهُمْ أَنَّهُمْ قَنَتُوا فِيهِ مِنَ الصَّلَوَاتِ لِذَلِكَ الصُّبْحَ وَالْمَغْرِبَ خَلَا مَا رَوَيْنَا عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقْنُتُ فِي صَلَاةِ الْعِشَاءِ , فَإِنَّ فِي ذَلِكَ مُحْتَمَلٌ أَيْضًا أَنْ يَكُونَ هِيَ الْمَغْرِبَ , وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ هِيَ الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ وَلَمْ نَعْلَمْ عَنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ أَنَّهُ قَنَتَ فِي ظُهْرٍ وَلَا عَصْرٍ فِي حَالِ حَرْبٍ وَلَا غَيْرِهِ. فَلَمَّا كَانَتْ هَاتَانِ الصَّلَاتَانِ لَا قُنُوتَ فِيهِمَا فِي حَالِ الْحَرْبِ وَفِي حَالِ عَدَمِ الْحَرْبِ , وَكَانَتِ الْفَجْرُ وَالْمَغْرِبُ وَالْعِشَاءُ لَا قُنُوتَ فِيهِنَّ فِي حَالِ عَدَمِ الْحَرْبِ ثَبَتَ أَنْ لَا قُنُوتَ فِيهِنَّ فِي حَالِ الْحَرْبِ أَيْضًا , وَقَدْ رَأَيْنَا الْوِتْرَ فِيهَا الْقُنُوتُ عِنْدَ أَكْثَرِ الْفُقَهَاءِ فِي سَائِرِ الدَّهْرِ وَعِنْدَ خَاصٍّ مِنْهُمْ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ خَاصَّةً , فَكَانُوا جَمِيعًا إِنَّمَا يَقْنُتُونَ لِتِلْكَ الصَّلَاةِ خَاصَّةً لَا لِحَرْبٍ وَلَا لِغَيْرِهِ. فَلَمَّا انْتَفَى أَنْ يَكُونَ الْقُنُوتُ فِيمَا سِوَاهَا يَجِبُ لِعِلَّةِ الصَّلَاةِ خَاصَّةً لَا لِعِلَّةٍ غَيْرِهَا , انْتَفَى أَنْ يَكُونَ يَجِبُ لِمَعْنًى سِوَى ذَلِكَ. فَثَبَتَ بِمَا ذَكَرْنَا أَنَّهُ لَا يَنْبَغِي الْقُنُوتُ فِي الْفَجْرِ , فِي حَالِ حَرْبٍ وَلَا غَيْرِهِ , قِيَاسًا وَنَظَرًا عَلَى مَا ذَكَرْنَا مِنْ ذَلِكَ وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ وَمُحَمَّدٍ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى
