শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ১৩৬০
রুকু, সিজদা ও রুকুর থেকে উঠার সময় হাত উঠাতে হয় কিনা।
১৩৫৯-১৩৬০। আলী ইব্ন মা'বাদ (রঃ)..... আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুহাজিরীন ও আনসারদেরকে নিজের নিকটবর্তী করতে পছন্দ করতেন, যেন তাঁরা তাঁর থেকে (বিধিবিধান) সংরক্ষণ করতে পারেন।

আবু বাকরা (রঃ) বলেন, আমাদেরকে আব্দুল্লাহ্ ইব্ন আবী বাকর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
আবু জা'ফর তাহাবী (রঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্য থেকে বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ লোক যেন আমার নিকটবর্তী থাকঃ
1359 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مَعْبَدٍ، قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ بَكْرٍ، قَالَ: ثنا حُمَيْدٌ، عَنْ أَنَسٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ أَنْ يَلِيَهُ الْمُهَاجِرُونَ وَالْأَنْصَارُ , لِيَحْفَظُوا عَنْهُ»

1360 - وَكَمَا حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ , قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ بَكْرٍ , فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: وَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِيَلِيَنِي مِنْكُمْ أُولُو الْأَحْلَامِ وَالنُّهَى»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে- لِيَلِني مِنكُمْ أُولوا الأَحْلامِ والنُّهَى (তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানবুদ্ধির অধিকারী, তারা যেন আমার কাছাকাছি দাঁড়ায়)। أَحْلامِ শব্দটি حلم এর বহুবচন। এর অর্থ বুদ্ধি, ধীরস্থিরতা, অবিচলতা। أُولوا الأَحْلامِ অর্থ সাবালক, স্থিতপ্রজ্ঞ, বিচক্ষণ ও জ্ঞানী লোক। نهَى অর্থ স্থিরতা, আবদ্ধতা। বুদ্ধিকেও نهَى বলে, যেহেতু বুদ্ধি মানুষকে ভালো কাজের সীমানার মধ্যে আবদ্ধ রাখে ও মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে আটকে রাখে। শব্দটি نهية এর বহুবচন।

এখানে, أُولوا الأَحْلامِ والنُّهَى বলে প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের বোঝানো উদ্দেশ্য। এ স্তরের লোকদেরকে প্রথম কাতারে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। অনেক সময় ইমামের বিশেষ কারণবশত নামাযের মাঝখানে কাউকে খলীফা (নিজের স্থলাভিষিক্ত) বানানোর দরকার পড়ে, যাতে সে মুসল্লীদের নিয়ে অবশিষ্ট নামায সমাপ্ত করে। প্রথম কাতারে প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানসম্পন্ন লোক দাঁড়ালে খলীফা বানানো সহজ হয়। তাছাড়া যাদের বয়স বেশি এবং জ্ঞানবুদ্ধিতেও অগ্রগামী, অন্যদের তুলনায় তাদের মর্যাদাও বেশি। তাই প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর অগ্রাধিকারও তাদেরই। তারপর বয়স ও জ্ঞানের পর্যায়ক্রম অনুযায়ী এক কাতারের পর আরেক কাতার দাঁড়াতে থাকবে।

সুতরাং বয়স্ক ও আলেমগণ দাঁড়াবে প্রথম কাতারে। তারপর যারা বয়স্ক কিন্তু আলেম নয়, তারা তাদের পেছনে। তারপর দাঁড়াবে যুবকগণ। তাদের পেছনে শিশুরা। জামাতে মহিলাগণ শামিল হলে তারা শিশুদের পেছনে দাঁড়াবে। এটা নামাযের পবিত্রতা ও শুচিশুদ্ধতা রক্ষার উদ্দেশ্যে। অন্যথায় শয়তান ও নফসের সুযোগ নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

উল্লেখ্য, বয়স্ক ও জ্ঞানীজনদেরকে সম্মুখে স্থান দেওয়ার এ নীতি নামাযের জন্যই নির্দিষ্ট নয়; বরং নামাযের বাইরেও যে-কোনও মজলিস ও লোকসমাবেশে তাদেরকে সামনে স্থান দেওয়া চাই।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নামাযের কাতারবন্দীতে বয়স ও ইলমের পর্যায়ক্রম রক্ষা করা চাই।

খ. যে-কোনও মজলিসে বয়স্কদেরকে সামনে স্থান দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ১৩৫৯ | মুসলিম বাংলা