আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
৪৫৫৭। আবু নুআঈম (রাহঃ) ......... হারিসা ইবনে ওয়াহাব খুযা‘য়ী (রাযিঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের জান্নাতী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়; কিন্তু তারা যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে শপথ করে বসেন, তাহলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? যারা রুঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামী।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
একজন মুমিনের জীবনের পরম লক্ষ্য জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়া ও জান্নাতের অধিকারী হওয়া। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে এ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন রাখার চেষ্টা করতেন। এর জন্য যেমন তাদের সামনে জাহান্নামের কঠিন আযাব ও জান্নাতের পরম সুখ-শান্তির উপকরণসমূহ তুলে ধরতেন, তেমনি যেসকল আমল দ্বারা জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়া যায় ও জান্নাতের অধিকারী হওয়া যায় তাও বয়ান করতেন। আলোচ্য হাদীছে তিনি কী চরিত্রের লোক জান্নাতবাসী হবে এবং কেমন লোক জাহান্নামে যাবে তার নমুনা তুলে ধরেছেন। সাহাবায়ে কেরাম তো বটেই, কিয়ামত পর্যন্ত এ হাদীছের সকল শ্রোতা ও পাঠককে এটি জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। এখন আমাদের কর্তব্য জান্নাতবাসীর নমুনা অনুযায়ী নিজ জীবন গড়ে তোলা আর সাবধান থাকা যেন কোনওক্রমেই জাহান্নামবাসীর স্বভাব-চরিত্র নিজের মধ্যে শেকড় গাড়তে না পারে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে প্রশ্ন করেন যে, আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করব না কারা জান্নাতী? এ প্রশ্ন দ্বারা তিনি তাদের অন্তরে জান্নাত লাভ করা ও নিজেদেরকে জান্নাতীসুলভ ব্যক্তিরূপে গড়ে তোলার আগ্রহ জাগানোর চেষ্টা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা আগ্রহ ব্যক্তও করেছেন, যদিও বর্ণনায় বর্ণনাকারী তা উল্লেখ করেননি। কেননা সে কথা এমনিই বোঝা যায়। তারা আগ্রহ ব্যক্ত করলে তিনি বললেন- كل ضعيف متضعف لو أقسم على الله لأبره (তারা হচ্ছে প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি, যে মানুষের কাছেও দুর্বল গণ্য, যে আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ অবশ্যই তার শপথ রক্ষা করেন)। এখানে পাশাপাশি ضعيف ও متضعف এ দু'টি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। উভয়টির মূলধাতু ضعف , অর্থ দুর্বলতা। ضعيف বলা হয় ওই দুর্বল ব্যক্তিকে, যার পার্থিব আসবাব উপকরণ খুব কম এবং চারিত্রিক দিক থেকে বিনয়ী। متضعف শব্দটি দুইভাবে পড়া যায়- ع হরফটিতে তাশদীদ ও যবর দিয়ে متضعف অথবা ع হরফটিতে তাশদীদ ও যের দিয়ে متضعف । প্রথম অবস্থায় এর দ্বারা এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, লোকে দুনিয়াবী অবস্থার দুর্বলতাহেতু যাকে দুর্বল ও তুচ্ছ গণ্য করে এবং তার উপর নিজেদের বড়ত্ব প্রকাশ করে। দ্বিতীয় অবস্থায় বোঝানো হয় ওই ব্যক্তিকে, যে প্রচারবিমুখ এবং একজন তুচ্ছ ও সাধারণ লোকরূপে জীবনযাপন করে। কেউ বলেন, এর অর্থ এমন ব্যক্তি, যে আল্লাহর জন্য বিনীত থাকে এবং তাঁর উদ্দেশ্যে নিজেকে ছোট করে। সারকথা এ শব্দদু'টি দ্বারা এমন গরীব দীনদারকে বোঝানো হয়, যে নির্মোহ, বিনয়নম্র, প্রচারবিমুখ ও অতি সাধারণ জীবনযাপনকারী। বাক্যের পরবর্তী অংশটি প্রথম অংশের বিশেষণ, যা দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে এ শ্রেণীর লোকদের মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে- لو أقسم على الله لأبره (যে আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ অবশ্যই তার শপথ রক্ষা করেন)। অর্থাৎ তার শপথের মর্যাদা রক্ষার্থে সে যে উদ্দেশ্যে শপথ করেছে, আল্লাহ তাআলা তা পূর্ণ করেন। এ ব্যাপারে হযরত আনাস ইবনুন নাযর রাযি. ও তাঁর বোন রুবায়্যি রাযি.-এর ঘটনা উল্লেখযোগ্য। হযরত রুবায়্যি রাযি.-এর সঙ্গে একবার এক মহিলার কলহ দেখা দেয়। তাতে হযরত রুবায়্যি রাযি.-এর এক আঘাতে সে মহিলার একটি দাঁত ভেঙে যায়। তাঁর পক্ষের লোকজন সে মহিলার পক্ষের লোকজনকে অনুরোধ জানাল যেন তারা ক্ষমা করে দেয়। তারা ক্ষমা করতে রাজি হল না। তারপর অনুরোধ জানাল, তাহলে তোমরা এর অর্থমূল্য নিয়ে নাও। তাতেও রাজি হল না। তাদের এক দাবি- দাঁতের বদলে দাঁত, আমরা রুবায়্যিরও একটা দাঁত ভেঙ্গে দেব। শেষপর্যন্ত বিচার আসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদালতে। তিনি রায় দিলেন- রুবায়্যিরও দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হবে। এ রায় শুনে হযরত আনাস ইবনুন নাযর রাযি. বলে উঠলেন- রুবায়্যির দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হবে? ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওই আল্লাহর কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন! রুবায়্যির দাঁত ভাঙ্গা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কী বলছ হে আনাস, এটা তো আল্লাহর বিধান, কিসাস গ্রহণ তাঁর কিতাবের ফয়সালা? কিন্তু তাঁর একই কথা- তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। এটা কুরআনের বিধান ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফয়সালা অমান্য করা নয়; বরং আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আল্লাহ তাআলা কোনও সহজ সুরত পয়দা করে দেবেন। সে কারণেই তিনি কসম করে বলছিলেন- তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। আল্লাহ তাআলা তাঁর কসমের মর্যাদা রাখলেন। অপরপক্ষ কিসাস গ্রহণের দাবি ত্যাগ করল এবং অর্থদণ্ড গ্রহণে রাজি হয়ে গেল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকস্মিক পরিবর্তনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তারপর তিনি মন্তব্য করলেন- إن من عباد الله من لو أقسم على الله لأبره "আল্লাহর এমন কোনও কোনও বান্দাও আছে, যে আল্লাহর নামে কসম করলে আল্লাহ তা পূর্ণ করেন।২৪২ জাহান্নামীদের কিছু বৈশিষ্ট্য তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামীদের পরিচয় দান করেন- كل عتل جواظ مستكبر (তারা হচ্ছে প্রত্যেক রূঢ়, উদ্যত, অহংকারী ব্যক্তি)। ইমাম নববী রহ. عتل -এর অর্থ করেছেন কঠোর-কঠিনপ্রাণ। তিনি جواظ -এর অর্থ করেছেন, এমন ব্যক্তি, যে ধন-সম্পদ খুব সঞ্চয় করে কিন্তু তা থেকে গরীব-দুঃখীকে কিছু দেয় না । তিনি বলেন, কারও মতে এর অর্থ মোটাতাজা শরীরের এমন লোক, যে দর্পিত ভঙ্গিতে চলাফেরা করে। কেউ বলেন, খাটো ভুঁড়িওয়ালা লোক। শব্দদু'টির এছাড়া আরও ব্যাখ্যা আছে। যেমন কেউ বলেন, عتل অর্থ কাফের। দাউদী রহ. বলেন, মোটাতাজা শরীরের এমন লোক, যার ঘাড় মোটা ও পেট বড়। হারাবী রহ. বলেন, এমন ব্যক্তি, যে ধন-সম্পদ খুব সঞ্চয় করে কিন্তু তা থেকে গরীব দুঃখীকে কিছু দেয় না। আবার কেউ বলেন, খাঁটো দেহের স্থূলোদর ব্যক্তি। কারও মতে, এমন লোক, যে খুব বেশি পানাহার করে ও অন্যদের উপর জুলুম-অত্যাচার চালায়। কারও মতে এর অর্থ অত্যধিক কলহ-বিবাদকারী ও হীন স্বভাববিশিষ্ট। আবার কেউ বলেন, এমন কঠোর-কঠিন চরিত্রের লোক, যে ভালো কিছু মানতে চায় না। শব্দটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেন- هو الشديد الخلق المصحح، الأكول الشروب، الواجد للطعام والشراب، الظلوم للناس، رحيب الجوف ‘পরিপুষ্ট, শক্ত-সমর্থ, সুস্থ-সবল লোক, যে খুব বেশি পানাহার করে, পানাহার সামগ্রী যার হস্তগত, মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচারকারী ও স্থূলোদর ব্যক্তি।২৪৩ جواظ -এর অর্থ ইমাম নববী রহ. যা বলেছেন, বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে এর সমর্থনে হাদীছও উদ্ধৃত হয়েছে। হযরত ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এর অর্থ কী? তিনি বলেন, এমন লোক, যে খুব অর্থ-সম্পদ জমা করে, কিন্তু সে কৃপণ, তা থেকে কাউকে কিছু দেয় না। ইমাম খাত্তাবী ও জাওহারী রহ. শব্দটির অর্থ করেছেন স্থূলদেহী ও চালচলনে অহংকারী। নেহায়া গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, এর অর্থ খাটো, লোভাতুর ও স্থূলোদর, পেট ভরে খাওয়া ছাড়া যার অন্য কোনও চিন্তা নেই। এ শব্দদু'টির যেসকল অর্থ বর্ণিত হয়েছে তা সবই নিন্দনীয় স্বভাবের পরিচায়ক। এর কোনওটিই ইসলাম পসন্দ করে না। বিভিন্ন হাদীছে এর নিন্দা জানানো হয়েছে ও মুমিনদেরকে এর ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। যেমন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, কঠোর-কঠিন স্বভাবের লোক আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। লোভ-লালসাবশে অর্থ সঞ্চয় করা এবং তা থেকে গরীব-দুঃখীকে কিছু না দেওয়া কাফের-মুনাফিকের স্বভাব। অহংকারী ও দর্পিত স্বভাবের লোক জান্নাতে যাবে না। ভোগ-বিলাসিতায় মেতে থাকার কারণে মোটাতাজা হয়ে যাওয়াটা আখেরাতবিমুখিতার লক্ষণ। তর্কপ্রবণতা ও সত্যগ্রহণে অস্বীকৃতি ছিল ঘোর কাফেরদের খাসলাত। কুরআন মাজীদে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দদু'টির উল্লেখ করে আমাদের সাবধান করেছেন যে, এর দ্বারা যে নিন্দনীয় স্বভাব বোঝানো হয়ে থাকে তা থেকে তোমরা দূরে থাকবে। কেননা এ স্বভাবের লোক জাহান্নামে যাবে। এ হাদীছে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের যে স্বভাব উল্লেখ করা হয়েছে তা দ্বারা এ কথা বোঝানো উদ্দেশ্য নয় যে, কেবল এই স্বভাবের লোকেরাই জান্নাতে বা জাহান্নামে যাবে, এছাড়া আর কেউ যাবে না। বরং বোঝানো উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসকল সৎগুণের কারণে মানুষ জান্নাতে যাবে এবং যেসকল অসৎগুণের কারণে জাহান্নামে যাবে, এগুলোও তার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও এমন অনেক সৎগুণ আছে, জান্নাতলাভের জন্য যা জরুরি এবং এমন অনেক মন্দ স্বভাব আছে, যা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তাই সেসব গুণের ব্যাপারেও মুমিনদের সচেতন থাকা অবশ্যকর্তব্য। এ হাদীছে জাহান্নামীদের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে যে, তারা অর্থাৎ অহংকারী। অহংকার অত্যন্ত নিন্দনীয় স্বভাব। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন لا يدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر ‘যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।২৪৪ প্রশ্ন হচ্ছে, অহংকার কী? অনেকে সুন্দর পোশাক পরা, ভালো খাওয়া-দাওয়া করা ও পরিপাটি চলাফেরাকে অহংকার মনে করে থাকে। এ ধারণা ঠিক নয়। জীবনমাণে আপন সামর্থ্যের প্রকাশ দূষণীয় নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা কাম্যও। আল্লাহ তাআলা যাকে যে সামর্থ্য দান করেছেন, কাজকর্মে তা প্রকাশ করা শোকরেরও অন্তর্ভুক্ত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন إن الله يحب أن يرى أثر نعمته على عبده “আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার উপর নিজ নিআমতের প্রকাশ দেখতে পসন্দ করেন।২৪৫ চালচলন ও বেশভূষায় সামর্থ্যের প্রকাশ দোষের হয় তখনই, যখন তুলনামূলক কম সামর্থ্যবানকে হেয়জ্ঞান করা হয়। সেটা অহংকারের মধ্যে পড়ে। সুতরাং উল্লিখিত হাদীছটি শুনে এক সাহাবী বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোনও কোনও মানুষ এমন আছে, যে ভালো জামা-জুতা পসন্দ করে, সুন্দর হয়ে চলাটা তার প্রিয়। এর উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। অর্থাৎ তুমি যা বলছ তা অহংকার নয়। তারপর তিনি অহংকারের সংজ্ঞা দান করলেন যে الكبر بطر الحق وغمط الناس ‘অহংকার হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।২৪৬ এর দ্বারা অহংকার কী তা বোঝা গেল। সুতরাং কোনও বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে মতভিন্নতা দেখা দিলে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা চাই কার মত সত্য ও সঠিক। যদি স্পষ্ট হয়ে যায় প্রতিপক্ষের মত সঠিক, তবে সে যে-ই হোক না কেন তা মেনে নেওয়া চাই। সে গরীব, শিক্ষা-দীক্ষায় কম বা সামাজিক অবস্থান নিচে, সে তুলনায় আমি উপরে, এ জাতীয় চিন্তাভাবনার কারণে যদি তার মত মেনে নিতে কুণ্ঠাবোধ হয়, তবে নিঃসন্দেহে তা অহংকার। এমনিভাবে কাউকে কোনওদিক থেকে নিজের চেয়ে কম মনে হলে সে কারণে তাকে তুচ্ছ করা হলে তা অহংকার বটে। আর আলোচ্য হাদীছ দ্বারা যখন জানা গেল অহংকার জাহান্নামীদের বৈশিষ্ট্য, তখন অবশ্যই এ জাতীয় আচরণ পরিহার করে চলতে হবে। এটাই এ হাদীছের দাবি। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. এ হাদীছ দ্বারা ধারণা পাওয়া যায় যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লক্ষ্যবস্তু ছিল উম্মতকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো ও তাদেরকে জান্নাতের জন্য প্রস্তুত করা। খ. জান্নাতের আকাঙ্ক্ষী মুমিনদের একান্ত কর্তব্য সাদামাঠা জীবনযাপন করা ও নিজেকে সাধারণদের অন্তর্ভুক্ত করে রাখা। প্রভাবশালী হয়ে থাকা ও জশখ্যাতির পেছনে পড়াটা জান্নাতলাভের পক্ষে অন্তরায়। গ. মুমিনদের চেষ্টা করা উচিত অন্তরে কঠোরতার পরিবর্তে নম্রতা ও দয়ামায়া সৃষ্টির চেষ্টা করা। ঘ. কিছুতেই অর্থবিত্তের মোহে পড়তে নেই। নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত করা উচিত। ঙ. চলাফেরায় দর্পিতভঙ্গি অত্যন্ত নিন্দনীয়। চলাফেরায় বিনয়ভঙ্গি বজায় রাখাই প্রকৃত মুমিনের শান। চ. ভোগ-বিলাসিতা পরিহার করে যথাসম্ভব যুহদ ও সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া চাই। ২৪২. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৬১১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৫৯৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪৭৫৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৬৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৭০৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৮৮৩; তহাবী, শারহু মাআনিল আছার, হাদীছ নং ৪৯৯৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫২৯ ২৪৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৯৯১ ২৪৪. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৫৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৯১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৬৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৭৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৭৮৯; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৬৬৬৮ ২৪৫. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৮১৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮১০৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪১৭; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬০৯৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪২৫১; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২৮১; আল মুজামুল আওসাত, হাদীছ নং ৪৬৬৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩১১৯ ২৪৬. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৯২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৯৯; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৫৫৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৬৬; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৬৪৭৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৭৮২; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫৮৭

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন