শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৯৮৯
দুই (ওয়াক্তের) সালাত একত্রে আদায় করার বিধান কি?
৯৮৯। আবু বাকরা (রাযিঃ).... উসমান ইবন আব্দিল্লাহ্ ইব্‌ন মাওয়াহব (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: একবার আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, সালাতের মধ্যে ত্রুটি বা অবহেলা কি? তিনি বললেন, অপর ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত তা বিলম্ব করা।

ব্যাখ্যা
(বিরোধীগণ) বলেছেন, এর উপর সেই হাদীসটিও প্রমাণ বহন করে, যা রাসূলুল্লাহ্((ﷺ)) থেকে বর্ণিত আছে, যখন তাঁকে সালাতের ওয়াক্তসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন তিনি প্রথম দিনে আসরের সালাত আদায় করেছেন, যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হয়ে গিয়েছিল। তারপর দ্বিতীয় দিন যুহরের সালাত হুবহু ওই (প্রথম দিন আসরের) ওয়াক্তে-ই আদায় করেছেন। এটা প্রমাণ বহন করে যে, এটা উভয়ের ওয়াক্ত।

উত্তরে তাদেরকে বলা হবে, এতে আপনাদের উল্লিখিত বিষয়ের স্বপক্ষে কোনরূপ প্রমাণ নেই। যেহেতু এতে এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, তাঁর উদ্দেশ্য হল, তিনি দ্বিতীয় দিন যুহরের সালাত সেই ওয়াক্তের নিকটবর্তী সময়ে আদায় করেছেন, যেই ওয়াক্তে তিনি প্রথম দিন আসরের সালাত আদায় করেছিলেন। আমরা এই বিষয়টি এবং এর দলীল 'সালাতের ওয়াক্ত' অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছি। এর স্বপক্ষে দলীল হল রাসূলুল্লাহ্((ﷺ)) -এর এই উক্তি, “এ দু’ ওয়াক্তের মাঝখানে হলো (সালাতের মুস্তাহাব) ওয়াক্ত।” যদি বিষয়টি এরূপ হত যেমনটি আমাদের বিরোধীগণ বলেন, তাহলে ওই দু'টার পূর্বাপর সমস্তটা ওয়াক্ত হওয়ার কারণে “এর মাঝখানে ওয়াক্ত” থাকবে না এবং না এ বিষয়ের দলীল হবে যে, ওই সমস্ত সালাতসমূহ থেকে প্রতিটি সালাতের ওয়াক্ত অন্য ওয়াক্ত অপেক্ষা পৃথক, যার সাথে অন্য সালাতের কোন সম্পর্ক নেই।

দ্বিতীয় দলীল
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিঃ) ও আবু হুরায়রা (রাযিঃ) ওই বিষয়টি নবী থেকে 'সালাতের ওয়াক্ত' (অনুচ্ছেদে) রিওয়ায়াত করেছেন। এরপর তাঁরা উভয়ে বলেছেন, “ওই দু'টি সালাতের ত্রুটি হল পরবর্তী ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত পরিত্যাগ (বিলম্ব) করা”। এতে সাব্যস্ত হল, প্রতিটি সালাতের ওয়াক্ত পরবর্তী সালাতের ওয়াক্তের পরিপন্থী। হাদীসসমূহের সঠিক মর্ম নির্ধারণে এটাই হচ্ছে এ অনুচ্ছেদের বিশ্লেষণ।

ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
বস্তুত যুক্তির আলোকে এর বিশ্লেষণ হল- আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, তাঁরা (ফকীহ আলিমগণ) এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ফজরের সালাতকে এর ওয়াক্তের আগে বা পরে আদায় করা সমীচীন নয়। যেহেতু এর নির্দিষ্ট একটি ওয়াক্ত রয়েছে। যা অন্য সালাত সমূহের ওয়াক্ত নয়। সুতরাং যুক্তির দাবি হল অনুরূপভাবে অবশিষ্ট সালাতগুলোর প্রতিটি ওয়াক্ত অপরটির ওয়াক্ত থেকে পৃথক হবে এবং ওইগুলোকে সংশ্লিষ্ট ওয়াক্তের আগে বা পরে আদায় করা জায়িয হবে না।

যদি কোন ব্যক্তি আরাফাত ও মুযদালিফা'র সালাতকে (একত্রীকরণের) কারণ হিসাবে উত্থাপন করে তাহলে তাকে বলা হবেঃ আমরা ফকীহ আলিমদেরকে দেখতে পাচ্ছি, তাঁরা এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, যদি ইমাম (হজ্জের সময়) আরাফাতে অন্য দিনের ন্যায় যুহরের সালাত সংশ্লিষ্ট ওয়াক্তে এবং আসরের সালাত সংশ্লিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করেন, তাহলে তিনি গোনাহগার হবেন।

অনুরূপভাবে মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাতের প্রতিটি অন্যদিনের ন্যায় নিজ নিজ ওয়াক্তে আদায় করলেও গোনাহগার হবেন।

আর যদি মুকীম অবস্থায় এরূপ করেন অথবা মুসাফির অবস্থায় আরাফাত ও মুযদালিফা ব্যতীত অন্যত্র এরূপ করেন (প্রতিটি সালাতকে নিজ নিজ ওয়াক্তে আদায় করেন) তাহলে গোনাহগার হিসাবে বিবেচিত হবেন না। এতে সাব্যস্ত হল যে, আরাফাত ও মুযদালিফা (এবং তাও হজ্জের সময়) এর জন্য এই বিধান নির্দিষ্ট এবং এই দুই স্থান ব্যতীত অন্য স্থানের জন্য ভিন্ন বিধান রয়েছে।

যা কিছু আমরা উল্লেখ করেছি, এতে সাব্যস্ত হল যে, দুই সালাত একত্রে আদায় করা প্রসঙ্গে আমরা রাসূলুল্লাহ্((ﷺ)) থেকে যা রিওয়ায়াত করেছি, তা হল প্রথম সালাতকে বিলম্বে এবং দ্বিতীয়টি (পরবর্তীটি) কে জলদি আদায় করা।

অনুরূপভাবে তাঁর যামানার পরে সাহাবাগণও দুই সালাতকে এভাবে একত্রে আদায় করতেনঃ
989 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ، قَالَ: ثنا أَبُو دَاوُدَ، قَالَ: ثنا قَيْسٌ، وَشَرِيكٌ، أَنَّهُمَا سَمِعَا عُثْمَانَ بْنَ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَوْهَبٍ، قَالَ: سُئِلَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: مَا التَّفْرِيطُ فِي الصَّلَاةِ؟ قَالَ: «أَنْ تُؤَخَّرَ حَتَّى يَجِيءَ وَقْتُ الْأُخْرَى» قَالُوا: وَقَدْ دَلَّ عَلَى ذَلِكَ أَيْضًا , مَا قَدْ رُوِيَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَمَّا سُئِلَ عَنْ مَوَاقِيتِ الصَّلَاةِ , فَصَلَّى الْعَصْرَ فِي الْيَوْمِ الْأَوَّلِ حِينَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ , ثُمَّ صَلَّى الظُّهْرَ فِي الْيَوْمِ الثَّانِي فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ بِعَيْنِهِ , فَدَلَّ ذَلِكَ أَنَّهُ وَقْتٌ لَهُمَا جَمِيعًا. قِيلَ لَهُمْ: مَا فِي هَذَا حُجَّةٌ تُوجِبُ مَا ذَكَرْتُمْ , لِأَنَّ هَذَا قَدْ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ أُرِيدَ بِهِ أَنَّهُ صَلَّى الظُّهْرَ فِي الْيَوْمِ الثَّانِي فِي قُرْبِ الْوَقْتِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ الْعَصْرَ فِي الْيَوْمِ الْأَوَّلِ , وَقَدْ ذَكَرْنَا ذَلِكَ وَالْحُجَّةَ فِيهِ فِي بَابِ مَوَاقِيتِ الصَّلَاةِ. وَالدَّلِيلُ عَلَى ذَلِكَ قَوْلُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ «الْوَقْتُ فِيمَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ» فَلَوْ كَانَ كَمَا قَالَ: الْمُخَالِفُ لَنَا , لَمَا كَانَ بَيْنَهُمَا وَقْتٌ إِذَا كَانَ مَا قَبْلَهُمَا وَمَا بَعْدَهُمَا وَقْتٌ كُلُّهُ , وَلَمْ يَكُنْ ذَلِكَ دَلِيلًا عَلَى أَنَّ كُلَّ صَلَاةٍ مِنْ تِلْكَ الصَّلَوَاتِ مُنْفَرِدَةٌ بِوَقْتٍ غَيْرِ وَقْتِ غَيْرِهَا مِنْ سَائِرِ الصَّلَوَاتِ. وَحُجَّةٌ أُخْرَى أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ , وَأَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَدْ رَوَيَا ذَلِكَ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَوَاقِيتِ الصَّلَاةِ ثُمَّ قَالَاهُمَا فِي التَّفْرِيطِ فِي الصَّلَاةِ أَنَّهُ تَرْكُهَا حَتَّى يَدْخُلَ وَقْتُ الَّتِي بَعْدَهَا. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ وَقْتَ كُلِّ صَلَاةٍ مِنَ الصَّلَوَاتِ خِلَافُ وَقْتِ الصَّلَاةِ الَّتِي بَعْدَهَا فَهَذَا وَجْهُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ. وَأَمَّا وَجْهُ ذَلِكَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَاهُمْ أَجْمَعُوا أَنَّ صَلَاةَ الصُّبْحِ لَا يَنْبَغِي أَنْ تُقَدَّمَ عَلَى وَقْتِهَا وَلَا تُؤَخَّرَ عَنْهُ فَإِنَّ وَقْتَهَا وَقْتٌ لَهَا خَاصَّةً دُونَ غَيْرِهَا مِنَ الصَّلَاةِ. فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ كَذَلِكَ سَائِرُ الصَّلَوَاتِ , كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ مُنْفَرِدَةٌ لِوَقْتِهَا دُونَ غَيْرِهَا فَلَا يَنْبَغِي أَنْ يُؤَخَّرَ عَنْ وَقْتِهَا وَلَا يُقَدَّمَ قَبْلَهُ. فَإِنِ اعْتَلَّ مُعْتَلٌّ بِالصَّلَاةِ بِعَرَفَةَ وَبِجَمْعٍ. قِيلَ لَهُ قَدْ رَأَيْنَاهُمْ أَجْمَعُوا أَنَّ الْإِمَامَ بِعَرَفَةَ , لَوْ صَلَّى الظُّهْرَ فِي وَقْتِهَا , فِي سَائِرِ الْأَيَّامِ , وَصَلَّى الْعَصْرَ فِي وَقْتِهَا فِي سَائِرِ الْأَيَّامِ , وَفَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ فِي الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِمُزْدَلِفَةَ , فَصَلَّى كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا فِي وَقْتِهَا , كَمَا صَلَّى فِي سَائِرِ الْأَيَّامِ , كَانَ مُسِيئًا. وَلَوْ فَعَلَ ذَلِكَ , وَهُوَ مُقِيمٌ أَوْ فَعَلَهُ , وَهُوَ مُسَافِرٌ , فِي غَيْرِ عَرَفَةَ , وَجَمْعٍ , لَمْ يَكُنْ مُسِيئًا. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ عَرَفَةَ وَجَمْعًا , مَخْصُوصَتَانِ بِهَذَا الْحُكْمِ , وَأَنَّ حُكْمَ مَا سِوَاهُمَا فِي ذَلِكَ , بِخِلَافِ حُكْمِهِمَا. فَثَبَتَ بِمَا ذَكَرْنَا أَنَّ مَا رَوَيْنَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْجَمْعِ بَيْنَ الصَّلَاتَيْنِ أَنَّهُ تَأْخِيرُ الْأُولَى , وَتَعْجِيلُ الْآخِرَةِ. وَكَذَلِكَ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَعْدِهِ يَجْمَعُونَ بَيْنَهُمَا
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৯৮৯ | মুসলিম বাংলা