শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৭৭
তায়াম্মুমের পদ্ধতি কিরূপ
৬৭৭। মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ (রাহঃ)..... আসলা তামিমী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এক বার এক সফরে আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আসলা! উঠ, আমাদের জন্য সওয়ারী প্রস্তুত কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার (নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার) পর আমি জানাবাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছি, তিনি আমার ব্যাপারে নীরব থাকলেন। অবশেষে জিবরাঈল (আ) তাঁর নিকট তায়াম্মুমের আয়াত নিয়ে উপস্থিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে আসলা! উঠ, পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। এটা দুবার (মাটিতে) মারা ঃ একবার তোমার চেহারার জন্য, একবার তোমার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত) উপর নীচের জন্য। যখন আমরা পানি পর্যন্ত পৌঁছালাম তিনি বললেন, হে আস্লা! উঠ এবং গোসল কর।
ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ বস্তুত যখন আলিমগণ তায়াম্মুমের পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ করেছেন আর এ বিষয়ে এই সমস্ত রিওয়ায়াত ও বিরোধপূর্ণ, তাই আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তির দিকে প্রত্যাবর্তন করার প্রয়াস পাব, যেন আমরা এর দ্বারা এই সমস্ত অভিমত থেকে বিশুদ্ধ অভিমতটি বের করতে পারি। সুতরাং আমরা লক্ষ্য করেছি এবং উযূকে সেই সমস্ত অঙ্গের উপর পেয়েছি, যা আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। আর তায়াম্মুম কতেক অঙ্গ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তা মাথা এবং উভয় পা থেকে বাদ নেয়া হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে তায়াম্মুম উযূর কতেক অঙ্গের উপর সংঘটিত হয়। সুতরাং এতে সেই ব্যক্তির অভিমত বাতিল হয়ে গেল, যিনি এটা (তায়াম্মুম)-কে কাঁধ পর্যন্ত বলেছেন। যেহেতু যখন এটা মাথা এবং পা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে অথচ তা উযূর অঙ্গ; অতএব অধিক যুক্তি সঙ্গত হল যে, সেই সমস্ত অঙ্গের উপর তায়াম্মুম ওয়াজিব না হওয়া, যা উযূতে (ধৌত) করা হয় না।
তারপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহের বিষয়ে বিরোধ করা হয়েছে যে, এর তায়াম্মুম করা হবে কি না? আমরা দেখতে পাচ্ছি মাটির দ্বারা চেহারার তায়াম্মুম করা হয় যেমনিভাবে উযূতে তা পানি দ্বারা ধৌত করা হয়। মাথা এবং পা-কে দেখতে পাচ্ছি এর কোনটিরই তায়াম্মুম হয় না। তাহলে যে অঙ্গের কতেক অংশের তায়াম্মুম বাদ দেয়া হয়েছে, তার পুরা অঙ্গের তায়াম্মুমও বাদ হয়ে যায়। আর যে অংশের উপর তায়াম্মুম ওয়াজিব করা হয়েছে সেখানে উযূ এবং তায়াম্মুমের অভিন্ন বিধান রাখা হয়েছে, যেহেতু তায়াম্মুমকে উযূর বিকল্প সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং যখন সাব্যস্ত হল যে, পানি থাকা অবস্থায় হাতের যে অংশকে ধৌত করা হয়, পানি না থাকা অবস্থায় তায়াম্মুমও সেই অংশেরই করা হবে। এতে প্রমাণিত হল যে, হাতের তায়াম্মুম কনুই পর্যন্ত। কিয়াস ও যুক্তির এটাই দাবি, যেমনিভাবে আমরা বর্ণনা করেছি। আর এটা ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ), ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত।
ইবন উমার (রাযিঃ) ও জাবির (রাযিঃ) থেকে বিষয়টি বর্ণিত আছে :
ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ বস্তুত যখন আলিমগণ তায়াম্মুমের পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ করেছেন আর এ বিষয়ে এই সমস্ত রিওয়ায়াত ও বিরোধপূর্ণ, তাই আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তির দিকে প্রত্যাবর্তন করার প্রয়াস পাব, যেন আমরা এর দ্বারা এই সমস্ত অভিমত থেকে বিশুদ্ধ অভিমতটি বের করতে পারি। সুতরাং আমরা লক্ষ্য করেছি এবং উযূকে সেই সমস্ত অঙ্গের উপর পেয়েছি, যা আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। আর তায়াম্মুম কতেক অঙ্গ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তা মাথা এবং উভয় পা থেকে বাদ নেয়া হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে তায়াম্মুম উযূর কতেক অঙ্গের উপর সংঘটিত হয়। সুতরাং এতে সেই ব্যক্তির অভিমত বাতিল হয়ে গেল, যিনি এটা (তায়াম্মুম)-কে কাঁধ পর্যন্ত বলেছেন। যেহেতু যখন এটা মাথা এবং পা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে অথচ তা উযূর অঙ্গ; অতএব অধিক যুক্তি সঙ্গত হল যে, সেই সমস্ত অঙ্গের উপর তায়াম্মুম ওয়াজিব না হওয়া, যা উযূতে (ধৌত) করা হয় না।
তারপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহের বিষয়ে বিরোধ করা হয়েছে যে, এর তায়াম্মুম করা হবে কি না? আমরা দেখতে পাচ্ছি মাটির দ্বারা চেহারার তায়াম্মুম করা হয় যেমনিভাবে উযূতে তা পানি দ্বারা ধৌত করা হয়। মাথা এবং পা-কে দেখতে পাচ্ছি এর কোনটিরই তায়াম্মুম হয় না। তাহলে যে অঙ্গের কতেক অংশের তায়াম্মুম বাদ দেয়া হয়েছে, তার পুরা অঙ্গের তায়াম্মুমও বাদ হয়ে যায়। আর যে অংশের উপর তায়াম্মুম ওয়াজিব করা হয়েছে সেখানে উযূ এবং তায়াম্মুমের অভিন্ন বিধান রাখা হয়েছে, যেহেতু তায়াম্মুমকে উযূর বিকল্প সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং যখন সাব্যস্ত হল যে, পানি থাকা অবস্থায় হাতের যে অংশকে ধৌত করা হয়, পানি না থাকা অবস্থায় তায়াম্মুমও সেই অংশেরই করা হবে। এতে প্রমাণিত হল যে, হাতের তায়াম্মুম কনুই পর্যন্ত। কিয়াস ও যুক্তির এটাই দাবি, যেমনিভাবে আমরা বর্ণনা করেছি। আর এটা ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ), ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত।
ইবন উমার (রাযিঃ) ও জাবির (রাযিঃ) থেকে বিষয়টি বর্ণিত আছে :
677 - وَقَدْ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْحَجَّاجِ , قَالَ: ثنا عَلِيُّ بْنُ مَعْبَدٍ , قَالَ: ثنا أَبُو يُوسُفُ , عَنِ الرَّبِيعِ بْنِ بَدْرٍ , قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ جَدِّي , عَنْ أَسْلَعَ التَّمِيمِيِّ قَالَ: كُنْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ , فَقَالَ لِي: «يَا أَسْلَعَ قُمْ فَارْحَلْ لَنَا» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَصَابَتْنِي بَعْدَكَ جَنَابَةٌ , فَسَكَتَ عَنِّي حَتَّى أَتَاهُ جَبْرَائِيلُ بِآيَةِ التَّيَمُّمِ فَقَالَ لِي: " يَا أَسْلَعَ قُمْ فَتَيَمَّمَ صَعِيدًا طَيِّبًا , ضَرْبَتَيْنِ , ضَرْبَةً لِوَجْهِكَ وَضَرْبَةً لِذِرَاعَيْكَ , ظَاهِرِهِمَا وَبَاطِنِهِمَا. فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَى الْمَاءِ , قَالَ: يَا أَسْلَعَ , قُمْ فَاغْتَسِلْ " فَلَمَّا اخْتَلَفُوا فِي التَّيَمُّمِ كَيْفَ هُوَ , وَاخْتَلَفَتْ هَذِهِ الرِّوَايَاتُ فِيهِ , رَجَعْنَا إِلَى النَّظَرِ فِي ذَلِكَ , لِنَسْتَخْرِجَ بِهِ مِنْ هَذِهِ الْأَقَاوِيلِ قَوْلًا صَحِيحًا. فَاعْتَبَرْنَا ذَلِكَ , فَوَجَدْنَا الْوُضُوءَ عَلَى الْأَعْضَاءِ الَّتِي ذَكَرَهَا اللهُ تَعَالَى فِي كِتَابِهِ , وَكَانَ التَّيَمُّمُ قَدْ أَسْقَطَ عَنْ بَعْضِهَا , فَأَسْقَطَ عَنِ الرَّأْسِ وَالرِّجْلَيْنِ , فَكَانَ التَّيَمُّمُ هُوَ عَلَى بَعْضِ مَا عَلَيْهِ الْوُضُوءُ. فَبَطَلَ بِذَلِكَ قَوْلُ مَنْ قَالَ: إِنَّهُ إِلَى الْمَنَاكِبِ , لِأَنَّهُ لَمَّا بَطَلَ عَنِ الرَّأْسِ وَالرِّجْلَيْنِ , وَهُمَا مِمَّا يُوَضَّأُ كَانَ أَحْرَى أَنْ لَا يَجِبَ عَلَى مَا لَا يُوَضَّأُ. ثُمَّ اخْتُلِفَ فِي الذِّرَاعَيْنِ , هَلْ يُيَمَّمَانِ أَمْ لَا؟ . فَرَأَيْنَا الْوَجْهَ يُيَمَّمُ بِالصَّعِيدِ , كَمَا يُغْسَلُ بِالْمَاءِ , وَرَأَيْنَا الرَّأْسَ وَالرِّجْلَيْنِ لَا يُيَمَّمُ مِنْهُمَا شَيْءٌ. فَكَانَ مَا سَقَطَ التَّيَمُّمُ عَنْ بَعْضِهِ سَقَطَ عَنْ كُلِّهِ , وَكَانَ مَا وَجَبَ فِيهِ التَّيَمُّمُ كَانَ كَالْوُضُوءِ سَوَاءً , لِأَنَّهُ جُعِلَ بَدَلًا مِنْهُ. فَلَمَّا ثَبَتَ أَنَّ بَعْضَ مَا يُغْسَلُ مِنَ الْيَدَيْنِ فِي حَالِ وُجُودِ الْمَاءِ يُيَمَّمُ فِي حَالِ عَدَمِ الْمَاءِ , ثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ التَّيَمُّمَ فِي الْيَدَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ قِيَاسًا وَنَظَرًا عَلَى مَا بَيَّنَّا مِنْ ذَلِكَ. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. وَقَدْ رُوِيَ ذَلِكَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , وَجَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
