শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬১৫
জুতার উপর মাসাহ্‌ করা।
৬১৫। আবু বাকরা (রাহঃ).... আবু যাবইয়ান (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আলী (রাযিঃ) কে দেখেছেন, তিনি দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন। তারপর পানি চেয়ে এনে উযূ করেছেন এবং নিজের চপ্পলের উপর মাসেহ করেছেন। এরপর মসজিদে প্রবেশ করেছেন এবং চপ্পল খুলে সালাত আদায় করেছেন।

পক্ষান্তরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাঁদের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা চপ্পলের উপর মাসেহ করাকে জায়িয মনে করিনা। এই সম্পর্কে তাদের দলীল হল নিম্নরূপ : সম্ভবত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চপ্পলের উপর মাসেহ্ এজন্য করেছেন যে, এর নীচে মোজা ছিল এবং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মোজা মাসেহ করা, চপ্পল মাসেহ করা নয়। আর মোজা এরূপ বস্তু দ্বারা প্রস্তুত ছিল যদি তা চপ্পল ব্যতীত হত, তখনও এর উপর মাসেহ্ জায়িয হত। সুতরাং মাসেহের দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য মোজার উপর মাসেহ ই ছিল। তিনি চপ্পল এবং মোজা উভয়ের উপর মাসেহ করেছেন, তাহারাতের জন্য ছিল মোজার উপর মাসেহ্ আর চপ্পলের উপর ছিল অতিরিক্ত। নিম্নোক্ত হাদীসে এর বর্ণনা নিম্নরূপঃ
615 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ قَالَ: ثنا أَبُو دَاوُدَ , وَوَهْبٌ قَالَا: ثنا شُعْبَةُ , عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ عَنْ أَبِي ظَبْيَانَ: أَنَّهُ رَأَى عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بَالَ قَائِمًا , ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ , فَتَوَضَّأَ , وَمَسَحَ عَلَى نَعْلَيْهِ , ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ , فَخَلَعَ نَعْلَيْهِ , ثُمَّ صَلَّى " وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: لَا نَرَى الْمَسْحَ عَلَى النَّعْلَيْنِ. وَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لَهُمْ فِي ذَلِكَ أَنَّهُ قَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَسَحَ عَلَى نَعْلَيْنِ تَحْتَهُمَا جَوْرَبَانِ , وَكَانَ قَاصِدًا بِمَسْحِهِ ذَلِكَ إِلَى جَوْرَبَيْهِ , لَا إِلَى نَعْلَيْهِ. وَجَوْرَبَاهُ مِمَّا لَوْ كَانَا عَلَيْهِ بِلَا نَعْلَيْنِ , جَازَ لَهُ أَنْ يَمْسَحَ عَلَيْهِمَا , فَكَانَ مَسْحُهُ ذَلِكَ مَسْحًا أَرَادَ بِهِ الْجَوْرَبَيْنِ , فَأَتَى ذَلِكَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ وَالنَّعْلَيْنِ فَكَانَ مَسْحُهُ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ هُوَ الَّذِي تَطَهَّرَ بِهِ , وَمَسْحُهُ عَلَى النَّعْلَيْنِ فَضْلٌ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সিদ্ধান্ত এই যে, সুতার মোজা মোটা হলে তার উপর মাসেহ করা যাবে। মোটা মোজা বলতে ঐ মোজাকে বুঝায় যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে। এক. বাঁধা ছাড়াই পায়ে আটকে থাকে, দুই. জুতোবিহীন শুধু মোজা পায়ে দিয়ে চললেও সহজে ছিড়ে যায় না এবং তিন. মোজার উপরে পানি ঢেলে দিলে সহজে ভেতরে প্রবেশ করে না। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেলে সুতার তৈরী উক্ত মোটা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয। (হিদায়াহ: ১/৬১)
ফায়দা : সুতি মোজার ক্ষেত্রে ইমামগণ যে কঠোরতা করেছেন তার মূল কারণ হলো: কুরআন বলেছে পা ধুয়ার কথা; আর অন্য একটি আয়াত দ্বারাই কেবল কুরআনের উক্ত হুকুমের স্থলাভিষিক্ত বিকল্প কোন কিছুর উপর আমল করা যেতে পারে। কোন হাদীস দ্বারাও কুরআনের হুকুমের স্থলাভিষিক্ত বিকল্প কোন কিছু গ্রহণ করা যায় না; যদি সে হাদীস মুতাওয়াতির না হয়। এ শর্ত মোতাবেক خفّ অর্থাৎ চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করার হাদীসগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় তা দ্বারা কুরআনে বর্ণিত পা ধুয়ার হুকুমের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু جورب অর্থাৎ মোটা সুতার মোজার উপর মাসেহ করার হাদীস যেহেতু সে মানের নয় তাই এর দ্বারা কুরআনের হুকুমের বিকল্প গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই। তবে মোজা যদি পূর্বোক্ত বর্ণনা মোতাবেক খুব মোটা হয় তাহলে চামড়ার মোজার সাথে বৈশিষ্ট্যগত সাদৃশ্যের কারণে উক্ত হুকুমের আওতায় আসতে পারে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৬১৫ | মুসলিম বাংলা