শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬১১
যার নিকট শুধু খেজুরের নাবীয (ভিজানো পানি) রয়েছে সে এর দ্বারা উযূ করবে, না তায়াম্মুম করবে
৬১১। রবীউল মুয়াযিন (রাহঃ)...... আলকামা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি ইবন মাসউদ (রাযিঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, জিন-রাতে নবী -এর সঙ্গে কেউ ছিল? তিনি বললেন : আমাদের থেকে কেউ তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। কিন্তু আমরা এক রাতে তাঁকে পাচ্ছিলাম না। এতে আমরা বললাম, সম্ভবত তাঁকে কেউ উড়িয়ে নিয়ে গেছে অথবা তাঁকে কোন ধোঁকা দেয়া হয়েছে। তারপর আমরা তার খোঁজে গিরিপথে এবং উপত্যাকায় ছড়িয়ে পড়লাম এবং আমরা নিতান্ত খারাপ রাত অতিবাহিত করলাম। লোকেরা রাতব্যাপী বলতে লাগল যে, তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিংবা তাঁকে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। (এরপর তিনি ফিরে আসার পর) বললেন : আমার নিকট জিনদের দূত এসেছিল, আমি তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে তাদের নিদর্শনাদিও দেখিয়ে দেন।

ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর বিশ্লেষণ

বস্তুত এই আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রাযিঃ) জিনরাতে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর সঙ্গে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। যদি এ বিষয়টিকে সনদের বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হয়, তাহলে এই হাদীসটি যাতে অস্বীকৃতি রয়েছে-এর সূত্র ও মূল পাঠের (মতনের) সুদৃঢ়তা এবং রাবীদের সাবাত (আদালাত ও স্মৃতিশক্তি)-এর কারণে সর্বোত্তমরূপে বিবেচিত। আর যদি যুক্তির নিরিখে লক্ষ্য করা হয়, তাহলে আমরা এক ঐকমত্যের নীতি দেখছি যে, কিশমিশের নাবীয এবং সিরকা দ্বারা উযূ করা যাবে না। সুতরাং এরই ভিত্তিতে যুক্তির দাবি হচ্ছে যে, খেজুরের নাবীয (এর বিধান) ও অনুরূপ হবে।
আলিমদের ঐকমত্য যে, পানি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় খেজুরের নাবীয দ্বারা উযূ করা যাবে না। যেহেতু তা পানি নয়। সুতরাং যখন পানি থাকা অবস্থায় তা পানির বিধান থেকে বহির্ভূত, তাহলে পানি না থাকা অবস্থায়ও অনুরূপ হবে। আর ইবন মাসউদ (রাযিঃ)-এর হাদীস, যাতে খেজুরের নাবীয দ্বারা উযূ করার বিষয়টি উল্লিখিত আছে; তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ তা দ্বারা মুসাফির অবস্থায় নয় বরং মুকীম অবস্থায় উযূ করেছেন। যেহেতু তিনি মক্কা থেকে তাদের (জিনদেরকে দ্বীনের দাওয়াতের) উদ্দেশ্যে বের হয়ে গিয়েছিলেন। তাই বলা হয়েছে যে, তিনি সেই স্থানে খেজুরের নাবীয দ্বারা উযূ করেছেন, যা কিনা মক্কায় অবস্থানকারী ব্যক্তির বিধানের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু তিনি সালাত পূর্ণ আদায় করেছেন। সেখানে তাঁর নাবীয ব্যবহার করা মক্কায় ব্যবহার করার বিধানের অনুরূপ। যদি এ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, নাবীয সেই সমস্ত বস্তু থেকে, যা দিয়ে শহর এবং উপত্যকায় উযূ করা জায়িয, তাহলে সাব্যস্ত হবে যে, পানি বিদ্যমান ও অবিদ্যমান উভয় অবস্থায় এর দ্বারা উযূ করা জায়িয হবে।
তাঁরা (ফকীহগণ) যখন এটা পরিত্যাগ করার উপর ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং এর বিপরীতের উপর আমল রয়েছে। তাই তাঁরা এর দ্বারা শহরে উযূ করা জায়িয সাব্যস্ত করেন নি এবং না সেই স্থানে যা শহরের বিধানের অন্তর্ভুক্ত। তাই এতে তাদের সেই হাদীস পরিত্যাগ করা সাব্যস্ত হয়ে গেল এবং উক্ত নাবীযের বিধান অপরাপর পানি সমূহের বিধান থেকে বের হয়ে গেল। এতে প্রমাণিত হল যে, এর দ্বারা কোন অবস্থাতেই উযূ করা জায়িয হবে না। আর এটা ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ)-এর অভিমত এবং আমাদের নিকট যুক্তির দাবিও তা-ই। আল্লাহ্ই সবিশেষ জ্ঞাত।
611 - حَدَّثَنَا رَبِيعٌ الْمُؤَذِّنُ , قَالَ: ثنا أَسَدٌ قَالَ: ثنا يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا بْنِ أَبِي زَائِدَةَ قَالَ: ثنا دَاوُدُ بْنُ أَبِي هِنْدٍ عَنْ عَامِرٍ , عَنْ عَلْقَمَةَ , عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: هَلْ كَانَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ الْجِنِّ أَحَدٌ؟ فَقَالَ: لَمْ يَصْحَبْهُ مِنَّا أَحَدٌ , وَلَكِنْ فَقَدْنَاهُ ذَاتَ لَيْلَةٍ , فَقُلْنَا: اسْتُطِيرَ أَوِ اغْتِيلَ فَتَفَرَّقْنَا فِي الشِّعَابِ وَالْأَوْدِيَةِ نَلْتَمِسُهُ , وَبِتْنَا بِشَرِّ لَيْلَةٍ بَاتَ بِهَا قَوْمٌ نَقُولُ: اسْتُطِيرَ , أَمِ اغْتِيلَ. فَقَالَ: «إِنَّهُ أَتَانِي دَاعِي الْجِنِّ , فَذَهَبْتُ أُقْرِئُهُمُ الْقُرْآنَ فَأَرَانَا آثَارَهُمْ» فَهَذَا عَبْدُ اللهِ قَدْ أُنْكِرَ أَنْ يَكُونَ كَانَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ الْجِنِّ. فَهَذَا الْبَابُ إِنْ كَانَ يُؤْخَذُ مِنْ طَرِيقِ صِحَّةِ الْإِسْنَادِ , فَهَذَا الْحَدِيثُ , الَّذِي فِيهِ الْإِنْكَارُ أَوْلَى , لِاسْتِقَامَةِ طَرِيقِهِ وَمَتْنِهِ , وَثَبْتِ رُوَاتِهِ. وَإِنْ كَانَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا الْأَصْلَ الْمُتَّفَقَ عَلَيْهِ , أَنَّهُ لَا يُتَوَضَّأُ بِنَبِيذِ الزَّبِيبِ , وَلَا بِالْخَلِّ , فَكَانَ النَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ نَبِيذُ التَّمْرِ أَيْضًا كَذَلِكَ. وَقَدْ أَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ أَنَّ نَبِيذَ التَّمْرِ إِذَا كَانَ مَوْجُودًا فِي حَالِ وُجُودِ الْمَاءِ , أَنَّهُ لَا يُتَوَضَّأُ بِهِ لِأَنَّهُ لَيْسَ بِمَاءٍ. فَلَمَّا كَانَ خَارِجًا مِنْ حُكْمِ الْمِيَاهِ فِي حَالِ وُجُودِ الْمَاءِ , كَانَ كَذَلِكَ هُوَ فِي حَالِ عَدَمِ الْمَاءِ. وَحَدِيثُ ابْنِ مَسْعُودٍ الَّذِي فِيهِ التَّوَضُّؤُ بِنَبِيذِ التَّمْرِ إِنَّمَا فِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ بِهِ , وَهُوَ غَيْرُ مُسَافِرٍ لِأَنَّهُ إِنَّمَا خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ يُرِيدُهُمْ , فَقِيلَ إِنَّهُ تَوَضَّأَ بِنَبِيذِ التَّمْرِ فِي ذَلِكَ الْمَكَانِ , وَهُوَ فِي حُكْمِ مَنْ هُوَ بِمَكَّةَ , لِأَنَّهُ يُتِمُّ الصَّلَاةَ , فَهُوَ أَيْضًا فِي حُكْمِ اسْتِعْمَالِهِ ذَلِكَ النَّبِيذَ هُنَالِكَ فِي حُكْمِ اسْتِعْمَالِهِ إِيَّاهُ بِمَكَّةَ. فَلَوْ ثَبَتَ هَذَا الْأَثَرُ أَنَّ النَّبِيذَ مِمَّا يَجُوزُ التَّوَضُّؤُ بِهِ فِي الْأَمْصَارِ وَالْبَوَادِي , ثَبَتَ أَنَّهُ يَجُوزُ التَّوَضُّؤُ لَا بِهِ فِي حَالِ وُجُودِ الْمَاءِ , وَفِي حَالِ عَدَمِهِ. فَلَمَّا أَجْمَعُوا عَلَى تَرْكِ ذَلِكَ , وَالْعَمَلِ بِضِدِّهِ , فَلَمْ يُجِيزُوا التَّوَضُّؤَ بِهِ فِي الْأَمْصَارِ , وَلَا فِيمَا حُكْمُهُ حُكْمُ الْأَمْصَارِ , ثَبَتَ بِذَلِكَ تَرْكُهُمْ لِذَلِكَ الْحَدِيثِ , وَخَرَجَ حُكْمُ ذَلِكَ النَّبِيذِ , مِنْ حُكْمِ سَائِرِ الْمِيَاهِ. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّهُ لَا يَجُوزُ التَّوَضُّؤُ بِهِ فِي حَالٍ مِنَ الْأَحْوَالِ , وَهُوَ قَوْلُ أَبِي يُوسُفَ , وَهُوَ النَّظَرُ عِنْدَنَا , وَاللهُ أَعْلَمُ
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৬১১ | মুসলিম বাংলা