শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫১৫
আন্তর্জাতিক নং: ৫১৭
অনুচ্ছেদ চামড়ার মোজায় মাসেহ করার মেয়াদ মুকীম এবং মুসাফিরের ক্ষেত্রে
৫১৫-৫১৭।. ইউনুস (র.) .... যিরর ইনব হুবাইশ (র.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি সাফওয়ান ইব্‌ন আস্সাল (রা.)-এর নিকট এসে বললাম, পেশাব-পায়খানার পরে চামড়ার মোজার উপর মাসেহ্ সম্পর্কে আমার অন্তরে অথবা বলেছেন আমার বক্ষে কিছু সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে, আপনি কি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, মুসাফির হলে ফরয গোসল ব্যতীত তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত চামড়ার মোজা না খুলতে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হতো। এই নির্দেশ ছিল পেশাব-পায়খানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

(৫১৬). ইব্‌ন মারযূক (র.) ..... আসিম (র.) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।

(৫১৭). ইব্‌ন খুযায়মা (র.) ..... আসিম ইব্‌ন বাহদালা (র.) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
باب المسح على الخفين كم وقته للمقيم والمسافر
515 - حَدَّثَنَا يُونُسُ قَالَ: ثنا سُفْيَانُ , عَنْ عَاصِمٍ , عَنْ زِرٍّ قَالَ: أَتَيْتُ صَفْوَانَ بْنَ عَسَّالٍ فَقُلْتُ: حَاكَ فِي نَفْسِي أَوْ فِي صَدْرِي الْمَسْحُ عَلَى الْخُفَّيْنِ بَعْدَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ , فَهَلْ سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ذَلِكَ شَيْئًا قَالَ: «نَعَمْ كُنَّا إِذَا كُنَّا سَفْرًا أَوْ مُسَافِرِينَ , أُمِرْنَا أَنْ لَا نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيهِنَّ إِلَّا مِنْ جَنَابَةٍ , وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ»

516 - حَدَّثَنَا ابْنُ مَرْزُوقٍ، قَالَ: ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عَاصِمٍ، فَذَكَرَ مِثْلَهُ بِإِسْنَادِهِ.

517 - حَدَّثَنَا ابْنُ خُزَيْمَةَ، قَالَ: ثنا حَجَّاجٌ، قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ بَهْدَلَةَ، فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত।’ (সুরা : আবু দাউদ, আয়াত : ১৩৫)

ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, অজু সহজভাবে করার জন্য পা ধৌত করার বিকল্প হিসেবে মোজার ওপর মাসেহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মাসেহ বৈধ হওয়ার শর্তসমূহ

যতক্ষণ পর্যন্ত নিম্নোল্লিখিত শর্তসমূহ পাওয়া যাবে, মোজার ওপর মাসেহ বৈধ হবে।

১। পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৯)

২। মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা থাকতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)

৩। মোজা ফাটাছেঁড়া হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ফাটাছেঁড়া থাকতে হবে। (আবু দাউদ ২৪২০, আল-আশবাহ ১/১১৪, আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৫)

৪। উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকতে হবে।

৫। তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হতে হবে। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৪)

সুতরাং আমাদের দেশে প্রচলিত সুতার মোজার ওপর মাসেহ বৈধ নয়।

মাসেহর ফরজ ও সুন্নতসমূহ

মাসেহর ফরজ সীমারেখা : হাতের ছোট তিন আঙুলের সমান পায়ের ওপরের অংশ মাসেহ করা। (আবু দাউদ : ১৪০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ১৪৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫)

মাসেহর সুন্নত : পায়ের আঙুলের মাথা থেকে হাতের আঙুলগুলো প্রশস্ত করে টাখনু পর্যন্ত মাসেহ করবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫, কিতাবুল আসার : ১/৭২)

মোজা মাসেহর নির্ধারিত মেয়াদ

মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫)

মাসেহর সময় শুরু হবে যখন থেকে অজু ভেঙে যায় (হাদাস হয়)। আর এটি যখন থেকে মোজা পরা হয়, সে সময় থেকে নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮০)

মুকিম যদি মাসেহ করার পর সফর আরম্ভ করে, তবে মুসাফিরের সময়সীমা পরিপূর্ণ করবে, তদ্রূপ মুসাফির যদি মাসেহ করার পর মুকিম হয়ে যায়, তবে মুকিমের নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫, মুসান্নাফে আব্দির রাজ্জাক : ১/২২১)

মাসেহ ভঙ্গকারী বিষয়

১। যেসব কারণে অজু ভঙ্গ হয় সেসব কারণে মাসেহও ভঙ্গ হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯)

২। মোজা খোলার কারণে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২)

৩। মোজা যদি পায়ের টাখনুসহ বেশির ভাগ অংশ বের হয়ে যায়, তখনো মাসেহ ভেঙে যাবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২, ১৩৯৬)

৪। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মাধ্যমে মাসেহ ভেঙে যায়। (বাদায়ে : ১/৪৬)

৫। উভয় মোজার কোনো একটিতে বেশির ভাগ অংশে পানি পৌঁছে গেলে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা : ১৩৯৬, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৫৮৭)

এ হাদীস দ্বারা এটিও প্রমাণিত হয় যে, পেশাব, পায়খানা এবং ঘুমের কারণে অযু ভেঙ্গে যায়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (আলমগিরী: ১/৯) অবশ্য নিয়মানুযায়ী চামড়ার মোজা পরিধান করা থাকলে অযু করার সময় মোজা না খুলে তার উপর মাসেহ করলে যথেষ্ট হবে।
ফায়দা : ঘুমানোর কারণে অযু ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টিকে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ শুয়ে ঘুমানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। (মুয়াত্তা মালেক, খ--১, পৃষ্ঠা-৭৪) সুতরাং দাঁড়িয়ে, বসে বা নামাযরত অবস্থায় কেউ ঘুমালে তার অযু নষ্ট হবে না। তাঁরা দলীল হিসেবে বুখারী-মুসলিমের সেই প্রসিদ্ধ হাদীস পেশ করেন যাতে উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ স. একদিন ইশার নামায পড়তে এত বেশী দেরি করলেন যে, সাহাবায়ে কিরাম বসে বসে ঘুমাচ্ছিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ স. আসলেন এবং তাদেরকে নিয়ে নামায পড়লেন কিন্তু তাঁরা অযু করলেন না। (মুসলিম: বসে ঘুমানো ব্যক্তির অযু ভঙ্গ না হওয়ার প্রমাণ) এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (আলমগিরী: ১/১২)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান