শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬১
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬২
অনুচ্ছেদঃ লজ্জাস্থান স্পর্শের কারণে উযূ ওয়াজিব হয় কি না?
৪৬১-৪৬২. মুহাম্মাদ ইব্ন খুযায়মা (র.) ....... কায়স ইব্ন তালাক্ তাঁর পিতা (রা.) নবী থেকে বর্ণনা করেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর নবী (ﷺ)! উযূ করার পর কোন ব্যক্তি নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ এতো (লজ্জাস্থান) তোমার শরীরের একটি অংশ বই নয়।
পর্যালোচনাঃ
বস্তুত এটা মুলাযিম (রাবীর) সহীহ (বিশুদ্ধ) ও সঠিক সনদসম্বলিত হাদীস। না এর সনদে কোন গোলমাল (ইযতিরাব) আছে, না এর মূল পাঠে (মতনে)। এটা আমাদের মতে সেই সমস্ত সনদগত ‘ইযতিরাব’ সম্বলিত রিওয়ায়াত সমূহ অপেক্ষা অধিক উত্তম, যা আমরা প্রথমে বর্ণনা করেছি।
(৪৬২)আমাকে ইব্ন আবী ইমরান (র.) বর্ণনা করেছেন ....... আব্বাস ইব্ন আব্দুল আযীম আম্বরী ...... আলী ইব্ল মাদিনী (র.) বলেনঃ মুলাযিম (র.)-এর এই হাদীস বুসরা (রাযিঃ)-এর হাদীস অপেক্ষা উত্তম। যদি বিষয়টি সনদ এবং এর দৃঢ়তার দিক দিয়ে লক্ষ্য করা হয় তাহলে মুলাযিম (রাবীর) এ হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। ইমাম তাহাবী (র.)-এর যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ যদি বিষয়টি যুক্তির নিরিখে যাচাই করা হয় তাহলে আমরা লক্ষ্য করছি যে, লজ্জাস্থানকে কোন ব্যক্তি যদি হাতের পিঠ বা বাহু দিয়ে স্পর্শ করে এতে তার উপর উযূ করা ওয়াজিব না হওয়ার ব্যাপারে ফকীহ আলিমদের কোন মতবিরোধ নেই। তাই যুক্তির দাবি হচ্ছে যে, হাতের তালু দিয়ে তা স্পর্শ করলে অনুরূপভাবে উযূ করা ওয়াজিব হবে না। অথচ উরুও সতরের অন্তর্ভূক্ত। অতএব যখন সতর বিশিষ্ট অঙ্গের সাথে এর স্পর্শের কারণে তার উপর উযূকে ওয়াজিব করে না, তাহলে সতর নয় এরূপ অঙ্গের সাথে এর স্পর্শকরণে তার উপরে উযূ ওয়জিব না হওয়াটা অধিক যুক্তিসঙ্গত। যারা এর দ্বারা উযূ ওয়াজিব হওয়ার মত গ্রহণ করেছেন তারা বলেছেনঃ সাহাবীগণ হাতের তালু দ্বারা তা স্পর্শ করার দ্বারা উযূকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন। তাঁরা এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেনঃ
পর্যালোচনাঃ
বস্তুত এটা মুলাযিম (রাবীর) সহীহ (বিশুদ্ধ) ও সঠিক সনদসম্বলিত হাদীস। না এর সনদে কোন গোলমাল (ইযতিরাব) আছে, না এর মূল পাঠে (মতনে)। এটা আমাদের মতে সেই সমস্ত সনদগত ‘ইযতিরাব’ সম্বলিত রিওয়ায়াত সমূহ অপেক্ষা অধিক উত্তম, যা আমরা প্রথমে বর্ণনা করেছি।
(৪৬২)আমাকে ইব্ন আবী ইমরান (র.) বর্ণনা করেছেন ....... আব্বাস ইব্ন আব্দুল আযীম আম্বরী ...... আলী ইব্ল মাদিনী (র.) বলেনঃ মুলাযিম (র.)-এর এই হাদীস বুসরা (রাযিঃ)-এর হাদীস অপেক্ষা উত্তম। যদি বিষয়টি সনদ এবং এর দৃঢ়তার দিক দিয়ে লক্ষ্য করা হয় তাহলে মুলাযিম (রাবীর) এ হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। ইমাম তাহাবী (র.)-এর যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ যদি বিষয়টি যুক্তির নিরিখে যাচাই করা হয় তাহলে আমরা লক্ষ্য করছি যে, লজ্জাস্থানকে কোন ব্যক্তি যদি হাতের পিঠ বা বাহু দিয়ে স্পর্শ করে এতে তার উপর উযূ করা ওয়াজিব না হওয়ার ব্যাপারে ফকীহ আলিমদের কোন মতবিরোধ নেই। তাই যুক্তির দাবি হচ্ছে যে, হাতের তালু দিয়ে তা স্পর্শ করলে অনুরূপভাবে উযূ করা ওয়াজিব হবে না। অথচ উরুও সতরের অন্তর্ভূক্ত। অতএব যখন সতর বিশিষ্ট অঙ্গের সাথে এর স্পর্শের কারণে তার উপর উযূকে ওয়াজিব করে না, তাহলে সতর নয় এরূপ অঙ্গের সাথে এর স্পর্শকরণে তার উপরে উযূ ওয়জিব না হওয়াটা অধিক যুক্তিসঙ্গত। যারা এর দ্বারা উযূ ওয়াজিব হওয়ার মত গ্রহণ করেছেন তারা বলেছেনঃ সাহাবীগণ হাতের তালু দ্বারা তা স্পর্শ করার দ্বারা উযূকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন। তাঁরা এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেনঃ
باب مس الفرج هل يجب فيه الوضوء أم لا؟
461 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ، قَالَ: ثنا حَجَّاجٌ، قَالَ: ثنا مُلَازِمٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بَدْرٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ، عَنْ أَبِيهِ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سَأَلَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللهِ , مَا تَرَى فِي مَسِّ الرَّجُلِ ذَكَرَهُ , بَعْدَمَا تَوَضَّأَ؟ . فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ هُوَ إِلَّا بَضْعَةٌ مِنْكَ؟ أَوْ مُضْغَةٌ مِنْكَ» فَهَذَا حَدِيثُ مُلَازِمٍ , صَحِيحٌ مُسْتَقِيمُ الْإِسْنَادِ , غَيْرُ مُضْطَرِبٍ فِي إِسْنَادِهِ , وَلَا فِي مَتْنِهِ , فَهُوَ أَوْلَى عِنْدَنَا مِمَّا رَوَيْنَاهُ , أَوَّلًا مِنَ الْآثَارِ الْمُضْطَرِبَةِ فِي أَسَانِيدِهَا ,
462 - وَلَقَدْ حَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي عِمْرَانَ , قَالَ: سَمِعْتُ عَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْعَظِيمِ الْعَنْبَرِيَّ يَقُولُ: سَمِعْتُ عَلِيَّ بْنَ الْمَدِينِيِّ يَقُولُ: حَدِيثُ مُلَازِمٍ هَذَا , أَحْسَنُ مِنْ حَدِيثِ بُسْرَةَ. فَإِنْ كَانَ هَذَا الْبَابُ يُؤْخَذُ مِنْ طَرِيقِ الْإِسْنَادِ وَاسْتِقَامَتِهِ , فَحَدِيثُ مُلَازِمٍ هَذَا , أَحْسَنُ إِسْنَادًا. وَإِنْ كَانَ يُؤْخَذُ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا رَأَيْنَاهُمْ لَا يَخْتَلِفُونَ , أَنَّ مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ بِظَهْرِ كَفِّهِ , أَوْ بِذِرَاعَيْهِ , لَمْ يَجِبْ فِي ذَلِكَ وُضُوءٌ. فَالنَّظَرُ أَنْ يَكُونَ مَسُّهُ إِيَّاهُ بِبَطْنِ كَفِّهِ كَذَلِكَ. وَقَدْ رَأَيْنَاهُ لَوْ مَسَّهُ بِفَخِذِهِ , لَمْ يَجِبْ عَلَيْهِ بِذَلِكَ وُضُوءٌ , وَالْفَخِذُ عَوْرَةٌ. فَإِذَا كَانَتْ مُمَاسَّتُهُ إِيَّاهُ بِالْعَوْرَةِ , لَا تُوجِبُ عَلَيْهِ وُضُوءًا فَمُمَاسَّتُهُ إِيَّاهُ بِغَيْرِ الْعَوْرَةِ أَحْرَى أَنْ لَا تُوجِبَ عَلَيْهِ وُضُوءًا. فَقَالَ الَّذِينَ ذَهَبُوا إِلَى إِيجَابِ الْوُضُوءِ مِنْهُ: فَقَدْ أَوْجَبَ الْوُضُوءَ فِي مُمَاسَّتِهِ بِالْكَفِّ , أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَذَكَرُوا فِي ذَلِكَ
462 - وَلَقَدْ حَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي عِمْرَانَ , قَالَ: سَمِعْتُ عَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْعَظِيمِ الْعَنْبَرِيَّ يَقُولُ: سَمِعْتُ عَلِيَّ بْنَ الْمَدِينِيِّ يَقُولُ: حَدِيثُ مُلَازِمٍ هَذَا , أَحْسَنُ مِنْ حَدِيثِ بُسْرَةَ. فَإِنْ كَانَ هَذَا الْبَابُ يُؤْخَذُ مِنْ طَرِيقِ الْإِسْنَادِ وَاسْتِقَامَتِهِ , فَحَدِيثُ مُلَازِمٍ هَذَا , أَحْسَنُ إِسْنَادًا. وَإِنْ كَانَ يُؤْخَذُ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا رَأَيْنَاهُمْ لَا يَخْتَلِفُونَ , أَنَّ مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ بِظَهْرِ كَفِّهِ , أَوْ بِذِرَاعَيْهِ , لَمْ يَجِبْ فِي ذَلِكَ وُضُوءٌ. فَالنَّظَرُ أَنْ يَكُونَ مَسُّهُ إِيَّاهُ بِبَطْنِ كَفِّهِ كَذَلِكَ. وَقَدْ رَأَيْنَاهُ لَوْ مَسَّهُ بِفَخِذِهِ , لَمْ يَجِبْ عَلَيْهِ بِذَلِكَ وُضُوءٌ , وَالْفَخِذُ عَوْرَةٌ. فَإِذَا كَانَتْ مُمَاسَّتُهُ إِيَّاهُ بِالْعَوْرَةِ , لَا تُوجِبُ عَلَيْهِ وُضُوءًا فَمُمَاسَّتُهُ إِيَّاهُ بِغَيْرِ الْعَوْرَةِ أَحْرَى أَنْ لَا تُوجِبَ عَلَيْهِ وُضُوءًا. فَقَالَ الَّذِينَ ذَهَبُوا إِلَى إِيجَابِ الْوُضُوءِ مِنْهُ: فَقَدْ أَوْجَبَ الْوُضُوءَ فِي مُمَاسَّتِهِ بِالْكَفِّ , أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَذَكَرُوا فِي ذَلِكَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
পুরুষ তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কি না সে বিষয়ে পরস্পর বিপরীত বক্তব্য সম্বলিত দু'টি হাদীস পাওয়া যায়। নিম্নে হাদীসগুলো পেশ করা হলোঃ ১. তলক ইবন আলী (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস :
عَنْ طَلْقٍ بن عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ هَلْ هُوَ الَّا مُضغةٌ منْهُ أَوْ بَضْعَةٌ مِّنْهُ رواه الترمذي وقال حديث ملازم بن عمرو عن عبد الله بن بدر أصح وأحسن وهذا الحديث أحسن شئ روى في هذا الباب
প্রখ্যাত সাহাবী তলক ইবন আলী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) (এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে) ইরশাদ করেন, এটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়?"
ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, এ সম্পর্কিত সকল হাদীসের মাঝে এটিই সনদ হিসাবে সর্বাধিক সুন্দর। উপরোক্ত হাদীসটি অপরাপর হাদীস গ্রন্থে কিছুটা বিস্তৃতভাবে উল্লিখিত হয়েছেঃ
عن طلق بن عَلَى رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ مسسْتُ ذَكَري أَوْ قَالَ الرجلُ يَمَسَّ ذَكَرَهُ فِى الصَّلوة أعلَيْهِ وَصَوْهُ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَا إِنَّمَا هُوَ بضعَةٌ مِّنْهُ . أخرجه الخمسة وصححه ابن حبان وقال ابن المديني هو أحسن من حديث بسرة رضى الله عنها
খ. তল্ক ইবন আলী (রা) বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করল নামাযে রত থাকা অবস্থায় আমি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে বা (বর্ণনাকারী সন্দেহ) কোন লোক তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে তাকে পুনরায় অযূ করতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ (সা) তার জবাবে বললেন, না, সেটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়।
২. বুসরাহ বিনত সাফওয়ান (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ رَضِى اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِي ﷺ قَالَ مَنْ مس ذكرهُ فَلَا يُصَلِّ حَتَّى يَوضا قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح
বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করে সে যেন অযূ করা ব্যতীত নামায না পড়ে।
সমপর্যায়ের দু'টি হাদীসে বৈপরিত্য পরিদৃষ্ট হলে তার সমাধানের দু'টি পদ্ধতি রয়েছে :
ক. এ পর্যায়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ সাহাবী তলক (রা)-এর বর্ণনা অনুযায়ী আমল করেছেন । এমন কি ইমাম তাহাভী (র) তো এ পর্যন্ত দাবী করেছেন যে, এ ক্ষেত্রে অযূ ওয়াজিব হওয়ার রায় একমাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) প্রদান করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আলী, সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস, আবূ মূসা আশ'আরী, আম্মার ইবন ইয়াসির, হুযায়ফাহ, আনাস ও ইমরান ইবন হুসাইন (রা) প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবী লজ্জাস্থান স্পর্শ করাকে অযূ ভঙ্গকারী বলে গণ্য করেন নি।
খ. কিয়াস দ্বারাও হানাফী মাযহাবের প্রাধান্য সম্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে একটি কিয়াস তো নবী করীম (সা) স্বয়ং করেছেন। তিনি বলেছেন, এটিকে তোমার শরীরের একটি অঙ্গ নয়? অর্থাৎ শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ স্পর্শ করলে যেমন অযূ ভঙ্গের কোন প্রশ্ন উদয় হয় না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করার কারণেও অযূ নষ্ট হবে না। উলামায়ে কিরাম এক্ষেত্রে আরো একাধিক কিয়াস করেছেন। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত কিয়াসটি লক্ষণীয়, মলমূত্র নাপাক হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো হাতে লাগলে অযূ নষ্ট হয় না। তাহলে নিজ লজ্জাস্থান, যা সাধারণত পাক পবিত্ৰই থাকে, তা স্পর্শ করলে অযূ নষ্ট হবে কেন?
হানাফী বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বলেন, যদিও তল্ক ইবন আলী (রা)-এর হাদীসটি এভাবে বিভিন্নভাবে প্রাধান্য পাওয়ার উপযোগী, কিন্তু সতর্কতা হিসাবে পুনরায় অযু করে নেওয়াই উত্তম। বিশেষত এক্ষেত্রে অযূ করার দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কামভাব হ্রাস পাবে এবং এর ফলে নিজ নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করার প্রবণতা কমে যাবে। হানাফীগণের পরবর্তী উলামায়ে কিরাম এভাবে আমল করা পছন্দ করেছেন।
عَنْ طَلْقٍ بن عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ هَلْ هُوَ الَّا مُضغةٌ منْهُ أَوْ بَضْعَةٌ مِّنْهُ رواه الترمذي وقال حديث ملازم بن عمرو عن عبد الله بن بدر أصح وأحسن وهذا الحديث أحسن شئ روى في هذا الباب
প্রখ্যাত সাহাবী তলক ইবন আলী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) (এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে) ইরশাদ করেন, এটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়?"
ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, এ সম্পর্কিত সকল হাদীসের মাঝে এটিই সনদ হিসাবে সর্বাধিক সুন্দর। উপরোক্ত হাদীসটি অপরাপর হাদীস গ্রন্থে কিছুটা বিস্তৃতভাবে উল্লিখিত হয়েছেঃ
عن طلق بن عَلَى رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ مسسْتُ ذَكَري أَوْ قَالَ الرجلُ يَمَسَّ ذَكَرَهُ فِى الصَّلوة أعلَيْهِ وَصَوْهُ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَا إِنَّمَا هُوَ بضعَةٌ مِّنْهُ . أخرجه الخمسة وصححه ابن حبان وقال ابن المديني هو أحسن من حديث بسرة رضى الله عنها
খ. তল্ক ইবন আলী (রা) বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করল নামাযে রত থাকা অবস্থায় আমি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে বা (বর্ণনাকারী সন্দেহ) কোন লোক তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে তাকে পুনরায় অযূ করতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ (সা) তার জবাবে বললেন, না, সেটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়।
২. বুসরাহ বিনত সাফওয়ান (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ رَضِى اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِي ﷺ قَالَ مَنْ مس ذكرهُ فَلَا يُصَلِّ حَتَّى يَوضا قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح
বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করে সে যেন অযূ করা ব্যতীত নামায না পড়ে।
সমপর্যায়ের দু'টি হাদীসে বৈপরিত্য পরিদৃষ্ট হলে তার সমাধানের দু'টি পদ্ধতি রয়েছে :
ক. এ পর্যায়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ সাহাবী তলক (রা)-এর বর্ণনা অনুযায়ী আমল করেছেন । এমন কি ইমাম তাহাভী (র) তো এ পর্যন্ত দাবী করেছেন যে, এ ক্ষেত্রে অযূ ওয়াজিব হওয়ার রায় একমাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) প্রদান করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আলী, সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস, আবূ মূসা আশ'আরী, আম্মার ইবন ইয়াসির, হুযায়ফাহ, আনাস ও ইমরান ইবন হুসাইন (রা) প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবী লজ্জাস্থান স্পর্শ করাকে অযূ ভঙ্গকারী বলে গণ্য করেন নি।
খ. কিয়াস দ্বারাও হানাফী মাযহাবের প্রাধান্য সম্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে একটি কিয়াস তো নবী করীম (সা) স্বয়ং করেছেন। তিনি বলেছেন, এটিকে তোমার শরীরের একটি অঙ্গ নয়? অর্থাৎ শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ স্পর্শ করলে যেমন অযূ ভঙ্গের কোন প্রশ্ন উদয় হয় না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করার কারণেও অযূ নষ্ট হবে না। উলামায়ে কিরাম এক্ষেত্রে আরো একাধিক কিয়াস করেছেন। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত কিয়াসটি লক্ষণীয়, মলমূত্র নাপাক হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো হাতে লাগলে অযূ নষ্ট হয় না। তাহলে নিজ লজ্জাস্থান, যা সাধারণত পাক পবিত্ৰই থাকে, তা স্পর্শ করলে অযূ নষ্ট হবে কেন?
হানাফী বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বলেন, যদিও তল্ক ইবন আলী (রা)-এর হাদীসটি এভাবে বিভিন্নভাবে প্রাধান্য পাওয়ার উপযোগী, কিন্তু সতর্কতা হিসাবে পুনরায় অযু করে নেওয়াই উত্তম। বিশেষত এক্ষেত্রে অযূ করার দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কামভাব হ্রাস পাবে এবং এর ফলে নিজ নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করার প্রবণতা কমে যাবে। হানাফীগণের পরবর্তী উলামায়ে কিরাম এভাবে আমল করা পছন্দ করেছেন।
