শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪২৯
অনুচ্ছেদঃ লজ্জাস্থান স্পর্শের কারণে উযূ ওয়াজিব হয় কি না?
৪২৯. ইউনুস ( র ) ..... রবীআ '(র.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যদি আমার হাত রক্ত কিংবা হায়যের রক্তে রেখে দেই তাহলে এতে আমার উযূ বিনষ্ট হবে না। তাহলে লজ্জাস্থান স্পর্শ করা হালকা না রক্ত কিংবা হায়যের রক্ত? রাবী বলেন, রবীআ' (র.) তাদের বলতেন তোমাদের জন্য আক্ষেপ! কেউ কি এরূপ হাদীস গ্রহণ করেন? আমি বুসরা (রা.)-এর হাদীস সম্পর্কে অবহিত রয়েছি, আল্লাহ্ কসম! যদি বুসরা (রা.) এই জুতা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করে তাহলে তার এই সাক্ষ্যকে গ্রহণ করব না। যেহেতু দ্বীনের ভিত্তি হচ্ছে সালাত, আর সালাতের ভিত্তি হচ্ছে তাহারাত (উযূ)। বুসরা (রা.) ব্যতীত কি সাহাবাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি ছিলেন না, যিনি এই দ্বীনকে কায়েম রাখবেন?
ইব্‌ন যায়দ (রাহঃ) বলেনঃ এরই উপর আমাদের মাশাইখ তথা মনীষীদেরকে পেয়েছি, তাঁদের কেউ লজ্জাস্থান স্পর্শ করার কারণে উযূকে আবশ্যিক মনে করতেন না। উরওয়া (র.) তা এ জন্য গ্রহণ করেননি, যেহেতু মারওয়ান তাঁর নিকট এরূপ মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন না, যার থেকে এরূপ হাদীস গ্রহণ করা আবশ্যিক হয়। আর সিপাহী কর্তৃক মারওয়ানকে বুসরা (র.)-এর সংবাদ দেয়া নিজে তাঁর থেকে শোনা অপেক্ষা নিম্নতর। সুতরাং যখন উরওয়া (র.) এর নিকট মারওয়ানের নিজের খবরই অগ্রহণযোগ্য, তখন সিপাহী কর্তৃক বুসরা (রা.) থেকে সংবাদ পরিবেশন অগ্রহণযোগ্য হওয়ার অধিকতর উপযোগী। উপরন্তু এই হাদীসটি ইমাম যুহরী (র.) উরওয়া (র.) থেকে নিজে শুনেন নি। তিনি এতে ‘তাদলীস’ (তথা প্রকৃত শায়খের নাম উল্লেখ না করে উপরস্থ শায়খের নামে হাদীস বর্ণনা করা, যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই উপরস্থ শায়খ থেকে তা শুনেছেন অথচ তাঁর নিকট থেকে তিনি শুনেন নি) করেছেন। তা এভাবেঃ
باب مس الفرج هل يجب فيه الوضوء أم لا؟
429 - حَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي زَيْدٌ، عَنْ رَبِيعَةَ، أَنَّهُ قَالَ: «لَوْ وَضَعْتُ يَدِي فِي دَمٍ أَوْ حَيْضَةٍ مَا نُقِضَ وُضُوئِي، فَمَسُّ الذَّكَرِ أَيْسَرُ أَمِ الدَّمِ أَمِ الْحَيْضَةِ؟» قَالَ: وَكَانَ رَبِيعَةُ يَقُولُ لَهُمْ: وَيْحَكُمْ , مِثْلُ هَذَا يَأْخُذُ بِهِ أَحَدٌ , وَنَعْمَلُ بِحَدِيثِ بُسْرَةَ؟ وَاللهِ لَوْ أَنَّ بُسْرَةَ شَهِدَتْ عَلَى هَذِهِ النَّعْلِ , لَمَا أَجَزْتُ شَهَادَتَهَا , إِنَّمَا قِوَامُ الدِّينِ الصَّلَاةُ , وَإِنَّمَا قِوَامُ الصَّلَاةِ , الطَّهُورُ , فَلَمْ يَكُنْ فِي صَحَابَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ يُقِيمُ هَذَا الدِّينَ إِلَّا بُسْرَةُ؟ قَالَ ابْنُ زَيْدٍ: عَلَى هَذَا أَدْرَكْنَا مَشْيَخَتَنَا , مَا مِنْهُمْ وَاحِدٌ يَرَى فِي مَسِّ الذَّكَرِ وُضُوءًا وَإِنْ كَانَ إِنَّمَا تَرَكَ أَنْ يَرْفَعَ بِذَلِكَ رَأْسًا لِأَنَّ مَرْوَانَ، عِنْدَهُ، لَيْسَ فِي حَالِ مَنْ يَجِبُ الْقَبُولُ عَنْ مِثْلِهِ فَإِنَّ خَبَرَ شَرْطَيْ مَرْوَانَ عَنْ بُسْرَةَ دُونَ خَبَرِهِ هُوَ عَنْهَا. فَإِنْ كَانَ مَرْوَانُ خَبَرُهُ فِي نَفْسِهِ، عِنْدَ عُرْوَةَ، غَيْرُ مَقْبُولٍ , فَخَبَرُ شُرْطِيِّهِ إِيَّاهُ عَنْهَا كَذَلِكَ أَحْرَى أَنْ لَا يَكُونَ مَقْبُولًا , وَهَذَا الْحَدِيثُ أَيْضًا لَمْ يَسْمَعْهُ الزُّهْرِيُّ مِنْ عُرْوَةَ , إِنَّمَا دَلَّسَ بِهِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পুরুষ তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কি না সে বিষয়ে পরস্পর বিপরীত বক্তব্য সম্বলিত দু'টি হাদীস পাওয়া যায়। নিম্নে হাদীসগুলো পেশ করা হলোঃ ১. তলক ইবন আলী (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস :

عَنْ طَلْقٍ بن عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ هَلْ هُوَ الَّا مُضغةٌ منْهُ أَوْ بَضْعَةٌ مِّنْهُ رواه الترمذي وقال حديث ملازم بن عمرو عن عبد الله بن بدر أصح وأحسن وهذا الحديث أحسن شئ روى في هذا الباب

প্রখ্যাত সাহাবী তলক ইবন আলী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) (এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে) ইরশাদ করেন, এটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়?"

ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, এ সম্পর্কিত সকল হাদীসের মাঝে এটিই সনদ হিসাবে সর্বাধিক সুন্দর। উপরোক্ত হাদীসটি অপরাপর হাদীস গ্রন্থে কিছুটা বিস্তৃতভাবে উল্লিখিত হয়েছেঃ

عن طلق بن عَلَى رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ مسسْتُ ذَكَري أَوْ قَالَ الرجلُ يَمَسَّ ذَكَرَهُ فِى الصَّلوة أعلَيْهِ وَصَوْهُ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَا إِنَّمَا هُوَ بضعَةٌ مِّنْهُ . أخرجه الخمسة وصححه ابن حبان وقال ابن المديني هو أحسن من حديث بسرة رضى الله عنها

খ. তল্‌ক ইবন আলী (রা) বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করল নামাযে রত থাকা অবস্থায় আমি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে বা (বর্ণনাকারী সন্দেহ) কোন লোক তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে তাকে পুনরায় অযূ করতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ (সা) তার জবাবে বললেন, না, সেটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়।

২. বুসরাহ বিনত সাফওয়ান (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস

عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ رَضِى اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِي ﷺ قَالَ مَنْ مس ذكرهُ فَلَا يُصَلِّ حَتَّى يَوضا قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح

বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করে সে যেন অযূ করা ব্যতীত নামায না পড়ে।

সমপর্যায়ের দু'টি হাদীসে বৈপরিত্য পরিদৃষ্ট হলে তার সমাধানের দু'টি পদ্ধতি রয়েছে :

ক. এ পর্যায়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ সাহাবী তলক (রা)-এর বর্ণনা অনুযায়ী আমল করেছেন । এমন কি ইমাম তাহাভী (র) তো এ পর্যন্ত দাবী করেছেন যে, এ ক্ষেত্রে অযূ ওয়াজিব হওয়ার রায় একমাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) প্রদান করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আলী, সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস, আবূ মূসা আশ'আরী, আম্মার ইবন ইয়াসির, হুযায়ফাহ, আনাস ও ইমরান ইবন হুসাইন (রা) প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবী লজ্জাস্থান স্পর্শ করাকে অযূ ভঙ্গকারী বলে গণ্য করেন নি।

খ. কিয়াস দ্বারাও হানাফী মাযহাবের প্রাধান্য সম্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে একটি কিয়াস তো নবী করীম (সা) স্বয়ং করেছেন। তিনি বলেছেন, এটিকে তোমার শরীরের একটি অঙ্গ নয়? অর্থাৎ শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ স্পর্শ করলে যেমন অযূ ভঙ্গের কোন প্রশ্ন উদয় হয় না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করার কারণেও অযূ নষ্ট হবে না। উলামায়ে কিরাম এক্ষেত্রে আরো একাধিক কিয়াস করেছেন। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত কিয়াসটি লক্ষণীয়, মলমূত্র নাপাক হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো হাতে লাগলে অযূ নষ্ট হয় না। তাহলে নিজ লজ্জাস্থান, যা সাধারণত পাক পবিত্ৰই থাকে, তা স্পর্শ করলে অযূ নষ্ট হবে কেন?

হানাফী বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বলেন, যদিও তল্‌ক ইবন আলী (রা)-এর হাদীসটি এভাবে বিভিন্নভাবে প্রাধান্য পাওয়ার উপযোগী, কিন্তু সতর্কতা হিসাবে পুনরায় অযু করে নেওয়াই উত্তম। বিশেষত এক্ষেত্রে অযূ করার দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কামভাব হ্রাস পাবে এবং এর ফলে নিজ নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করার প্রবণতা কমে যাবে। হানাফীগণের পরবর্তী উলামায়ে কিরাম এভাবে আমল করা পছন্দ করেছেন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান