শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৩৮
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি সহবাস করে; কিন্তু বীর্যপাত হয় না
৩৩৮। রাওহ ইব্‌নুল ফারাজ (রাহঃ)...... উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন আদী ইব্‌নুল খিয়ার (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, উমার ইব্‌ন খাত্তাব (রাযিঃ)-এর মজলিসে সাহাবীগণ জানাবাতের গোসল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তাঁদের কেউ বললেন, মিলনকালে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের খাত্‌নার স্থানটুকু অতিক্রম করলেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। আবার তাঁদের কেউ বললেনঃ পানির কারণে পানি তথা বীর্যপাতের কারণে গোসল ফরয হয়। উমার (রাযিঃ) বললেন, তোমরা আমার নিকট মতবিরোধ করছ, অথচ তোমরা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সর্বোত্তম লোক? তোমাদের পরবর্তীদের কী অবস্থা হবে? আলী ইব্‌ন আবী তালিব (রাযিঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি যদি এ বিষয়ে অবগত হতে চান, তাহলে কাউকে নবী (ﷺ) এর সহধর্মিণীগণের নিকট প্রেরণ করুন এবং এ বিষয়ে তাদের থেকে জিজ্ঞাসা করুন। পরে তিনি আয়েশা (রাযিঃ)-এর নিকট লোক প্রেরণ করলেন। তিনি বললেন, মিলনকালে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের খাত্‌নার স্থানটুকু অতিক্রম করলেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। তখন উমার (রাযিঃ) বললেন, যদি আমি কাউকে বলতে শুনি যে, (শুধুমাত্র) বীর্যপাতের কারণে গোসল ফরয হয়, তাহলে আমি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করব ।

বিশ্লেষণ
এই হলেন উমার (রাযিঃ). যিনি সাহাবাদের উপস্থিতিতে লোকদেরকে এ বিষয়ে একমত করেছেন এবং কোন প্রতিবাদকারী এ বিষয়ে তাঁর প্রতিবাদ করে নি। বস্তুত ইব্‌ন ইসহাক (রাহঃ)-এর রিওয়ায়াতে রিফায়া (রাযিঃ)-এর উক্তি, যে লোকেরা বলেছে ও “পানির কারণে পানি তথা বীর্যপাতের কারণে গোসল ফরয হবে” সম্ভবত উমার (রাযিঃ) তা গ্রহণ করেন নি। যেহেতু হতে পারে তাতে সেই সম্ভাবনা রয়েছে, যা কতেক সাহাবা গ্রহণ করেছেন এবং এটিরও সম্ভাবনা রয়েছে যেমনটি ইবৃন আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন, (স্বপ্নদোষ অবস্থায় বীর্যপাতের শর্ত হওয়া)। যখন তাঁরা (বীর্যপাতের শর্তারোপকারীগণ) তাঁর (উমার রা) নিকট নিজেদের বক্তব্য প্রমাণ করতে সক্ষম হন নি তখন তিনি তাঁদের বক্তব্য পরিত্যাগ করত সেই বিষয়টি-ই গ্রহণ করেছেন, যা তাঁর এবং অবশিষ্ট সাহাবাগণের অভিমত ছিল। তাঁদের মধ্যে অপরাপর কিছু লোক থেকেও এর অনুকূলে রিওয়ায়াত বর্ণিত আছেঃ
باب الذي يجامع ولا ينزل
338 - حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ الْفَرَجِ، قَالَ: ثنا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُكَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ: حَدَّثَنِي مَعْمَرُ بْنُ أَبِي حَبِيبَةَ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ، قَالَ: تَذَاكَرَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ الْغُسْلَ مِنَ الْجَنَابَةِ. فَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: قَدِ اخْتَلَفْتُمْ عَلَيَّ وَأَنْتُمْ أَهْلِ بَدْرٍ الْأَخْيَارُ , فَكَيْفَ بِالنَّاسِ بَعْدَكُمْ؟ فَقَالَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ , إِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ ذَلِكَ , فَأَرْسِلْ إِلَى أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلْهُنَّ عَنْ ذَلِكَ. فَأَرْسَلَ إِلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا فَقَالَتْ: «إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ» . فَقَالَ: عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عِنْدَ ذَلِكَ: لَا أَسْمَعُ أَحَدًا يَقُولُ «الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ» إِلَّا جَعَلْتُهُ نَكَالًا فَهَذَا عُمَرُ , قَدْ حَمَلَ النَّاسَ عَلَى هَذَا , بِحَضْرَةِ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُنْكِرْ ذَلِكَ عَلَيْهِ مُنْكِرٌ. وَقَوْلُ رِفَاعَةَ فِي حَدِيثِ ابْنِ إِسْحَاقَ فَقَالَ النَّاسُ: «الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ» يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ عُمَرُ لَمْ يَقْبَلْ ذَلِكَ , لِأَنَّهُ قَدْ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ عَلَى مَا حَمَلُوهُ عَلَيْهِ مِنْ ذَلِكَ. وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ كَمَا قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ. فَلَمَّا لَمْ يُثْبِتُوا لَهُ ذَلِكَ تَرَكَ قَوْلَهُمْ , فَصَارَ إِلَى مَا رَآهُ هُوَ وَسَائِرُ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَقَدْ رُوِيَ عَنْ آخَرِينَ مِنْهُمْ , مَا يُوَافِقُ ذَلِكَ أَيْضًا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বীর্যপাতবিহীন স্ত্রী সহবাসেও গোসল ফরয হয়। মুসলিম শরীফে হযরত আবু মুসা আশআ’রী রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে যে, বীর্যপাতবিহীন স্ত্রী সহবাসে গোসল ফরয হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বিষয়টি জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তিনি বললেন যে, শুধু সহবাস হলেই গোসল ফরয হবে। (মুসলিম-৬৭৮) এ থেকে বুঝা যায় যে, এ বিষয়টি নিয়ে সাহাবায়ে কিরামের শুরু যুগে মতবিরোধ থাকলেও তাঁদের সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো গোসল করতে হবে। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/১৬১) সুতরাং হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যিনি এ বিষয়ে অন্য যে কারো চেয়ে ভালো জানতেন। সুতরাং কোন সাহাবার ভিন্ন মত থাকলেও হযরত আয়েশা রা.-এর মত ও বর্ণনা অগ্রাধিকারের জোর দাবী রাখে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৩৩৮ | মুসলিম বাংলা