শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৮০
অনুচ্ছেদঃ নামাযের উযূতে পা ধােয়া ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
১৮০. ইউনুস (রাহঃ) ও ইব্ন আবী আকীল (রাহঃ) ……… আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ﷺ বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা বলেছেন, ‘মু’মিন বান্দা উযূ করে আর সে তার মুখ ধোয় তখন তার চেহারা থেকে সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে তার দু'চোখ দিয়ে দেখে ছিল; যখন সে তার দু’হাত ধােয় তখন তার উভয় হাত থেকে সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দিয়ে ধরেছিল; যখন সে তার দু'পা ধােয় তখন (তার উভয় পা থেকে) সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে দু’পা দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল।
باب فرض الرجلين في وضوء الصلاة
180 - مَا حَدَّثَنَا يُونُسُ , وَابْنُ أَبِي عَقِيلٍ قَالَا: أنا ابْنُ وَهْبٍ أَنَّ مَالِكًا حَدَّثَهُ عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ , عَنْ أَبِيهِ , عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ، فَغَسَلَ وَجْهَهُ؛ خَرَجَتْ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنِهِ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ ; خَرَجَتْ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ , فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ؛ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْ إِلَيْهَا رِجْلَاهُ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে ওযূর মাহাত্ম্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। সাধারণভাবে তো এটাই মনে করা হয় যে, ওযূ দ্বারা মানুষের শরীর পাক-পবিত্র হয়ে যায়। ওযূতে চেহারা, দুই হাত ও দুই পা- মাত্র এ তিনটি অঙ্গ ধোয়া হয়। আর মাত্র একটি অঙ্গ অর্থাৎ মাথা মাসাহ করা হয়। এর দ্বারাই গোটা শরীর পাক হয়ে যায়। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ মেহেরবানী। তিনি চাইলে এ হুকুমও দিতে পারতেন যে, পবিত্র হওয়ার জন্য গোটা শরীর ধুইতে হবে অর্থাৎ গোসল করতে হবে। কিন্তু এতে বান্দার কষ্ট হত। তাই তার কষ্ট লাঘবের জন্য নিজ দয়ায় ওযূকে মাত্র চারটি অঙ্গে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং এর দ্বারাই গোটা শরীর পাক হয়ে যাওয়ার ফয়সালা দিয়ে দিয়েছেন। যাহোক, এভাবে ওযূ দ্বারা মানুষের দেহ বাহ্যিকভাবে পবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু ওযূর মাহাত্ম্য এখানেই শেষ নয়।
এ হাদীছ দ্বারা আমরা জানতে পারি, ওযূর দ্বারা কেবল বাহ্যিক পবিত্রতাই অর্জিত হয় না, আত্মিক পবিত্রতাও অর্জিত হয়। পাপকর্ম হচ্ছে আত্মিক অপবিত্রতা। এর দ্বারা মানুষের আত্মা মলিন ও অপবিত্র হয়ে যায়, যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (14)
“কখনও নয়! বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে”।সূরা তাতফীফ, আয়াত ১৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ ، صُقِلَ قَلْبُهُ ، وَإِنْ زَادَ زَادَتْ ، حَتَّى يَعْلُوَ قَلْبَهُ ذَاكَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْقُرْآنِ : {كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ}
“মুমিন ব্যক্তি যখন কোনও গুনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো বিন্দু পড়ে যায়। যদি সে তাওবা করে ও গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি আরও গুনাহ করে, তবে আরও কালো বিন্দু পড়ে। পরিশেষে তার গোটা অন্তরের উপর তা ছেয়ে যায়। এটাই হচ্ছে সেই رَانَ (জং), যে সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (14)
(কখনও নয়! বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে)।” মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৯৫২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪২৪৪; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৩৯০৮; বায়হাকী, হাদীছ নং ২০৬৩
সে অপবিত্রতা দূর হয় কেবল তখনই, যখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। গুনাহ মাফের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে, যেমন তাওবা-ইস্তিগফার ও বিভিন্ন প্রকার সৎকর্ম। ওযূও সেরকমই একটা ব্যবস্থা। এর দ্বারাও বান্দার গুনাহ ধুয়ে সাফ হয়ে যায়। একেকটি অঙ্গ ধোয়া হতে থাকে আর গুনাহ থেকে আত্মা পরিষ্কার হতে থাকে। এভাবে যখন ওযূ শেষ হয়ে যায়, তখন সে গুনাহ থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
এ হাদীছে বলা হয়েছে চেহারা ধোয়ার সময় পানির সাথে চোখের গুনাহ বের হয়ে যায়। এখানে প্রশ্ন হতে পারে, চেহারায় তো কেবল চোখই নয়; নাক ও মুখও আছে, তাহলে কেবল চোখের গুনাহ মাফ হওয়ার কথা বলা হল, নাক ও মুখের গুনাহ রয়ে গেল? সেসকল গুনাহ মাফ হওয়ার কথা কেন বলা হল না?
উলামায়ে কিরাম এর দু'টি উত্তর দিয়েছেন। প্রথম উত্তর এই যে, চেহারায় চোখই প্রধান অঙ্গ। মানুষের কাছে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখই সবচে' বেশি প্রিয়। তো চোখের গুনাহ যখন মাফ হয়ে যায়, তখন বাকি অঙ্গগুলোর গুনাহও যে মাফ হয়ে যায় তা বলার দরকার পড়ে না এমনিই বোঝা যায়।
দ্বিতীয় উত্তর : নাকের জন্য নাকে পানি দেওয়া এবং মুখের জন্য কুলি করার আলাদা আমল আছে। তা দ্বারাই নাক ও মুখের গুনাহ দূর হয়ে যায়। তাই চেহারা ধোয়ার ক্ষেত্রে সে দু'টি অঙ্গের উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। পক্ষান্তরে চোখের জন্য স্বতন্ত্র কোনও আমল নেই। তাই চেহারা ধোয়ার দ্বারা বিশেষভাবে চোখের গুনাহ দূর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ওযূর ফযীলত জানা গেল যে, এর দ্বারা বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের সাথে সাথে আত্মিক পবিত্রতাও অর্জিত হয় অর্থাৎ গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
খ. ওযূ একটি সহজ আমল। অথচ এর পুরস্কার কত বড়। সুতরাং আমল যত সহজ ও সাধারণই হোক না কেন, তাকে তুচ্ছ মনে করতে নেই।
এ হাদীছ দ্বারা আমরা জানতে পারি, ওযূর দ্বারা কেবল বাহ্যিক পবিত্রতাই অর্জিত হয় না, আত্মিক পবিত্রতাও অর্জিত হয়। পাপকর্ম হচ্ছে আত্মিক অপবিত্রতা। এর দ্বারা মানুষের আত্মা মলিন ও অপবিত্র হয়ে যায়, যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (14)
“কখনও নয়! বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে”।সূরা তাতফীফ, আয়াত ১৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ ، صُقِلَ قَلْبُهُ ، وَإِنْ زَادَ زَادَتْ ، حَتَّى يَعْلُوَ قَلْبَهُ ذَاكَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْقُرْآنِ : {كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ}
“মুমিন ব্যক্তি যখন কোনও গুনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো বিন্দু পড়ে যায়। যদি সে তাওবা করে ও গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি আরও গুনাহ করে, তবে আরও কালো বিন্দু পড়ে। পরিশেষে তার গোটা অন্তরের উপর তা ছেয়ে যায়। এটাই হচ্ছে সেই رَانَ (জং), যে সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (14)
(কখনও নয়! বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে)।” মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৯৫২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪২৪৪; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৩৯০৮; বায়হাকী, হাদীছ নং ২০৬৩
সে অপবিত্রতা দূর হয় কেবল তখনই, যখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। গুনাহ মাফের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে, যেমন তাওবা-ইস্তিগফার ও বিভিন্ন প্রকার সৎকর্ম। ওযূও সেরকমই একটা ব্যবস্থা। এর দ্বারাও বান্দার গুনাহ ধুয়ে সাফ হয়ে যায়। একেকটি অঙ্গ ধোয়া হতে থাকে আর গুনাহ থেকে আত্মা পরিষ্কার হতে থাকে। এভাবে যখন ওযূ শেষ হয়ে যায়, তখন সে গুনাহ থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
এ হাদীছে বলা হয়েছে চেহারা ধোয়ার সময় পানির সাথে চোখের গুনাহ বের হয়ে যায়। এখানে প্রশ্ন হতে পারে, চেহারায় তো কেবল চোখই নয়; নাক ও মুখও আছে, তাহলে কেবল চোখের গুনাহ মাফ হওয়ার কথা বলা হল, নাক ও মুখের গুনাহ রয়ে গেল? সেসকল গুনাহ মাফ হওয়ার কথা কেন বলা হল না?
উলামায়ে কিরাম এর দু'টি উত্তর দিয়েছেন। প্রথম উত্তর এই যে, চেহারায় চোখই প্রধান অঙ্গ। মানুষের কাছে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখই সবচে' বেশি প্রিয়। তো চোখের গুনাহ যখন মাফ হয়ে যায়, তখন বাকি অঙ্গগুলোর গুনাহও যে মাফ হয়ে যায় তা বলার দরকার পড়ে না এমনিই বোঝা যায়।
দ্বিতীয় উত্তর : নাকের জন্য নাকে পানি দেওয়া এবং মুখের জন্য কুলি করার আলাদা আমল আছে। তা দ্বারাই নাক ও মুখের গুনাহ দূর হয়ে যায়। তাই চেহারা ধোয়ার ক্ষেত্রে সে দু'টি অঙ্গের উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। পক্ষান্তরে চোখের জন্য স্বতন্ত্র কোনও আমল নেই। তাই চেহারা ধোয়ার দ্বারা বিশেষভাবে চোখের গুনাহ দূর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ওযূর ফযীলত জানা গেল যে, এর দ্বারা বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের সাথে সাথে আত্মিক পবিত্রতাও অর্জিত হয় অর্থাৎ গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
খ. ওযূ একটি সহজ আমল। অথচ এর পুরস্কার কত বড়। সুতরাং আমল যত সহজ ও সাধারণই হোক না কেন, তাকে তুচ্ছ মনে করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
