আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৪০২
আন্তর্জাতিক নং: ৪৭৫৭ - ৪৭৫৯
২৪৭৫. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ ‘যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ্ জানেন তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেত না। আর আল্লাহ্ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে যারা গৃহ ত্যাগ করেছে, তাদের কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করেন? আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আবু উসামা ... আয়িশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমার সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল যা রটনা হয়েছে এবং আমি তার কিছুই জানতাম না। তখন আমার ব্যাপারে ভাষণ দিতে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) দাঁড়ালেন। তিনি প্রথমে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করলেন। তারপর আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করলেন। এরপরে বললেন, হে মুসলিমগণ! যে সকল লোক আমার স্ত্রী সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহর কসম! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে মন্দ কিছুই জানি না। তাঁরা এমন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে, আল্লাহর কসম! তার সম্পর্কেও আমি কখনও মন্দ কিছু জানি না এবং সে কখনও আমার অনুপস্থিতিতে আমার ঘরে প্রবেশ করে না এবং আমি যখন কোন সফরে গিয়েছি সেও আমার সাথে সফরে গিয়েছে। সা‘দ ইবনে মুয়াজ দাঁড়িয়ে বললেন, আমাকে তাদের শিরশ্ছেদ করার অনুমতি দিন। এর মধ্যে বণী খাযরাজ গোত্রের এক ব্যক্তি, যে হাসসান ইবনে সাবিতের মাতার আত্মীয় ছিল, সে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি মিথ্যা বলেছ, জেনে রাখ, আল্লাহর কসম! যদি সে (অপবাদকারী) ব্যক্তিরা আউস্ গোত্রের হত, তাহলে তুমি শিরশ্ছেদ করতে পছন্দ করতে না। (তাদের পারস্পরিক বিতর্ক এমন এক পর্যায়ে গেল যে) আউস ও খাযরাজের মধ্যে মসজিদেই একটা দুর্ঘটনা ঘটার অবস্থা দেখা দিল। আর আমি এ বিষয় কিছুই জানি না। সেদিন সন্ধ্যায় যখন আমি আমার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গেলাম, তখন উম্মু মিসতাহ্ আমার সাথে ছিলেন এবং তিনি হোঁচট খেয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’! আমি বললাম, হে উম্মু মিসতাহ! তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ? তিনি নীরব থাকলেন। তারপর দ্বিতীয় হোঁচট খেয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’। আমি তাকে বললাম, ‘তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ?’ তিনি (উম্মু মিসতাহ্) তৃতীয়বার পড়ে গিয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’। আমি এবারে তাঁকে ধমক দিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাকে তোমার কারণেই গালি দিচ্ছি। আমি বললাম আমার ব্যাপারে? আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, তখন তিনি আমার কাছে সব ঘটনা বিস্তারিত বললেন। আমি বললাম, তাই হচ্ছে নাকি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর কসম! এরপর আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম এবং যে প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম তা একেবারেই ভুলে গেলাম। এরপর আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বললাম যে, আমাকে আমার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। তিনি একটি ছেলেকে আমার সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। আমি যখন ঘরে প্রবেশ করলাম, তখন উম্মু রূমানকে নীচে দেখতে পেলাম এবং আবু বকর (রাযিঃ) ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। আমার আম্মা জিজ্ঞাসা করলেন, হে বৎস! কিসে তোমাকে এনেছে? আমি তাকে সংবাদ দিলাম এবং তাঁর কাছে ঘটনা বললাম। এ ঘটনা তার ওপর তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি, যেমন আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বললেন, হে বৎস! এটাকে তুমি হাল্কাভাবে গ্রহণ কর, কেননা, এমন সুন্দরী নারী কমই আছে, যার স্বামী তাঁকে ভালবাসে আর তার সতীনরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় না এবং তার বিরুদ্ধে কিছু বলে না। বস্তুত তার ওপর ঘটনাটি অতখানি প্রভাব বিস্তার করেনি যতখানি আমার উপর করেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমার আব্বা [আবু বকর (রাযিঃ)] কি এ ঘটনা জেনেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ও কি? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)ও এ ঘটনা জানেন। তখন আমি অশ্রু বইয়ে কাঁদতে লাগলাম। আবু বকর (রাযিঃ) আমার কান্না শুনতে পেলেন। তখন তিনি ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। তিনি নীচে নেমে আসলেন এবং আমার আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তার কী হয়েছে? তিনি বললেন, তার সম্পর্কে যা রটেছে তা তার গোচরীভূত হয়েছে। এতে আবু বকরের চোখে পানি ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, হে বৎস! আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি তোমার ঘরের দিকে অবশ্য ফিরে যাও। আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার ঘরে আসলেন। তিনি আমার খাদিমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যতীত তাঁর কোন দোষ জানি না যে, তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং বকরি এসে তাঁর খামির (অথবা বললেন) গোলা আটা খেয়ে যেত। তখন কয়েকজন সহাবী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর কাছে সত্য কথা বল। এমনকি তাঁরা তার নিকট ঘটনা খুলে বললেন। তখন সে বলল, সুবহান আল্লাহ্, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক কিছু জানি না, যা একজন স্বর্ণকার তার এক টুকরা লাল খাঁটি স্বর্ণ সম্পর্কে জানে। এ ঘটনা সে ব্যক্তির কাছেও পৌঁছল যার সম্পর্কে এ অভিযোগ উঠেছে। তখন তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্! আল্লাহর কসম, আমি কখনও কোন মহিলার পর্দা খুলিনি। আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, পরবর্তী সময়ে এ (অভিযুক্ত) লোকটি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ রূপে নিহত হন। তিনি বলেন, ভোর বেলায় আমার আব্বা ও আম্মা আমার কাছে এলেন। তাঁরা এতক্ষণ থাকলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আসরের নামায আদায় করে আমার কাছে এলেন। এ সময় আমার ডানে ও বামে আমার আব্বা ও আম্মা আমাকে ঘিরে বসা ছিলেন। তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)] আল্লাহ্ তাআলার হামদ ও সানা পাঠ করে বললেন, হে আয়িশা! তুমি যদি কোন গুনাহর কাজ বা অন্যায় করে থাক তবে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, কেননা, আল্লাহ্ তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করে থাকেন। তখন জনৈকা আনসারী মহিলা দরজার কাছে বসা ছিল। আমি বললাম, আপনি কি এ মহিলাকেও লজ্জা করছেন না, এসব কিছু বলতে? তবুও রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে উপদেশ দিলেন। তখন আমি আমার আব্বার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জবাব দিন। তিনি বললেন, আমি কী বলব? এরপরে আমি আম্মার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জবাব দিন। তিনিও বললেন, আমি কী বলব? যখন তাঁরা কেউই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে কোন জবাব দিলেন না, তখন আমি কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে আল্লাহর যথোপযুক্ত হামদ ও সানা পাঠ করলাম। এরপর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যদি বলি যে, আমি এ কাজ করিনি এবং আমি যে সত্যবাদী এ সম্পর্কে আল্লাহ্ই সাক্ষী, তবে তা আপনাদের নিকট আমার কোন উপকারে আসবে না। কেননা, এ ব্যাপারটি আপনারা পরস্পরে বলাবলি করেছেন এবং তা আপনাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। আর আমি যদি আপনাদের বলি, আমি তা করেছি অথচ আল্লাহ্ জানেন যে আমি এ কাজ করিনি, তবে আপনারা অবশ্যই বলবেন যে, সে তার নিজের দোষ নিজেই স্বীকার করেছে। আল্লাহর কসম! আমি আমার এবং আপনাদের জন্য আর কোন দৃষ্টান্ত পাচ্ছি না। তখন আমি ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর নাম স্মরণ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারিনি-তাই বললাম, শুধু ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর পিতার অবস্থা ব্যতীত, যখন তিনি বলেছিলেন, (তোমরা ইউসুফ সম্পর্কে যা বলছ তার প্রেক্ষিতে) পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ই আমার সাহায্যকারী। ঠিক এ সময়ই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট ওহী অবতীর্ণ হল। আমরা সবাই নীরব রইলাম। ওহী শেষ হলে আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর চেহারায় খুশীর নমুনা দেখতে পেলাম। তিনি তাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে বলছিলেন, হে আয়িশা! তোমার জন্য খোশখবর! আল্লাহ্ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, এ সময় আমি অত্যন্ত রাগান্বিত ছিলাম। আমার আব্বা ও আম্মা বললেন, ‘তুমি উঠে তাঁর কাছে যাও’, (এবং তার শুকরিয়া আদায় কর)। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর দিকে যাব না এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় করব না। আর আপনাদেরও শুকরিয়া আদায় করব না। কিন্তু আমি একমাত্র আল্লাহর প্রশংসা করব, যিনি আমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। আপনারা (অপবাদ রটনা) শুনছেন কিন্তু তা অস্বীকার করেননি এবং তার পাল্টা ব্যবস্থাও গ্রহণ করেননি। আয়িশা (রাযিঃ) আরও বলেন, যয়নাব বিনতে জাহাশকে আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনদারীর কারণে তাঁকে রক্ষা করেছেন। তিনি (আমার ব্যাপারে) ভাল ব্যতীত কিছুই বলেন নি। কিন্তু তার বোন হামনা ধ্বংসপ্রাপ্তদের সঙ্গে নিজেও ধ্বংস হল। যারা এই ব্যাপারে কটুক্তি করত তাদের মধ্যে ছিল মিসতাহ্, হাসসান ইবনে সাবিত এবং মুনাফিক আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই। সে-ই এ সংবাদ সংগ্রহ করে ছড়াত। আর পুরুষদের মধ্যে সে এবং হামনাই এ ব্যাপারে বিরাট ভূমিকা পালন করত। রাবী বলেন, তখন আবু বকর (রাযিঃ) কখনও মিসতাহ্কে কোন প্রকার উপকার করবেন না বলে কসম খেলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা আয়াত নাযিল করলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী অর্থাৎ (আবু বকর) তারা যেন কসম না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে (অর্থাৎ মিসতাহ্কে) কিছুই দেবে না। তোমরা কি চাও না আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর কসম! হে আমাদের রব! আমরা অবশ্যই এ চাই যে, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। তারপর আবু বকর (রাযিঃ) আবার মিসতাহকে আগের মত আচরণ করতে লাগলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪৭৬. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ وليضربن بخمرهن على جيوبهن “তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে”।
আহমাদ ইবনে শাবিব (রাহঃ) ... হযরত আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্ তাআলা প্রাথমিক যুগের মুহাজির মহিলাদের উপর রহম করুন, যখন আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত ‘‘তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে’’ নাযিল করলেন, তখন তারা নিজ চাদর ছিঁড়ে ওড়না হিসাবে ব্যবহার করল।
আবু উসামা ... আয়িশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমার সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল যা রটনা হয়েছে এবং আমি তার কিছুই জানতাম না। তখন আমার ব্যাপারে ভাষণ দিতে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) দাঁড়ালেন। তিনি প্রথমে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করলেন। তারপর আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করলেন। এরপরে বললেন, হে মুসলিমগণ! যে সকল লোক আমার স্ত্রী সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহর কসম! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে মন্দ কিছুই জানি না। তাঁরা এমন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে, আল্লাহর কসম! তার সম্পর্কেও আমি কখনও মন্দ কিছু জানি না এবং সে কখনও আমার অনুপস্থিতিতে আমার ঘরে প্রবেশ করে না এবং আমি যখন কোন সফরে গিয়েছি সেও আমার সাথে সফরে গিয়েছে। সা‘দ ইবনে মুয়াজ দাঁড়িয়ে বললেন, আমাকে তাদের শিরশ্ছেদ করার অনুমতি দিন। এর মধ্যে বণী খাযরাজ গোত্রের এক ব্যক্তি, যে হাসসান ইবনে সাবিতের মাতার আত্মীয় ছিল, সে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি মিথ্যা বলেছ, জেনে রাখ, আল্লাহর কসম! যদি সে (অপবাদকারী) ব্যক্তিরা আউস্ গোত্রের হত, তাহলে তুমি শিরশ্ছেদ করতে পছন্দ করতে না। (তাদের পারস্পরিক বিতর্ক এমন এক পর্যায়ে গেল যে) আউস ও খাযরাজের মধ্যে মসজিদেই একটা দুর্ঘটনা ঘটার অবস্থা দেখা দিল। আর আমি এ বিষয় কিছুই জানি না। সেদিন সন্ধ্যায় যখন আমি আমার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গেলাম, তখন উম্মু মিসতাহ্ আমার সাথে ছিলেন এবং তিনি হোঁচট খেয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’! আমি বললাম, হে উম্মু মিসতাহ! তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ? তিনি নীরব থাকলেন। তারপর দ্বিতীয় হোঁচট খেয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’। আমি তাকে বললাম, ‘তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ?’ তিনি (উম্মু মিসতাহ্) তৃতীয়বার পড়ে গিয়ে বললেন, ‘মিসতাহ্ ধ্বংস হোক’। আমি এবারে তাঁকে ধমক দিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাকে তোমার কারণেই গালি দিচ্ছি। আমি বললাম আমার ব্যাপারে? আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, তখন তিনি আমার কাছে সব ঘটনা বিস্তারিত বললেন। আমি বললাম, তাই হচ্ছে নাকি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর কসম! এরপর আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম এবং যে প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম তা একেবারেই ভুলে গেলাম। এরপর আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বললাম যে, আমাকে আমার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। তিনি একটি ছেলেকে আমার সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। আমি যখন ঘরে প্রবেশ করলাম, তখন উম্মু রূমানকে নীচে দেখতে পেলাম এবং আবু বকর (রাযিঃ) ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। আমার আম্মা জিজ্ঞাসা করলেন, হে বৎস! কিসে তোমাকে এনেছে? আমি তাকে সংবাদ দিলাম এবং তাঁর কাছে ঘটনা বললাম। এ ঘটনা তার ওপর তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি, যেমন আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বললেন, হে বৎস! এটাকে তুমি হাল্কাভাবে গ্রহণ কর, কেননা, এমন সুন্দরী নারী কমই আছে, যার স্বামী তাঁকে ভালবাসে আর তার সতীনরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় না এবং তার বিরুদ্ধে কিছু বলে না। বস্তুত তার ওপর ঘটনাটি অতখানি প্রভাব বিস্তার করেনি যতখানি আমার উপর করেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমার আব্বা [আবু বকর (রাযিঃ)] কি এ ঘটনা জেনেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ও কি? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)ও এ ঘটনা জানেন। তখন আমি অশ্রু বইয়ে কাঁদতে লাগলাম। আবু বকর (রাযিঃ) আমার কান্না শুনতে পেলেন। তখন তিনি ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। তিনি নীচে নেমে আসলেন এবং আমার আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তার কী হয়েছে? তিনি বললেন, তার সম্পর্কে যা রটেছে তা তার গোচরীভূত হয়েছে। এতে আবু বকরের চোখে পানি ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, হে বৎস! আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি তোমার ঘরের দিকে অবশ্য ফিরে যাও। আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার ঘরে আসলেন। তিনি আমার খাদিমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যতীত তাঁর কোন দোষ জানি না যে, তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং বকরি এসে তাঁর খামির (অথবা বললেন) গোলা আটা খেয়ে যেত। তখন কয়েকজন সহাবী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর কাছে সত্য কথা বল। এমনকি তাঁরা তার নিকট ঘটনা খুলে বললেন। তখন সে বলল, সুবহান আল্লাহ্, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক কিছু জানি না, যা একজন স্বর্ণকার তার এক টুকরা লাল খাঁটি স্বর্ণ সম্পর্কে জানে। এ ঘটনা সে ব্যক্তির কাছেও পৌঁছল যার সম্পর্কে এ অভিযোগ উঠেছে। তখন তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্! আল্লাহর কসম, আমি কখনও কোন মহিলার পর্দা খুলিনি। আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, পরবর্তী সময়ে এ (অভিযুক্ত) লোকটি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ রূপে নিহত হন। তিনি বলেন, ভোর বেলায় আমার আব্বা ও আম্মা আমার কাছে এলেন। তাঁরা এতক্ষণ থাকলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আসরের নামায আদায় করে আমার কাছে এলেন। এ সময় আমার ডানে ও বামে আমার আব্বা ও আম্মা আমাকে ঘিরে বসা ছিলেন। তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)] আল্লাহ্ তাআলার হামদ ও সানা পাঠ করে বললেন, হে আয়িশা! তুমি যদি কোন গুনাহর কাজ বা অন্যায় করে থাক তবে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, কেননা, আল্লাহ্ তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করে থাকেন। তখন জনৈকা আনসারী মহিলা দরজার কাছে বসা ছিল। আমি বললাম, আপনি কি এ মহিলাকেও লজ্জা করছেন না, এসব কিছু বলতে? তবুও রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে উপদেশ দিলেন। তখন আমি আমার আব্বার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জবাব দিন। তিনি বললেন, আমি কী বলব? এরপরে আমি আম্মার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জবাব দিন। তিনিও বললেন, আমি কী বলব? যখন তাঁরা কেউই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে কোন জবাব দিলেন না, তখন আমি কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে আল্লাহর যথোপযুক্ত হামদ ও সানা পাঠ করলাম। এরপর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যদি বলি যে, আমি এ কাজ করিনি এবং আমি যে সত্যবাদী এ সম্পর্কে আল্লাহ্ই সাক্ষী, তবে তা আপনাদের নিকট আমার কোন উপকারে আসবে না। কেননা, এ ব্যাপারটি আপনারা পরস্পরে বলাবলি করেছেন এবং তা আপনাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। আর আমি যদি আপনাদের বলি, আমি তা করেছি অথচ আল্লাহ্ জানেন যে আমি এ কাজ করিনি, তবে আপনারা অবশ্যই বলবেন যে, সে তার নিজের দোষ নিজেই স্বীকার করেছে। আল্লাহর কসম! আমি আমার এবং আপনাদের জন্য আর কোন দৃষ্টান্ত পাচ্ছি না। তখন আমি ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর নাম স্মরণ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারিনি-তাই বললাম, শুধু ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর পিতার অবস্থা ব্যতীত, যখন তিনি বলেছিলেন, (তোমরা ইউসুফ সম্পর্কে যা বলছ তার প্রেক্ষিতে) পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ই আমার সাহায্যকারী। ঠিক এ সময়ই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট ওহী অবতীর্ণ হল। আমরা সবাই নীরব রইলাম। ওহী শেষ হলে আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর চেহারায় খুশীর নমুনা দেখতে পেলাম। তিনি তাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে বলছিলেন, হে আয়িশা! তোমার জন্য খোশখবর! আল্লাহ্ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, এ সময় আমি অত্যন্ত রাগান্বিত ছিলাম। আমার আব্বা ও আম্মা বললেন, ‘তুমি উঠে তাঁর কাছে যাও’, (এবং তার শুকরিয়া আদায় কর)। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর দিকে যাব না এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় করব না। আর আপনাদেরও শুকরিয়া আদায় করব না। কিন্তু আমি একমাত্র আল্লাহর প্রশংসা করব, যিনি আমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। আপনারা (অপবাদ রটনা) শুনছেন কিন্তু তা অস্বীকার করেননি এবং তার পাল্টা ব্যবস্থাও গ্রহণ করেননি। আয়িশা (রাযিঃ) আরও বলেন, যয়নাব বিনতে জাহাশকে আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনদারীর কারণে তাঁকে রক্ষা করেছেন। তিনি (আমার ব্যাপারে) ভাল ব্যতীত কিছুই বলেন নি। কিন্তু তার বোন হামনা ধ্বংসপ্রাপ্তদের সঙ্গে নিজেও ধ্বংস হল। যারা এই ব্যাপারে কটুক্তি করত তাদের মধ্যে ছিল মিসতাহ্, হাসসান ইবনে সাবিত এবং মুনাফিক আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই। সে-ই এ সংবাদ সংগ্রহ করে ছড়াত। আর পুরুষদের মধ্যে সে এবং হামনাই এ ব্যাপারে বিরাট ভূমিকা পালন করত। রাবী বলেন, তখন আবু বকর (রাযিঃ) কখনও মিসতাহ্কে কোন প্রকার উপকার করবেন না বলে কসম খেলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা আয়াত নাযিল করলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী অর্থাৎ (আবু বকর) তারা যেন কসম না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে (অর্থাৎ মিসতাহ্কে) কিছুই দেবে না। তোমরা কি চাও না আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর কসম! হে আমাদের রব! আমরা অবশ্যই এ চাই যে, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। তারপর আবু বকর (রাযিঃ) আবার মিসতাহকে আগের মত আচরণ করতে লাগলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪৭৬. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ وليضربن بخمرهن على جيوبهن “তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে”।
আহমাদ ইবনে শাবিব (রাহঃ) ... হযরত আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্ তাআলা প্রাথমিক যুগের মুহাজির মহিলাদের উপর রহম করুন, যখন আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত ‘‘তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে’’ নাযিল করলেন, তখন তারা নিজ চাদর ছিঁড়ে ওড়না হিসাবে ব্যবহার করল।
৪৪০২। আবু নু’আইম (রাহঃ) ......... হযরত সাফিয়া বিনতে শায়বা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রাযিঃ) বলতেন, যখন এ আয়াত, “তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে” অবতীর্ণ হল তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা ওড়না হিসাবে ব্যবহার করতে লাগল।
باب {إن الذين يحبون أن تشيع الفاحشة في الذين آمنوا لهم عذاب أليم في الدنيا والآخرة، والله يعلم وأنتم لا تعلمون، ولولا فضل الله عليكم ورحمته وأن الله رءوف رحيم} {تشيع} [النور: 19]: «تظهر»، وقوله: {ولا يأتل أولو الفضل منكم والسعة أن يؤتوا أولي القربى والمساكين والمهاجرين في سبيل الله، وليعفوا وليصفحوا ألا تحبون أن يغفر الله لكم والله غفور رحيم} وقال أبو أسامة: عن هشام بن عروة، قال: أخبرني أبي، عن عائشة، قالت: لما ذكر من شأني الذي ذكر، وما علمت به قام رسول الله صلى الله عليه وسلم في خطيبا، فتشهد فحمد الله وأثنى عليه بما هو أهله، ثم قال: «أما بعد أشيروا علي في أناس أبنوا أهلي، وايم الله ما علمت على أهلي من سوء، وأبنوهم بمن والله ما علمت عليه من سوء قط، ولا يدخل بيتي قط إلا وأنا حاضر، ولا غبت في سفر إلا غاب معي»، فقام سعد بن معاذ فقال: ائذن لي يا رسول الله أن نضرب أعناقهم، وقام رجل من بني الخزرج، وكانت أم حسان بن ثابت من رهط ذلك الرجل، فقال: كذبت أما والله أن لو كانوا من الأوس ما أحببت أن تضرب أعناقهم، حتى كاد أن يكون بين الأوس والخزرج شر في المسجد، وما علمت فلما كان مساء ذلك اليوم، خرجت لبعض حاجتي، ومعي أم مسطح فعثرت، وقالت: تعس مسطح، فقلت: أي أم تسبين ابنك؟ وسكتت ثم عثرت الثانية، فقالت: تعس مسطح، فقلت لها: أي أم أتسبين ابنك؟ فسكتت ثم عثرت الثالثة، فقالت: تعس مسطح فانتهرتها، فقالت: والله ما أسبه إلا فيك، فقلت في أي شأني؟ قالت: فبقرت لي الحديث، فقلت: وقد كان هذا، قالت: نعم، والله فرجعت إلى بيتي كأن الذي خرجت له لا أجد منه قليلا ولا كثيرا، ووعكت، فقلت لرسول الله صلى الله عليه وسلم: أرسلني إلى بيت أبي، فأرسل معي الغلام فدخلت الدار، فوجدت أم رومان في السفل، وأبا بكر فوق البيت يقرأ، فقالت أمي: ما جاء بك يا بنية؟ فأخبرتها وذكرت لها الحديث، وإذا هو لم يبلغ منها مثل ما بلغ مني، فقالت: يا بنية، خففي عليك الشأن فإنه والله لقلما كانت امرأة حسناء عند رجل يحبها لها ضرائر إلا حسدنها، وقيل فيها: وإذا هو لم يبلغ منها ما بلغ مني، قلت: وقد علم به أبي؟ قالت: نعم، قلت: ورسول الله صلى الله عليه وسلم قالت: نعم، ورسول الله صلى الله عليه وسلم واستعبرت وبكيت، فسمع أبو بكر صوتي، وهو فوق البيت يقرأ، فنزل فقال لأمي: ما شأنها؟ قالت: بلغها الذي ذكر من شأنها، ففاضت عيناه، قال: أقسمت عليك أي بنية إلا رجعت إلى بيتك فرجعت، ولقد جاء رسول الله صلى الله عليه وسلم بيتي فسأل عني خادمتي، فقالت: لا والله ما علمت عليها عيبا إلا أنها كانت ترقد حتى تدخل الشاة، فتأكل خميرها - أو عجينها - [ص:108] وانتهرها بعض أصحابه، فقال: اصدقي رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى أسقطوا لها به، فقالت: سبحان الله والله ما علمت عليها إلا ما يعلم الصائغ على تبر الذهب الأحمر، وبلغ الأمر إلى ذلك الرجل الذي قيل له، فقال: سبحان الله والله ما كشفت كنف أنثى قط، قالت عائشة: فقتل شهيدا في سبيل الله، قالت: وأصبح أبواي عندي، فلم يزالا حتى دخل علي رسول الله صلى الله عليه وسلم، وقد صلى العصر، ثم دخل وقد اكتنفني أبواي عن يميني وعن شمالي، فحمد الله وأثنى عليه ثم قال: «أما بعد، يا عائشة إن كنت قارفت سوءا أو ظلمت فتوبي إلى الله، فإن الله يقبل التوبة من عباده» قالت: وقد جاءت امرأة من الأنصار فهي جالسة بالباب، فقلت: ألا تستحي من هذه المرأة، أن تذكر شيئا، فوعظ رسول الله صلى الله عليه وسلم فالتفت إلى أبي، فقلت له: أجبه، قال: فماذا أقول؟ فالتفت إلى أمي، فقلت: أجيبيه، فقالت: أقول ماذا؟ فلما لم يجيباه تشهدت فحمدت الله وأثنيت عليه، بما هو أهله، ثم قلت: أما بعد فوالله لئن قلت لكم إني لم أفعل، والله عز وجل يشهد إني لصادقة، ما ذاك بنافعي عندكم، لقد تكلمتم به وأشربته قلوبكم، وإن قلت إني قد فعلت، والله يعلم أني لم أفعل لتقولن قد باءت به على نفسها، وإني والله ما أجد لي ولكم مثلا، والتمست اسم يعقوب فلم أقدر عليه إلا أبا يوسف حين قال: {فصبر جميل والله المستعان على ما تصفون} [يوسف: 18]، وأنزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم من ساعته فسكتنا فرفع عنه، وإني لأتبين السرور في وجهه، وهو يمسح جبينه، ويقول: «أبشري يا عائشة، فقد أنزل الله براءتك»، قالت: وكنت أشد ما كنت غضبا، فقال لي أبواي: قومي إليه، فقلت: لا والله لا أقوم إليه، ولا أحمده ولا أحمدكما، ولكن أحمد الله الذي أنزل براءتي، لقد سمعتموه فما أنكرتموه ولا غيرتموه، وكانت عائشة تقول: أما زينب ابنة جحش فعصمها الله بدينها، فلم تقل إلا خيرا، وأما أختها حمنة فهلكت فيمن هلك، وكان الذي يتكلم فيه مسطح وحسان بن ثابت والمنافق عبد الله بن أبي وهو الذي كان يستوشيه ويجمعه، وهو الذي تولى كبره منهم، هو وحمنة قالت: فحلف أبو بكر أن لا ينفع مسطحا بنافعة أبدا، فأنزل الله عز وجل: {ولا يأتل أولو الفضل منكم} إلى آخر الآية - يعني أبا بكر - {والسعة أن يؤتوا أولي القربى والمساكين} [النور: 22]: يعني مسطحا إلى قوله: {ألا تحبون أن يغفر الله لكم والله غفور رحيم} [النور: 22] حتى قال أبو بكر: بلى والله يا ربنا، إنا لنحب أن تغفر لنا، وعاد له بما كان يصنع
باب {وليضربن بخمرهن على جيوبهن} [النور: 31] وقال أحمد بن شبيب: حدثنا أبي، عن يونس، قال ابن شهاب: عن عروة، عن عائشة رضي الله عنها، قالت: " يرحم الله نساء المهاجرات الأول، لما أنزل الله: {وليضربن بخمرهن على جيوبهن} [النور: 31] شققن مروطهن فاختمرن بها "
باب {وليضربن بخمرهن على جيوبهن} [النور: 31] وقال أحمد بن شبيب: حدثنا أبي، عن يونس، قال ابن شهاب: عن عروة، عن عائشة رضي الله عنها، قالت: " يرحم الله نساء المهاجرات الأول، لما أنزل الله: {وليضربن بخمرهن على جيوبهن} [النور: 31] شققن مروطهن فاختمرن بها "
4759 -4757 حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ نَافِعٍ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ، أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ كَانَتْ تَقُولُ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ (وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ) أَخَذْنَ أُزْرَهُنَّ فَشَقَّقْنَهَا مِنْ قِبَلِ الْحَوَاشِي فَاخْتَمَرْنَ بِهَا.
