আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৭১৭
২৪৪২। আল্লাহ তাআলার বাণী, إن قرآن الفجر كان مشهودا ““ফজরের নামাযে কুরআন পাঠ পরিলক্ষিত হয় বিশেষ ভাবে”। মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, الفجر দ্বারা এখানে নামাযে ফজর বুঝানো হয়েছে।
৪৩৬২। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জামাতের সাথে নামায আদায় করার ফযীলত একাকী পড়ার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশী। আর প্রাতঃকালের নামাযে রাতের ফিরিশতারা এবং দিনের ফিরিশতারা সমবেত হয় (এ প্রসঙ্গে) আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াতটি পড়ে নিতে পার -وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا (কায়েম করবে) “ফজরের নামায, ফজরের নামায” পরিলক্ষিত হয় বিশেষ ভাবে”।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাচ্ছেন যে, নিজ ঘরে বা বাজারের দোকানে একাকী নামায পড়া অপেক্ষা মসজিদে জামাতের সংগে নামায আদায় করলে তার ফযীলত পঁচিশ গুণ বেশি হয়। মসজিদে জামাতের সংগে নামায পড়লে তার ফযীলত যে এত বেশি, তার কারণ কি? যা অন্য হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, তার কারণ কেবল নামাযের নিয়তে পথচলা। ঘরে বা দোকানে নামায পড়লে নামায পড়া হয় বটে, কিন্তু নামাযের নিয়তে পথচলা হয় না। আবার কেউ যদি এমনিই পথ চলে কিন্তু নামাযের নিয়ত না থাকে, তা দ্বারাও এই বাড়তি ফযীলত হাসিল হয় না। এই বাড়তি ফযীলত কেবল নামাযের নিয়তে মসজিদে গমনের কারণে।
এই মহান নিয়তের কারণে পথ চলাটা এত দামি হয়ে যায় যে, মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে যতগুলি কদম ফেলা হয় তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা এক স্তর বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে মসজিদ পর্যন্ত যার পথ যতবেশি দূরে হবে, তার মর্যাদাও তত বাড়বে এবং ততবেশি গুনাহ মাফ হবে। অপর এক হাদীছে আছে, একবার বনূ সালিমা গোত্র তাদের মহল্লা ছেড়ে মসজিদের নিকটে এসে বসবাসের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল। কারণ তাদের মহল্লা মসজিদ থেকে দূরে ছিল। মসজিদে যাতায়াতে বেশি সময় লাগত এবং অনেক সময় কষ্টও হত। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, তারা মসজিদের কাছাকাছি এসে বসবাস করতে চাচ্ছে, তখন তিনি তাদেরকে তা থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, হে বনূ সালিমা! আপন জায়গায়ই বাস করতে থাক। তাতে তোমাদের কদমে কদমে ছওয়াব লেখা হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জামাতে নামায পড়ার ফযীলত জানা যায়। সুতরাং যতসম্ভব জামাতের সাথে নামায আদায়ে যত্নবান থাকা উচিত।

খ. মসজিদে গমনের উদ্দেশ্য যেহেতু নামায পড়া, তাই পথ চলাকালে সেই নিয়ত অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত, যাতে পথচলাটা ধীরশান্ত পদক্ষেপে হয় এবং গোটা পথ মুসল্লীসুলভ ভাবভঙ্গি বজায় থাকে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন