আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৩২৮
আন্তর্জতিক নং: ৪৬৮৫

পরিচ্ছেদঃ ২৪১৫. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ সাক্ষীগণ বলবেঃ এরাই হলো সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করেছিল। সাবধান! আল্লাহর লা’নত জালিমদের ওপর (১১ঃ ১৮) أَشْهَادُ-এর একবচন হল, شَاهِدٌ যেমন, أَصْحَابٌ -এর একবচন صَاحِبٌ

৪৩২৮। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... সাফওয়ান ইবনে মুহরিয (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ইবনে উমর (রাযিঃ) তাওয়াফ করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি তাঁর সম্মুখে এসে বলল, হে আবু আব্দুর রহমান অথবা বলল, হে ইবনে উমর (রাযিঃ) আপনি কি নবী (ﷺ) থেকে (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এবং মু’মিনদের মধ্যকার) গোপন আলোচনা সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, (কিয়ামতের দিন) মু’মিনকে তাঁর নিকটবর্তী করা হবে। হিশাম বলেন, মু’মিন নিকটবর্তী হবে, এমনকি আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ পর্দায় আবৃত করে নেবেন এবং তার কাছ থেকে তার গুনাহসমূহের স্বীকারোক্তি নেবেন। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) অমুক গুনাহ সম্পর্কে তুমি জান কি? বান্দা বলবে, হে আমার রব! আমি জানি, আমি জানি। এভাবে দু’বার বলবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার গুনাহ গোপন রেখেছি। আজ তোমার সে গুনাহ মাফ করে দিচ্ছি। তারপর তার নেক আমল নামা গুটিয়ে নেয়া হবে।
পক্ষান্তরে অন্যদলকে অথবা (রাবী বলেছেন) কাফিরদেরকে সকলের সামনে ডেকে বলা হবে, এরাই সে লোক যারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ বলেছিল এবং শায়বান حَدَّثَنَا قَتَادَةُ এর পরিবর্তে عَنْ قَتَادَةَ এবং عَنْ صَفْوَانُ এর পরিবর্তে حَدَّثَنَا صَفْوَانُ বর্ণনা করেছেন।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

এ হাদীছটিতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার খাস রহমতের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন তিনি মুমিনদেরকে কাছে ডেকে পর্দা ফেলে দেবেন। অর্থাৎ সকলের থেকে আড়ালে নিয়ে যাবেন। তারপর এক এক করে তার ওইসকল গুনাহ তার সামনে উল্লেখ করবেন, যা সে গোপনে করেছিল, কোনও মানুষ তা জানত না। প্রত্যেকটি সম্পর্কে সে স্বীকার করবে যে, সে তা করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তার সামনে আমলনামাও খুলে দেবেন। তাতেও সে তার গোপন গুনাহসমূহ দেখতে পাবে। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, এ অবস্থায় সে ডানে-বামে তাকাবে। সে তাকানোটা হবে চরম ভয় ও আতঙ্কের কারণে। সে ধরেই নেবে আজ তার মুক্তির কোনও উপায় নেই। কিন্তু পরম দয়ালু আল্লাহ তাকে নির্ভয় দেবেন। বলবেন, দুনিয়ায় তোমার এসব গুনাহ আমি গোপন রেখেছিলাম, আজ আমি ক্ষমা করে দিলাম। এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ বলবেন, তোমার কোনও ভয় নেই। তুমি আমার পর্দার ভেতর রয়েছ। আমি ছাড়া তোমার গুনাহ সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না। প্রকাশ থাকে যে, এটা হবে হাক্কুল্লাহ সম্পর্কিত গুনাহের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গোপনে কোনও বান্দার হক নষ্ট করে, তবে তা এভাবে ক্ষমা করা হবে না; বরং বান্দার পক্ষ থেকেও তাকে ক্ষমা পেতে হবে। এমনিভাবে মানুষ যেসব গুনাহ প্রকাশ্যে করে, সে ক্ষেত্রেও এরকম খাস রহমত করা হবে না। প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستره الله عليه، فيقول: يا فلان، عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عنه، متفق عليه আমার উম্মতের প্রত্যেকেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে গুনাহকারীগণ নয়। এটাও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা কোনও (পাপের) কাজ করে তারপর এ অবস্থায় তার ভোর হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজটি গোপন রাখেন, কিন্তু সে নিজেই বলে, হে অমুক! (শোন) আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার দোষ আড়ালে রেখেছিলেন। আর সে সকালবেলা আল্লাহর আড়াল উন্মোচন করে দেয়। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. এ হাদীছটি দ্বারা মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়। খ. আরও জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যাকে চান নিজ দয়ায় ক্ষমা করবেন। গ. যেসকল গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমালাভের বেশি আশা থাকে। ঘ. কোনও গুনাহ গোপনে হয়ে গেলে নিজের পক্ষ থেকে তা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন