আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬৮৪
২৪১৪. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এবং তাঁর ’আরশ ছিল পানির ওপরে
৪৩২৭। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি খরচ কর। আমি তোমাকে দান করব এবং [রাসূল (ﷺ)] বললেন, আল্লাহ তাআলার হাত পরিপূর্ণ। (তোমার) রাতদিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না। তিনি বলেন, তোমরা দেখ না, যখন থেকে (আল্লাহ) আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে কি পরিমাণ খরচ করেছেন? কিন্তু এত খরচ করার পরও তাঁর হতে সম্পদের কোন কমতি হয়নি। আর আল্লাহ তাআলার আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে পাল্লা। তিনি ঝুঁকান, তিনি উপরে উঠান।
اعْتَرَاكَ افْتَعَلَتَ-এর বাব থেকে। عَرَوْتُه এ অর্থে বলা হয়, তাকে পেয়েছি। তা থেকে يَعْرُوْهُ (তার উপর ঘটেছে) ও اعْتَرَانِيْ (আমার উপর ঘটেছে) ব্যবহার হয়। آخذ بناصيتها অর্থাৎ তাঁর রাজত্ব এবং عَنِيْدٌ-عَنُوْدٌ-عَانِدٌ সবগুলোর একই অর্থ- স্বৈরাচারী।
এটি ঔদ্ধত্য অর্থের প্রতি জোর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। اسْتَعْمَرَكُمْ তোমাদের বসতি দান করলেন। আরবগণ বলত أَعْمَرْتُهُ الدَّارَ فَهِيَ عُمْرَى আমি এ ঘর তাকে জীবন ধারণের জন্য দিলাম। نَكِرَهُمْ وَأَنْكَرَهُمْ এবং اسْتَنْكَرَهُمْ সবগুলো একই অর্থে ব্যবহৃত। فَعِيْلٌ مَجِبْدٌ حَمِيْدٌ -مَجِيْدٌ-এর ওজনে مَاجِدٌ (মর্যাদা সম্পন্ন) থেকে حَمِيْدٌ (প্রশংসিত) এর অর্থে مَحْمُوْدٌ থেকে سِجِّيْلٌ অতি কঠিন বা শক্ত। سِجِّيْلٌ এবং سِجِّيْنٌ উভয় রূপেই ব্যবহৃত হয়। لَامُ এবং نُوْنٌ বিকল্প হরফ।
তামীম ইবনে মুকবিল বলেন, ‘‘বহু পদাতিক বাহিনী মধ্যাহ্নে ঘাড়ের উপর শুভ্র ধারালো তলোয়ার দ্বারা আঘাত হানে। কঠিন প্রস্তর দ্বারা তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিপক্ষের বীর পুরুষগণ পরস্পরকে ওসীয়ত করে থাকে।
والى مدين اخاهم شعيبا মাদইয়ানবাসীদের কাছে তাদের ভ্রাতা শুআইব (আ:)-কে পাঠালাম। মাদইয়ান হলো একটি শহর। এর অনুরূপ وَ اسْأَلْ الْقَرْيَةَ وَاسْأَلْ الْعِيْرَ অর্থাৎ গ্রামবাসীদের কাছে এবং কাফেলার লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা কর। وَرَا ءَكُمْ ظِهْرِيًّا অর্থাৎ তারা তার প্রতি দৃষ্টি করেনি। যখন কেউ কারও উদ্দেশ্য পূর্ণ না করে, তখন বলা হয় ظَهَرْ تَ بِحَاجَتِيْ এবং وَجَعَلْتَنِيْ ظِهْرِيًّا এখানে ظِهْرِيُّ দ্বারা এ ধরনের জানোয়ার বা পাত্র বোঝায় যা কাজের প্রয়োজনে তুমি সাথে রেখেছ। أَرَا ذِلُنَا-আমাদের মধ্যে অধম, إجرامي এটা أَجْرَمْتُ-এর মাসদার। কেউ বলেন, جَرَمْتُ হতে উদ্গত الْفَلَكَ، الفلك একবচন, বহুবচন উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ নৌকা এবং নৌকাগুলো। مجراها (নৌকা চলা) এটা أَجْرَيْتُ -এর মাসদার এবং أَرْسَيْتُ-নৌকা আমি থামিয়েছি। কেউ কেউ পড়েনঃ مَرْسَا هَا অর্থাৎ তা থেমেছে এবং مَجْرَا هَا অর্থাৎ তা চলেছে। مُجْرِيْهَا এবং مُرْسِيْهَا অর্থাৎ যার সাথে এরূপ (চালিত, স্থগিত) করা হয়েছে راسيات অর্থাৎ স্থিত।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি একটি 'হাদীছে কুদসী'। হাদীছে কুদসী বলে এমন হাদীছকে, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা'আলা বলেন। সাধারণ হাদীছ থেকে এর পার্থক্য হল, সাধারণ হাদীছ সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এভাবে বর্ণনা করেন যে, তিনি এই বলেছেন বা এই করেছেন। কিন্তু হাদীছে কুদসী বর্ণনা করতে গিয়ে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আল্লাহ তা'আলারও উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তিনি আল্লাহ তা'আলা থেকে এই এই বর্ণনা করেছেন। এই উভয়প্রকার হাদীছও ওহীই বটে, যেমন কুরআন মাজীদও ওহী। তবে কুরআন মাজীদের ভাব ও ভাষা উভয় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, আর সাধারণ হাদীছ ও হাদীছে কুদসীর ভাব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কিন্তু ভাষা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের। কুরআনকে ওহীয়ে মাতলূ এবং হাদীছকে ওহীয়ে গায়রে মাতলূ বলে।

তো এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাচ্ছেন যে, আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আদমসন্তান! তুমি খরচ করো, তোমার প্রতিও খরচ করা হবে। অর্থাৎ তুমি আমার দেওয়া অর্থ-সম্পদ আমার দেওয়া বিধান অনুযায়ী আমার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ব্যয় করো। তা যদি কর, তবে আমি তোমাকে এর বিনিময় দান করব। তা বিভিন্নভাবে হতে পারে। হয়তো আমি তোমার অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি করে দেব। অথবা এর বিনিময়ে তোমাকে দুনিয়ার অন্য কোনও কল্যাণ দান করব। কিংবা আখিরাতে অপরিমিত ছাওয়াব দেব। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (272)
‘আর তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তা পরিপূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না।’(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭২)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. হাদীছের ভাব ও মর্মও মূলত আল্লাহ তা'আলার ওহী।

খ. কল্যাণকর খাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠিত হতে নেই। কেননা কোনও না কোনওভাবে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এর বিনিময় পাওয়াই যাবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন