আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

১২. সূর্য-চন্দ্র গ্রহনের নামায

হাদীস নং: ৪৩২
১. সালাতুল কুসূফ-এর (সূর্যগ্রহণের নামায) বিবরণ
রেওয়ায়ত ২. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেনঃ একবার সূর্যগ্রহণ হইল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায পড়িলেন এবং তিনি তাহার নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইলেন। রাবী বলেনঃ সূরা বাকারা পাঠ করার কাছাকাছি সময় (দাঁড়াইলেন)। তিনি বলেন, অতঃপর লম্বা রুকূ করিলেন। তারপর মাথা উঠাইলেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইলেন কিন্তু প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষ কম। তারপর লম্বা রুকূ করিলেন, প্রথম রুকু অপেক্ষা কম। অতঃপর তিনি সিজদা করিলেন। তারপর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইলেন কিন্তু পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম। তারপর রুকূ করিলেন, দীর্ঘ রুকূ কিন্তু পূর্বের রুকু অপেক্ষা কম। আবার মাথা তুলিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইলেন, কিন্তু পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম, তারপর দীর্ঘ রুকূ করিলেন, তবে পূর্বের রুকু অপেক্ষা কম, তারপর সিজদা করিলেন। ইহার পর নামায সমাপ্ত করিলেন। আর ততক্ষণে সূর্য দীপ্তমান ও উজ্জ্বল হইয়া গিয়াছে।

তারপর তিনি বলিলেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুইটি নিদর্শন, কোন লোকের মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে ইহার গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা উহা দেখিতে পাও, তখন সকলে আল্লাহকে স্মরণ করিও। সাহাবীগণ বলিলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! এই জায়গায় আপনাকে আমরা কোন কিছু গ্রহণ করিতে দেখিতে পাইলাম, আবার আপনাকে পিছনে সরিতে দেখিলাম (ইহার তাৎপর্য বুঝাইয়া দিন)। উত্তরে তিনি বলিলেনঃ আমি বেহেশত দেখিতে পাইলাম এবং তথা হইতে একটি আঙ্গুরের ছড়া গ্রহণ করিতে চাহিয়াছিলাম, আমি উহা গ্রহণ করিলে পৃথিবী কায়েম থাকা পর্যন্ত তোমরা উহা হইতে আহার করিতে পারিতে। আর আমি দোযখকেও দেখিতে পাইলাম, যাহার যত ভয়ঙ্কর দৃশ্য আমি কখনও দেখি নাই। আর আমি দেখিতে পাইলাম যে, উহার অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ইহার কারণ কি? হে আল্লাহর রসূল! তিনি বলিলেনঃ তাহাদের কুফরীর কারণে। প্রশ্ন করা হইলঃ তাহারা কি আল্লাহ্ তাআলার সাথে কুফরী করিয়া থাকে। তিনি বললেনঃ (না, বরং) স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিয়া থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করিয়া বসে। তুমি যদি তাহাদের কাহারও সাথে যুগ যুগ ধরিয়া ইহসান করিতে থাক, অতঃপর সে যদি কোন একদিন তোমার নিকট হইতে তাহার অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তবে বলিবে, আমি কোন মঙ্গল তোমার নিকট হইতে লাভ করি নাই।’
بَاب الْعَمَلِ فِي صَلَاةِ الْكُسُوفِ
وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ قَالَ خَسَفَتْ الشَّمْسُ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسُ مَعَهُ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا نَحْوًا مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ قَالَ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوعِ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدْ تَجَلَّتْ الشَّمْسُ فَقَالَ إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلْتَ شَيْئًا فِي مَقَامِكَ هَذَا ثُمَّ رَأَيْنَاكَ تَكَعْكَعْتَ فَقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ مِنْهَا عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتْ الدُّنْيَا وَرَأَيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ مَنْظَرًا قَطُّ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ قَالُوا لِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ لِكُفْرِهِنَّ قِيلَ أَيَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ وَيَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী)। এটা বলা হয়েছে জাহান্নামের একটা বিশেষ সময় সম্পর্কে। এটা সাধারণভাবে জাহান্নামের সব সময়কার কথা নয়। মূলত প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি থাকবে। পরে যারা ঈমান নিয়ে মারা যাবে, ঈমানের বদৌলতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে চলে যাবে। তখন জান্নাতে পুরুষ ও নারী উভয়ের সংখ্যাই সমান হয়ে যাবে।

প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ অনেক মুমিন নারী প্রথমে জাহান্নামে যাবে, তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে। তাদের প্রথমদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ তাদের এমনকিছু দোষ, যা সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি পাওয়া যায়। হাদীসে আছে,
تكثرن اللعن، وتكفرن العشير
“তোমরা বেশি বেশি লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর।"

অন্যান্য পাপ নারী-পুরুষ উভয়ই সাধারণত সমানই করে। কিন্তু লানত করার পাপ তুলনামূলক নারীদের মধ্যে বেশি। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা তো তাদেরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ কারণেই প্রথমদিকে জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হবে।

হাদীছটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার অর্থ পুরুষদের তুলনায় বেশি হওয়া নয়; বরং নারীদের মধ্যেই যারা জাহান্নামে যাবে তাদের একদলের তুলনায় অন্যদলের সংখ্যা বেশি বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তাদের অনেককেই বিভিন্ন কারণে জাহান্নামে যেতে হবে বটে, কিন্তু লা'নত করা ও স্বামীর অবাধ্যতা করার অপরাধে যারা জাহান্নামে যাবে তাদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশি হবে।

উল্লেখ্য : স্বামীর অবাধ্যতা করা যেমন পাপ, তেমনি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করাও পাপ বৈকি। অনেক স্বামীই এ পাপ করে থাকে। এর থেকে তাদের বিরত হওয়া উচিত। অন্যথায় এ কারণে তাদেরকেও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকেই জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে আছে।

খ. এমন কিছু পাপ আছে, যা সাধারণত মহিলারাই বেশি করে থাকে। তাদের উচিত সেগুলো ছেড়ে দেওয়া, যাতে সেসব পাপের কারণে জাহান্নামে যেতে না হয়। তারা যাতে সেসব পাপ ছাড়তে পারে, পুরুষের উচিত সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
মুওয়াত্তা মালিক - হাদীস নং ৪৩২ | মুসলিম বাংলা