আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

১২. সূর্য-চন্দ্র গ্রহনের নামায

হাদীস নং: ৪৩১
১. সালাতুল কুসূফ-এর (সূর্যগ্রহণের নামায) বিবরণ
রেওয়ায়ত ১. নবী করীম (ﷺ) এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সময়ে একবার সূর্যগ্ৰহণ হইল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) লোকদের লইয়া নামায পড়িলেন, তিনি নামাযে দাঁড়াইলেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইলেন। অতঃপর রুকু করিলেন- অনেক দীর্ঘ রুকু। তারপর দাঁড়াইলেন দীর্ঘক্ষণ; কিন্তু প্রথম দাড়ানো আপেক্ষা কম, তারপর রুকু করিলেন; রুকূকে দীর্ঘ করিলেন; তবে ইহা ছিল পূর্বের রুকু অপেক্ষা কম। তারপর পবিত্র শির উঠাইলেন এবং সিজদা করিলেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক’আতেও প্রথম রাক'আতের মত কার্যাদি সম্পন্ন করিলেন; তারপর নামায সমাপ্ত করিলেন। এতক্ষণে সূর্য দীপ্তমান ও উজ্জ্বল হইয়া গিয়াছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করিলেন। তিনি (খুতবার প্রথমে) আল্লাহর প্রশংসা ও হামদ বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুইটি নিদর্শন। কোন ব্যক্তির মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে উহাদের গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা উহা দেখিতে পাও, তখন আল্লাহর নিকট দুআ করবে এবং আল্লাহর তকবীর উচ্চারণ করবে আর সাদ্‌কা প্রদান করবে। অতঃপর ফরমাইলেনঃ হে উম্মতে মুহাম্মাদী। আল্লাহর কসম, তিনি অপেক্ষা অধিক অভিমানী বা ঘৃণাকারী আর কেউ নাই। (আল্লাহ ইহাকে অতি ঘৃণা করেন যে, তাহার কোন বান্দা বা কোন বান্দী ব্যভিচারে লিপ্ত হউক।) হে উম্মতে মুহাম্মাদী আল্লাহর কসম, যদি তোমরা অবগত হইতে, যাহা আমি অবগত আছি,তাহা হইলে নিশ্চয় তোমরা কম হাসিতে ও অধিক কাঁদিতে।
بَاب الْعَمَلِ فِي صَلَاةِ الْكُسُوفِ
حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ خَسَفَتْ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ ثُمَّ قَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَسَجَدَ ثُمَّ فَعَلَ فِي الرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدْ تَجَلَّتْ الشَّمْسُ فَخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ وَكَبِّرُوا وَتَصَدَّقُوا ثُمَّ قَالَ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرَ مِنْ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি হাসাহাসি পসন্দ করতেন না। বেশি হাসিতে অন্তরে উদাসীনতা জন্ম নেয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন لا تكثر الضحك، فإن كثرة الضحك تميت القلب "বেশি হাসবে না। কেননা হাসির আধিক্য অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।”

একবার তিনি সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দেন। তাতে তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন যে (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়দানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে
ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش ولهجرتم النساء، ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون
"তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।

হাদীছটি দ্বারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পার্থিব জীবনযাপন সম্পর্কে এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে, দুনিয়া আনন্দে মেতে থাকার জায়গা নয়। তা থাকা উচিতও নয়। তার সামনে আখিরাত আছে। সেখানকার পরিস্থিতি বড় কঠিন। সে কঠিন পরিস্থিতির ব্যাপারে চিন্তিত থাকা উচিত। মনে ভয় রাখা উচিত। উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কাঁদা, যাতে তিনি সেখানে নাজাত দান করেন। যেন তিনি নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাঁদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।

খ. অল্প হাসি দোষের নয়, যদি অন্তরে আখিরাতের ভয় থাকে এবং সে ভয়ে ক্রন্দনও করা হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন