আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৭- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪২৫
২৮৭। ঘরে মসজিদ তৈরী করা।
বারা' ইবনে আযিব (রাযিঃ) নিজের বাড়ীর মসজিদে জামাআত করে নামায আদায় করেছিলেন।
বারা' ইবনে আযিব (রাযিঃ) নিজের বাড়ীর মসজিদে জামাআত করে নামায আদায় করেছিলেন।
৪১৩। সাঈদ ইবনে উফায়র (রাহঃ) ..... মাহমুদ ইবনে রাবী আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইতবান ইবনে মালিক (রাযিঃ), যিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে হাযির হয়ে আরয করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে নামায আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরিফ নিয়ে কোন এক স্থানে নামায আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে নামাযের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। রাবি বলেন, তাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব।
ইতবান (রাযিঃ) বলেন: পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) আমার ঘরে তাশরিফ আনেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে নামায আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।
তিনি (ইতবান) বলেন, আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাঁর জন্য তৈরী ‘খাযীরাহ’ নামক খাবার তাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেন, এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘মালিক ইবনে দুখাইশিন কোথায়? অথবা বললেন ‘ইবনে দুখশুন’ কোথায়? তখন একজন জওয়াব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে ভালবাসে না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে? তখন সে ব্যক্তি বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আমরা তো তার সম্পর্ক ও হিত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তো এমন ব্যক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে।
রাবী ইবনে শিহাব বলেনঃ তারপর আমি মাহমুদ ইবনে রবী (রাযিঃ) এর হাদীস সম্পর্কে হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ আনসারী (রাহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, যিনি বনু সালিম গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এ হাদীস সমর্থন করলেন।
ইতবান (রাযিঃ) বলেন: পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) আমার ঘরে তাশরিফ আনেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে নামায আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।
তিনি (ইতবান) বলেন, আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাঁর জন্য তৈরী ‘খাযীরাহ’ নামক খাবার তাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেন, এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘মালিক ইবনে দুখাইশিন কোথায়? অথবা বললেন ‘ইবনে দুখশুন’ কোথায়? তখন একজন জওয়াব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে ভালবাসে না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে? তখন সে ব্যক্তি বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আমরা তো তার সম্পর্ক ও হিত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তো এমন ব্যক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে।
রাবী ইবনে শিহাব বলেনঃ তারপর আমি মাহমুদ ইবনে রবী (রাযিঃ) এর হাদীস সম্পর্কে হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ আনসারী (রাহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, যিনি বনু সালিম গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এ হাদীস সমর্থন করলেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত ইতবান ইবন মালিক রাযি. নিজ গোত্র বনূ সালিমের মসজিদের ইমাম ছিলেন। তাঁর দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। শেষদিকে তিনি পরিপূর্ণ অন্ধই হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর দৃষ্টিশক্তি যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখনকার কথা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর বাড়ি থেকে মসজিদে আসতে একটি উপত্যকা পার হতে হতো। বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে উপত্যকা ভরে যেত। ফলে তাঁর পক্ষে সেটি পার হয়ে মসজিদে আসা সম্ভব হতো না, যেমনটা তিনি এ হাদীছে বর্ণনা করেছেন।
তিনি চাচ্ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে এসে নির্দিষ্ট একটি স্থানে নামায পড়লে তিনি বরকতস্বরূপ সে স্থানটিকে নিজ নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ করতেন। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এর জন্য অনুরোধ করলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুরোধ রক্ষা করেন।
একদিন তিনি সূর্যোদয়ের পর বেলা চড়ে আসলে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসেন। পরে হযরত উমর ফারূক রাযি.-ও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। দিনটি ছিল শনিবার। তিনি হযরত ইতবান রাযি.-এর দেখানো স্থানে সকলকে নিয়ে দু' রাক'আত নামায আদায় করেন। তারপর তাঁর সামনে খাযীরা পেশ করা হয়। খাযীরা হল আটার সঙ্গে চর্বি মিশিয়ে তৈরি করা এক প্রকার খাদ্য। তিনি তা খেয়ে নেন। ইত্যবসরে মহল্লায় তাঁর আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়লে লোকজন জমা হয়ে যায়।
হযরত মালিক ইবন দুখশুম রাযি. এ গোত্রেরই একজন সাহাবী। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে তাঁকে দেখা না যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কেউ একজন তাঁকে মুনাফিকও বলে বসে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন এবং তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্যই কালেমায়ে তায়্যিবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে থাকেন। এটা তাঁর মুমিন হওয়ার দলীল।
এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে মন্তব্যকারীর প্রতিবাদ করেছিলেন যে, সে কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি? ইবন ইসহাক রহ. তার মাগাযী গ্রন্থে এ কথাও বর্ণনা করেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মালিক ইবন দুখশুম ও মা'ন ইবন 'আদী রাযি.-কে মুনাফিকদের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ- মসজিদে যিরার ধ্বংস করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা সেটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। এটাও তাঁর খাঁটি মুমিন হওয়া ও মুনাফিকী থেকে মুক্ত থাকার প্রমাণ বহন করে।
যারা তাঁকে মুনাফিক বলে মন্তব্য করেছিলেন তারা এর কারণ দেখিয়েছিলেন এই যে, তাঁকে মুনাফিকদের সঙ্গে উঠাবসা করতে দেখা যায়। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখানো এ কারণটিকে তাঁর মুনাফিকীর দলীলরূপে গ্রহণ করেননি। সম্ভবত তাদের সঙ্গে তাঁর উঠাবসা করার বিশেষ কোনও কারণ ছিল। সবশেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালেমায়ে তায়্যিবার ফযীলত বয়ান করেছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এটা পাঠ করে, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এ ঘোষণা দান করে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। এ হারাম হওয়ার অর্থ ওই ব্যক্তির কবীরা গুনাহ না থাকলে জাহান্নামে আদৌ যাবে না। যদি কবীরা গুনাহ থাকে এবং আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করে দেন, তখনও সে জাহান্নামে যাবে না। আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা না করলে নির্দিষ্ট মেয়াদে শাস্তিভোগ করার পর সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। এ কালেমার কারণে তাকে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকতে হবে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও বিশেষ ওজর থাকলে সে মসজিদে না গিয়ে ফরয নামায নিজ ঘরেও আদায় করতে পারে।
খ. তাবাররুকের ধারণা ইসলামবিরোধী নয়। তাবাররুক হিসেবেই হযরত ইতবান ইবন মালিক রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায আদায়ের স্থানকে নিজের জন্য নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ করেছিলেন।
গ. কারও বাড়িতে বিশেষ কোনও বুযুর্গ ব্যক্তির শুভাগমন হলে মহল্লার লোকজনের উচিত তার সঙ্গে দেখা করতে আসা এবং কিছুক্ষণ তার সাহচর্যে কাটানো। বাড়িওয়ালারও উচিত তাদেরকে সেই সুযোগ দেওয়া।
ঘ. অকাট্য কারণ ছাড়া কালেমা পাঠকারী কোনও ব্যক্তিকে মুনাফিক বলা উচিত নয়। কেননা দিলের খবর আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কেউ জানে না।
ঙ. সঙ্গত কারণ ছাড়া কাফের-মুশরিক ও ফাসেক-ফাজেরদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করা উচিত না। তাতে অন্যদের মনে অহেতুক সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অহেতুক সন্দেহ সৃষ্টি হতে দেওয়া সমীচীন নয়।
চ. আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যক্তি কালেমা পাঠ করে আর এ অবস্থায় মারা যায়, জাহান্নামের স্থায়ী শাস্তি তার জন্য নয়।
তিনি চাচ্ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে এসে নির্দিষ্ট একটি স্থানে নামায পড়লে তিনি বরকতস্বরূপ সে স্থানটিকে নিজ নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ করতেন। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এর জন্য অনুরোধ করলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুরোধ রক্ষা করেন।
একদিন তিনি সূর্যোদয়ের পর বেলা চড়ে আসলে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসেন। পরে হযরত উমর ফারূক রাযি.-ও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। দিনটি ছিল শনিবার। তিনি হযরত ইতবান রাযি.-এর দেখানো স্থানে সকলকে নিয়ে দু' রাক'আত নামায আদায় করেন। তারপর তাঁর সামনে খাযীরা পেশ করা হয়। খাযীরা হল আটার সঙ্গে চর্বি মিশিয়ে তৈরি করা এক প্রকার খাদ্য। তিনি তা খেয়ে নেন। ইত্যবসরে মহল্লায় তাঁর আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়লে লোকজন জমা হয়ে যায়।
হযরত মালিক ইবন দুখশুম রাযি. এ গোত্রেরই একজন সাহাবী। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে তাঁকে দেখা না যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কেউ একজন তাঁকে মুনাফিকও বলে বসে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন এবং তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্যই কালেমায়ে তায়্যিবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে থাকেন। এটা তাঁর মুমিন হওয়ার দলীল।
এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে মন্তব্যকারীর প্রতিবাদ করেছিলেন যে, সে কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি? ইবন ইসহাক রহ. তার মাগাযী গ্রন্থে এ কথাও বর্ণনা করেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মালিক ইবন দুখশুম ও মা'ন ইবন 'আদী রাযি.-কে মুনাফিকদের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ- মসজিদে যিরার ধ্বংস করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা সেটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। এটাও তাঁর খাঁটি মুমিন হওয়া ও মুনাফিকী থেকে মুক্ত থাকার প্রমাণ বহন করে।
যারা তাঁকে মুনাফিক বলে মন্তব্য করেছিলেন তারা এর কারণ দেখিয়েছিলেন এই যে, তাঁকে মুনাফিকদের সঙ্গে উঠাবসা করতে দেখা যায়। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখানো এ কারণটিকে তাঁর মুনাফিকীর দলীলরূপে গ্রহণ করেননি। সম্ভবত তাদের সঙ্গে তাঁর উঠাবসা করার বিশেষ কোনও কারণ ছিল। সবশেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালেমায়ে তায়্যিবার ফযীলত বয়ান করেছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এটা পাঠ করে, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এ ঘোষণা দান করে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। এ হারাম হওয়ার অর্থ ওই ব্যক্তির কবীরা গুনাহ না থাকলে জাহান্নামে আদৌ যাবে না। যদি কবীরা গুনাহ থাকে এবং আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করে দেন, তখনও সে জাহান্নামে যাবে না। আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা না করলে নির্দিষ্ট মেয়াদে শাস্তিভোগ করার পর সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। এ কালেমার কারণে তাকে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকতে হবে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও বিশেষ ওজর থাকলে সে মসজিদে না গিয়ে ফরয নামায নিজ ঘরেও আদায় করতে পারে।
খ. তাবাররুকের ধারণা ইসলামবিরোধী নয়। তাবাররুক হিসেবেই হযরত ইতবান ইবন মালিক রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায আদায়ের স্থানকে নিজের জন্য নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ করেছিলেন।
গ. কারও বাড়িতে বিশেষ কোনও বুযুর্গ ব্যক্তির শুভাগমন হলে মহল্লার লোকজনের উচিত তার সঙ্গে দেখা করতে আসা এবং কিছুক্ষণ তার সাহচর্যে কাটানো। বাড়িওয়ালারও উচিত তাদেরকে সেই সুযোগ দেওয়া।
ঘ. অকাট্য কারণ ছাড়া কালেমা পাঠকারী কোনও ব্যক্তিকে মুনাফিক বলা উচিত নয়। কেননা দিলের খবর আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কেউ জানে না।
ঙ. সঙ্গত কারণ ছাড়া কাফের-মুশরিক ও ফাসেক-ফাজেরদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করা উচিত না। তাতে অন্যদের মনে অহেতুক সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অহেতুক সন্দেহ সৃষ্টি হতে দেওয়া সমীচীন নয়।
চ. আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যক্তি কালেমা পাঠ করে আর এ অবস্থায় মারা যায়, জাহান্নামের স্থায়ী শাস্তি তার জন্য নয়।


বর্ণনাকারী: