মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল
হাদীস নং: ৬২৮৩
প্রথম অনুচ্ছেদ - এ উম্মতের [উম্মতে মুহাম্মাদী (সা.)-এর] সাওয়াবের বিবরণ
৬২৮৩। হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেনঃ অতীত জাতিসমূহের সহিত তোমাদের জীবনের তুলনা হইল, আসরের নামাযের সময় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের এবং ইহুদী ও নাসারাদের উদাহরণ হইল ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে শ্রমিকদিগকে কাজে নিযুক্ত করিল এবং তাহাদিগকে বলিল, তোমাদের মধ্যে কে এক এক কীরাতের (বিশেষ মুদ্রা) বিনিময়ে দ্বি-প্রহর পর্যন্ত আমার কাজ করিবে? ফলে ইহুদীরা দ্বিপ্রহর পর্যন্ত এক এক কীরাতের শর্তে কাজ করিল। অতঃপর ঐ ব্যক্তি আবার বলিল, তোমাদের মধ্যে কে এক এক কীরাতের বিনিময়ে বিগ্রহর হইতে আসর পর্যন্ত আমার কাজ করিবে? এইবার খৃষ্টানরা দ্বিপ্রহর হইতে আসর পর্যন্ত এক এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করিল। লোকটি অতঃপর বলিল, তোমাদের কে আসর হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুই দুই কীরাতের বিনিময়ে আমার কাজ করিবে। জানিয়া রাখ! সেই লোক তোমরাই, যাহারা আসরের নামায হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করিবে এবং জানিয়া রাখ। পারিশ্রমিক তোমাদের জন্য দ্বিগুণ। ইহাতে ইহুদী এবং নাসারা উভয় দল ভীষণভাবে রাগান্বিত হইল এবং বলিল, আমাদের কাজ বেশী এবং পারিশ্রমিক কম। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলিলেন: আমি কি তোমাদের পাওনা হক সম্পর্কে সামান্যটুকুও যুলম করিয়াছি। তাহারা বলিল, না। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা বলিলেন, ইহা আমার অনুগ্রহ, যাহাকে ইচ্ছা দান করি। -বুখারী
بَاب ثَوَاب هَذِه الْأمة: الْفَصْل الأول
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّمَا أَجَلُكُمْ فِي أَجَلِ مَنْ خَلَا مِنَ الْأُمَمِ مَا بَيْنَ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ وَإِنَّمَا مَثَلُكُمْ وَمَثَلُ الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى كَرَجُلٍ اسْتَعْمَلَ عُمَّالًا فَقَالَ: من يعْمل إِلَى نِصْفِ النَّهَارِ عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ فَعَمِلَتِ الْيَهُودُ إِلَى نِصْفِ النَّهَارِ عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ ثُمَّ قَالَ: مَنْ يَعْمَلُ لِي مِنْ نِصْفِ النَّهَارِ إِلَى صَلَاةِ الْعَصْرِ عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ فَعَمِلَتِ النَّصَارَى مِنْ نِصْفِ النَّهَارِ إِلَى صَلَاةِ الْعَصْرِ عَلَى قِيرَاطٍ قِيرَاطٍ. ثُمَّ قَالَ: مَنْ يَعْمَلُ لِي مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ عَلَى قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ؟ أَلَا فَأَنْتُمُ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ أَلَا لَكُمُ الْأَجْرُ مَرَّتَيْنِ فَغَضِبَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالُوا: نَحْنُ أَكْثَرُ عَمَلًا وَأَقَلُّ عَطَاءً قَالَ الله تَعَالَى: هَل ظَلَمْتُكُمْ مِنْ حَقِّكُمْ شَيْئًا؟ قَالُوا: لَا. قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: فَإِنَّهُ فَضْلِي أُعْطِيهِ مَنْ شِئْتُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উম্মত যে পূর্ববর্তী সমস্ত উম্মত অপেক্ষা উত্তম, তাহা কুরআন মাজীদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রহিয়াছে। যেমনঃ كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاس الآية অর্থঃ ‘তোমরাই উত্তম উম্মত, মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদিগকে সৃষ্টি করা হইয়াছে …….।
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةٌ وَّسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ
অর্থঃ ‘অনুরূপভাবে তোমাদিগকে আমি মধ্যমপন্থী উম্মত বানাইয়াছি, যেন তোমরা মানুষদের জন্য সাক্ষী হইতে পার।' স্মরণ রাখিতে হইবে, এখানে “উম্মত” দ্বারা শুধুমাত্র ঈমানদার, আল্লাহতে বিশ্বাসী, সুন্নতের অনুসারীগণকে বুঝান হইয়াছে। ইসলামী পরিভাষায় ইহারা “উম্মতে ইজাবত।” কিন্তু যাহারা এইগুলিতে বিশ্বাসী নহে, তাহাদিগকে বলা হয় “উম্মতে দাওয়াত। ” তাহারা উক্ত মর্যাদার অধিকারী নহে। সুতরাং, আলোচ্য অধ্যায়ে উম্মতে ইজাবতের সওয়াব বা প্রতিদানের বিষয় আলোচনা করা হইয়াছে।
ভোর হইতে দ্বিপ্রহর এবং দ্বিপ্রহর হইতে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত সময়ের তুলনায় আসর হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় অনেক কম। অত্র হাদীসে দুইটি বিষয়ের প্রতি ইংগিত রহিয়াছে। একটি হইল, অতীত জাতির তুলনায় আমাদের আয়ুষ্কাল খুবই কম। এই জন্য এই উম্মতের আমলের পুরস্কার আল্লাহ্ তা'আলা তাঁহার বিশেষ অনুগ্রহে বৃদ্ধি করিয়া দিয়াছেন। দ্বিতীয়টি হইল, যোহর হইতে আসর পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় আসর হইতে মাগরিব পর্যন্তের মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় দীর্ঘ। ইহাতে যোহরের নামাযের ওয়াক্তের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফার মতের সমর্থন রহিয়াছে যে, প্রত্যেক জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের সময় থাকে। অন্যথায় যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময় দীর্ঘ থাকিবে না এবং দৃষ্টান্ত বাস্তবের সহিত অমিল থাকিয়া যাইবে।
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةٌ وَّسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ
অর্থঃ ‘অনুরূপভাবে তোমাদিগকে আমি মধ্যমপন্থী উম্মত বানাইয়াছি, যেন তোমরা মানুষদের জন্য সাক্ষী হইতে পার।' স্মরণ রাখিতে হইবে, এখানে “উম্মত” দ্বারা শুধুমাত্র ঈমানদার, আল্লাহতে বিশ্বাসী, সুন্নতের অনুসারীগণকে বুঝান হইয়াছে। ইসলামী পরিভাষায় ইহারা “উম্মতে ইজাবত।” কিন্তু যাহারা এইগুলিতে বিশ্বাসী নহে, তাহাদিগকে বলা হয় “উম্মতে দাওয়াত। ” তাহারা উক্ত মর্যাদার অধিকারী নহে। সুতরাং, আলোচ্য অধ্যায়ে উম্মতে ইজাবতের সওয়াব বা প্রতিদানের বিষয় আলোচনা করা হইয়াছে।
ভোর হইতে দ্বিপ্রহর এবং দ্বিপ্রহর হইতে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত সময়ের তুলনায় আসর হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় অনেক কম। অত্র হাদীসে দুইটি বিষয়ের প্রতি ইংগিত রহিয়াছে। একটি হইল, অতীত জাতির তুলনায় আমাদের আয়ুষ্কাল খুবই কম। এই জন্য এই উম্মতের আমলের পুরস্কার আল্লাহ্ তা'আলা তাঁহার বিশেষ অনুগ্রহে বৃদ্ধি করিয়া দিয়াছেন। দ্বিতীয়টি হইল, যোহর হইতে আসর পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় আসর হইতে মাগরিব পর্যন্তের মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় দীর্ঘ। ইহাতে যোহরের নামাযের ওয়াক্তের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফার মতের সমর্থন রহিয়াছে যে, প্রত্যেক জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের সময় থাকে। অন্যথায় যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময় দীর্ঘ থাকিবে না এবং দৃষ্টান্ত বাস্তবের সহিত অমিল থাকিয়া যাইবে।
